কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সমাজে। শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, এবং সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই আন্দোলন শুরু হয়। বিশেষ করে ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণাটি এই আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
আন্দোলনের কারণ ও লক্ষ্য
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার করা। বর্তমান কোটা পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, এবং প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ কোটা রয়েছে। মোট ৫৬ শতাংশ কোটার বিপরীতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ মাত্র ৪৪ শতাংশ। শিক্ষার্থীরা এই বৈষম্যের অবসান চান এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ১৭ জুলাই রাত ৮টার দিকে ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেয়া হয় যে ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালিত হবে। এই কর্মসূচিতে শুধুমাত্র হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত কোনো গাড়ি রাস্তায় চলবে না। সারাদেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানানো হয়।
২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতির বাতিলের পরিপত্র জারি করা হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে তা স্থগিত রাখা হয়। শিক্ষার্থীরা এই সময়ে ধৈর্য ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান সত্ত্বেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দাবি, সরকার প্রধান বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাত্র সমাজের উপর হামলা চালানোর সাহস করত না। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং গুলি চালিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সোয়াটের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভের কারণে রাজধানী একপ্রকার অচল হয়ে পড়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশাপাশি দেশের এ দুই বড় শহরে রেলপথও অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। সহিংসতার ফলে কয়েকশ মানুষ আহত হন এবং ছয়জন নিহত হন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পেয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি পূরণের জন্য আন্দোলনকারীরা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করছে। সরকারের পরিপত্র বাতিলের বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা আদালতের আদেশ মানেন না দাবি করে নির্বাহী বিভাগের আদেশের দিকে তাকিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপসংহার
কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছে এবং এই আন্দোলন সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলে এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটতে পারে। তবে, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।