কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে দুনিয়াবাসী বড় ধরনের কিছু ফেতনার সম্মুক্ষীণ হবে।কেয়ামতের আলামত গুলোর মধ্যে ইয়াজুজ মাজুজের কাহিনী অন্যতম। নূহ (আ.)-এর পুত্র ইয়াফেস থেকে তারা বংশবিস্তার করেছে। আমরা অনেকেই ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে অবগত নয়,আজ আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে সংক্ষেপে ইয়াজুজ-মাজুজ এর কাহিনী নিয়ে আলোচনা করবো।
ইয়াজুজ-মাজুজ কারা?
আল কোরআনের সূরা কাহাফ এবং সূরা আম্বিয়ায় ইয়াজুজ মা’জুজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই পৃথিবীতে ইয়াজুজ মাজুজ আছে এবং নির্ধারিত সময়ে সারা পৃথিবী জুড়ে এদের বিস্তার ঘটবে। এ কথা যুক্তি-তর্ক ছাড়াই আমাদের বিশ্বাস করে নিতে হবে। দীর্ঘকাল তারা পৃথিবীতে আসতে পারেনি যুলকারনাইনের নির্মিত সুদৃঢ় প্রাচীরের দরুন । তারা প্রাচীরের ওপারে অবশ্যই নিজস্ব পদ্ধতিতে জীবন যাপন করছে।
এরা হচ্ছে আদম সন্তানেরই এক সম্প্রদায়। তবে হাফেয ইবনে হাজার (রহ:) এর মতে- তারা নূহ (আ:) এর পুত্র ইয়াফেসের পরবর্তী বংশধর। কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী যদিও ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে জানা যায় কিন্তু সেগুলোর আলোকে তাদের অবস্থানস্থল নির্ণয় করা কঠিন। কিন্তু নবী করিম (সা) এর একটি হাদিস থেকে জানা যায় তাদের আগমন হবে মদিনার পূর্ব দিক হতে । আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালাই ভাল জানেন ।
ইয়াজুজ-মাজুজ এর সংখ্যা হবে প্রচুর।তাদের আধিক্য নিয়ে হাদিসে এসেছে, নবীজি (সাঃ) বলেন- ইয়াজূজ-মাজূজ আদম সন্তানেরই একটি সম্প্রদায়। তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হলে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলবে। তাদের একজন মারা যাওয়ার আগে এক হাজার বা এর চেয়ে বেশি সন্তান জন্ম দিয়ে যায়। তাদের পেছনে তিনটি জাতি আছে-তাউল, তারিছ এবং মাস্ক…(তাবারানী)
ইয়াজুজ-মাজুজ কেন প্রাচীরে বন্দি?
বাদশা যুলকারনাইনের যুগে তারা অত্যন্ত বিশৃংখল জাতি হিসেবে পরিচিত ছিলো। যুল কারনাইন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ন কঠোর রাজা ছিলেন। তার সময়ে তিনি আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম ও আইন কঠোরভাবে মেনে শাসন কাজ পরিচালনা করতেন। এক জনপদ থেকে অন্য জনপদে ঘুরে বেড়াতেন যুলকারনাইন, বিচার করতেন অন্যায়ের এবং ভালবাসতেন ভাল মানুষদের। বাদশাহ যুলকারনাইন তাঁর এক ভ্রমণে এমন এক জাতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, যাদের ভাষা বোঝা দুষ্কর ছিল।
তারা বলিলো” হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন। ” – কাহাফঃ ৯৪
যুলকারনাইন জবাব দিলেন-
”আমার তোমাদের টাকার কোন দরকার নেই, আমাকে আল্লাহ যা দিয়েছেন তা যেকোন সম্পদের চেয়ে উত্তম। আমি তোমাদের সাহায্য করব। যদি তোমরা তোমাদের জনবল দিয়ে আমাকে সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝে একটা নিশ্ছিদ্র প্রাচীর নির্মাণ করে দিব। (সুরা কাহাফ,আয়াত ৯৫ )
এই কথোপকথনের পরে যুলকারনাইন পাহাড়ের মাঝখানে যেখান দিয়ে ইয়াজুজ মাজুজ আসা যাওয়া করতো সেখানে লোহা ও তামা দিয়ে একটা দেয়াল তুলে দেন। ঐ দেয়াল এতো সুউচ্চ আর মজবুত ছিলো যে, ইয়াজুজ-মাজুজেরা সেই দেয়ালের উপর দিয়ে বা ভেঙ্গে আর লোকালয়ে আসতে পারতোনা। আজ পর্যন্ত তারা সেখানে বন্দী অবস্থায় আছে।
কখন ইয়াজুজ-মাজুজ বেরিয়ে আসবে?
আল্লাহর নির্ধারিত সময়ে কিয়ামতের পূর্বে তাদের আবির্ভাব ঘটবে। এটি অসম্ভব কিছু নয়। তবে তারা প্রতিদিন যুলকারনাইনের নির্মিত প্রাচীর ভাঙ্গার চেষ্টা করে আসছে। আর যখন তারা দেয়াল ভেঙ্গে শেষ মাথার খুব কাছাকাছি চলে যায় তখন বলেঃ আজ এই পর্যন্ত থাকুক, আগামীকাল বাকিটুকু শেষ করবো। পরের দিন আল্লাহ্ পাক সেই প্রাচীরকে পূর্বের থেকেও শক্ত ও মজবুত রূপে পূর্ণ করে দেন।
কেয়ামতের নিকটবর্তী সময় পর্যন্ত এভাবে চলবে। যখন কেয়ামত খুব কাছে চলে আসবে আর ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে হত্যা করে ফেলবেন, তখন আল্লাহর ইচ্ছায় তারা একদিন বলবে ইন শা’ আল্লাহ আগামীকাল এসে বাকি কাজ শেষ করবো। এই ইন শা’ আল্লাহ বলার বরকতে পরদিন তারা এসে দেখবে দেয়াল আর আগের মতো হয়ে যায়নি। তখন তারা এই দেয়াল ভেঙ্গে ভেদ করে চলে আসবে।
তারা এসে মানুষের উপর আবার হত্যা এবং নির্যাতন শুরু করবেএবং মানুষের ঘরবাড়ী বিনষ্ট করবে, সমুদ্রের পানি পান করে নিঃশেষ করে ফেলবে। এরা পৃথিবীর আলো-বাতাস পেয়ে অতিমাত্রায় বিস্তার লাভ করবে।
সুরা আম্বিয়ার ৯৫ ও ৯৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,”যেসব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত। যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।”
যুলকারনাইনের পরিচিতি
যুলকারনাইন একজন সৎ ইমানদার ও ন্যায়পরায়ণ বাদশা ছিলেন। তবে তিনি নবী ছিলেন না (প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী),তিনি পৃথিবীর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভ্রমণ করেছেন বলে তাঁকে জুলকারনাইন বলা হয়। স্বরণে রাখা ভালো অনেকেই মনে করেন আলেকজান্ডার দি গ্রেট হচ্ছে যুলকারনাইন। এটা সত্য নয় কারণ, আলেকজান্ডার ছিলো কাফের আর যুলকারনাইন ছিলেন ঈমানদার ও ন্যায়পরায়ন বাদশাহ। লক্ষ্য অর্জনের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাকে সর্বপ্রকার সাজ-সরঞ্জাম দান করা হয়েছিল।
পরিশেষে কিছু কথা
মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলেরই উচিত ইসলামি জ্ঞান অর্জন করা।ইয়াজুজ মাজুজ এর কাহিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক আলোচনা যা কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কিত আরো গভীর জ্ঞান আহরণ করার তাওফিক আল্লাহ আমাদের দান করুন।আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন।