কিভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হয়? টাকা জমানোর কৌশল 

0
21

আচ্ছা, কিভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হয়? এমন কি কোনো পদ্ধতি বা কৌশল রয়েছে যার প্রতিফলণ ঘটানো সহজ এবং যা অনুসরণ করলে টাকা জমানো শুরু করা যাবে এখন থেকেই? জী হ্যাঁ, অবশ্যই রয়েছে, তা জানতে পড়তে হবে পুরো আর্টিকেলটি কেননা, এখানেই রয়েছে সেসব সিক্রেট টিপস ও কার্যকর উপায় যা অনুসরণের মাধ্যমে কিভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হয় সেই বিষয়ে জানতে পারবেন। 

সঞ্চয় বলতে অর্থ বা সম্পদকে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যয় করার পরিবর্তে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য আলাদা করে রাখাকে বোঝায়। এতে করে জরুরী অবস্থা, পরিকল্পিত ব্যয় বা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের জন্য তহবিল জমা করার জন্য একজনের আয় বা সম্পদের একটি অংশ সংরক্ষণ করাকে বুজায়।

অন্যদিকে, অর্থ সঞ্চয় (Money Saving) হলো ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যয় হ্রাস এবং সঞ্চয় সর্বাধিক করার অনুশীলনকে বোঝায়। এতে একজনের ব্যয় করার অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত ব্যয়ের চেয়ে অর্থ সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সচেতন পছন্দ করাকে বুজায়। অর্থ সঞ্চয় মূলত বাজেটিং, খরচ ট্র্যাকিং, প্লানিং এবং মিতব্যয়ী হওয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে।

কেউ চাইলেই যেকোনো ভাবে সঞ্চয় শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত রয়েছে – সরাসরি টাকা জমিয়ে রাখা, ব্যাংকে টাকা রাখা, সঞ্চয়পত্র কেনা কিংবা এমন কোনো সম্পদ কেনা যা দ্রুতই তারল্যে রুপান্তরিত করা যায়। আর এগুলোর বিপরীতে কেউ আবার বিনিয়োগকে বেছে নেয় সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে। 

ঠিক ভাবে দেখলে এটা সর্বোত্তম উপায় অর্থ সঞ্চয়ের, যদিও কিছুটা রিস্ক এখানে থেকেই যায়। যাই হোক, এই পর্যায়ে জেনে নেয়া যাক কিছু কারণ যার জন্য অর্থ সঞ্চয় করা জরুরি। কেননা, যতক্ষন না অব্দি আপনি একটা কাজ করার পেছনে যথাযথা কারণ না খুজে পাবেন ততক্ষন অব্দি সে কাজ করার জন্য ইচ্ছা আপনার মনে জাগবে না। 

অর্থ সঞ্চয় কেন গুরুত্বপূর্ণ? 

অবশ্যই অর্থ সঞ্চয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে একটি। তবে কেনো? অবশ্যই কিছু কারণ রয়েছে? এবার জানবেন সেই কারণ গুলো যার জন্য আপনার অর্থ সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

১) জরুরী তহবিল: অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাথে জড়িত ব্যয়ের ক্ষেত্রে সঞ্চয় আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে। যেমন – জরুরী চিকিৎসা অবস্থা, গাড়ি মেরামত, হঠাৎ চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে উক্ত সঞ্চয় গুলো কাজে আসবে। 

২) আর্থিক লক্ষ্য: মানুষ তার আর্থিক আকাঙ্খা পুরণের উদ্দেশ্যে সেভিং করে থাকে। যেমন – একটি বাড়ি কেনা, একটি ব্যবসা শুরু করা, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা বা আরামে অবসর নেওয়া। সময়ের সাথে সঞ্চয় করা এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করতে হয়।

৩) অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: ব্যক্তিগত সঞ্চয় থাকলে তা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে। যখন ব্যক্তিরা অর্থ সঞ্চয় করে, তখন এটি বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। বাহ্যিক ঋণের উপর নির্ভরতা কমাতেও সাহায্য করে, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

৪) মনের শান্তি: সঞ্চয় করা নিরাপত্তা এবং মানসিক শান্তির অনুভূতি প্রদান করে। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি বা ভবিষ্যত পরিকল্পনার জন্য তহবিল উপলব্ধ রয়েছে তা জেনে রাখা আর্থিক চাপ কমাতে এবং সামগ্রিক সুস্থতার উন্নতি করাতে সহায়তা করে এবং মানুষকে টেনশন ফ্রী থাকতে দেয়।

৫) আর্থিক স্বাধীনতা: জীবনের একটা সময় এসে মানুষ চায় তার মনের ইচ্ছা গুলো পূরণ করতে, যখন মানি ব্যাগে হাত দিয়ে আগে চেক করতে হবে না কত টাকা অবশিষ্ট আছে কিংবা এই মাসের বাকি দিন গুলো কিভাবে কাটবে সেই বিষয়ে ভাবা ছাড়াই জীবন উপভোগ করার মত আর্থিক স্বাধীনতার। এক্ষেত্রে সঞ্চয় তৈরি করা ব্যক্তিদের আরও স্বাবলম্বী হতে এবং আর্থিক সহায়তার জন্য অন্যের উপর কম নির্ভরশীল হতে দেয়।

সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য কি? 

যেমনটা কিছুক্ষন আগে বলেছিলাম, সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে অনেকে অর্থ নিজের কাছে রাখা, ব্যাংকে রাখার পাশাপাশি বিনিয়োগও করে থাকে। তাহলে কি সঞ্চয় আর বিনিয়োগ এক হয়ে গেলো? মূলত উদ্দেশ্য এক থাকলেও এই দুয়ের মধ্যে রয়েছে বেশ তফাৎ। এই পর্যায়ে জানাবো কোন কোন দৃষ্টিকোণ থেকে সঞ্চয় থেকে বিনিয়োগ ভিন্ন। এটা আপনাকে কিভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হয় সেই বিষয়ে আরেকটু ক্লিয়ার ধারণা দেয়ার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নিতেও সহায়তা করবে। 

সঞ্চয়

সেভিংস বলতে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য আপনার আয় বা তহবিলের একটি অংশ আলাদা করে রাখার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এটি কম-ঝুঁকিপূর্ণ, সহজে অ্যাকাউন্টে টাকা রাখা যায়। যেমন – সেভিংস অ্যাকাউন্ট, সার্টিফিকেট অফ ডিপোজিট (সিডি)। সঞ্চয়ের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল অর্থ সংরক্ষণ করা এবং সময়ের সাথে সাথে এর মূল্য বজায় রাখা।

সঞ্চয়ের কিছু  বৈশিষ্ট্য

কম ঝুঁকি: সঞ্চয় সাধারণত কম-ঝুঁকির হয়ে থাকে যা একটি স্থিতিশীল রিটার্ন প্রদান করে।

তারল্য: সঞ্চয় সহজেই তারল্যে রুপান্তর করা যায় বা ভাঙ্গা যায় এবং উল্লেখযোগ্য জরিমানা বা বিধিনিষেধ ছাড়াই দ্রুত নগদে রূপান্তরিত করা যেতে পারে।

অর্থ সংরক্ষণ: সঞ্চয়ের ফোকাস হল মূল পরিমাণ রক্ষা করা এবং সময়ের সাথে সাথে এর মূল্য বজায় রাখা।

পরিমিত আয়: সেভিংস অ্যাকাউন্টগুলি সাধারণত বিনিয়োগের তুলনায় কম সুদের হার প্রদান করে।

বিনিয়োগ 

ইনভেস্টমেন্ট বলতে মুনাফা বা দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশায় তহবিল বরাদ্দ করাকে বোঝায়। বিনিয়োগের মধ্যে বিনিয়োগ করা মূলধনের উপর রিটার্ন লাভের প্রত্যাশার সাথে স্টক, বন্ড, রিয়েল এস্টেট বা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো সম্পদে অর্থ রাখা জড়িত।

বিনিয়োগের কিছু বৈশিষ্ট্য

ঝুঁকি এবং প্রাপ্তি: বিনিয়োগে ঝুঁকির বিভিন্ন মাত্রা থাকে, উচ্চতর রিটার্নের সম্ভাবনার সাথে ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকে।

বৈচিত্র্যকরণ: বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন সম্পদ শ্রেণী এবং সেক্টরে তাদের বিনিয়োগ ছড়িয়ে দিয়ে তাদের পোর্টফোলিওগুলিকে বৈচিত্র্যময় করে।

দীর্ঘমেয়াদী: বিনিয়োগগুলি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী জন্য করা হয়, একটি বর্ধিত সময়ের মধ্যে মূলধন বৃদ্ধি বা আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে।

উচ্চতর রিটার্নের সম্ভাবনা: সঞ্চয় অ্যাকাউন্টের তুলনায় বিনিয়োগে উচ্চতর আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সেক্টর বুজে পা না বাড়ালে ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকছে। 

কিভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হয়? টাকা জমানোর কৌশল 

এবার আসবো এই আর্টিকেলের মূল বিষয় বস্তুতে যেটা হচ্ছে, কিভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হয়? সে সম্পর্কে এখানে কিছু পদ্ধতি রয়েছে, এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যা বোঝা সহজ ও অনুসরণ করাও সম্ভব। তবে দেখে নেয়া যাক:

খরচের হিসাব রাখুন

আপনার খরচের রেকর্ড রাখা শুরু করে দিন। ইন্টারনেট বিল থেকে শুরু করে সামান্য ক ছোট কেনাকাটা সহ আপনি যে সমস্ত অর্থ ব্যয় করেন তা লিখুন। এমন ব্যয় গুলো সনাক্ত করতে সহায়তা করে যেখানে আপনি অতিরিক্ত ব্যয় করতে পারেন এবং আপনাকে আপনার ব্যয়ের অভ্যাসের সাথে সামঞ্জস্য করতে হবে। ব্যয় গুলো লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে হ্যান্ড নোট, এক্সেল সিট, কিংবা ফোনের wallet অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

আপনার বাজেটে ‘সঞ্চয়’ নামে একটি পৃথক বিভাগ তৈরি করুন

আপনি যখন একটি বাজেট তৈরি করেন, তখন আপনার আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ সঞ্চয়ের জন্য বরাদ্দ করুন। সঞ্চয়কে একটি অপরিহার্য ব্যয় হিসাবে বিবেচনা করুন এবং এটিকে অগ্রাধিকার দিন। সঞ্চয়ের জন্য একটি উতসর্গীকৃত বিভাগ থাকার মাধ্যমে, আপনি নিয়মিত অর্থ আলাদা করে রাখতে পারবেন। 

বাজেটটি এভাবে সাজাবেন যেখানে প্রথমে ইনকাম সামারি থাকবে, আপনার মোট আয়কৃত অর্থের সম্পূর্ণ ডিটেইলস হিসাব থাকবে। এভাবে একেক করে ফিক্সড এক্সপেন্স (যে খরচ গুলো প্রতি মাসে করতেই হবে) Variable Expense (যে খরচ প্রতি মাসে করা হয় না, যেকোনো এক মাসে করলেই অনেক মাস সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন – ফোনের ব্যাক কভার কেনা) Savings (প্রতি মাসে নিদিষ্ট পরিমাণে অর্থ সেভিং ফান্ডে রাখবেন) 

মনে রাখতে হবে যে, কোনো মাসের খরচ যেনো কোনো ভাবেই আয় থেকে বেশি না হয়ে যায়। সমিকরণটা ঠিক এভাবে করতে হবে যে, খরচ + সঞ্চয় = মোট আয়। 

খরচ কমানোর উপায় খুঁজুন

আপনার ব্যয় কমানোর উপায়গুলি সন্ধান করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি বাড়িতে রান্না করে খাওয়া কমাতে পারেন, আপনার নিয়মিত কেনাকাটার জন্য সস্তা বিকল্পগুলি খুঁজে পেতে পারেন বা আপনার বিলগুলিতে আরও ভাল ডিল নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। আপনার খরচের অভ্যাসের ছোট পরিবর্তন সময়ের সাথে উল্লেখযোগ্য সঞ্চয় যোগ করতে পারে। 

পাশাপাশি অতিরিক্ত বিনোদন খরচ কমানো, সাবস্ক্রিপশন বাদ দেয়া, অতিরিক্ত রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া না করা, শৌখিন কিছু কেনার আগে একাধিকবার চিন্তা করার মত অনেক উপায় রয়েছে খরচ কমানোর। খরচ কমানোর উপায় সম্পর্কে একটি ডিটেইলস আর্টিকেল রয়েছে আমাদের ওয়েবসাইটে। সেটা দেখে নিজের খরচ কমানোর বিষয়টি আয়ত্তে আনতে পারবেন। 

সঞ্চয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

যেকোনো ধরনের সঞ্চয়ই একটি নিদিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা থাকা জরুরি। আপনি ঠিক কত দিনের জন্য এবং কোন উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে সঞ্চয় করতে চাচ্ছেন সেটা সেট করে নিলে ওই সঞ্চয়টি বহাল রাখতে অনুপ্রেরণা প্রদান করবে এবং আপনাকে ট্র্যাকে থাকতে সাহায্য করতে পারে। 

আপনি কি জন্য সঞ্চয় করছেন তা নির্ধারণ করুন। বাস্তবসম্মত লক্ষ্যগুলি সেট করুন এবং সেগুলিকে আরও অর্জনযোগ্য করতে ছোট মাইলফলকগুলিতে বিভক্ত করুন। এবং সেই অনুযায়ী সঞ্চয় শুরু করুন।  

সঠিক পলিসি বাছাই করুন  

যখন বীমা নীতি বা অন্যান্য আর্থিক পরিষেবার কথা আসে, তখন আপনার গবেষণা করুন এবং আপনার অর্থের জন্য সর্বোত্তম মূল্য অফার করে এমন বিকল্পগুলি বেছে নিন। বিভিন্ন প্রদানকারী, তাদের হার এবং তারা যে কভারেজ অফার করে তার তুলনা করুন। এটি নিশ্চিত করে যে আপনি এখনও নিজেকে রক্ষা করার সময় আপনার অর্থ থেকে সর্বাধিক লাভ করছেন৷

যেকোনো পলিসি বেছে নেয়ার আগে ভাবতে হবে সঞ্চয়টি সল্পমেয়াদী নাকি দীর্ঘমেয়াদী। কেননা ওইটার উপর নির্ভর করে সঠিক পলিসিটি বেছে নিতে পারবেন। যদি সল্প মেয়াদী সঞ্চয়ের উদ্দেশ্য হয় তবে কোনো ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খোলার মাধ্যমে সঞ্চয় শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যাংকের ভেরিয়েন্ট অনুযায়ী ৪ থেকে ৬ % লভ্যাংস পাওয়া যাবে। 

অন্যদিকে আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে থাকেন তবে সবচেয়ে ভালো হয় কোনো মেয়াদ ভিত্তিক বীমা পলিসি বেছে নেয়া। এক্ষেত্রে সাধারণত ১০, ১৫, ২০, ৩০ বছরের জন্য করা যেতে পারে। তাছাড়া ব্যাংকেও FDR একাউন্ট খুলে সেখানে টাকা জমা করতে পারেন। ভালো ভালো রিটার্ণ দিবে এক্ষেত্রে। 

ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করুন

আপনার যদি ক্রেডিট কার্ডের সাথে অতিরিক্ত ব্যয় করার এবং ঋণ জমা করার প্রবণতা থাকে, তাহলে অপ্রয়োজনীয় ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার কথা বিবেচনা করুন। এটি আপনাকে আপনার সামর্থ্যের বাইরে ব্যয় করার প্রলোভন এড়াতে সহায়তা করে এবং সংশ্লিষ্ট ফি বা সুদের চার্জ বাদ দেয়। 

শুধু মাত্র ফ্লেক্স নেয়ার জন্য বা লোক দেখানোর জন্য এসব কার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুক। ক্যাশ টাকা ব্যবহার করে কেনাকাটা করুন। ক্যাশ টাকা যখন হাত দিয়ে পরিশোধ করবেন তখন সাব-কন্সিয়ান্সলি কিছু মিসিং হওয়ার অনুভূতি পাবেন, কিন্তু যখন কার্ডের মাধ্যমে অর্থ না থাকা সাপেক্ষেও কেনাকাটা করতে সক্ষম হবেন তখন এই মিসিং অনুভূতিটা এক মাত্র ঋন পরিশোধের সময়েই পাবেন, যা আমার মনে হয় না আপনার ভালো লাগবে। 

নিয়মিতভাবে সঞ্চয় বৃদ্ধির দিকে নজর রাখুন  

আপনার সঞ্চয়ের ট্র্যাক রাখুন এবং আপনার লক্ষ্যগুলির দিকে আপনি যে অগ্রগতি করছেন তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। এটি আপনাকে অনুপ্রাণিত থাকতে সাহায্য করে এবং প্রয়োজনে আপনার সঞ্চয় কৌশলগুলি সামঞ্জস্য করতে দেয়। সময়ের সাথে সাথে আপনার সঞ্চয় বাড়তে দেখা আনন্দের এবং আপনাকে সঞ্চয় চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। পাশাপাশি আপনি কোন কোন সেক্টরে অতিরিক্ত ব্যয় করছেন সেই বিষয়েও একটি সচ্ছ ধারণা প্রদান করে। 

সমস্ত ঋণ পরিশোধ করুন 

সহজ ভাষায় একটা কথা বলে রাখি, আপনি যদি ঋণে ঢুবে থাকেন তবে কখনই সেভিংস করতে সক্ষম হবেন না। আপনার যদি বকেয়া ঋণ থাকে, তাহলে সেগুলি পরিশোধ করতে এখনই ব্যবস্থা নিন। উচ্চ-সুদের ঋণ (যেমন ক্রেডিট কার্ড ঋণ) দ্রুত জমা হতে পারে এবং কেননা এটি আপনার সঞ্চয় করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ঋণ পরিশোধ করার মাধ্যমে যে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেন তা কিন্তু সঞ্চয় হিসাবে যেতে পারতো, একমাত্র কারণেই সেটা সম্ভব হচ্ছে না আর তা হলো আপনার ঋণ। তাই সঞ্চয়ের আগে অবশ্যই নিজের ঋণ গুলো পরিশোধ করুন। 

একটি ইমার্জেন্সি ফান্ড তৈরি করুন 

একটি জরুরী তহবিল তৈরি করার মাধ্যমে অপ্রত্যাশিত ব্যয় বা আর্থিক জরুরী অবস্থার জন্য নিজেকে আর্থিক ভাবে সচ্ছল রাখতে সক্ষম হবেন। একটি পৃথক সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে তিন থেকে ছয় মাসের জীবনযাত্রার ব্যয় যত হয় সেই সমতুল্য অর্থ সংরক্ষণ করার লক্ষ্য রাখুন। এটি একটি নিরাপত্তা জাল প্রদান করে এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আপনাকে ঋণ করার হাত থেকে রক্ষা করে।

ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন

যেকোনো কাজে ধারাবাহিকতা উক্ত কাজকে যথাযথ ভাবে সফল করতে সক্ষম করে তোলে। অর্থ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার Pay চেক থেকে আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয় স্থানান্তর সেট আপ করে সংরক্ষণ করার অভ্যাস করুন। অথবা বিকাশে সেভিং একাউন্ট তৈরি করে নিতে পারেন। এতে করে বিকাশ ওয়ালেটে থাকা অর্থ থেকে প্রতি মাসে নিদিষ্ট পরিমাণের অর্থ কেটে নিবে।

আপনার বাজেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুন। আবেগপ্রবণ কেনাকাটা এড়িয়ে চলুন এবং আপনার সঞ্চয় লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকুন। সময়ের সাথে সাথে, আপনার সঞ্চয় বাড়বে, এবং আপনি ভাল আর্থিক অভ্যাস গড়ে তুলবেন।

মনে রাখবেন, অর্থ সাশ্রয়ের জন্য প্রয়োজন শৃঙ্খলা এবং ধৈর্য। এই পদ্ধতিগুলি বাস্তবায়ন করে, আপনি ধীরে ধীরে আপনার সঞ্চয় তৈরি করতে এবং আপনার আর্থিক উদ্দেশ্যগুলি অর্জন করতে পারেন।

অর্থ সঞ্চয়ের জন্য সঞ্চয়পত্র কি লাভজনক হতে পারে? 

অর্থ সঞ্চয়ের জন্য সঞ্চয়পত্র বেশ উপকারী হয়ে উঠবে। সঞ্চয়পত্র হল সরকার-অনুমিত বিনিয়োগের উপকরণ যা একটি নির্দিষ্ট সুদের হার এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনিয়োগের উপর একটি গ্যারান্টিযুক্ত রিটার্ন প্রদান করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সঞ্চয়পত্র কীভাবে সুবিধাজনক হতে পারে তা এখানে রয়েছে:

কম ঝুঁকি: সরকার কর্তৃক জারি করা সেভিংস বন্ডগুলিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেহেতু তারা সরকার দ্বারা সমর্থিত, ডিফল্ট হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপত্তার অনুভূতি প্রদান করে।

স্থিতিশীল রিটার্ন: বাংলাদেশে সেভিংস বন্ড সাধারণত নির্দিষ্ট সুদের হার অফার করে, যার মানে আপনি আগে থেকেই জানেন যে আপনি আপনার বিনিয়োগে কত উপার্জন করবেন। এই স্থিতিশীলতা সেই ব্যক্তিদের জন্য উপকারী হতে পারে যারা তাদের সঞ্চয়ের উপর একটি অনুমানযোগ্য রিটার্ন খুঁজছেন।

সহজে গ্রহনযোগ্যতা: বাংলাদেশে ব্যক্তিদের জন্য সঞ্চয় বন্ড সহজেই অ্যাক্সেসযোগ্য। এগুলি বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এবং পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাওয়া যায়, যা লোকেদের জন্য সেগুলিতে বিনিয়োগ করা সুবিধাজনক করে তোলে।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগের পরিমাণ: বাংলাদেশে সঞ্চয় বন্ডে প্রায়ই অপেক্ষাকৃত কম ন্যূনতম বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা থাকে। এটি সীমিত আর্থিক সংস্থানযুক্ত ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ করতে এবং অল্প পরিমাণ অর্থের সাথে সঞ্চয় শুরু করতে দেয়।

কর সুবিধা: কিছু ক্ষেত্রে, সঞ্চয় বন্ড অর্জিত সুদের উপর কর সুবিধা বা ছাড় দিতে পারে। এটি সম্ভাব্যভাবে আপনার বিনিয়োগের সামগ্রিক আয় বাড়াতে পারে, সেগুলিকে সঞ্চয়কারীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়: সঞ্চয় বন্ডের সাধারণত একটি নির্দিষ্ট মেয়াদকাল থাকে, যা ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদে সঞ্চয় করতে উত্সাহিত করে। সঞ্চয় বন্ডে বিনিয়োগ একটি সুশৃঙ্খল সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে এবং ব্যক্তিদের শিক্ষা, অবসর গ্রহণ বা সম্পত্তি ক্রয়ের মতো নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্যগুলির জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে সহায়তা করে।

বৈচিত্র্যকরণ: সঞ্চয় বন্ড একটি বৈচিত্রপূর্ণ বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর একটি অংশ হতে পারে। বন্ড, স্টক এবং রিয়েল এস্টেট সহ বিভিন্ন সম্পদ শ্রেণীতে আপনার বিনিয়োগকে বৈচিত্র্যময় করে আপনি আপনার ঝুঁকি ছড়িয়ে দিতে পারেন এবং সম্ভাব্যভাবে আপনার সামগ্রিক আয় বাড়াতে পারেন।

আপনি বিভিন্ন প্রয়োজন ও বিভিন্ন মেয়াদে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত আরো ডিটেইলস আর্টিকেল দেখুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটে যেখানে রয়েছে – সঞ্চয়পত্র কি, কিভাবে কিনতে হয়, সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ সহ আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু। 

 পরিশেষে কিছু কথা

কীভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হয়? তা শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা আপনার আর্থিক সক্ষমতাত উন্নতি করাতে সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যতের জন্য নিরাপত্তা প্রদান করবে। একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং কিছু কার্যকরী কৌশল প্রয়োগ করে, আপনি আপনার আর্থিক নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন। পাশাপাশি আপনার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলির দিকে কাজ করতে পারেন। 

পুরো আর্টিকেল জুরে যে অনুশীলন গুলো রয়েছে তা আপনার জীবনধারায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে, আপনি অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন, আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারবেন এবং আপনার আর্থিক ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরির দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে পারেন। আশা করি অর্থ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ টপিক ও টপিকের উপর করা আলোচনার পাশাপাশি প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ কৌশল গুলো আপনার কিছুটা হলেও উপকারে আসবে। এরই সাথে এবারের মত বিদায় নিচ্ছি পরবর্তী কোনো সেভিংস স্কিমের সম্পর্কে জানার আমন্ত্রনের মাধ্যমে। সঙ্গে থাকুক বাংলা আলোর। 

Visited 2 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here