উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবল ইচ্ছা? যথাযথ আইডিয়া থাকার পরেও ফান্ডের জন্য শুরু করতে পারছেন না? তবে উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় সেই বিষয়ে জানুন এবং সহজ প্রসেসে ঋণ নিয়ে শুরু করুন আপনার স্টার্ট-আপ।
বাংলাদেশে তরুনদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবনতা ব্যাপক, তবে সঠিক সহায়তা না পাওয়ার কারনে অনেকেই নিজেদের প্রতিভা কাজে লাগাতে পারছে না। আর সকল সহযোগীতার মূখ্যে রয়েছে আর্থিক সহযোগিতা। আমরা জানি যেকোনো উদ্যোগ গ্রহন ও সপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজন আর্থিক তহবিল যা পাওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য কাজ নতুনদের জন্য। যত প্রকার ইনভেস্টর রয়েছে তাদের বেশির ভাগই উঠতি উদ্যোক্তাদের পিছনে ইনভেস্ট করতে ভয় পায় বা কারনবসতই করে না। এই পর্যায়ে কেউ যদি নতুন আইডিয়া নিয়ে কোনো স্টার্ট-আপ এর চিন্তা ভাবনা করে তবে তার কাছে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় অর্থায়ন।
উপায় কি?
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক গৃহীত প্রকল্পের আলোকে নতুন পুরাতন সকল উদ্যোক্তাদের সহজ প্রসেস লোন বা ঋনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে যা নিয়ে জানাবো এই আর্টিকেলে। উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় এই বিষয়ে প্রশ্ন থেকে থাকলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। নিজের ছোট ব্যবসা সম্প্রসারণ করা হোক বা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে কাজ করা হোক সল্প অর্থায়ন জোগাড় করে উদ্যোক্তা লোন গ্রহন করেই আপনার সপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
উদ্যোক্তা লোন কি এবং কাদের জন্য?
নতুন কিছু শুরু করা বা ব্যবসা গড়ে তোলার সাথে যুক্ত লোকদের আমরা উদ্যোক্তা হিসেবেই চিনে থাকি। এই মানুষ গুলো তাদের আইডিয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গ্রহন করে বিভিন্ন প্রকল্প। এসকল প্রকল্প গ্রহন ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজন হয় মাঝারি থেকে ভারি পরিমাণের অর্থায়ন। যার কিছুটা নিজেদের থেকে জোগাড় করতেও অধিকাংশই লোন এর উপর নির্ভর করতে হয়।
যখন কোনো উদ্যোক্তা লোনের খোজ করে বা তাদের যে লোন প্রদান করা হয়ে থাকে সেগুলোকেই উদ্যোক্তা লোন বলা হয়। ব্যাংক গুলোতে যার আরেক নাম SME ব্যাংকিং বা উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ লোন।
বাংলাদেশের নতুন উদ্যোক্তাদের প্রভাবিত করে তাদের পাশে দাড়াতে বাংলাদেশ বাংক এসএমই খাতে নতুন সংযোজন এনেছে এবং পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে যাতে করে নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ বা লোন প্রদান করতে পারে। সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ২৪ টি ব্যাংক এবং ১৫ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গ্রহন করা যাবে এই লোন।
নিজ থেকে মূলধনের ২০% থাকার সাপেক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে Upto ৮০% মূলধনের অর্থায়ন করা যাবে এই উদ্যোক্তা লোন এর মাধ্যনে। মাইক্রো বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ পাবে ৫০ হাজার টাকা, অন্যদিকে ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি উদ্যোক্তারা পাবে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার মত লোনের সুবিধা। তাছাড়া রয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা যেখানে জামানতসহ মোট ২৫ লাখ টাকা এবং জামানত বিহীন ১০ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা।
উদ্যোক্তা লোন এর আবেদন করার পর থেকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যেই জানানো হবে ঋনের জন্য আপনি উপযুক্ত কি-না আর হলে সেই ১০ দিনের মধ্যেই আপনি পেয়ে যাবেন উদ্যোক্তা লোন। এবার কি সেই প্রসেস এবং কোথা থেকেই উদ্যোক্তা লোন পাবেন সেই বিষয়ে থাকছে বিস্তারিত প্রতিবেদন।
উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে বর্তমানে ৫৭ টি ব্যাংক রয়েছে যা দেশ জুড়ে ৯০০০ এর বেশি শাখা খুলেছে বিভিন্ন স্থানে। এবং সেই সব স্থানেই রয়েছে SME loan সুবিধা বা যাকে আমরা উদ্যোক্তা লোন হিসেবে চিহ্নিত করছি। এসব ঋনের জন্য স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংক সকল ব্যাংক গুলোকে সাহায্য করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে উদ্যোক্তাদের জন্য এই ঋণ প্রদানের জন্য যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও তহবিল গ্রহন করতে হয় তবে সেটি করা যাবে।
উক্ত তহবিল থেকে লোন গ্রহন করলে তার সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ১০% যা অন্যান্য খাতের থেকে বেশ কম এবং সাশ্রয়ী। সর্বোপরি সকল ব্যাংক গুলোর ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তা লোন গ্রহন প্রসেস খুব সহজ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এক্ষেত্রে মোট ৫ ধরনের পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক যেখানে নতুন পুরাতন সকল উদ্যোক্তারাই লোন গ্রহন করতে পারবে। ক্ষেত্রে বিশেষে সুদের হার কম বেশি হবে তবে সর্বোচ্চ ১০% নির্ধারন করা হয়েছে।
নিজ একালায় যদি কৃষি ভিত্তিক কোনো শিল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে থাকে তবে তার জন্য থাকছে ৩৪ টি ব্যাংক সহ ২৩ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে উদ্যোক্তা লোন গ্রহন করার সুযোগ। তাছাড়া ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য রয়েছে ৩৬ টি ব্যাংক ও ২৭ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। উক্ত ব্যাংক গুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু ব্যাংকের নাম দেয়া হলো।
জনতা, রূপালী, ইস্টার্ন, ন্যাশনাল, ব্র্যাক, সাউথইস্ট, ট্রাস্ট, এবি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি, প্রিমিয়ার, স্ট্যান্ডার্ড, ব্যাংক এশিয়া, এনসিসি, প্রাইম, ওয়ান, যমুনা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, আইএফআইসি, ঢাকা, বাংলাদেশ কমার্স, বিডিবিএল, পূবালী, এনআরবি কমার্শিয়াল, মিডল্যান্ড, সাউথ বাংলা, মেঘনা, ফারমার্স, এনআরবি, মধুমতি, মার্কেন্টাইল, এনআরবি গ্লোবাল, ইউসিবি ও উত্তরা ব্যাংক।
তাছাড়া আপনি যদি ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক লোন গ্রহন করতে চান তবে রয়েছে – শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম, আল আরাফাহ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ
উপরে উল্লেখিত ব্যাংক গুলোর পাশাপাশি যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর কাছ থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাংকের আলাদা আলাদা ভাবে প্রকল্প প্রক্রিয়া পদ্ধতির ফরমেট রয়েছে। আপনি যে ব্যাংক থেকে লোন গ্রহন করতে চান সেই ব্যাংকে গিয়ে সেই ফরমেট অনুযায়ী কার্যারম্ভ করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কতৃক যে ডকুমেন্টস চাওয়া হয় সেগুলো সাথে নিয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। কি কি ডকুমেন্টস এক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে সেগুলো নিম্মে জানিয়ে দেয়া রয়েছে।
যেহেতু এটা খুব বড় একটি প্রজেক্ট তাই অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা এড়িয়ে চলা ও উপযুক্ত প্রোফাইল তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বিসিক, SME ফাউন্ডেশন, কন্সালটেন্সি ফার্মের সহায়তা নিতে পারেন। তাছাড়া কোনো ব্যবসায়ী যদি মনে করেন ব্যবসা সম্প্রসারনের জন্য নিজ ব্যবসায়ে অর্থায়ন বৃদ্ধিকরণের প্রয়োজন তবে তিনি নিজে ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সাবমিট করার মাধ্যমে আবেদন করে নিতে পারেন। এই পর্যায়ে জানাচ্ছি কি কি ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হবে উদ্যোক্তা লোনের জন্য।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার জন্য বেশ কিছু ডকুমেন্টস বা কগজপত্র জমা প্রদান করতে হবে। যেহেতু বিষয়টি ব্যাংক এর সাথে জরিত তাই ব্যাংক ভেদে কিছুটা ভিন্নতা দেখা দিতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেও একই রকম হয়ে থাকবে। নিম্মে ডকুমেন্টস গুলোর সম্পর্কে জানানো হলো।
- ব্যাংকে থেকে ফরম সংগ্রহ এবং তা পূরণ করতে হবে।
- ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স সাবমিট করতে হবে।
- টিন নাম্বার যদি থাকে সেটি প্রদান করতে হবে।
- প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সম্পদের মূল্যের সনদপত্র।
- বন্ধকের ক্ষেত্রে বৈধ চুক্তিনামা।
- ইউটিলিটি বিল যেমন – গ্যাস বিল, পানি বিল, বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল এর ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- স্থানীয় হলে চেয়ারম্যান, উপজেলা হলে জেলা নির্বাহী ও পৌরসভার হলে কমিশনারের সনদ।
- প্রতিষ্ঠানটি যদি অংশীদারি হয় তবে অংশীদারি চুক্তিপত্র এবং যদি লিমিটেড কোম্পানি হয়ে থাকে তবে মেমেরেন্ডাম ও আর্টিকেলন অব এসোসিয়েশনের কপি সাবমিট করতে হবে।
- প্রতিষ্ঠানটি চলমান অবস্থায় থাকলে গত ১ বছরের হিসাবের বিবরণী প্রদান করতে হবে। আর যদি নতুন হয় তবে এটার প্রয়োজন নেই।
- দুইজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উক্ত লোনের গ্যারান্টি প্রদানের সনদ দিতে হবে।
- SME খাতে ব্যাংক কোলেটারেল ফ্রী লোন চালু রেখেছে যার ফলে আগ্রহী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
- তাছাড়া আপনার পছন্দ করা ব্যাংকের যদি অতিরিক্ত কোনো রেকোয়ারমেন্ড থেকে থাকে তবে সেটা পূরণ করতে হবে।
উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার যোগ্যতা
উদ্যোক্তাদের লোন পাওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত বা যোগ্যতা রয়েছে যা একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার থাকা উচিৎ। এমনই বেশ কিছু যোগ্যতা নিয়ে নিম্মে আলোকপাত করা হলো।
১) উদ্যোক্তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
২) যে আবেদন করবে তার ও গ্যারেনারের জাতীয় পরিচয় পত্র ও রঙ্গিন ছবি থাকতে হবে।
৩) প্রতিষ্ঠানটি ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন করা থাকতে হবে।
৪) প্রতিষ্ঠান স্থাপনার রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে।
৫) উক্ত প্রতিষ্ঠান যদি পূর্বে কোথা থেকে ঋণ গ্রহন করে থাকে তবে সেটির হালনাগাদ ও বিবরণ প্রদান করতে হবে।
স্টার্ট আপ এর জন্য সরকারের প্রকল্প
সরকার বিভিন্ন সময় বেশ কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকল্প গ্রহন করে থাকে অন্যভাবে বলতে গেলে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এখানে বিভিন্ন উদ্যোমী লোকেরা নিজেদের আইডিয়া, আইডেন্টিটি জমা দিয়ে থাকে। সেগুলো থেকে বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে উক্ত আইডিয়া গৃহীত হলে তহবিল প্রদান করা হয়ে থাকে। মূলত এসকল তহবিল থেকে অর্থায়ন পাওয়া বেশ লাভজনক হয়ে থাকে উদ্যোক্তাদের জন্য।
পরিশেষে কিছু কথা
উদ্যোক্তা হওয়া কোনো সহজ কথা নয়, সহজ নয় উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত প্রকল্পটি সকল উদ্যোক্তাগণদের জন্যই আনন্দের বার্তা। এবং এর মাধ্যমেই উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় সেই বিষয়ে জানানো হয়েছে উক্ত আর্টিকেলটিতে। তাছাড়া যেকোনো ব্যাংকে একাউন্ট খোলা হোক বা অন্যান্য উপায়ে ব্যাংক লোন পাওয়ার নিয়ম হোক, সকল বিষয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা থাকছে বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ব্যাংক নামক ক্যাটাগরিতে।