ইতিকাফের ফজিলত বিষয়ে হাদীস সমূহ্ । বাংলা আলো 

0
26

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ্। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ তাআলার। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। আল্লাহর পক্ষ হতে যার আনীত দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা হলো একমাত্র হিদায়াত ও সরল পথ।

যাতে রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ, মুক্তি ও নিরাপত্তা। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এতে রয়েছে অত্যন্ত উপকারী বিভিন্ন বিষয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো ইতিকাফ। রমাযান মাসের শেষ ১০ রাত্রিতে ইতিকাফ করতে হয়।

ইতিকাফের ফজিলত বিষয়ে হাদীস রয়েছে বেশকিছু, যা দ্বারা ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত জানা ও উপলব্ধি করা যায়। বিশুদ্ধভাবে সাব্যস্ত হয়েছে এমন কিছু হাদীস নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ

ইতিকাফ

রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত:

আয়িশাহ রাদ্বিআল্লহু আনহা হতে বর্ণিত, আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মৃত্যু দেয়া পর্যন্ত রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।” (সহীহ বুখারী)

আবু হুরায়রা রাদ্বিআল্লহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রমাযানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর সফরে যাওয়ায় ইতিকাফ করতে পারেন নি।

তাই যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেন। (মুসনাদে আহমাদ, সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: সিয়াম, তিরমিযী, অধ্যায়: সিয়াম অনুচ্ছেদ। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও আলেম শাইখ আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী হাদিসটিকে সহীহ্ বলেছেন)

এতেকাফের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহা ফজিলপূর্ণ একটি রাত্রি রয়েছে যাকে “লাইলাতুল ক্বদর” বলে। লাইলাতুল ক্বদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম:

আল্লাহ বলেন:

 لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ

“শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সূরা ক্বদর: ৩)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল ক্বদরে রাত জাগরণ করে নফল নামায ও ইবাদত বন্দেগী করবে, তার পূর্বের সকল (ছোট) গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে।” (সহীহ্ বুখারী, অনুচ্ছেদ: যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় সিয়াম রাখে)

উল্লেখ্য যে, ইতিকাফের ফজিলত বিষয়ে হাদিস থেকে রমাযানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করার গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যায় এবং ক্বুরআনুল কারীম থেকে আমরা ইতিকাফের মধ্যে পাওয়া যায় এমন মহা ফজিলতপূর্ণ লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে আমরা জানতে পারি।

লাইলাতুল ক্বদর সে ব্যাক্তি নিশ্চিতভাবে পেয়ে যায়, যে রমাযানের শেষ ১০ দিনে ও রাতে ইতিকাফরত থেকে সুন্নাহ্ সম্মতভাবে ইবাদাত বন্দেগী করে। এতেকাফের ফজিলত বিষয়ে হাদীস থেকে আমরা ইতিকাফ করার জন্য কঠোর সাধনা করার অনুপ্রেরণা পাই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে।

শুধু ২৭ রমাযানেই নয় বরং রমাযানের শেষ দশকের যেকোন রাতেই হতে পারে লাইলাতুল ক্বদর। রমাযানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ কারীদের জন্য এ রাত পেয়ে ধন্য হওয়ার চমৎকার সুযোগ রয়েছে, যা ফজিলতপূর্ণ একটি বিষয়।

ইতিকাফ সংক্রান্ত ভুল ধারণা

আমাদের দেশে মনে করা হয় যে সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবাদত।

যে কোন মুসলমান তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সোওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা শরীয়তে নেই।

 ইতিকাফের ফজিলত ও গুরুত্ব বুঝতে নীচের রেফারেন্স হাদীসগুলো হাদীসের বিশুদ্ধ কিতাব থেকে দেখে নিতে পারেনঃ

১) সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কদরের ফযিলত। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ইতিকাফ।

২) সহীহ মুসলিম: রমাযানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগীতে) বেশি বেশি পরিশ্রম করা।

৩) সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: রমাযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবে ক্বদর অনুসন্ধান করা।

পরিশেষে

আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তাঁর নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন ও সকল বিদআত এবং সুন্নাত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে হিফাযাত করুন।

আর ইতিকাফের ফজিলত বিষয়ে হাদীস সমূহ অধ্যয়ন করে সে অনুযায়ী আমল করে ফজিলত লাভের তাওফীক দান করুন। আমীন।

Visited 1 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here