ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ম, দোয়া ও ফজিলত 

0
35

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম

আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছে তার ইবাদত করার জন্য তার ইবাদত করার জন্য। যার জন্য আমাদের ৫ ওয়াক্তের জন্য ফরজ নামাজ নির্ধারিত করা রয়েছে। তবে এই ৫ ওয়াক্ত নামাজই একমাত্র ইদাবতের মাধ্যম নয়। এরুপ ফরজ নামাজ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সুন্নত ও নফল নামাজ। আর এমনই এক নফল ইবাদতের নাম হলো “ইশরাকের নামাজ” আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা ইশরাকের নামাজ সম্পর্কে অবগত নয় অথবা ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানে না। আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। কেননা, এবারের আর্টিকেল জুরে থাকছে ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। 

ইশরাকের নামাজ কখন পড়া হয়? 

মূলত ফজরের নামাজের পরে সূর্য উদয় হলে ইশরাকের নামাজ পড়তে হয়। তবে স্পেসিফিক ভাবে বলতে গেলে, সূর্য উঠার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ইশরাকের নামাজ পড়ার সময় হয়। আবার কিছু কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্য উঠার ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর থেকে ইশরাকের নামাজ পড়তে হয়। 

আমাদের নবীজি প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজ শেষ করে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত একই স্থানে অবস্থান করতেন। এরপর সূর্য উঠার পর ২ রাকাত করে মোট ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন যেটাকে ইশরাকের নামাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

ইশরাকের নামাজের নিয়ত 

মূলত ইশরাকের নামাজের জন্য আলাদা ভাবে কোনো নিয়ত নেই। তবে এমনিতে নিয়ত করার ক্ষেত্রে অন্য সকল নামাজের মত নিয়ত করতে পারে। এক্ষেত্রে অন্যান্য নামাজের মধ্যে উক্ত নামাজের নামের বদলে “নফল কিংবা ইশরাকের সালাত” বললেই হয়ে যাবে। অবশ্যই কত রাকাত করে আদায় করা হচ্ছে তা উল্লেখ্য করা জরুরি। 

তাছাড়া নামাজের নিয়ত করার ক্ষেত্রে আরবীতেই করতে হবে এমন কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। আপনি চাইলে বাংলাতেও নামাজের নিয়ত করতে পারেন। এক্ষেত্রে ইশরাকের নামাজের নিয়ত কিছুটা এমন ভাবে করা যেতে পারে যে, 

“আমি কেবলা মুখী হয়ে দুই রাকাত ইশরাকের সালাত আদায়ের নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার” 

এবারে শুরু করে বাকিটা অন্যান্য নফল নামাজের মত আদায় করে নিতে পারেন। তবে আরো ভালোভাবে বুঝার সুবিধার্থে নিম্মের ধাপটি অনুসরণ করুন। 

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম 

ইশরাকের নামাজ পড়ার জন্য ধরাবাধা বিশেষ কোনো নিয়ম নেই, অন্য সব নফল নামাজের মতই এটিও একটি নফল ইবাদত যা দুই রাকাত করে আদায় করতে হয়। নফল ইবাদতের কোনো নির্ধারিত মাত্রা নেই তবে সর্বোত্তম হলো ২ রাকাত থেকে শুরু করে ১২ রাকাত অব্দি পড়া। 

এই নামাজটি পড়ার জন্য আলাদা ভাবে কোনো সূরা বা কেরাতের প্রয়োজন নেই, অন্যান্য নামাজে যেভাবে সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়া হতো তেমন ভাবেই পড়তে হবে। 

ফজরের নামাজ শেষ করার পর উক্ত স্থান ত্যাগ না করে সূর্য উদয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়টুকুতে জিকির, দোয়া, কুরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে। 

এরপর যখন সূর্য উদয় হবে তখন থেকে ঠিক ১০ – ১৫ মিনিট পর ইশরাকের নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে নিয়ম হবে – 

১) প্রথমেই জায়নামাজে দাঁড়িয়ে জায়নামাজের দোয়া পড়তে হবে। এক্ষেত্রে জায়নামাজের দোয়া না জানা থাকলে এক নজরে দেখে নিন: 

اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

আরবি উচ্চারণঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।

বাংলা অনুবাদ: নিশ্চই আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইলাম, যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন । আমি মুশরিকদিগের দলভুক্ত নহি।

২) নামাজের নিয়ত করা এবং তাকবিরে তাহরিমা দিয়ে নামাজ শুরু করা। [ আমি কেবলা মুখী হয়ে দুই রাকাত ইশরাকের সালাত আদায়ের নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার ]

৩) সূরা ফাতিহা পড়া এবং তার সাথে সূরা মিলানো

৪) যথা নিয়মে রুকু ও সিজদাহ করা

৫) পুনরায় দাড়িয়ে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়া

৬) যথা নিয়মে রুকু – সিজদাহ করা 

৭) সিজদাহের পর বসে আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ ও সূরা মাসুরা পড়া

৮) সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করা। 

ইশরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়? 

মূলত ইশরাকের নামাজের জন্য স্পেসিফিক কোনো সূরা নেই। অন্যান্য রেগুলার নামাজ পড়ার সময় যে সূরা গুলো পড়া হয়ে থাকে সেগুলোই পড়া যাবে। এক্ষেত্রে হোক সেটি কেরাত তিলাওয়াত কিংবা ছোট সূরা পড়া। তবে প্রথমে অবশ্যই সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। 

ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত 

প্রথমে যদি শব্দের ভাবার্থক অর্থের দিকে ফোকাস করি তবে দেখা যাবে, ইশরাক আরবী শব্দ যার বাংলা অর্থ আলোকিত হওয়া। অন্যদিকে, ফজিলত শব্দের অর্থ বিজয়ী বা সফল। আর নামাজের ফজিলত বলতে বোঝায়, নামাজ পড়া মাধ্যমে বান্দা কি লাভ করলো সেটি। আলোকিত হওয়া দিনের শুরু পৃথিবীতে আল্লাহ এর ইবাদতের ফলে কি কি লাভ অর্জন করা যাবে তা জানতে নিশ্চই আগ্রহী হচ্ছেন? তবে নিম্ম লিখিত ফজিলত গুলো দেখে নিন। 

ইশরাক নামাজ হল একটি নফল প্রার্থনা যা সূর্যোদয়ের পর, সূর্য উদয়ের প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে করা হয়। এটি সালাত আল-দুহা বা চাশতের নামাজ নামেও পরিচিত। “ইশরাক” শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ “শারক” থেকে যার অর্থ “সকালের আলো”।

ইশরাকের নামাযের গুরুত্ব অনেক হাদীসে বলা হয়েছে। ইশরাকের নামায সম্পর্কে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হাদিসগুলোর মধ্যে একটি হলো – আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “মহানবী (সাঃ) যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করে তারপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সেই ব্যক্তি একটি পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহ হজের সাওয়াব পাবেন”। (তিরমিজি – হাদিস নংঃ ৫৮৬) 

এই হাদিসে ইশরাকের নামায পড়ার সওয়াব ও উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে। এটি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং হজ ও ওমরাহ পালনের সওয়াব অর্জনের একটি মাধ্যম।

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “সকালবেলা তোমাদের প্রত্যেকের শরীরের প্রতিটি জয়েন্টে সদকা করা উচিত। আল্লাহর প্রতিটি নামের উচ্চারণ, তাসবীহ (অর্থাৎ, সুবহানাল্লাহ বলা) একটি দয়া প্রার্থনার কাজ, তাঁর প্রশংসার প্রতিটি উচ্চারণ (অর্থাৎ, আল-হামদু লিল্লাহ বলা), তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণার প্রতিটি উচ্চারণ (অর্থাৎ আল্লাহ হু আকবার বলা) এবং তাঁর ক্ষমতার ঘোষণার প্রতিটি উচ্চারণ (অর্থাৎ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) এবং ভাল কাজের আদেশ করা একটি দান কাজ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা একটি সদকা কাজ এবং দুই রাক দুহা নামাযের আহস যা কেউ পূর্বাহ্নে আদায় করে তা এ সবের সমান (পুরস্কারে). (মুসলিম)

এই হাদিসটি ইশরাকের নামায সহ নফল নামায পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে, যা আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার অর্জনের এবং তাঁর ক্ষমা চাওয়ার উপায় হিসেবে।

আরবীতে, ইশরাকের নামায صلاة الضحى (সালাত আল-দুহা) বা صلاة الشروق (সালাত আল-শারক) নামে পরিচিত। বাংলায় এটি দুহা নামাজ (দুহা নামাজ) নামে পরিচিত। 

উপসংহারে, ইশরাকের নামায হল একটি অত্যন্ত বাঞ্ছনীয় নফল ইবাদত যা যারা এটি করে তাদের জন্য অনেক পুরষ্কার পাবেন। এটি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার, তাঁর আশীর্বাদ ও পুরস্কার অর্জন এবং একজনের আধ্যাত্মিক সুস্থতার উন্নতির একটি মাধ্যম।

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর 

১) কখন ইশরাকের নামাজ পড়া যাবে না?

যে সকল সময়ে নফল নামাজ পড়া যায় না সে সকল সময় ইশরাকের নামাজ পড়া নিষেধ, সাধারণত ঈদের নামাজের আগে ইশরাকের নামাজ পড়ার নিষেদাজ্ঞা রয়েছে। তাছাড়া অন্য সকল দিনে পড়া যাবে। 

২) ইশরাকের নামাজ সুন্নত না-কি নফল?

ইশরাকের নামাজ নফল ইবাদত। ইশরাক আরবী শব্দ এর অর্থ আলোকিত হওয়া। সূর্য উদয়ের পর পৃথিবী আলোকিত হয় তাই ইহাকে সালাতুল ইশরাক বলা হয় যা নফল ইবাদতের মধ্যে পরে। 

৩) ঈদের দিন কি ইশরাকের নামাজ পড়া যায়? 

নাহ, ঈদের দিন ঈদের নামাজের আগে ইশরাকের নামাজ পড়া যাবে না। 

পরিশেষে কিছু কথা 

এই ছিলো “ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ম, দোয়া ও ফজিলত” সংক্রান্ত বিশেষ আর্টিকেলটি যেখানে উক্ত ইবাদত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে যথাযথ ভাবে পালন করার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এরুপ ইসলাম বিষয়ক আরো তথ্য জানতে ও বুজতে অনুসরণ করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ইসলাম নামক ক্যাটাগরিটি। 

Visited 11 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here