অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ও যাচাই করার নিয়ম 

0
67

অনলাইনের মাধ্যমে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন এবং বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করার বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন? এই আর্টিকেলে রয়েছে সেই সকল তথ্য যা বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করবে। 

বাংলাতে বিয়ে বা বিবাহ, উর্দুতে শাদী ও ফারসিতে নিকাহ যাই হোক না কেনো, যখন দুইজন নারী-পুরুষ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে এক সাথে থাকার অনুমতি প্রাপ্ত হোন তখন তাকে বিবাহ বা বিয়ে বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে যত গুলো ধর্ম রয়েছে, সে সকল ধর্মেই নারী পুরুষের একসাথে থাকার জন্য বৈবাহিক সম্পর্কে পক্ষে বলা হয়েছে। দুইজন নারী-পুরুষ শারীরিক ও মানসিক চাহিদা পূরনের জন্য উক্ত প্রথার প্রচলন কেবল আমাদের দেশেই নয় বরং পুরো পৃথিবীর জুরেই রয়েছে। 

প্রধানত চার ধর্মের অনুযায়ী ৪ টি নিয়মের বিয়ে আমাদের দেশ সহ পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই পরিলক্ষিত হয়েছে সেগুলো হলো: 

  • ইসলামিক বিবাহ, 
  • বিধিবদ্ধ বিবাহ, 
  • প্রথাগত বিবাহ, 
  • চার্চ বিবাহ

নিম্মে প্রতিটি বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম, খরচ, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও যাচাই করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হলো। 

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার সুবিধা সমূহ 

বিবাহের প্রমাণ পত্রই মূলত রেজিস্ট্রেশন। দুইজন নারী পুরুষ এক সাথে থাকার অনুমতিপত্রই হলো রেজিস্ট্রেশন। যেকোনো সময় দুইজনকে ভেরিফাই করার জন্য বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন সরকারি খাতে প্রমাণাদির জন্য বিবাহ রেজিস্ট্রেশন। 

তাছাড়া বড় বড় হোটেলেও বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ছাড়া এক রুমে থাকতে দেয়া হয় না। কোনো স্থানে একসাথে ঘুড়তে গেলে ভেরিফিকেশনের জন্যও রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন রয়েছে। 

আইনগত দিক থেকেও বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের বেশ কাজ রয়েছে, যখন একজন আরেকজনকে ডিভোর্স দেয়, ভরণ পোষণ না করে, অথবা না জানিয়ে একাধিক বিয়ে করে তখন বৈধ ভাবে বিচার ও ব্যবস্থার জন্য বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন রয়েছে। 

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে কি কি প্রয়োজন 

একেক ধর্মের বিয়ের নিয়ম একেক রকম হলেও বেশি ভাগের ক্ষেত্রেই কিছু কমন জিনিস রয়েছে যা প্রয়োজন হয়ই। নিম্মে সেগুলো উল্লেখ্য করছি। 

ইসলাম ধর্ম অবলম্বনকারীদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজন : 

  • বিবাহের পাত্র পাত্রীর দুইজনের জাতীয় পরিচয় পত্র
  • যদি পরিচয় পত্র না থাকে তবে এসএসসি এর সার্টিফিকেট
  • ছেলে মেয়ে দুইজনের দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি 
  • দুইজন সাক্ষীর প্রয়োজন আছে, এক্ষেত্রে ছেলে দুই জন। অথবা একজন ছেলে দুইজন মেয়ে। 

খ্রিস্টান ধর্ম অবলম্বনকারীদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজন

  • পাত্র পাত্রীর উভয়ের পুরো নাম, ডাক নাম সহ দুইজনের পেশা সম্পর্কে বিস্তারিত 
  • উভয়ের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা 
  • পাত্র পাত্রী যেখানে থাকেন সেখানে আনুমানিক কতদিন ধরে থাকছেন সেই তথ্য
  • বিয়ের কার্য সম্পাদানের জন্য কোনো স্থান, বা চার্চ যেখানে খ্রিস্টান ধর্মের অনুযায়ী বিয়ে করা যাবে। 

হিন্দু ধর্ম অবলম্বনকারীদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজন 

হিন্দুদের যে প্রথা, রীতি নীতি বা আইন রয়েছে, সেখানে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের কোনো প্রয়োজন নেই বা বাধ্যতামূলক নয়। তবে বিয়ে যেহেতু একটি সেন্সিটিভ বিষয় তাই এখানে অবশ্যই রাষ্টীয় আইন রয়েছে। তবে হিন্দুদের ক্ষেত্রে যদি কোনো বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না থাকে তবে আইনগত কোনো সমস্যা হয় না। আইন অনুযায়ী তখন ও তারা বিবাহের আবদ্ধে থাকবে। 

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি কত? 

বিয়ের ক্ষেত্রে কাবিনের যা খরচ হয় সেটাকেই বিয়ের খরচ ভেবে অনেকেই ভুল করে। কিন্তু সেটাই মূল খরচ নয়। বিয়ের খরচ হলো সেটাই যেটা সরকার কতৃক রেজিস্ট্রেশনের ফি বাবদ নেয়া হয়ে থাকে। সাধারণত যিনি বিয়ে পড়ান উনিই রেজিস্ট্রেশনের ফি আদায় করেন এবং পরবর্তী কার্য সম্পাদন করে থাকেন। 

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যত টাকা দেনমোহর দেয়া হয় তার ১২.৫০% টাকা আদায় করতে হয় রেজিস্ট্রেশনের জন্য। এই নিয়মটি কার্যকর হবে যখন দেনমোহর সর্বোচ্চ ৪ লক্ষ টাকা হবে। এর বেশি যতই হবে প্রতি ১ লক্ষ টাকা বৃদ্ধির জন্য ১০০ টাকা করে বৃদ্ধি হতে থাকবে। 

তাছাড়া আপনি দেনমোহর যতই নির্ধারন করে থাকেন না কেনো, সর্বনিম্ম ২০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি আপনার থেকে নেয়া হবেই। এবং এই সকল খরচ স্বামী নিজে বহন করবে। এক্ষেত্রে মেয়ে বা মেয়ে পক্ষ উক্ত খরচের সাথে জরিত নয়।

অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম 

বাংলাদেশী আইন অনুযায়ী বিয়ের পর রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। তবে প্রতিটা ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম রয়েছে। তবে অনেকেই বিবাহের পর রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারটি হাল্কা ভাবে নিয়ে রাষ্ট্রীয় আইনগত ভাবে করে না, যার ফলে পরবর্তীতে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতেই হয়।

এই ধরনের সমস্যা এড়াতে পারলে বিয়ের দিনই রেজিস্ট্রেশন করে নিতে। আর যদি সম্ভব না হয় তবে বিয়ের প্রথম ৩০ দিনের মধ্যে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতেই হবে। 

মুসলিমদের জন্য বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের ফর্ম এর জন্য এখানে ক্লিক করুন। 

তাছাড়া নিজের বিবাহের রেজিস্ট্রেশন নিজে সম্ভব হলে অনলাইনের মাধ্যমেই করে নিবেন। বর্তমানে অনলাইনে বিবাহের রেজিস্ট্রেশন করা খুব সহজ। এক্ষেত্রে যা যা করনীয় তার সকল বিষয় উল্লেখ্য রয়েছে এখানে। অফিসিয়াল ডকুমেন্টসের সহায়তায় এখানে থেকে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারবেন অথবা যে কাজীর কাছে বিয়ে পড়ানো হয়েছে তার সাথে যোগাযোগ করে রেজিস্ট্রেশন করে নিবেন। 

অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করার নিয়ম 

রেজিস্ট্রেশনের কার্য সম্পাদন হলে প্রথমেই যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হলো, রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে কি না। আর তার জন্য রেজিস্ট্রেশন যাচাই করার প্রয়োজন হয়। আইনগত দিক থেকে বাংলাদেশে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ও বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করা যায় অনলাইনেই তবে সত্যি বলতে উক্ত প্রসেস এখন অব্দিও কার্যকর ভাবে শুরু হয় নি, যার কারনে এখনই অনলাইনের মাধ্যমে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না। 

তবে বিবাহের রেজিস্ট্রেশনের জন্য অবশ্যই আপনার জেলার ম্যারেজ রেজিস্টারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। সেখানে গিয়ে নিদিষ্ট একটা ফি প্রদানের মাধ্যমেই বিবাহ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সমূহ সংগ্রহ ও যাচাই করতে পারা যাবে। 

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত আইন 

যদি রাষ্ট্রীয় ভাবে বিবাহ এর মত সেন্সিটিভ বিষয়ের রেজিস্ট্রেশন না করা হয়ে থাকে তবে উক্ত সেক্টরে বেশ অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকান্ড সংঘটিত হতে পারে আর সেই কারনেই বাংলাদেশে মুসলিমদের জন্য ১৯৭৪ সালের আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহের সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কাজী দ্বারা নিবন্ধিত হতে হবে।

একটি এলাকায় একজনকেই লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে কাজী হওয়ার। তাই বিয়ের আগে অবশ্যই দেখে নিবেন আপনার এলাকায় লাইসেন্স প্রাপ্ত কাজী কে, এবং তার কাছ থেকেই বিয়ের কার্যক্রম, সম্পাদন করবেন। 

হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক নয় সেটি ইতিমধ্যে বলা হয়েছে, তবে ২০০৬ সালে ভারতের হাই কোর্ট হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রণয়ন করেন এবং ২০১৩ সালে হিন্দু বিবাহের বিধিমালা সংশোধন করা হয়। এখন নিবন্ধনের পরেই উক্ত বিয়েটি বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। 

অন্যদিকে খ্রিস্টান ধর্মের লোকদের জন্য বিবাহ আইন প্রণয়ন হয় ১৮৭২ সালে। বাংলাদেশের সকল খ্রিস্টান নাগরিকদের বিয়ের সময় নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। কেবল যে বাংলাদেশ তা নয়, পুরো পৃথিবী জুড়ে সকল খ্রিস্টানদের জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য। 

বিবাহ নিয়ে প্রতারণার শাস্তি

আইনে এটাও বলা রয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি বিবাহ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রতারণা করে থাকে তবে উক্ত ব্যক্তির যেকোনো মেয়াদির কারাদন্ড দন্ডিত করা হয়ে থাকবে যা সর্বোচ্চ ১০ বছর অব্দি হতে পারে। এবং তার পাশাপাশি জরিমানাও করা হবে। 

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর 

১) আমি কিভাবে বুজবো বিবাহ রেজিস্ট্রেশন হয়েছে কি না? 

=> আপনি আপনার আইডি নম্বর উদাহরণ: (M 5001010050080) এর পরে 32551 নম্বরে M অক্ষরটি এসএমএস করুন। ফিরতি এসএমএসে আপনি আপনার বৈবাহিক অবস্থা এবং বিয়ের তারিখ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। 

২) বাংলাদেশে কি কোর্ট ম্যারেজ বৈধ?

=> ১৮৭২ সালের বিবাহ নিবন্ধন আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ কোর্ট ম্যারেজ বৈধ, যা ২০১২ এপ্রিলে কার্যকর করা হয়। বিদেশি ও বাংলাদেশীরা এই বিবাহ আইন অনুযায়ী তাদের বিবাহ নিবন্ধন করতে পারবেন।

৩) বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হতে কতদিন সময় লাগে?

=> বিয়ের পর বা ৩০ দিনের মধ্যে আপনার বিয়ের রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করতে হবে। ২ থেকে ৩ মাসের ভিতরে আপনি আপনার বিবাহের নিবন্ধন পত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।

পরিশেষে কিছু কথা 

বিবাহ বিষয়টি খুবই জটিল ও সেন্সিটিভ বিষয় হওয়ার কারনে রেজিস্ট্রেশন নামক জিনিস নিয়ে অবহেলা না করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আর্টিকেলটিতে জানিয়েছি বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম ও বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত যা প্রতিটি নাগরিকের জেনে রাখার প্রয়োজন রয়েছে। 

Visited 506 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here