ইউটিউব মনিটাইজেশন  – গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে করনীয় । YouTube Monetization

0
31
ইউটিউব মনিটাইজেশন গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে করনীয়

বাংলাদেশ থেকে ইউটিউব ভিডিও এর মাধ্যমে আয় করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ইউটিউব মনিটাইজেশন করা যা হয়ে থাকে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে। সেটি কিভাবে হয় তার বিস্তারিত জানানো হবে উক্ত আর্টিকেলে। ২০২৩ সালে এসে ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় এখন জানতে ইচ্ছুক অনেকেই তারই পেক্ষিতে চাহিদা মূলক টপিকের আর্টিকেল এটি। তবে প্রথমেই জানার ব্যাপার হচ্ছে ইউটিউব মনিটাইজেশন মূলত কি? আসুন জানি.. 

ইউটিউব মনিটাইজেশন কি 

এটি ইউটিউবের এক বিশেষ ফিচার্স যার মাধ্যমে ইউটিউবে ভিডিও আপলোডের মাধ্যমে আয় করা যায়। সিম্পল ভাবে বলতে গেলে মনিটাইজেশন একটি অনুমতি সরূপ কাজ করে। মূলত, ইউটিউব ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করার জন্য এই অনুমতির প্রয়োজন হয়ে থাকে। ইউটিউব মনিটাইজেশনে কি কি শর্ত রয়েছে তা নিম্মের ধাপ গুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

ইউটিউব মনিটাইজেশনের পর আপনার চ্যানেলে আপলোড করা ভিডিও গুলোতে ক্ষেত্র বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই গুগলের এডসেন্স একাউন্ট তৈরি ও এপ্লাই করতে হবে। আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি যদি বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য এপ্রুভাল পেয়ে যায় তবে গুগল তাদের এডভারটাইজ আপনার চ্যানেলের ভিডিও গুলোর মাঝে দেখাবে। 

উক্ত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যা আয় হবে তার ৪৫% গুগল রাখবে এবং ৫৫% আপনাকে দেয়া হবে। উক্ত টাকা উত্তোলন করা যাবে গুগল এডসেন্স একাউন্ট থেকেই। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে উক্ত টাকা উত্তোলন করা যাবে। 

ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশনের ব্যাপারটা না হয় বুঝলেন এবার দেখে নিন তার সাথে জরিত শর্ত সমূহ। 

ইউটিউব মনিটাইজেশন শর্ত 

একটা সময় ছিলো যখন ইউটিউব চ্যানেলের মনিটাইজেশনের ক্ষেত্রে আহামরি কিছু করার প্রয়োজন ছিলো নাহ। সহজেই কিছু ভিডিও চ্যানেলে থাকলে সেটার মধ্যে বিজ্ঞাপন দেখানো হতো। তবে যতই দিন যাচ্ছে ব্যাপার গুলো কঠিন থেকে কঠিন হচ্ছে। 

আসলে কঠিন বলা ভূল হবে যদি আপনি নিয়ম গুলো মেইন্টেইন করে কাজ করেন। আপনার নিশ যদি এমন হয় যার মাধ্যমে গুগল তার বিজ্ঞাপনের ঝুড়ি থেকে আপনার চ্যানেলে দেখানোর জন্য বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবে নাহ বা পারলেও তেমন লাভ হবে নাহ সেক্ষেত্রে মনিটাইজেশন অন করার ব্যপারটা আপনার কাছে কঠিন হলেও হতে পারে। 

তবে পরিপূর্ণ গাইডলাইন অনুসরণ করে কাজ করেন তবে ব্যাপারটা খুব সহজ হয়ে যাবে। তবে এক নজরে দেখে নিন কি সব নতুন নিয়ম বা শর্ত গুলো জুরে দিয়েছে ইউটিউব তার মনিটাইজেশন প্রোগ্রাম চালু করার জন্য। 

  • সাবস্ক্রাইব : আপনার ইউটিউব চ্যানেলে অবশ্যই অন্ততপক্ষে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকা প্রয়োজন। এর নিচে থাকলে আপনি মনিটাইজেশনের জন্য এপ্লাই করতে পারবেন নাহ। 
  • ওয়াচটাইম : ওয়াচটাইম হচ্ছে আপনার চ্যানেলে থাকা ভিডিও গুলো মানুষ কত সময় ধরে দেখছে। এক্ষেত্রে মনিটাইজেশন অন করার জন্য মিনিমাম ৪০০০ ঘন্টার ওয়াচটাইম প্রয়োজন হবে। ইউটিউব এক্ষেত্রে সময় বেধে দিয়েছে ১২ মাস বা এক বছর। এক বছরের মধ্যে ওয়াচটাইমের ব্যাপারটা পরিপূর্ণ হলে মনিটাইজেশনের জন্য এপ্লাই করতে পারবেন। 
  • ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিও গুলো কোনো ভাবে কপি হওয়া যাবে নাহ। ইউটিউব বিশেষ ভাবে হাইলাইট করে দিয়েছে এমন ভিডিও যা কি না ইতিমধ্যেই ইউটিউবে আছে সেগুলো নিজের চ্যানেলে আপলোড করে প্রচার করা যাবে না। 
  • বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ইউটিউব ভিডিও গুলোতে কপিরাইট ইস্যু আসে সাউন্ড এর কারনে তাই মিউজিক কখনই কপিরাইট ফ্রি নয় এমন গুলো ব্যবহার করা যাবে নাহ 
  • তাছাড়া ইউটিউবের সাপোর্ট পেজে ইউটিউব পলিসি এবং নীতিমালা দেয়া আছে সেগুলো দেখে নিবেন কারন সেই সকল রুলস ও আপনাকে ফলো করতে হবে। 

ইউটিউব চ্যানেলে মনিটাইজেশন অন করার নিয়ম 

আপনার যদি ইতিমধ্যে শর্তে থাকা কন্ডিশন গুলো পরিপূর্ণ হয়ে থাকে আপনি ইউটিউবের মনিটাইজেশন প্রোগ্রান চালু করার জন্য প্রস্তুত। এই পর্যায়ে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে তা এক এক করে বলছি।  

১) আপনাকে প্রথমেই ইউটিউব চ্যানেলের ড্যাশবোডে এসে Youtube Studio নামক অপশন খুজে বের করে সেটায় ক্লিক করতে হবে। এবার নতুন একটি ড্যাশবোডে নিয়ে আসা হবে। 

২) নতুন ড্যাশবোডের বাম পাশের অপশন গুলোতে ভালো ভাবে খেয়াল করুন। সেখানে Monetization নামক একটি অপশন দেয়া আছে সাথে ডলার চিহ্নও, ওই অপশনে ক্লিক করুন।

৩) এই পর্যায়ে আরেকটি নতুন পেজ দেখাবে যেখানে আপনার মোট সাবক্রাইবারের সংখ্যা ও ওয়াচটাইম কত হয়েছে তা উল্লেখ্য থাকবে। যদি আপনার শর্ত মোতাবেক কন্ডিশন ফুলফিল হয়ে গিয়ে থাকে তবে নিম্মে একটি Apply Now বাটন দেখাবে ওইটাই ক্লিক করুন। 

৪) এবার আরেকটি পেজ ওপেন হবে। এইখানে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ অপশন দেখাবে যেগুলো হচ্ছে : 

  • Review partner Program Terms 
  • Sign Up for Google Adsense
  • Get Reviewed 

মূলত এই তিনটি স্টেপ সম্পন্ন করার মাধ্যমেই ইউটিউব মনিটাইজেশনের আবেদন সম্পন্ন হবে। যদি ইউটিউব ও গুগলের এডসেন্স পলিসি মনে করে আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য প্রস্তুত হবে এটিতে এপ্রুভাল দেয়া হবে এবং আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করবে। 

ধরে নিচ্ছি আপনি নতুনে এবং এই বিষয়ে আপনার তেমন ধারনা নেই এই পর্যায়ে এই তিনটি স্টেপ কিভাবে সঠিক ভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে চ্যানেলটি মনিটাইজেশনের জন্য পাঠাবেন তা নিম্মের একেক ধরে ব্যাখ্যা করা হলো। 

স্টেপ ১ : Review Partner Program Terms 

এটি প্রথম ধাপ, যেখানে আপনাকে ইউটিউবের সকল Terms গুলো পড়তে হবে এবং সেগুলোকে Accept করে নিতে হবে। আপনি অবশ্যই চেষ্টা করবেন নিয়ম গুলো পড়ার এতে আপনার লাভ বাদে ক্ষতি হবে না। পড়া হয়ে গেলে এবং সকল মতে সম্মতি প্রদান করলে টিক মার্কে ক্লিক করে ওকে করুন। পরবর্তীতে আপনাকে Done লিখাটি দেখানো হলে মনে করবেন আপনার প্রথম ও সহজ ধাপটি সম্পূর্ণ হয়েছে। এবার ২য় ধাপ। 

স্টেপ ২ : Sign Up for Google Adsense 

এই পর্যায়ে আপনাকে গুগল এডসেন্সের একাউন্ট তৈরি এবং সেটিকে ইউটিউব মনিটাইজেশন চ্যানেলের সাথে যুক্ত করার প্রয়োজন হবে। উক্ত কাজের জন্য আপনাকে গুগল এডসেন্সের ওয়েবসাইটে রিডায়রেক্ট করা হবে। 

এখানে বলে রাখা ভালো যে, একটি আইপি, ডিভাইস, ইনফরমেশন থেকে কেবল মাত্র একটি মাত্র গুগল এডসেন্স তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে আপনার যদি ইতিমধ্যে কোনো গুগল এডসেন্স একাউন্ট থেকে থাকে তবে সেটিকেই ব্যবহার করতে পারবেন ইউটিউব মনিটাইজেশনের জন্য। যদি না থেকে থাকে তবে Create a New Account এ ক্লিক করুন। 

এই পর্যায়ে ইমেইল এড্রেস, এবং আপনার যাবতীয় তথ্য যেমন নাম ঠিকানা, একাউন্টের ধরন, এসব বক্স আকাড়ে থাকবে। একেক করে ঠিক ভাবে পূরন করে সাবমিট করুন। চেষ্টা করবেন আপনার আসল ইনফরমেশন দেয়ার যা কিনা আপনার NID কার্ডে রয়েছে। 

একাউন্ট ক্রিয়েট করা হয়ে গেলে পুরনায় আপনাকে ইউটিউবের মনিটাইজেশন পেজে নিয়ে আসা হবে। এর মধে Done অপশন থাকবে সেটি ক্লিক করা মাত্রই আপনার ২য় ধাপটিও সম্পন্ন হয়ে যাবে। আপনার গুগল এডসেন্স একাউন্টটি ইউটিউব চ্যানলের সাথে লিংকআপ করতে ৭২ ঘন্টার মত সময় নিতে পারে। 

স্টেপ ৩ : Get Reviewed 

এই স্টেপে আপনার করনীয় আসলে কিছুই নেই কারন এখানের কাজটা গুগল করবে। ইউটিউব এবং গুগল এডসেন্সের নীতিমালা যদি আপনার কোনো কন্টেন্ট ভঙ্গ না করে তবে গুগল এডসেন্সের একাউন্টে আপনার ইউটিউব চ্যানেল বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। 

এক্ষেত্রে সাধারণত ৭ দিন থেকে ১৪ দিন অব্দি সময় নেয়। এর মধ্যেই একটি মেইলের মাধ্যমে আপনাকে উক্ত বিষয়ে জানানো হবে যে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেয়েছে কি না।  

বাংলাদেশ থেকে ইউটিউব মনিটাইজেশন 

এই তো কয়েক বছর আগের কথা বাংলাদেশ থেকে ইউটিউবে মনিটাইজেশন পাওয়ার কোনো প্রকার ব্যবস্থা ছিলো না যার কারনে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ইংরেজি ভাষা ও দেশ গুলোকে প্রধান্য দিয়ে ইউটিউবের কন্টেন্ট তৈরি করতে হতো। তবে বর্তমানে আর সেই ব্যাপারটি নেই। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকেই ইউটিউবে আয় করা যাবে মনিটাইজেশনের মাধ্যমে। তবে এখন ও সরাসরি ইউটিউব থেকে কোনো ধরনের অর্থ দেয়া হয়না বাংলাদেশি কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের। তবে তারা আয় করে কোথা থেকে? ওই যে, গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে।

এর মানে এই যে, বাংলাদেশ থেকে ইউটিউবের কাছ থেকে আয় করার কোনো ধরনের উপায় নেই তবে বাংলাদেশ থেকে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আয় করার ব্যবস্থা আছে। যার ফলে দেখা যায়, আপনি ইউটিউবে যতই ভিডিও আপলোড করেন বা ভিউ কাউন্ট করেন না কেনো যদি সেখানে এডভার্টাইজ দেখানো না হয় তবে সেখান থেকে আয় করার কোনো ব্যবস্থা নেই। 

ইতিকথা 

পরিশেষে, এই ছিলো ইউটিউব মনিটাইজেশন এবং গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে করনীয় কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা মূলক আর্টিকেল যেখান থেকে ইউটিউব থেকে আয় করার ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ বাংলা আলোর সাথে যুক্ত থাকার জন্য। 

Visited 4 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here