সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি, কেনো ও কিভাবে করবেন [আপডেট] 

0
29

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রভাব পুরো মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হল ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি ক্ষুদ্রতম  শাখা। যদিও ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি শাখা হলো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং তবে গুরুত্বের দিক থেকে বিবেচনা করলে বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং পুরো মার্কেটিং বিভাগটাকেই আঁকড়ে ধরে বসে আছে। 

মূলত কি বোঝাচ্ছি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং দ্বারা? কেনই বা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এত গুরুত্বপূর্ণ? আর যদি তাই হয় তবে কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা হয়ে থাকে?  এ সকল প্রশ্নের উত্তর মিলবে একটি আর্টিকেল এর মাধ্যমে এখানে। থাকছে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ প্রফেশনাল হওয়ার জন্য কিভাবে এবং কোথায় করবেন বা শেখার উপায় কি সব কয়টি বিষয় কভার করা হবে। তবে চলুন ডুবে যাওয়া যাক মার্কেটিং এর জগতে। 

আচ্ছা মার্কেটিংয়ের বিষয়টিকে আপনি ঠিক ভাবে জেনে নিয়েছেন? জেনে থাকলে খুবই ভালো, তবে যারা একেবারেই নতুন তাদের জন্য বলে দিচ্ছি: মার্কেটিং হচ্ছে কোনো ব্যবসা, পন্য, সেবার ভ্যালু সৃষ্টি করা ক্রেতাদের কাছে। একটি পণ্য, দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনের পর থেকে তা ভোক্তার কাছে প্রচার প্রচরনার সাথে যুক্ত সকল কাজকে মার্কেটিং বলে। মার্কেটিং এর মাধ্যমে গ্রাহকরা যেকোনো পণ্যের সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য বিক্রয় করতে পারে। মূলত একটি পণ্য, দ্রব্য বা সেবা বিক্রয়ের মূল কার্যক্রম হয়েই থাকে মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে। 

এই পর্যায়ে জানবো মার্কেটিং নামক জগতের এক অংশ ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাব ক্যাটাগরি হিসেবে থাকা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কে। চলুন শুরু করা যাক। 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি

খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট টার্গেট বা লক্ষ করা লোকদেরকে একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সচেতনতা, গুণগত মান জানানো,  এবং উক্ত পণ্য সম্পর্কে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা করা হয়। 

বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়ত ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাদের একটি বড় অংশ সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে সংক্রিয় থাকছে। একটি কোম্পানি নিজেদের বিজ্ঞাপন সেখানেই প্রদর্শন করবে যেখানে  বেশি সংখ্যক টার্গেটেড অডিয়েন্স পাওয়া যায়। অন্যদিকে ডিজিটাল মার্কেটিং যেহেতু কাজ করে ইন্টারনেটে সক্রিয় থাকা লোকদেরকে নিয়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়া তার বড় একটি প্ল্যাটফর্ম, তাই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বর্তমানে বেশ কার্যকর।

একটা সময় ছিল যখন সবচেয়ে বেশি টার্গেটেড অডিয়েন্স পাওয়া যেত টিভি-রেডিও পত্রিকা ইত্যাদি মাধ্যমে কিন্তু বর্তমান সময়ে মানুষ টেলিভিশন থেকে ইউটিউবে বেশি সময় ব্যয় করছে যেকোনো  ভিডিও কনটেন্ট দেখার জন্য। অন্যদিকে আগে যেমন মানুষ পত্রিকা নির্ভর ছিল, এখন একই মানুষ বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন পোর্টালে আপটুডেট নিউজ আপডেট নিয়ে থাকে। তার পাশাপাশি বিনোদনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন মাধ্যম এবং যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া।

সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মগুলোতে যেহেতু বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন বর্ণের বিভিন্ন মানসিকতার মানুষ রয়েছে তাই প্রতিটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ী নিজেদের পণ্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বা নিজেদের পূর্ণ প্রচার প্রচারণার জন্য নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি অনুযায়ী অডিয়েন্স টার্গেট করে থাকে। 

এরপর টার্গেটেড অডিয়েন্স দের কাছে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এর মাধ্যমে নিজেদের পণ্য সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন চালিয়ে থাকে যা পেইড মার্কেটিংও বলা হয়। আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন  তবে অবশ্যই উক্ত পণ্য প্রচারণার  প্রয়োজন রয়েছে। যার চাহিদা পূরণ করতে সোশ্যাল মিডিয়া আপনাকে সহায়তা করবে। কারন একটি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি নির্দিষ্ট এলাকার নয় বরং সারা বিশ্বের মানুষের সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন আপনার প্রতিষ্ঠান সাথে।

তাছাড়া কোন প্রকার শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই ঘরে বসে গ্রাহক বা ভোক্তার পাওয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

কেনো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ

১) টার্গেটেড সকল অডিয়েন্সকে একসাথে পাওয়া

যেমনটা বলা হয়েছে বর্তমানে ছোট থেকে বড় সকল বয়সের মানুষ শিক্ষা বিনোদন প্রয়োজন ও কাজের জন্য অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখন মানুষ লোকাল ভাবে বিজ্ঞাপন ততটা গ্রহণ করে না যতটা গ্রহণ করে অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। যখন একজন ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে থাকে তখন বিভিন্ন কৌশলে সেসকল প্লাটফর্ম হল বিভিন্ন পেইড ক্যাম্পেইন চালানের মাধ্যমে ইউজারের চাহিদা উপর ভিত্তিক করে বিভিন্ন প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসের জানান দেয়। এভাবে আপনার প্রতিষ্ঠান প্রোডাক্ট ও সার্ভিস যাই হোক না কেন উক্ত সার্ভিস বা প্রোডাক্ট গ্রহণ করার জন্য সকল অডিয়েন্স একত্রে পাবেন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। 

২) নিজেদের পণ্যের প্রচার প্রচারণা

একটা পুরনো কতটা সফল বা একটা পণ্য বিক্রি কতটা হবে তার সিংহভাগ নির্ভর করে উক্ত পণ্যটির প্রচার-প্রচারণা কতটুকু হয়েছে তার উপর। যখন একটি নতুন পণ্য সম্পর্কে ক্রেতারা শুনবেনই না বা সেই সম্পর্কে কোন ধারণাই থাকবেনা তখন উক্ত পণ্য ক্রয়ের প্রতি আগ্রহ দেখাবে না। অন্যদিকে যখন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দিক থেকে একটি পণ্যের প্রচার প্রচারণা করা হবে এবং যখনই কোনো গ্রাহক উক্ত সুবিধাটি থেকে নিজেকে বঞ্চিত মনে করবে তখনই পণ্যটি ক্রয় এর চিন্তা করবে। যার কারণে এটি কোম্পানি নিজেদের পণ্য প্রচার প্রচারনার দিকে বেশ নজরদারী করে থাকে।  যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ায় সকল সম্ভাব্য গ্রাহককে একত্রে পাওয়া যায় তাই নিজেদের পণ্যের প্রচার প্রচারণার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া যে কোন কোম্পানির জন্য সর্বোত্তম মাধ্যম। 

৩) সামাজিক সচেতনতা ও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার

মাঝে মাঝে বিভিন্ন কোম্পানি সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের অস্তিত্বের জানান দিয়ে থাকে জনসাধারণের মাঝে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও সহজ করা যায়, আমরা সকলেই ডাচ বাংলা  ব্যাংক লিমিটেড সম্পর্কে শুনেছি। তারা প্রায় সময় দেশের  দরিদ্র  শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি প্রদান করে থাকে যা একটি সামাজিক কার্যক্রম। উক্ত সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে একদিকে যেমন সমাজসেবা করা হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে ব্যাপক হারে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এর প্রচারণাও হচ্ছে। এখানে তারা সরাসরি গ্রাহককে এটা বলেনি যে, ডাচ বাংলা ব্যাংক যথেষ্ট ভাল সার্ভিস প্রদান করে এবং সকল গ্রাহকের উচিত আমাদের ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে। কিন্তু যেহেতু সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা ইতিমধ্যেই একটি পজিটিভ ইনপেক্ট তৈরি করে ফেলেছে সমাজের মধ্যে সেহেতু সাধারন ভাবেই এটা তাদের জন্য খুব বড় একটি মার্কেটিং এ পরিণত হয়েছেন। এবং এই ব্যাপারটা যতটা না লোকালয়ের  মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে তার চেয়ে বেশি করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  এর মাধ্যমে তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে পুরো দেশের কাছে। 

৪) সহজে সম্ভব  ও পুরাতন গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো

যে সকল কোম্পানি দীর্ঘকালীন প্রকল্পে ব্যবসা শুরু করে তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ক্রেতা সন্তুষ্টি ধরে রাখা এবং ক্রেতার সাথে সুন্দর এবং ভালো যোগাযোগ স্থাপন করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, লোকাল ভাবে একটি ক্রেতা পণ্য ক্রয় করার পর উক্ত কোম্পানীর সাথে আর যোগাযোগ স্থাপন করা হয়ে ওঠে না। কিন্তু যদি সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ক্রেতা ভার্চুয়ালি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একত্রে থাকে তখন প্রতিনিয়ত ভোক্তা এবং প্রতিষ্ঠানের উভয়ই একে অপরের বিহেভিয়র অনুসরণ করতে পারবেন  এবং সহজেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী নিত্য নতুন পণ্য ভোক্তা সন্তুষ্টির জন্য পৌঁছাতে সক্ষম হবে। এতে প্রভাবিত হয় নতুন সম্ভাব্য ক্রেতা সৃষ্টি হবে।

৫) বিভিন্ন  ফিডব্যাক এর মাধ্যমে নিজেদের উন্নত সাধন

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি লক্ষনীয় যে একটি পণ্য ক্রয়ের পর কে তাঁর উক্ত পণ্যের উপর সন্তুষ্ট কিনা তার ফিডব্যাক দেয়া যায়না যদি সেটা লোকাল মার্কেটে ঘটে থাকে। অথবা সেই সুযোগ থাকলেও অনেক সময় ক্রেতার নিজে থেকেই  সরাসরি গিয়ে ফিডব্যাক দেয়াকে ঝামেলার কাজ বলে মনে করে। কিন্তু একই ব্যাপার যদি অনলাইনে হয় তখন খুব সহজে ক্রেতা যেমন প্রতিষ্ঠানটতে পৌছাতে করতে পারে, তেমনই উক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত পণ্য সম্পর্কে নিজের ফিডব্যাক প্রদান করতে পারে যা প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই কার্যকর এবং ভবিষ্যতে আরও আধুনিক পণ্য তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার উপায় 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে নিজেদের র্ পণ্য নির্ধারণ এবং যথাযথ সেবা  নিশ্চায়ন থেকে শুরু করে গ্রাহকের কাছে পৌছানো অব্দি যত প্রকার কার্য রয়েছে তা সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক করে তুলতে  নিম্নে উল্লেখিত ধাপগুলো ধাপে ধাপে পার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম ধাপঃ পরিকল্পনা এবং পুনঃনির্ধারণ

যেকোনো প্রতিষ্ঠানের শুরু করা এবং কার্যকর ভাবে পরিচালনার জন্য সর্বপ্রথম যে কাজটি প্রয়োজন তাহলো পরিকল্পনা করা। একটি সুস্থ ও পরিকল্পনায় পারে একটি প্রতিষ্ঠান সফলতার প্রধান কারণ হতে। আপনি যেই পণ্যটি নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন সেই পণ্য ক্রেন্দ্রিক মার্কেট এনালাইসিস এর পর সুস্পষ্ট পরিকল্পনা গড়ে তুলতে হবে। একটি পণ্য কে নিয়ে যখন একটি পরিকল্পনা সাজানো হয় তখন তার সাথে জড়িত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবা উচিত। বিষয়টি যখন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার প্রচারনার, তখন অবশ্যই অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। উল্লেখিত বিষয়গুলো ঠিকভাবে করা হয়ে গেলে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে নিজেদের অস্তিত্ব স্থাপন করা যেতে পারে।

দ্বিতীয় ধাপঃ এক বা একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া নির্বাচন

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে অনেকগুলো। যেখানে কিছু খুব বেশি জনপ্রিয়, এবং কিছু কম জনপ্রিয়। রয়েছে বিভিন্ন স্থান ভিত্তিক বৈষম্য আবার কিছু বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত। আপনি নিজের ব্যবসা পরিচালনার জন্য এবং নিজের পণ্যের প্রচার প্রচারণার জন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন সেটি নির্ভর করছে আপনার পণ্যের উপর। প্রথমেই নিজের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখুন এবং উক্ত পণ্যটির ক্রেতা কারা তা চিহ্নিত করার পরেই নির্দিষ্ট এক বা একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া নির্বাচন করুন। এই আর্টিকেলের পরের ধাপে জানিয়ে দেওয়া হবে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং উন্মুক্ত দশটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে।  আপনি যখন একটি নির্দিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া নির্বাচন করে ফেলবেন তখন যা করতে হবে তা পরবর্তী ধাপে জানানো হলো।

তৃতীয় ধাপঃ  নিয়ম অনুসারে একাউন্ট খোলা এবং বেসিক সেটাপ

যে কোন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রথমেই সেখানে একটি একাউন্ট ক্রিয়েট করতে হয়। আপনি যখন ব্যবসায় কার্যক্রমের জন্য যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে একাউন্ট তৈরি করবেন তখন অবশ্যই ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাকাউন্ট তৈরি না করে বিজনেস অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে নিজের যাত্রা শুরু করতে চান তবে প্রথমে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পর ব্যবসায় কার্যক্রমের জন্য ফেসবুক পেইজ খুলে নিতে হবে। এভাবে আপনি যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে চাচ্ছেন সেখানে একাউন্ট খুলুন এবং বেসিক সেটিংস খুলো সেট করে নিন। উল্লেখ্য যে প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম রয়েছে তাই অবশ্যই তাদের টার্মস এন্ড কন্ডিশন দেখে  নিবেন।

চতুর্থ ধাপঃ মার্কেটপ্লেস রিসার্স ও  কম্পিটেটর এনালাইসিস 

এরপর আপনাকে অবশ্যই মার্কেট রিসার্চ এবং কম্পিটেটর এনালাইস করতে হবে। কেননা আপনার অবশ্যই সেই বিষয়ে আপটুডেট থাকতে হবে যে বর্তমান সময়ে কোন পণ্য গুলো মানুষ বেশি পছন্দ করছে। মানুষের চাহিদা প্রত্যাশা ইচ্ছা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল যার কারণে মার্কেটপ্লেসে রিসার্চ সর্বদা চালিয়ে যেতে হবে এবং একই চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে আপনার প্রতিবেশী ব্যবসায়ীরা কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে তার দিকে নজরদারি রাখতে হবে। সকল বিষয়ে অবগত হওয়ার পর সেসবের সাথে মোকাবেলা করার জন্য কি ধরনের মার্কেটিং করা দরকার সেটি নির্ধারণ করবেন। 

পঞ্চম ধাপঃ প্রচার প্রচারণা চালানো

অবশেষে আপনি সেই ধাপে পৌঁছাবেন  যার জন্য আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে যেকোনো পণ্যের প্রচার প্রচারণার জন্য আপনাকে অবশ্যই এডভার্টাইজিং সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখতে হবে। আপনি কোন ধরনের অডিয়েন্সকে টার্গেট করবেন, এবং সেই ধরণের অডিয়েন্স দের কাছে কিভাবে খুব দ্রুত সহজ ভাবে পৌঁছানো যায় তার জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পেইন রান করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার প্রচারণার জন্য আপনাকে দুইটি বিষয়ে শিখতে হবে যা হলোঃ ১) মার্কেট স্ট্র্যাটেজি; ২) এডভার্টাইসিং প্রসেস; এবার এই দুইটি বিষয়ে একটু বিস্তারিত জানা যাক। 

মার্কেট স্ট্র্যাটেজি

মার্কেট স্ট্র্যাটেজি বলতে সেটিকে বোঝানো হয়েছে যে উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত পণ্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। বা আপনার যে পন্যটির গ্রাহক যে বাজারে পাওয়া যাবে সেই বাজার থেকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহক বা ভোক্তার নিকট নিজের পণ্য বা সেবা উপস্থাপন করা ও তাদেরকে জানানো নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে। বেশিরভাগ মার্কেটিং ক্যাম্পেইন বিফল হয় শুধুমাত্র মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ভালোভাবে বুঝে এপ্লাই না করার কারণে। রেনডম ভাবে অ্যাডভার্টাইজ করে কখনোই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব না, যারা আপনার  পণ্য বা সেবার গ্রাহক হতে আগ্রহী তাদেরকে প্রথমে টার্গেট করতে হবে এবং তাদেরকে কেন্দ্র করেই আপনার মার্কেটিং বা প্রচার-প্রচারণা মুলক কার্যক্রম চালাতে হবে।

এডভার্টাইজিং প্রসেস

মার্কেটিং স্ট্রাটেজি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জেনে নিলেন কিন্তু কীভাবে এডভার্টাইজিং করবেন সে সম্পর্কে যদি না জানেন তবে তো কোন কাজেই পূরণ হলো না!  সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর পুরো ব্যাপারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে এডভারটাইজিং প্রসেস। মূলত এক একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এর জন্য এডভার্টাইজিং একেক রকম হয়ে থাকে। ফেসবুকে আপনি যেভাবে অ্যাডভার্টাইজ করতে পারবেন সেভাবে টুইটার কিংবা ইনস্ট্রাগ্রামে করতে পারবেন না। অনুরূপভাবে প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক পদ্ধতি রয়েছে যার একটির সাথে অন্যটির অনেকাংশেই থাকবে না। তাই আপনি যখন স্পেসিফিক কোন একটি সোশ্যাল মিডিয়ার উপর গুরুত্ব দিবেন বা যে কোন একটি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্রসেস শিখবেন তখন সে বিষয়ে পুরোপুরি জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করবেন, যাতে করে ওই প্লাটফর্মে যেকোনো ধরনের মার্কেটিং এডভেটাইজ ঠিকভাবে করতে পারেন। 

এই পর্যায়ে অবশ্যই আপনার জানতে ইচ্ছে করছে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া কোনগুলো যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করলে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো হয়। পরের ধাপটিতে ঠিক এই বিষয়ে জানানো রয়েছে। 

সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ টি সোশ্যাল মিডিয়া 

  • Facebook
  • YouTube
  • Twitter
  • Instagram
  • Pinterest
  • LinkedIn
  • WhatsApp
  • Reddit
  • Quora
  • Snapchat

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর সুবিধা কি?

১) যেকোনো পণ্য বা সেবার প্রমোশন করা সম্ভব সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।

২) তুলনামূলক কম খরচে পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেওয়া যায়। যেখানে অন্যান্য বিজ্ঞাপন  প্রসেস গুলোতে প্রচুর অর্থ খরচ হয় সেখানে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ফলে খুব অল্প খরচে ব্যাপক সাড়া পাওয়া সম্ভব। 

৩) সহজ ও স্বল্প সময়ে ভোক্তাদের নিকট পৌঁছানো যায়। যেহেতু বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য গ্রাহকরা নিজে থেকেই একত্র একটি স্থানে রয়েছে তাই খুব দ্রুত এবং  সহজভাবে ভোক্তাদের নিকট পৌঁছানো যায়।

৪) নিজের ব্র্যান্ড সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়। 

৫) যেকোনো সময়ে ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়। 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কোর্স

মার্কেটিং এমন একটি প্রক্রিয়া যা প্রতিনিয়ত আপডেট হতে থাকে। এটির জন্য যেমন স্পেসিফিক কোন লিমিট নেই তেমনই এটির জন্য এমন কোন রুলস তৈরি করা হয়নি যেটি এপ্লাই করার ফলে শতভাগ রেজাল্ট পাওয়া যাবে। এটি মূলত ব্যক্তিক প্রয়াস এবং বুদ্ধিমত্তা কে কাজে লাগিয়ে কম্পিটেটরদের থেকে আরো ভালো পারফর্ম করার সক্ষমতা। মার্কেটিংয়ের এই জগতে সোশ্যাল মিডিয়া নিছকই ছোট তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করছে বর্তমান সময়ে। তাই অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখতে আগ্রহী হয়ে  উঠছে। এদের মধ্যে কিছু এমন  যারা নিজেদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য শিখতে চাইছে আবার এমনও রয়েছে যারা ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কোর্স করতে চাচ্ছে। 

 তবে উদ্দেশ্য যাই হোক, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শেখার  মাধ্যম রয়েছে ২ টি। প্রথমটি বিনামূল্যে যা ইউটিউব এবং গুগল সার্চের মাধ্যমে জানতে পারবেন এবং দ্বিতীয় টি পেইড স্পেসিফিক কোন প্রতিষ্ঠান থেকে বিগিনিং লেভেল থেকে এডভান্স  পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শেখানো হবে। এ সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে দুইটি সেক্টরে অনলাইন এবং অফলাইন। আপনি নিজেকে যে প্লাটফর্মে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেটিতেই যেতে পারেন।

 তবে আপনি যদি একেবারেই নতুন হয়ে থাকেন মার্কেটিং জগতে বিশেষ করে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে তবে আপনাকে উপদেশ দেবো প্রথমেই হুট করে কোন প্রতিষ্ঠান কোর্সে ভর্তি না হয় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কে গুগোল এবং ইউটিউবে অনুসন্ধান করুন এবং নিজ থেকে বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করুন। বর্তমানে ইউটিউবে এমন বেশ কিছু চ্যানেল রয়েছে যেখানে  সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বিষয়ক বিভিন্ন টিপস এবং ট্রিকস শেয়ার করা হয়। যখনই আপনি বেসিক জিনিস গুলো ফ্রিতে শিখে যাবেন তখন অ্যাডভান্স কোর্স ভর্তি হয়ে শিখতে বেশি একটা সময় নষ্ট হবে না। 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার নিয়ম নীতি

দীর্ঘমেয়াদী কোন প্রকল্প সফল করার জন্য অবশ্যই একটি সঠিক নিয়ম নীতির মধ্য দিয়ে কার্য পরিচালনা করা উচিত এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার কিছু নিয়ম নীতি রয়েছে যা হলোঃ

১) আপনার নিস বা প্রডাক সম্পর্কে ভাল কনটেন্ট তৈরি করুন, নিজের প্রোডাক্ট উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সব সময় ইউনিক ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। আপনার পণ্যটি কেন অন্যদের থেকে ভিন্ন এবং কেন গ্রাহকরা অন্যান্য কম্পিটিটরদের কাছ থেকে না নিয়ে আপনার কাছ থেকে নিবে তার যথাযথ কারণ দাঁড় করান এবং তা সকলের সামনে উপস্থাপন করুন। 

২) সর্বদা আপনার গ্রাহকের বার্তা শুনুন, যখন কোন পণ্য দ্রব্য অথবা সেবা আপনার ভোক্তাবাদ গ্রাহক গ্রহণ করবে তখন তার প্রতিক্রিয়া  সম্পর্কে জানুন। আপনারা কি চাচ্ছে কোনটি বর্জন করতে পরামর্শ দিচ্ছে এবং পণ্যের কিরকম উন্নয়ন চাচ্ছে সেগুলো শুনুন এবং তার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিন। এতে করে ক্রেতা সন্তুষ্টি বজায় থাকবে এবং আপনার টার্গেট ফুলফিল হবে। 

৩) প্রোডাক্টের কোয়ালিটি নিয়ে কখনো কম্প্রোমাইজ করবে না। সর্বদা চেষ্টা করুন গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা প্রদান করার। উক্ত প্রোডাক্টের জন্য ক্রেতা যে মূল্য প্রদান করছে তার যথাযথ ভ্যালু আপনার পণ্যের রয়েছে কিনা তা আপনি ক্রেতা ভ্যালু ঠিকভাবে প্রদান করছেন কিনা সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ান। 

৪) সবশেষে আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে যে রাতারাতি কখনোই কোনো বিষয়ে সফলতা আসে না, যেকোনো  স্টার্টআপ বা নতুন কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে সাথে সাথে উক্ত পণ্যের প্রতি গ্রাহকের আকর্ষণ আসবেনা এটাই স্বাভাবিক। এতে হতাশ না হয়ে লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে যেতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

পরিশেষে বলা যায়, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যেখানে মারকেটিং সেক্টর থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর বিভিন্ন উথান পতন সম্পর্কে জানানো হয়েছে। কিভাবে নতুনরা শুরু করবে তা থেকে এডভান্স লেভেল পর্যন্ত কি কি করনীয় তার সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ব্যবসা ও মার্কেটিং বিষয়ক আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সম্পর্কে জানতে বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ব্যবসা-বাণিজ্য নামক ক্যাটাগরিটি অনুসরণ করুন।

Visited 36 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here