যাওয়াল নামাজের নিয়ম । সময়, গুরুত্ব, ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত  

0
11

আচ্ছা আপনি কি যাওয়াল নামাজ সম্পর্কে অবগত? দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে আমাদের মধ্যে  অনেকেই রয়েছে যারা যাওয়াল নামাজ কি, এটা কখন আদায় করা হয়, এটার ফজিলত সম্পর্কে জানি না। অসুবিধা নেই, না জানাটা দোষের নয় তবে জানার সুযোগ থাকা সত্ব্যেও জানতে না চাওয়াটা অবশ্যই ঠিক নয়। তাই আসুন জেনে নেই যাওয়াল নামাজের নিয়ম এবং সেই সাথে উক্ত নামাজের সম্পর্কে সকল খুঁটিনাটি। আল্লাহ সর্বশক্তিমান।  

যাওয়াল মানে কি? 

যাওয়াল একটি আরবি শব্দ (ظهور الشمس) যেটি সেই সময়কে বোঝায় যখন সূর্য তার শীর্ষস্থানে বা আকাশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে থাকে। এটি সাধারণত “মধ্যাহ্ন” বা “দুপুর” হিসাবে অনুবাদ করা হয়। তবে এর বাংলা আভিধানিক অর্থ হলো: বিলোপ, বিলুপ্তি, অস্তগামিতা, সূর্য হেলার সময়, উধাও, মধ্যাহ্ন, দ্বিপ্রহর ইত্যাদি। 

“যাওয়াল” শব্দটি এসেছে আরবি ভাষা থেকে, যা কুরআন ও হাদীসের ভাষা। ইসলামী আইনশাস্ত্রে যাওয়াল অতি গুরুত্বপূর্ণ এক আমল যা কুরআন ও হাদীসে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। 

ইসলামের শরিয়াহ মোতাবেক যাওয়াল হল দিনের দ্বিতীয় প্রহর বা মধ্যাহ্নোত্তর বা অপরাহ্ণের সূচনা শুরুর সময়। বিস্তারিতভাবে বলে বলা যায় দিনের মতো ফাঁকে বা দুপুরের সময় সূর্য যখন মাথার উপর পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে সেই সময়টাকে বা ওয়াক্তকে যাওয়ার বলা হয়। 

যাওয়াল নামাজ বলতে কি বোঝানো হয়েছে?

মূলত মধ্য দিনের যে সময়টাতে নামাজ ও সিজদা করা নিষেধ সেই সময় অতিক্রম হওয়ার পর থেকে যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে সময়টা অবশিষ্ট থাকে সে সময়কে যাওয়ার বলা হয় এবং এই ওয়াক্ততে যে নফল  নামাজ পড়া হয় সেটিকে যাওয়ার নামাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়। 

আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে জোহরের ওয়াক্তের পূর্বে চার রাকাতের চেয়ে নফল নামাজ আদায় করা হয় সেটিকে যাওয়ার সালাত বলা হয়। 

যাওয়াল নামাজের ফজিলত 

আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) সূর্য ঢলার সময় ৪ রাকআত নামায প্রত্যহ্‌ পড়তেন। একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি সূর্য ঢলার সময় এই ৪ রাকআত প্রত্যহ্‌ পড়ছেন?’ তিনি বললেন, “সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয় এবং যোহরের নামায না পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। অতএব আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার নেক আমল (আকাশে আল্লাহর নিকট) উঠা হোক।” আমি বললাম, ‘তার প্রত্যেক রাকআতেই কি ক্বিরাআত আছে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, ‘তার মাঝে কি পৃথককারী সালাম আছে?’ তিনি বললেন, “না।” (মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ্‌, আলবানী ২৪৯নং)

আব্দুল্লাহ বিন সায়েব বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) সূর্য ঢলার পর যোহরের আগে ৪ রাকআত নামায পড়তেন এবং বলেছেন, এটা হল সেই সময়, যে সময় আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয়। অতএব আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার নেক আমল (আকাশে আল্লাহর নিকট) উঠা হোক।” (ঐ ২৫০নং)

চাশতের নামায পড়ার পর ঠিক মাথার উপর সূর্য হওয়ার পূর্বে ৪ রাকআত নফল পড়া সুন্নত। এ নামায মহানবী (ﷺ) পড়তেন। (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩৭নং)

আবু আইয়ুব রা. হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যোহরের পূর্বে চার রাকআত যার মাঝে কোন সালাম নেই তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়।” [আবূ দাঊদ ১২৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৫৮৫, সহীহ আল জামি‘ ৮৮৫, ইবনু মাজাহ্ ১১৫৮ সনদ হাসান]।

নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যোহরের পূর্বের চার রাকাত সালাত ভোররাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) সমতুল্য।’’ [আলবানি, সহিহুল জামি’: ৮৮২, হাদিসটি হাসান]

আব্দুল্লাহ ইবনে সায়েব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ সূর্য (পশ্চিম গগনে) ঢলে যাবার পর, যোহরের ফরযের পূর্বে নবী (সাঃ) চার রাকআত সুন্নাহ সালাত পড়তেন। আর বলতেন, “এটা এমন সময়, যখন আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তাই আমার পছন্দ যে, সে সময়েই আমার সৎকর্ম ঊর্ধ্বে উঠুক। [তিরমিযী ৪৭৮, হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ৮৭৯]।

তাহলে বুঝা যাচ্ছে যাওয়াল সালাত আদায়ের ফজিলত অনেক। এবার এর নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন। 

যাওয়াল নামাজের নিয়ম (বিস্তারিত) 

যাওয়ালের সালাত আমলে মুস্তাহাব, যার মানে এই যে, নামাজ আদায় করলে নেকি হবে তবে আদায় না করলে কোন অসুবিধা নেই। তবে যেহেতু এর ফজিলত অসীম তাই অবশ্যই উক্ত নফল ইবাদতটি আমাদের করা উচিত। এ পর্যায়ে জানবো যাওয়ার নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তার নিয়ম সম্পর্কে। 

যাওয়ার নামাজ অন্য সব নফল নামাজের মতই পড়তে হবে তবে এখানে কিছু ভিন্নতা রয়েছে।  অন্যান্য নফল  নামাজ দুই রাকাত করে পড়া হলেও যাওয়ার নামাজের ক্ষেত্রে চার রাকাত একত্রে পড়তে হবে। 

  •  এক্ষেত্রে প্রথমে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে নামাজ শুরু করতে হবে।
  •  সূরা ফাতিহার সাথে যে কোন একটি সূরা অথবা কেরাত তেলাওয়াত করতে হবে
  •  যথা নিয়মের রুকু ও সিজদা করতে হবে
  •  একই নিয়মে পরবর্তী রাকাত গুলোর নামার সম্পন্ন করতে হবে
  •  চার রাকাত শেষ হলে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে সালাম সম্পন্ন করতে হবে

যাওয়ার নামাজের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো নিয়ত কিংবা দোয়া নেই। আপনি স্বাভাবিকভাবেই অন্যসব নফল নামাজের মতই নিয়ত করতে পারবেন। আপনার যদি আরবিতে বলতে অসুবিধা হয় সেক্ষেত্রে নিজ ভাষা বাংলাতেও নিয়ত করলেই হবে।  এক্ষেত্রে বলতে পারেন:

“ আমি কিবলামুখী হয়ে যাওয়ালের নফল নামাজের নিয়ত করিতেছি আল্লাহু আকবার” 

বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে যে যাওয়ার নামাজের সময়সীমা খুবই কম থাকে। স্বাভাবিকভাবে যাওয়াল নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই। তাই দ্রুত উক্ত নামাজের জন্য দাড়িয়ে যেতে হবে।

অনেকে যাওয়ার নামাজের সাথে যোহরের প্রথম চার রাকাত সুন্নত নামাজকে মিলিয়ে ফেলে। তবে এখানে লক্ষ্য করার বিষয় এই যে যাওয়ার নামাজ এর সময় শেষ হয় যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্যদিকে যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করা হয় যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরে। 

পরিশেষে কিছু কথা 

যাওয়াল নামাজ বর্তমান সময়ে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক নফল ইবাদত।দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছে যারা ইতিপূর্বে যাওয়ার নামাজ সম্পর্কে অবগত ছিল না বা থাকলেও উক্ত আমলটি কখনো করে দেখেনি। আসুন আমরা বিলুপ্তের পথে থাকা বহু ফজিলত সম্পন্ন নফল নামাজটি পুনরায় শুরু করার ইচ্ছা পোষণ করি। প্রতিদিন না হলেও মাঝে মাঝে সময় করে যাওয়াল নামাজ আদায় করি। এবারের আর্টিকেলের মূল বিষয়বস্তু ছিলো “ যাওয়াল নামাজের নিয়ম “ যেখানে যাওয়ার নামাজের সময়, গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করার পাশাপাশি যাওয়াল নামাজের পুরো নিয়ম জানানো হয়েছে। ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন ইবাদতের বিষয় বস্তু সম্পর্কে যথাযথ ভাবে জানতে ও বুজতে অনুসরণ করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ইসলাম নামক ক্যাটাগরিটি। 

Visited 333 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here