প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা কি, কেনো ও কিভাবে করবেন । ব্যবসা আইডিয়া 

0
21

আপনি কি প্লাস্টিক রিসাইক্লিং সম্পর্কে ইতিমধ্যে অবগত? প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা সম্পর্কে শুনেছেন এবং এই বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছেন? তবে উক্ত আর্টিকেলটি আপনার মত উদ্যোগী মনভাবের মানুষের জন্যই। নতুন এই সেক্টরে নিজের সম্ভাবনা দেখতে পেতে এখনই সময়, জেনে নিন প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা সম্পর্কে এবং খাটিয়ে নিন নিজের বুদ্ধি কিভাবে প্লাস্টিক রিসাইক্লিংকে কাজে লাগিয়ে শুরু করবেন আপনার নিজস্ব ব্যবসা। 

বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে প্রতিটি দেশ। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। পৃথিবীতে বর্জ্যের বোঝ কমাতে প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে রিসাইকেলিং এর। আমরা প্রতিনিয়ত যে জিনিস গুলো ব্যাবহার করি এবং ব্যবহার পরবর্তীতে থেকে যাওয়া অংশকে এভাবে রিসাইকেলিং করা যায় সেটা নিয়ে গবেষণা প্রতিনিয়ত চলছে  এবং সুদূর ভবিষ্যতেও চলবে।

 রিসাইক্লিং করা যায় এমন জিনিস গুলোর মধ্যে প্লাস্টিক অন্যতম। যেহেতু প্লাস্টিক পচনশীল নয় তাই এটাকে পুনর্ব্যবহার এর মাধ্যমে পৃথিবী থেকে প্লাস্টিকের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। ঠিক এমনই চিন্তা নিয়ে চলছিল গবেষণা যার ফলস্বরূপ বর্তমানে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং এর মাধ্যম। বর্তমানে অনেক প্লাস্টিককে রিসাইক্লিং করা যায়। 

বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষ প্রতিবছর গড়ে 11 কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতিবছর ২৫,৯৪০ প্লাস্টিক নিঃসরণ করে থাকে। এবং যদি বিশ্বের দিকে লক্ষ করা হয় তবে প্রায় 300 মিলিয়ন প্লাস্টিক নির্ধারণ হয়ে থাকে।  যা আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য খুবই বিপর্যয়। 

আরেকটি তথ্য যা দেওয়া খুব জরুরী যে, পৃথিবীতে যত  বর্জ্য রয়েছে তার মধ্যে কেবল 9% রিসাইকেল করার যোগ্য। অন্যদিকে কেবল 12% বর্জ্য পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। পরিশেষে বাকি থাকে 79 শতাংশ যা পরিবেশের সাথে মিশে থাকে এবং কখনোই নষ্ট হয় না এবং পরিবেশ দুষণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে বড় একটি ক্ষেত্র রয়েছে বর্জ্য গুলোকে কাজে লাগানো রিসাইকেল করা। আর রিসাইকেল যোগ্য পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় প্লাস্টিক। এই পর্যায়ে জানবো প্লাস্টিক রিসাইকেলিং সম্পর্কে।  

প্লাস্টিক রিসাইকেলিং

প্রথমে অবাক হওয়ার মত একটি বিষয় দিয়ে শুরু করা যাক, প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পণ্যের মধ্যে কোকাকোলা আমাদের খুব পরিচিত নাম। কোকাকোলা প্লাস্টিকের বোতলের বাজারজাত করা হয় সেই বোতলগুলো এক মিনিটে 91 বিলিয়নের বেশি তৈরি হয়। এবং সবচেয়ে অবাক করার মত বিষয় এই যে 91 মিলিয়ন  বোতল গুলোর মধ্যে 455 টন বোতল রিসাইকেলের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। 

অনেকের ধারণা প্লাস্টিক যেহেতু বাইগ্রেডেট তাই এটিকে নিষ্কাশন করা যায় না তবে যথাযথ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এ ধরনের প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করা সম্ভব। এই পর্যায়ে জানাবো রিসাইকেলিং কিভাবে করা হয় এবং কিভাবে আপনি  প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা করবেন। প্রথমেই বুঝে নিতে হবে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা কি এবং কতভাবে রিসাইকেলিং ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জন করা যায়। 

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা কি? 

যেহেতু পরিবেশদূষণের পেছনে প্লাস্টিক দায়ী, তাই নাস্তিকদের পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্লাস্টিক সংগ্রহ করে তার দ্বারা নতুন কোনো পণ্য তৈরি করার প্রক্রিয়াকে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং বলে। আর যখনই উক্ত কাজটি মুনাফা অর্জনের লক্ষে নির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে তখন তাকে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা বলা হবে।বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ খুবই প্রশংসনীয়। উক্ত কাজের মাধ্যমে ছোট থেকে বড় সকল প্লাস্টিক নির্ভর কোম্পানি যেমন:  কোকাকোলা, ইউনিলিভার, পেপসিকোসহ অন্যান্য। 

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা মূলত গ্রুপ আঁকারে একত্রিত কিছু কাজের সংমিশ্রন। রিসাইক্লিং প্রসেসে যে কাজগুলো করা হয় সেগুলো হলোঃ

  • প্রথমে প্লাস্টিক বাছাই করতে হবে
  • বাছাইকৃত প্লাস্টিক সর্টিং করার মাধ্যমে পৃথকীকরণ কথা হবে
  • সে গুলোকে একটি শেডের আওতাভুক্ত করতে হবে
  • প্লাস্টিক  গুলোকে পরিষ্কার করে গলানো বা মেল্ট করতে হয় 
  • পরিশেষে সেগুলোকেই প্লেট  আকারে তৈরি করা হয়।

তবে উল্লেখ্য যে পিওর প্লাস্টিক তৈরির তুলনায় উড়িষ্যায় প্লাস্টিক তৈরি করা খুব কম খরচে। এবং মানের দিক থেকেও বেশ পিছিয়ে থাকে। যার কারণেই রিসাইকেল প্লাস্টিক প্রক্রিয়াকরণের পর সেগুলো দিয়ে ইউজ এন্ড থ্রো কন্টেইনার, বাক্স, পলিথিন, প্যাকেট, বা পিইটি বোতল তৈরি করা হয়।

তা ছাড়াও বিভিন্ন দেশে রাস্তার ডেভলপ করার ডিপার্টমেন্টগুলো নিম্নমানের প্লাস্টিক দিয়ে রাস্তা বানানোর কাজে লাগিয়ে থাকে যাকে আমরা আলকাতরা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। তাছাড়া বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কান্ট্রি গুলোতে এই ধরনের প্লাস্টিক তারা সাবান শ্যাম্পু বোতল বা প্যাকেট তৈরি করে থাকে।

ব্যবহারবিধির দিক থেকে চিন্তা করলে এই ধরনের প্লাস্টিক আরো অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে যার কারণে বিশ্বব্যাপী রিসাইকেলিং প্লাস্টিক এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় বাজারজাতকরণ খুব স্বল্প। যার কারণে ব্যবসা হিসেবে প্লাস্টিক রিসাইকেলিং বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য বেশ কার্যকর। 

রি-সাইকেল প্লাস্টিকের প্রকারভেদ

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা শুরু করার আগে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে প্লাস্টিকের প্রকারভেদ সম্পর্কে কোন ধরনের প্লাস্টিক কি কাজে ব্যবহৃত হয় সেটা জানাটা খুব জরুরি কারণ সেটির প্রেক্ষিতেই রিসাইক্লিং ব্যবস্থা পৃথক হয়ে থাকে এবং ব্যবহার ক্ষেত্রেও এগুলোর পৃথক ভাব লক্ষ্য করা যায়। এক ক্যাটাগরির প্লাস্টিক আপনি অন্য ক্যাটাগরির পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করতে পারবেন না তাই দেখে নিন কোন ক্যাটাগরির প্রোডাক্টের জন্য কোন ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

PET / PETE (পলিথিন টেরেফথালেট): বলতো সব ড্রিংক বা জুসের বোতল তৈরীর ক্ষেত্রে এই ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

HDPE (High-density পলিথিন): দুগ্ধ জাতীয় প্রোডাক্ট এবং শ্যামপুর কৌটাতে এই ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

PVC (পলিভিনাইল ক্লোরাইড): পানির পাইপ সুইচ জুসের বোতল জাতীয়  পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। 

LDPE (লো ডেনসিটি পলিথিন): সমস্ত গার্বেজ ব্যাগ অথবা বিন এর ক্ষেত্রে এ ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

PP (পলিপ্রোপিলিন): এই জাতীয় প্লাস্টিক দিয়ে ফুড কন্টেইনার, লাঞ্চ বক্স জাতীয় পণ্য তৈরি হয়।

PS (পলিস্টাইরিন): ফোমের কাপ, প্লাস্টিকের চামুচ ও কন্টেইনারের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

কি কি লাইসেন্স প্রয়োজন প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা করতে 

প্রতিটি ব্যবসার নয় প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসার ক্ষেত্রে বৈধতার জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনপত্র এর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি নতুন ব্যবসা শুরু করেন প্লাস্টিক রিসাইক্লিং সংক্রান্ত তবে নিম্নলিখিত লাইসেন্স গুলো প্রয়োজন হবে।

  • দূষণ ব্যবস্থাপনা বোর্ড কর্তৃক এন ও সি
  • ফ্যাক্টরির লাইসেন্স
  • এম এস এম ই রেজিস্ট্রেশন
  • জিএসটি রেজিস্ট্রেশন এবং
  • এফ এস এল সার্টিফিকেট

কত টাকা মূলধন দরকার প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা করার জন্য 

ঠিক কত টাকা মূলধন লাগবে এটা স্পেসিফিক করে কোনো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেই বলা যায় না, এটা নির্ভর করে আপনি কত বড় অথবা ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে মেশিনের দাম, লোকবল, স্থান, উপকরণ সংগ্রহ সহ বিভিন্ন উপাদান প্রভাবিত করে মূলধনের ক্ষেত্রে। তবে ওভারল একটি ধারনা চাইলে তা দেয়া যেতে পারে। 

মূলত যদি ফ্যাক্টরি স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসাটি শুরু করতে চান তবে প্রথমেই ২০ – ৩০ লক্ষ টাকার মতো প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্রসেসিং এর জন্য খরচ হবে ৫০ লক্ষ টাকার সমপরিমাণ অর্থ। মধ্যম একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পেক্ষিতে উক্ত অ্যামাউন্ট ধরা হয়েছে। অবশ্য আপনার ক্ষেত্রে এর তুলনায় অবশ্য আপনার ক্ষেত্রে এর তুলনায় কম বা বেশি হতেই পারে। 

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসায় লাভের পরিমাণ 

অবশ্যই প্রতিটি ব্যবসায় লাভের উদ্দেশ্যেই করা হয় এক্ষেত্রে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং এর মত পরিবেশবান্ধব ব্যবসার ক্ষেত্রে ও লাভের সম্পর্ক অবশ্যই রয়েছে। মূলত আপনি যেমনটা বিনিয়োগ করবেন তার আনুপাতিক হারেই লাভের প্রত্যাশা করবেন এটাই স্বাভাবিক। একটি ব্যবসায় 30 থেকে 50 লক্ষ টাকা বিনিয়োগের ফলে মাসে 5 থেকে 6 লক্ষ টাকা আয় প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। আর ইতিবাচক দিক যথাযথ ক্লাইন্ট ধরে সঠিক উপায়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারলে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে মাসে 5 থেকে 6 লক্ষ টাকা আয় করা যায়। 

কিভাবে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা  শুরু করা যায়? 

এই পর্যায়ে  জানানো হবে সেই পদ্ধতি সম্পর্কে যার মাধ্যমে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। পুরো ব্যাপারে ইতিবাচক দিক এই যে এই সেক্টরটি একদম নতুন যার কারণে নতুন  উদ্যোক্তারা পুরো সুযোগ পাবে উক্ত সেক্টরের নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার। অন্যান্য সেক্টর হতে দেখা যায়, ইতিমধ্যে বড় বড় কোম্পানি নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করেছে যার ফলে নতুনরা তেমন সাড়া পাচ্ছে না। কিন্তু প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা এর ক্ষেত্রে নতুনদের রয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা শুরু করা যায় এবং শুরু করতে করণীয় স্টেপ গুলো  সম্পর্কে। 

মার্কেট অনুসন্ধান করতে হবে 

যে কোন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে মার্কেট এনালাইসিস করা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মাধ্যমে বাজারে উক্ত প্রোডাক্টের চাহিদা কেমন তার সাথে কি পরিমাণে পণ্য উৎপাদন করতে হবে সে সকল পরিকল্পনা করা যায়। প্রাথমিক পরিসংখ্যান এর মাধ্যমে ব্যবসায় পরিকল্পনা সংক্রান্ত স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।

আপনি যেই এরিয়াতে ব্যবসাটি শুরু করতে চাচ্ছেন সেই এরিয়াতে প্লাস্টিকের চাহিদা কেমন কিংবা রিসাইকেল করার মত প্লাস্টিক সরবরাহ ব্যবস্থা কেমন সে বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে। এক্ষেত্রে রিসাইক্লিং সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে কেননা সব ধরনের প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করার জন্য উপযুক্ত নয়। এক্ষেত্রে কোন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন তাছাড়া আরেকটি কাজ করতে হবে যে, আপনার এরিয়ায় যেসকল ম্যানুফ্যাকচারার রয়েছে তারা  রিসাইকেল প্লাস্টিক এর উপর আগ্রহী কিনা তার সার্ভে করে দেখতে পারেন। মোটকথা ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ স্থাপন হবে এরুপ সকল কার্যক্রমে করে যেতে হবে মার্কেট অনুসন্ধান এর ক্ষেত্রে।

ব্যবসায়ের পরিকল্পনা 

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলো প্লাস্টিক সংগ্রহ করা রিসাইকেলিং এর জন্য। উক্ত কাজের জন্য পারফেক্ট বিজনেস প্লান এর দরকার রয়েছে। আপনি যত বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করতে পারবেন রিসাইকেলিং এর জন্য আপনার ব্যবসার জন্য ততোই উত্তম। উক্ত কাজকে সহজ করে স্থানীয় লোকাল ভলেন্টিয়ার বা এনজিওর সহায়তা নিতে পারেন, তাছাড়া পরিবেশবান্ধব বেশকিছু সংস্থা রয়েছে যেগুলোর সহায়তায় উক্ত কাজটি সম্পন্ন করা যায়। তাদের কাছে ব্যাপক তথ্য থাকে কেননা তারা প্রতিনিয়ত পরিবেশের রক্ষার জন্য বর্জ্য নিষ্কাশন এর কাজ করে থাকে। যেহেতু আপনার প্রতিষ্ঠানটি সমাজকল্যাণে ব্যাপক অবদান রাখে তাই তাদের সহায়তায় উক্ত কাজটি সহজ ভাবে করতে পারবেন। এই কাজটি আপনি দুই ভাবে করতে পারেন প্রথমত কর্মী নিয়োগ দিয়ে নিজেই বিভিন্ন স্থান থেকে বর্জ্য প্লাস্টিক সংগ্রহ করতে পারেন অথবা যারা এ সকল কাজে লিপ্ত তাদের থেকে ক্রয় করতে পারেন। তবে যেহেতু প্লাস্টিক সংগ্রহ উক্ত ব্যবসায়ের মূল কার্যক্রম তাই প্রথমটি করাই শ্রেয়। 

ব্যবসা বৈধ্য করার লক্ষে রেজিস্ট্রেশন করুন

অন্যান্য ব্যবসার ন্যায় প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমে আইনি অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়া নিবন্ধনের জন্য রাজ্যের সেক্রেটারি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে এবং সেখানে নিজের ব্যবসা সংরকান্ত নথি গুলো সাবমিট করতে হবে। একটি নিদিষ্ট সময় পর আপনার প্রতিষ্ঠানের সব ঠিক ঠাক এবং অনুমোদনের যোগ্য হয়ে থাকলে আপনাকে অনুমোদন প্রদান করবে, যার মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠান বৈধ্যতা পাবে এবং ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। 

এটি ছাড়াও বেশ কিছু স্থান ও খাতে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় যা ইতিমধ্যে উপরে উল্লেখ্য রয়েছে।   

ব্যবসায়ের টিন আইডির আবেদন করুন

টিন আইডি হলো এমন এক আইডি যা ব্যবহার করা হয়ে থাকে সরকারি ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টিন আইডি থাকাটা জরুরি, কেননা এটার মাধ্যমে ব্যবসায়ের কার্যক্রম বৈধ ভাবে সম্পন্ন করা যাবে। কিভাবে নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য টিন আইডি বা টিন সার্টিফিকেট তৈরি করবেন সেই বিষয়ে ইতিমধ্যে আমাদের ওয়েবসাইটে একাধিক টিউটরিয়াল দেয়া আছে। এগুলো দেখে জেনে নিতে পারবেন টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কে সকল খুঁটিনাটি। 

প্রয়োজনীয় উপাদান, যন্ত্রপাতি ও স্থান নির্বাচন

এই পর্যায়ে আপনাকে মূলধন সংগ্রহের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। কেননা প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মেশিনারি, উপাদান, উপযুক্ত যন্ত্রপাতি, স্থান নির্বাচন ও সংগঠন মূলক কার্যক্রমের ব্যয় করতে হবে।

মূলধন সংগ্রহের জন্য ব্যক্তিগত অর্থায়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসায়িক লোন গ্রহণের মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি না জেনে থাকেন কিভাবে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়িক লোন নিতে হয়, তবে উক্ত আর্টিকেলটি আপনার অবশ্যই পড়া উচিত। কেননা সেখানে আলোকপাত করা হয়েছে সেই সকল বিষয় সম্পর্কে যা অনুসরণের মাধ্যমে সহজেই ব্যাংক থেকে ব্যবসায়িক লোন নেওয়া সম্ভব।  

স্থান নির্বাচন – প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা এর ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচনের সময় আপনাকে দুইটি বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে হবে। প্রথমত আপনি যে স্থানে কারখানা স্থাপন করতে চাচ্ছেন সেখানে পর্যাপ্ত লোকবল আছে কি-না। দ্বিতীয়তঃ উক্ত স্থানে প্লাস্টিক বর্জ্য রাখার জন্য যথেষ্ট জায়গা আছে কি-না। দু দিক থেকে বিবেচনা করে উক্ত কাজের জন্য যেকোনো শিল্প এলাকা বেছে নেওয়া উত্তম। 

যন্ত্রপাতি – ইতিমধ্যে হয়তো বুঝে গেছেন প্লাস্টিক রিসাইক্লিং এর জন্য আপনাকে একাধিক মেশিনারি বা যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে কেননা উক্ত সেক্টরে একাধিক কাজের জন্য একাধিক প্রযুক্তি প্রয়োজন হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ  প্লাস্টিক সেপারেটর, শ্রেডার, ব্রেকার, শ্যাক স্টিচার, প্রি-ওয়াশিং সিস্টেম, গ্র্যানিউল মেকার, রিন্স সিস্টেম, ড্রায়ার  ইত্যাদি। মূলত জনের উপরেই প্রোডাকশন এর পরিমাণ নির্ভর করে। তাই যন্ত্রপাতি সিলেকশন এর ক্ষেত্রে অবশ্যই সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের সাথে রাখা উচিত। 

প্রয়োজনীয় উপাদান

  • মিক্সড প্লাস্টিক
  • পানি
  • স্যানিটাইজার
  • কন্টেইনার
  • বিভিন্ন হেল্পিং টুলস

ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানিং করুন 

যেহেতু আপনাকে একসাথে অনেক পরিমাণের প্লাস্টিক সংগ্রহ করতে হবে তাই কম খরচে অধিক পরিমাণ প্লাস্টিক সংগ্রহের জন্য ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানিং সৎ থাকতে হবে। এটি এমন ভাবে করতে হবে যাতে করে আপনার খরচ এর অধিকাংশই বেঁচে যায় এবং যথাযথ উপায় আপনার ক্লায়েন্ট বা কাস্টমার দের কাছ থেকে অধিক পরিমাণ প্লাস্টিক আপনার মানুফাকচারিং প্লান্ট পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি ক্লায়েন্টদের প্লাস্টিক জমানোর জন্য বিন প্রদান করতে পারেন, অথবা  মুভি ট্রাক এর সাহায্যে প্লাস্টিক রিসাইকেলিং প্লান্ট পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারেন। 

ব্যবসায়ের প্রচুর মার্কেটিং করুন 

প্রতিটি ব্যবসায়ী স্থাপনের পর থেকে উক্ত ব্যবসার পণ্য বিক্রি ও ক্লায়েন্ট খোঁজার জন্য যে জিনিসটি প্রতিনিয়ত করে যেতে হয় সেটির নাম marketing। আপনাকে প্রতিনিয়ত মার্কেটিং করে যেতে হবে আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সকলকে অবগত করার জন্য। যোগাযোগ রাখুন উক্ত ব্যবসায়ের সাথে জড়িত প্রতিবেশী ব্যবসায়ীদের সাথে, এবং কমিউনিটি করুন উক্ত সেক্টরের ছোট বড় সকল ব্যবসায়ীদের সাথে। এতে করে ব্যক্তিগত পরিচয় ও রিকমেন্ডেশন এর মাধ্যমে ক্লাইয়েন্ট খুঁজে পাবেন।

তবে এটি মুখ্য কাজ নয়। সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য বর্তমানে অনলাইন অফলাইন উভয় ভাবে প্রচুর মার্কেটিং করতে হবে। নিজের ব্যবসায়ের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন যেখানে উক্ত ব্যবসা সম্পর্কে সচেতনতা এবং প্রতিটি আপডেট সেখানে লিপিবদ্ধ করবেন। তাছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে টার্গেট অডিয়েন্স কে আপনার ব্যবসার উপস্থিতি সম্পর্কে জানান। যেহেতু এই সেক্টরটি একেবারেই নতুন এবং অনেকেই রয়েছে যারা উক্ত বিষয়ে অবগত নয় তাই সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজ প্রতিষ্ঠানের আবির্ভাব ঘটাতে পারেন এবং পজিটিভ মাইন্ডসেট তৈরি করতে পারেন  টার্গেট  ক্লায়েন্টের কাছে। 

তবে সর্বদা চেষ্টা করবেন আপনার এরিয়ায় বা আপনার নিকটস্থ যেসকল মেনুফেকচারিং কোম্পানি রয়েছে তাদের সাথে কন্টাক্ট করার, কেননা একবার তাদের সাথে ডিল করার মাধ্যমে যদি ভাল পারফর্ম করতে পারেন তবে সবসময়ের ক্লায়েন্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এছাড়াও বেশকিছু টার্গেটেড কাস্টমারদের আছে যাদের সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  • বিভিন্ন ধরনের রিটেইল ও সুপার শপ বা মার্কেট
  • পানির বোতল ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি
  • বিভিন্ন বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি
  • তাছাড়া রয়েছে বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি
  • এবং প্যাকেজিং ও পাইপ ম্যানুফ্যাকচারার ইন্টারেস্টিং

প্রফিট মার্জিন নির্ধারণ করার উপায় 

যে কোন ব্যবসার শুরু করার ক্ষেত্রে উক্ত ব্যবসাটির প্রফিট মার্জিন কতটা তা জানা খুব জরুরি। এর মাধ্যমে উক্ত ব্যবসা থেকে আপনার মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা কত শতাংশ তা নির্ণয় করা সহজ হবে। উক্ত ব্যবসায় আপনি বিনিয়োগ করবেন কিনা সেটির সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রফিট মার্জিন জানা জরুরী। এই পরিচয় জানব প্লাস্টিক রিসাইক্লিং  ব্যবসা এর প্রফিট মার্জিন সম্পর্কে। 

২০০৮ সালে নির্ধারণ করা হয় প্লাস্টিক রিসাইক্লিং বাজার মূল্য ৪১.৭৩ বিলিয়ন।  অন্যদিকে সি এ জি আর এর তথ্য মতে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং এর বাজার দর ৬.৬ বিলিয়ন। উভয় পরিসংখ্যানের দিকে লক্ষ রেখে বলা যায়, ধীরে ধীরে এই খাত বিভিন্ন সেক্টর প্রলুব্ধ করবে নিজেদের পণ্যসমূহ রিসাইক্লিং এর জন্য। যার ফলে 20 থেকে 60 শতাংশ প্রফিট মার্জিন থাকবে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং মার্কেটে।

তবে এখানে একটি বড় সুযোগ রয়েছে যে যেহেতু বর্তমানে মানুষ প্লাস্টিকের ঝুঁকির কারণ সমূহ এবং যুগের প্রভাবসমূহ জানে যার কারণে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং পণ্যের প্রতি যথেষ্ট আকর্ষণ রয়েছে এবং অন্যদিকে খুব সহজেই উক্ত র ম্যাটেরিয়ালস গুলো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তাই যথাযথভাবে ব্যবস্থা করতে পারলে উক্ত ব্যবসা থেকে খুব ভালো কিছু করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং মেশিনের দাম

ইতিমধ্যে বলা হয়েছে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা পরিচালনার জন্য বা রিসাইকেল করার জন্য বেশ কিছু যন্ত্রপাতি বা মেশিনের প্রয়োজন হয়। প্রথমেই জেনে নিন মেশিন গুলোর নাম।

  • প্লাস্টিক সর্টিং মেশিন 
  • প্লাস্টিক শেডিং মেশিন 
  • ক্লিনিং স্যানিটাইজিং মেশিন 
  • প্লাস্টিক মেল্টিং মেশিন 
  • ড্রায়ার 
  • কুলার 
  • প্লেট তৈরি করার মেশিন। 

উপরে উল্লেখিত মেশিন গুলোর দাম স্পেসিফিক ভাবে একেক করে বলা সম্ভব না, কেননা এগুলো প্রাইজট্যাগ লাগানো কোনো পণ্য নয়। এগুলোর দাম নির্ভর করে ইম্পোটারদের নির্ধারনকৃত মূল্যের উপর। আপনি যদি চায়না বা ভারত থেকে উক্ত মেশিন গুলো নিয়ে আসতে চান তবে এই খাতে আপনার খরচ হবে প্রতিটির ক্ষেত্রে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি। ওভারল ৩০ লাখ টাকার মত খরচ হতে পারে। এক্ষেত্রে একটি সচ্ছ ধারনার জন্য ভারতের ইন্ডিয়ান মার্ট অনলাইন ওয়েবসাইটের আলোকে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করার জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন গুলোর দাম কেমন তা দেখে নিতে পারেন এখানে ক্লিক করে। 

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসার ট্রেনিং

যেকোনো ধরনের কাজে দক্ষতার জন্য উক্ত কাজটি করে যেতে হয় অনেক সময় ধরে। যদিও প্লাস্টিক রিসাইক্লিনের সেক্টরটি নতুন তবে এখন অব্দি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে। আপনি যদি একেবারেই দক্ষ না হয়ে থাকেন তবে উক্ত সেক্টরে ব্যবসা করে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। অন্যদিকে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে বেশ ভালো ভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। প্রশ্ন হচ্ছে দক্ষতা অর্জন করার উপায় কি? এক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রশিক্ষনে। এক্ষেত্রে আপনি এই সংক্রান্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং নিতে পারেন অথবা ইন্টার্ন করতে পারেন বা নিয়োগ প্রাপ্ত হতে পারেন। যেখানে কর্মের মাধ্যমে নিজের মত করে ব্যাসিক থেকে এডভান্স পর্যায়ের জ্ঞান অর্জন করে নিয়ে নিজ ব্যবসা শুরু করে সেখানে প্রয়োগ করবেন। 

গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

যেকোনো নতুন উদ্যোগ সহজ নয়, প্রয়োজন ধৈয্য, মনোবল, আত্মবিশ্বাস সহ পর্যাপ্ত মূলধন ও জ্ঞানের। সব কিছুর সংমিশ্রণের মাধ্যমেই গড়ে উঠে একটি প্রতিষ্ঠান। প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা এর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার প্রযোজ্য। বরং এই সেক্টরে তুলনামূলক বেশি পরিশ্রম দিয়ে যেতে হবে, তবে আর যাই হোক সুযোগের দিক থেকে চিন্তা করলে এটা বর্তমান ও ভবিষতের জন্য প্রচন্ড ভালো একটি আইডিয়া যেখানে চাইলেই যেকেউ কাজে লাগাতে পারে। 

মনে রাখতে হবে নতুনত্বের মধ্য দিয়েই নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে পুরো বিশ্বের সামনে। আর এমনই নতুনত্বের ছোয়া সহিত ব্যবসা আইডিয়া নিয়েই বাংলা আলো ওয়েবসাইটের কার্যক্রম যাতে করে আপনার মত সকল উদ্যোগি মনভাবের লোকদের সাহায্য হয় নিজের লক্ষ্য অর্জনে, আর তাই তো ব্যবসা বাণিজ্য নামক ক্যাটাগরিটি রাখা হয়েছে ব্যবসা সংক্রান্ত সকল বিষয়ের খুঁটিনাটি বিষয়ের আলোকে। 

Visited 45 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here