নামাজের সময় হলে আযান দেয়া হয় এবং যখন নামাজ পড়ার জন্য মুসুল্লিরা কাতার অনুযায়ী দাঁড়ায় তখনই ইকামত দেয়া হয়। আমাদের মধ্যে অনেকের ধারনা এই যে আযান এবং ইকামত একই। তবে সত্যি বলতে ধারনাটি সঠিক নয়। বাংলা আলো ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে প্রচারকৃত আর্টিকেলের মাধ্যমে এবারে জানাবো ইকামত কি, নামাজের ইকামত কিভাবে দিতে হয় এবং পাশপাশি ইকামত সংক্রান্ত যাবতীয় সকল খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে।
ইকামত কি?
আরবি ইক্কামাহ (إقامة) শব্দের উচ্চারণ বাংলাতে অনেকটা ইকামত যার আভিধানিক অর্থ সামান্য পরিবর্তীত আযান। যার মানে এই ইকামত পুরোটাই আযানের মতই কিন্তু ফরজ নামাজের জন্য দাড়িয়ে নিয়ত করার পূর্বে আযানের সাথে অতিরিক্ত কিছু শব্দ যুক্ত করে উচ্চারণ করা হয়। এটাকেই মূলত ইকামত বলা হয়ে থাকে।
ইকামতের ক্ষেত্রে যে অতিরিক্ত বাক্য গুলো উচ্চারিত হয় সেগুলো হলো:
হাইয়া আলাল ফালাহ (২ বার বলতে হয়)
ক্বদ ক্বামাতিস সালাহ ( ২ বার বলতে হয়)
নামাজে ইকামত কে দিবে?
সাধারণতই প্রশ্ন জাগে নামাজের ক্ষেত্রে ইকামত কে দিবে? এক্ষেত্রে নিয়ম এই যে, ইমামের পিছনে দাড়িয়ে যে কেউ ইকামত দিতে পারবে। যেকোনো ব্যক্তি মুক্তাদী হলেই সে ইকামত দেয়ার জন্য প্রস্তুত বলে গণ্য করা হবে। ইকামাত দেয়ার ক্ষেত্রে ইমামের অবস্থান লক্ষনীয়। যখন ইয়ামাম সাহেব জামাত আদায় করার জন্য যথা স্থান ধারন করবে তখনই ইকামত দেয়া যাবে।
মূলত মসজিদে ইমামের পিছনে দাড়িয়ে মুয়াজ্জিম ইকামত দিয়ে থাকে। তবে কোনো কারনে যদি মুয়াজ্জিম অনুপস্থিত থাকে তবে পিছন থেকে যেকোনো ব্যক্তিকে ইকামত দিতে হবে। হতে পারে কোনো একদিন আপনার সেই সুযোগ এসে পড়লো তাই সঠিক নিয়মে ইকামত দেয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা প্রতিটি মুসলিমের জন্য জরুরি। নিম্মে সেই নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানানো হলো।
নামাজে ইকামত দেয়ার নিয়ম
জামাতের সহিত যেকোনো ফরজ নামাজের শুরুতে ইকামত দিতে হয়। এক্ষেত্রে ইমাম সাবেহ তার যথা স্থানে দাঁড়ালে ইকামতের শব্দ গুলো চয়ন করতে হবে। ইকামতে যেগুলো বলতে হয় সেগুলো নিম্মে উল্লেখ রইলো।
الله اكبر – [ আল্লাহু আকবার ]
الله اكبر – [ আল্লাহু আকবার ]
الله اكبر – [ আল্লাহু আকবার ]
الله اكبر – [ আল্লাহু আকবার ]
অর্থঃ আল্লাহ সর্বশক্তিমান
اشهد ان لا اله الا الله – [ আশহাদু-আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ ]
اشهد ان لا اله الا الله – [ আশহাদু-আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ ]
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই
اشهد ان محمد الرسول الله – [ আশহাদু-আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ ]
اشهد ان محمد الرسول الله – [ আশহাদু-আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ ]
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত দূত
حي على الصلاة – [ হাইয়া আলাস সালা ]
حي على الصلاة – [ হাইয়া আলাস সালা ]
অর্থঃ নামাজের জন্য এসো
حي على الفلاح – [ হাইয়া আলাল ফালা ]
حي على الفلاح – [ হাইয়া আলাল ফালা ]
অর্থঃ কল্যানের জন্য এসো
قد قامت الصلاةُ – [ ক্বদ ক্বামাতিস্ সালাহ ]
قد قامت الصلاةُ – [ ক্বদ ক্বামাতিস্ সালাহ ]
অর্থঃ নামাজ আরম্ভ হলো
الله اكبر – [ আল্লাহু আকবার ]
الله اكبر – [ আল্লাহু আকবার ]
অর্থঃ আল্লাহ সর্বশক্তিমান
لا اله الا الله [ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ]
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই
এরপর নামাজের নিয়ত করতে হবে এবং আল্লাহু আকবর বলে হাত তুলে নামাজের বাকি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। মূলত নামাজের নিয়তের আগে ইকামত দেয়া হয় এবং এটা পুরোটাই আযানের মতন। কেবল সল্প কিছু শব্দ ব্যাতীত। তাছাড়া ইকামত ধিরে ধিরে অথবা উচ্চ স্বরে দেয়া যায়।
আযান ও ইকামতের মধ্যে পার্থক্য
আযান ও ইকামতের পার্থক্য লক্ষনীয় হয় কিছু ক্ষেত্রে। প্রথমত শব্দ গত দিক থেকে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এখানে শেষের দিকে দুইটি অতিরিক্ত লাইন যুক্ত করা হয়েছে যেটা একটা মেজর পার্থক্য আযান ও ইকামতের মধ্যে।
তাছাড়া দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকেও পার্থক্য লক্ষ করা যায়, আযান তখন দেয়া হয় যখন নামাজের সময় হয়েছে এবং সকলকে নামাজের জন্য আহ্বান করা হচ্ছে, অন্যদিকে ইকামত তখন দেয়া হয় যখন সবাই সংবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে নামাজের জন্য।
আযান দেয়া হয় স্ব-উচ্চ স্বরে যাতে করে বাইরের সকলেই শুনতে পারে এবং নামাজে আসার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করে। অন্যদিকে ইকামত দেয়া হয় নামাজের নিয়তের আগ মুহুর্তে যা কেবল নামাজে উপস্থিত থাকা মুসুল্লীরা শুনতে পারে।
ইকামতের মাসাআলা
আলী ইবনু আবদুল্লাহ .. আনাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিলাল -কে আযানের বাক্যগুলো দু’ দু’বার এবং ইকামতের শব্দগুলো বেজোড় বলার নির্দেশ দেওয়া হল। ইসমায়ীল বলেন, আমি এ হাদীস আইয়্যূবের নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, তবে ‘কাদ্কামাতিস্ সালাত’ ব্যতীত। {সহীহ বুখারী (ইফাঃ)অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان) হাদিস নাম্বার: ৫৮০} [১]
সুলাইমান ইব্ন হারব্ … আনাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিলাল কে আযানের শব্দ দু’বার এবং قد قامت الصلاة ব্যতীত ইকামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। { সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان) হাদিস নাম্বার: ৫৭৮ }
আনাস ইবনু মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণ সালাতের ওয়াক্তের সংকেতবাহী কোন পন্থা খুঁজছিলেন। তখন বিলাল কে আযানের শব্দাবলী দুবার করে এবং ইকামতের শব্দাবলী একবার করে বলার নির্দেশ দেয়া হয়। { সুনানে ইবনে মাজাহ , অধ্যায়ঃ ৩/ আযান ও তার সুন্নাত , হাদিস নাম্বার:৭২৯ }
ইকামতের জবাব দিতে হবে?
ইকামতের জবাব দেয়াকে সুন্নাত করা হয়েছে, ফরজ নয়। তাই কেউ চাইলে ইকামতের জবাব দিবে আবার কেউ চাইলে দিবে না। এতে কোনো সমস্যা হবে না তবে দেয়া অবশ্যই ভালো। জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে ইকামাতে যা যা বলা হবে হুবহু বলতে হবে। [আবু দাউদঃ ৫২৮ নং হাদিস] কেবল মাত্র যখন কাদ কামাতিস্ সলাহ বলবে তখন এর জবাবে আকা-মাহুল্লাহু অ-আদা-মাহা বলতে হবে। তবে এটি একটি দুর্বল হাদিস। যার কারনে এটা না বলাই অনেকে উত্তম বলে মনে করে থাকে।
মহিলাদের নামাজের ক্ষেত্রে ইকামত দেয়া যাবে?
এই বিষয়ে অনেকের অনেক মতামত রয়েছে, রয়েছে মত বিরোধীতা। তবে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য যে মতামত রয়েছে সেটি প্রদান করেছে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল। তার ফাতোয়া অনুযায়ী, “মহিলারা যদি জামাতে নামাজ আদায় করে তবে তাদের ক্ষেত্রে আযান দেয়া হবে না, কিন্তু নির্দ্বিধায় ইকামত দিতে পারে।”
পরিশেষে কিছু কথা
এই ছিলো নামাজের পূর্বে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ ইকামত সংক্রান্ত বিষয়ে নামাজের ইকামত কিভাবে দিতে হয় সেই বিষয়ের উপর বিস্তারিত বর্ণণা প্রদানকৃত আর্টিকেল যেখানে ইকামত দেয়ার নিয়ম, উচ্চারণ, অর্থ ও কিছু মাসাআলা প্রদান করা হয়েছে।