ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম: শহর থেকে গ্রাম, প্রতিটি স্থানেই শীতকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলে ব্যাডমিন্টন খেলার। সারা বিশ্বে এই ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য কোন বৈষম্যতা না থাকার কারণে উভয়ের মধ্যে এই খেলাটির জনপ্রিয়তা দেখা যায়। ১৮৭৩ সালে ইংল্যান্ডের ব্লুচেস্টার রাজ্যে ব্যাডমিন্টন গ্রামে ব্যাডমিন্টন খেলার আবির্ভাব ঘটে। ধীরে ধীরে এই খেলার জনপ্রিয়তা বাড়ে এবং সকলে উপভোগ করতে শুরু করে।
সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন রাজ্যের ছড়িয়ে পড়ে ব্যাডমিন্টনের জনপ্রিয়তা। এমন অগ্রগতি দেখে ১৮৯৩ সালে ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন গঠন করা হয়। সাধারণভাবে ব্যাডমিন্টন খেলার কোন নিয়ম অনুসরণ করা না হলেও উক্ত খেলা রয়েছে বেশ কিছু নিয়ম। এই পর্যায়ে জানাবো ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম সম্পর্কে।
ব্যাডমিন্টন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন এর পক্ষ থেকে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য যে নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছে তারই আলোকে সাজানো হয়েছে পুরো আর্টিকেলটি। আশা করি সে বড় আর্টিকেল শেষে ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম সম্পর্কে আপনি যথাযথ ধারণা রাখতে সক্ষম হবেন। ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম সম্পর্কে জানার পূর্বেই জেনে নিন ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য কি কি সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়।
ব্যাডমিন্টন খেলার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সমূহ
প্রায় সব ধরনের খেলার জন্যই কিছু স্পেসিফিক সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়। অনুরূপ ব্যাটমিন্টের ক্ষেত্রেও। ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য যে সকল সরঞ্জাম প্রয়োজন তার প্রতিটি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো।
ব্যাট বা র্যাকেট: প্রচলিত র্যাকেটকে মূলত ব্যাট বলা হয় যা ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবহৃত হয়। দুই পাশের খেলোয়াড়দের হাতে একটি করে ব্যাট থাকে। উক্ত ব্যাটটি সিনথেটিক সুতা দিয়ে তৈরি হয় যার হাতল কাঠ ও স্টিলের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়।
শাটল বা কক: শাটল হলো সেই উপাদান যা ছাড়া ব্যাডমিন্টন খেলা সম্ভবই নয়। মূলত র্যাকেট দিয়ে শাটলে আঘাত করার মাধ্যমে নেটের এপার ওপার করার মাধ্যমেই গেম কন্টিনিউ করা হয়ে থাকে।
ব্যাডমিন্টন নেট বা জাল: দুই পাশে দুই দলের মাঝ বরাবর সীমানা স্থাপন করে এই নেট। এটি খেলাটির অন্যতম আকর্ষন। এটি সাধারণত ২.৫ ফুট লম্বা এবং ৫.১ ফুট উচ্চতায় কোর্টের মাঝ বরাবর টানানো হয়।
ব্যাডমিন্টন কোর্ট: ব্যাডমিন্টন খেলার অন্য সকল উপকরণ সংগ্রহ করার পর কোর্ট আঁকতে হয়। মাটিতে দাগ কেটে তৈরি করা কোর্টে অথবা পাকা ফ্লোরে সাদা রঙের দাগ এঁকে ইনডোর ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করা হয়। কোর্টের সাধারণত আকার হয় ৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২০ ফুট প্রস্থ। নিম্মে ব্যাডমিন্টন খেলার কোট কেমন হবে তার চিত্র প্রদর্শন করা হলো।
BWF অনুযায়ী ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম সমূহ
Badminton World Federation (BWF) অনুযায়ী মোট ৫ টি ধারায় ব্যাডমিন্টন খেলা যায়। ধারা ৫টি হলো: ১) পুরুষ একক; ২) নারী একক; ৩) পুরুষ দ্বৈত; ৪) নারী দ্বৈত; ৫) মিশ্র পদ্ধতি। ব্যাডমিন্টন খেলার খেলোয়াড় র্যাকেট দিয়ে শাটল কে এমন ভাবে আঘাত করে যাতে করে শাটল প্রতিপক্ষের কোর্টে গিয়ে পৌঁছায়। তো কাজ করাকে র্যালি বলা হয়। একজন খেলোয়াড় যতবার র্যালি করবে তার তত পয়েন্ট অর্জিত হবে। যেকোনো একপক্ষ সার্ভিস ফল করলে অপর দল র্যালি অর্জন করবে। এটি ব্যাডমিন্টন খেলার খুব বিগেনার একটি নিয়ম। এগুলো ছাড়াও ব্যাডমিন্টন খেলায় যে নিয়ম গুলো অনুসরণ করা হয় সেগুলো নিম্মে একেক করে উপস্থাপন করছি।
১) কোর্টের মাপ
যদি সিংগেল কোর্টে খেলা হয় তবে কোর্টের সাইজ হবে ৪৪ ফুট দৈর্ঘ এবং ১৭ ফুট প্রস্থ। অন্যদিকে যদি ডাবল কোর্টে খেলা হয় তবে দৈর্ঘ হবে ৪৪ ফুট এবং প্রস্থ হবে ২০ ফুট।
২) ব্যাডমিন্টন খেলার নেট
এই পর্যায়ে কোর্টের মাঝ বরাবর একটি নেট টানিয়ে দিতে হবে। উক্ত নেটের উচ্চতা হবে ৫ ফুট ১ ইঞ্চি (এটি নেটের আদর্শ মাপ) তাছাড়া নেটের প্রতি পাশে ১ টি ফ্রন্ট কোর্ট, ২ টি সার্ভিস কোর্ট এবং ২ টি ব্যাককোর্ট রাখতে হবে।
৩) খেলার পয়েন্ট নির্ধারন
মোট ২১ পয়েন্ট করে ৩ গেমে ম্যাচ সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে যদি উভয় দলের পয়েন্ট ২০ হয় তবে ২ পয়েন্টের ব্যবধানে গেম শেষ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, এক দলের ২০ হলে অন্য দলকে ২২ করে গেম শেষ করতে হবে, আবার একদল ২১ হলে অন্য দলকে ২৩ পয়েন্ট ডিউস করে গেম শেষ করতে হবে। তাছাড়া যদি ২৯ ডিউস হয় সেক্ষেত্র ৩০ পয়েন্টে গেম শেষ করতে হবে। অর্থাৎ যদি উভয় দলের পয়েন্ট ২৯ হয় তবে যে দল আগে ৩০ পয়েন্ট করবে সেই দলই বিজেতা হবে।
৪) টস এবং সাইড বেছে নেয়া
খেলার শুরুতেই টস করে নিতে হবে। যে দল টস জিতবে সেই দল (সার্ভ করা অথবা সাইড বেছে নেয়া) এই দুইটির মধ্যে যেকোনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং অপরদল স্বাভাবিক ভাবেই অন্য সিদ্ধান্ত নিবে। যেমন, একটি দল টস করে যদি জিতে যায় তবে সেই দল যদি প্রথমে সার্ভ করা বেছে নেয় তবে অন্য দলটি সাইড বেছে নেয়ার সুযোগ পাবে। একই ব্যাপার ঘটবে যদি উল্টোটা হয়।
৫) সার্ভ করার নিয়ম
খেলার একদম শুরু থেকে রাইট সাইট বা ডান পাশের সার্ভিস কোর্ট থেকে সার্ভ করা শুরু করবে এবং যেকোনো জোড় সংখ্যার পয়েন্টের ক্ষেত্রে একই পাশ থেকে সার্ভ করা হবে। অন্যদিকে, যদি পয়েন্ট সংখ্যা বিজোড় হয় তবে লেফট বা বাম পাশের সার্ভিস কোর্ট থেকে সার্ভ করা হবে।
৬) সার্ভারদের কোর্ট বদল
সার্ভ করার পর কোনো পয়েন্ট অর্জন হওয়ার আগ অব্দি কোনো খেলোয়াড় নিজেদের সার্ভিস কোর্ট বদল করতে পারবেন না। এবং সার্ভ করার পর যদি পয়েন্ট অর্জিত হয় তবে প্রতিবার খেলোয়াড় নিজেদের মধ্যে কোর্ট বদল করবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া যা খেলার শেষ অব্দি চালিয়ে যেতে হবে।
৭) খেলার মাঝে সার্ভের নিয়ম
একই সার্ভিস কোর্ট থেকে পরপর দুইবার সার্ভ করা যাবে না। তার মানে এই যে, পয়েন্ট অর্জিত হওয়ার পর যখন খেলোয়াড়রা পাশ পরিবর্তন করে তখন যে ব্যক্তি পয়েন্ট করে পাশ পরিবর্তনের সুযোগ পেয়েছে সে একই ব্যক্তি অন্য পাশে ইয়ে সার্ভ করবে। সার্ভের আরেকটি নিয়ম হলো, প্রথম গেমের বিজয়ী দল পরবর্তী গেলে প্রথমে সার্ভ করতে পারবে না।
৮) সাইড পরিবর্তন করার নিয়ম
যখন যেকোনো একটি দল ১১ পয়েন্ট করে ফেলবে তখন সেই দল যে পাশ থেকে ১১ পয়েন্ট করেছে সেই পাশ থেকে নেটের অন্য সাইড যেতে হবে। এবং অপর দলকেও একই ভাবে সাইড চেঞ্জ করতে হবে।
৯) নেট টার্চ করার ক্ষেত্রে
ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্টে থাকা নেট কেবল মাত্র শাটল বা কক স্পর্শ করতে পারছে তাছাড়া কোনো খেলোয়াড় র্যাকেট দ্বারা, নিজে থেকে নেট স্পর্শ, নেট ক্রস করতে পারবে না।
১০) র্যালি ও পয়েন্ট
একটি র্যালি শেষ হলেই পয়েন্ট অর্জিত হবে। এক্ষেত্রে যারা বা যে দল র্যালি জিতবে সেই দল পয়েন্ট অর্জন করবে। যথাক্রমে একই দল পুনরায় সার্ভ করবে।
১১) শাটল বা কক একটিভ থাকার নিয়ম
যদি শাটল ককটি সাইড লাইন স্পর্শ করে ফেলে তবে সেটিকে সঠিক হয়েছে বলে বিবেচনা করা হবে এবং কোর্টের ভিতর আছে বলেই গণ্য হবে। তবে যদি একেবারে দাগের ওপাশে চলে যায় এবং কোনো ভাবে দাগের স্পর্শ না পায় তবে সেটিকে wrong হিসেবেই বিবেচনা করা হবে।
১২) বিরতি
ব্যাডমিন্টন খেলা প্রচন্ড ঘাম ঝরার খেলার মধ্যে একটি। তাই এই খেলার মাঝে বিরতি নিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি গেমে ১১ পয়েন্ট অর্জত হলে ৬০ সেকেন্ড বা ১ মিনিটের বিরতি নিতে পারবে এবং দুই গেমে মোট ১২০ সেকেন্ডের বিরতি নিবে।
১৩) খেলার বিচার কার্য
খেলার মধ্যে থাকা আম্পায়ারের অনুমতি ব্যতীত কোনো খেলোয়াড় কোর্ট থেকে বাইরে যেতে পারবে না। অন্যদিকে একটি টুনামেন্টের ম্যাচ গুলোর ক্ষেত্রে আম্পায়ার এবং রেফারির সমন্বয়ে পরিচালিত হয় যেখানে রেফারি সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী থাকে।
এবং এই নিয়মেই প্রতিটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন স্থান ভেদে ব্যাডমিন্টনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম ধার্য করে খেলা হলেও আন্তর্জাতিক নিয়ম মাফিক এটিই হলো সাধারণ ভাবে ব্যাডমিন্টন খেলার অফিসিয়াল নিয়ম। আপনি যেভাবেই খেলাটি খেলে থাকেন না কেনো উপরে উল্লেখিত নিয়ম গুলো আপনাকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
সার্ভিস ফল্টের কারন সমূহ
ব্যাটের সাহায্যে কক বা শাটলকে প্রতিপক্ষ দলের কোর্টে নিয়ে যাওয়াকেই সার্ভিস বা সার্ভ করা বলা হয়। এক্ষেত্রে উক্ত কাজটি যদি সঠিক ভাবে না করা হয় তবে সেটিকে সার্ভিস ফল্ট হিসেবে গ্রহন হয়। যেসকল কারনে সার্ভিস ফল্ট হয়ে থাকে সেই কারন গুলো নিম্মে উপস্থাপন করা হলো।
১) শাটল যদি কোনাকোনি ভাবে প্রতিপক্ষের কোর্টে না পরে।
২) সার্ভ করার সময় যেকোনো একটি বা একাধিক পা মাটি স্পর্শ না করে।
৩) সার্ভ করার পর শাটল যদি শর্ট সার্ভিস এড়িয়া অথবা অন্য এড়িয়াতে পরে।
৪) শাটল যদি কোর্টের বাইরে পরে যায়।
৫) কোমড়ের উপর থেকে সার্ভ করা হলে সার্ভিস ফল্ট হিসেবে বিবেচিত হয়।
৬) হাত থেকে শাটল ফেলে সার্ভ না করলে সার্ভিস ফল্ট হয়।
৭) সার্ভ করার পর শাটল নেটে আটকে গেলে।
৮) সার্ভারের পা যদি কোনো দাগকে স্পর্শ করে তবে সার্ভিস ফল্ট হবে।
গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য
এই ছিলো কিছু ব্যাসিক ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম যা ব্যাডমিন্টন ওয়াল্ড ফেডারেশন কতৃক নির্ধারন করা হয়েছে। ব্যাডমিন্টন একটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা যা ছেলে মেয়ে উভয়ের কাছেই গ্রহনযোগ্য। বিশেষ করে শীতকালে খেলা এই গেমটি শারীরিক সুস্থ্যতার জন্যও বেশ কার্যকর। আশা করি উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে দারুন এই খেলাটির নিয়ম জেনে উপকৃত হয়েছেন। সঙ্গে থাকুন বাংলা আলো’র ধন্যবাদ।