চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান সমূহ এর বর্ণনা নিয়ে থাকছে আজকের আর্টিকেলটি।চট্টগ্রামে গিয়ে আপনি কোন কোন জায়গা ভ্রমণ করবেন বা ঘুরবেন সেটি আজ বলবো আপনাদের।
ভ্রমণ এর কথা শুনলেই আমাদের বাঙালিদের মনে এক ধরনের আনন্দ বা মজার অনুভূতি কাজ করে। কারণ বাঙালি মাত্রই যে ভ্রমণপ্রিয় জাতি। তবে বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখনও ভাবেন যে ভ্রমণ করার জন্য বাহিরের দেশগুলোতেই যেতে হয়।
কিন্তু এটা আপনার ভুল ধারণা আমাদের দেশেও এমন অনেক চমৎকার এবং জনপ্রিয় জায়গা আছে যেগুলো ভ্রমণ না করলেই নয়। চট্টগ্রাম শহর আমরা কমবেশি সবাই চিনি। আজকে আপনাদের বলবো চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানগুলোর ব্যাপারে। চট্টগ্রাম শহরে ভ্রমণ করার মতো অনেক জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান আছে, আমি চেষ্টা করবো সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে।
চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান সমূহ
১. পতেঙ্গা সৈকত
চট্টগ্রামের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পতেঙ্গা সৈকত, যেখানে প্রায়শই পর্যটকদের ভীড় থাকে। যদিও বহুকাল আগে থেকেই এই সৈকত বেশ জনপ্রিয় হিসেবে পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত হয়ে আসছে তবে ২০১৯ সালে একেবারে নতুন এক রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এই পতেঙ্গা সৈকতটিকে।
বিশেষ করে বিকেলের দিকে এই সৈকতে হাজারো মানুষের ভীড় জমে থাকে। কেউ বন্ধুদের সাথে, কেউ পরিবার, কেউ কাপল হিসেবে পতেঙ্গা সৈকত ঘুরতে আসেন। কেউ কেউ তো আবার একা আসেন এই সৈকতের মনমুগ্ধকর আবহাওয়া গ্রহণ করার জন্য।
পতেঙ্গা সৈকতে ঘুরতে আসলে সমুদ্রের পাশে পায়চারি করতে পারেন, আশেপাশের অনেক হোটেল বা রেস্তোরাঁ পেয়ে যাবেন যেখানে সুন্দর পরিবেশে খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন। এখানে আপনারা ছোট বড় নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন, ঘোড়ার পিঠে চরতে পারবেন। এছাড়াও চারদিকের চমৎকার সব দৃশ্যগুলো ক্যামেরা বন্দী করে স্মৃতি হিসেবে রাখতে পারেন।
সমুদ্রের আসে পাশে বিভিন্ন ধরনের বিক্রেতারা খাবার, ফুল, আচার, বিভিন্ন মালা, কসমেটিকস, আকর্ষণীয় সব ছবি ক্রেতাদের অফার করে থাকে। ভালো লাগলে সেগুলো কিনে নিতে পারেন। পতেঙ্গা সৈকত ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকেই পরিবহন সেবা পাওয়া যায়। ফলে পর্যটকদের ভ্রমণে আসার ক্ষেত্রে তেমন অসুবিধাই পড়তে হয়না।
২. চন্দ্রনাথ পাহাড়
চট্টগ্রাম বিভাগের সীতাকুণ্ড উপজেলার চন্দ্রনাথ পাহাড় এর সৌন্দর্য্য সীতাকুণ্ড উপজেলার পরিচিতি ভ্রমণপ্রিয় মানুষ বা পর্যটকদের কাছে তুলে ধরেছে এক নতুন রূপে। আর তাইতো যখন প্রশ্ন আসে চট্টগ্রামের কোন উপজেলা ভ্রমণের জন্য বেশি উপযোগী তখন বলা হয় সীতাকুণ্ড এর নাম।
চন্দ্রনাথ পাহাড় সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত, যেটির উচ্চতা হচ্ছে ১১৫২ ফুট উঁচু। সীতাকুণ্ড উপজেলার বাজার থেকে পূর্বের দিকে কেবল মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অবস্থিত এই পাহাড়।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়ার পথে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু স্থাপত্য এবং মন্দির আপনাদের চোখে পড়বে। একইসাথে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কেও জানতে পারবেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠার ব্যাপারটিতে রয়েছে এডভেঞ্চার ভরপুর। অর্থাৎ আমরা যারা এডভেঞ্চারে ভরপুর ভ্রমণ করতে চাই তাদের জন্য চন্দ্রনাথ পাহাড় একদম সেরা একটি জায়গা।
পাহাড়ের একটু উপরে উঠলে পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্য, আদিবাসীদের জুম চাষ এর দৃশ্য, সারি সারি ফুল এবং ফলের বাগান দেখতে পারবেন আপনারা। পাহাড় থেকে পুরো ভিউ দেখে মনে হবে আপনি স্বপ্নের রাজ্য ভ্রমণে চলে এসেছেন।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠার পথে একটি ছোট ঝর্না দেখা যায়, যেটি দেখার দুটি পথ রয়েছে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে অবস্থিত আছে হিন্দু ধর্মাবল্বীদের চন্দ্রনাথ মন্দির। প্রতি বছর বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভিড় জমে এই মন্দির দর্শন করতে, বিভিন্ন জায়গা থেকে তীর্থ করার উদ্দেশ্যে চন্দ্রনাথ মন্দিরে আসেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
৩. মহামায়া লেক
চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলাতে অবস্থিত এই কৃত্রিম হ্রদ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ হিসেবে সুপরিচিত। ভ্রমণ প্রিয় মানুষদের কাছে এবং পর্যটকদের কাছে অপরূপ সৌন্দর্য এবং উপভোগ্য হওয়ার ফলে দারুন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এই লেকটি।
মিরসরাই উপজেলার পাহাড়ের কোল ঘেঁষে প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে মহামায়া কৃত্রিম হ্রদটি। ছোট বড় বোটে চরে লেক ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি, পুরো পাহাড়ি দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন এখানে। একইসাথে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা, হাঁটার মধ্যে এক প্রকার এডভেঞ্চার অনুভূতি পাবেন।
এছাড়াও মহামায়া লেকে ঘটনার শীতল পানিতে ভিজতে পারেন, এতে মনে প্রশান্তি মিলবে এবং মন চাঙ্গা হয়ে উঠবে। মহামায়া লেকটিতে রয়েছে কাইকিং করার মতো সুযোগ। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা এসে তবু ক্যাম্পিং করে রাত কাটিয়ে থাকে এখানে।
মোট কোথায় সম্পূর্ণ এডভেঞ্চার ভরপুর ভ্রমণ, পাহাড়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, লেকের ঠান্ডা জলে ভিজে মন শান্তি, বোটে করে পুরো লেক ঘুরে দেখতে চাইলে চলে আসুন এই বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ ভ্রমণে। এডভেঞ্চার এবং অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে পছন্দ ময় লেক এটি।
৪. ফয়েজ লেক
চট্টগ্রামের ফয়েজ লেক ভ্রমণে আসন বা না আসুন, কিন্তু ফয়েজ লেকের নাম নিশ্চই শুনেই থাকবেন।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলস্টেশনের অদূরে খুলশী এলাকায় অবস্থিত এই ফয়েজ লেকটি হচ্ছে একটি কৃত্রিম হ্রদ। বাংলাদেশের সেরা ৫ টি শিশুপার্ক এর মধ্যে একটি হচ্ছে ফয়েজ লেক। যেখানে শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন মজার মজার জিনিষ এবং রাইডের ব্যবস্থা এবং বড়দের জন্যেও রয়েছে পাহাড়ি দৃশ্য উপভোগ করা এবং মনোমুগ্ধকর সব দৃশ্য উপভোগ করার মতো সুযোগ।
ফয়েজ লেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য প্রবেশ দারে দেওয়া রয়েছে একটি ছোট চড়িয়াখানা। যেটি প্রবেশের শুরুতে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। পাহাড়ি দৃশ্য, মনমুগ্ধকর পরিবেশ, সুন্দর আবহাওয়া, পার্ক এর জন্য প্রতি বছর দেশে বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা ফয়েজ লেক ভ্রমণ করতে এসে থাকেন।
জনপ্রতি ফয়েজ লেক প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা করে, সী ওয়াল্ড এ প্রবেশ করতে গেলে পেয়ে যাবেন তিন ধরনের প্যাকেজ। একটি ৪০০ টাকা মূল্যের, একটি ৫০০ এবং অপরটি ৬০০ টাকা মূল্যের। এন্ট্রি ফি, রাইডের খরচ সব হাতের মুঠোয় হওয়াতে সবাই দূর দুরন্ত থেকে ছুটে আসে এই ফয়েজ লেকে।
৫. গুলিয়াখালি সমুদ্রসৈকত
পর্যটকদের পছন্দের জায়গা সমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে গুকিয়াখালি সমুদ্রসৈকত, যেটি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালি সি বীচ এর দূরত্ব কেবল মাত্র ৫ কিলোমিটার।
একদিকে সাগরের জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন এর জন্য এই গুলিয়াখালি পর্যটকদের কাছে পেয়েছে এক অন্যরকম পরিচিতি। এই সৈকতের ছোট ছোট সবুজ ঘাস আর আশেপাশের ছোট ছোট পানিপূর্ণ থাকা নালাগুলো পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে।
যদিও এই সমুদ্র মানুষের কাছে বেশি পরিচিত নয়, যার ফলে এখানে মানুষের খুব একটা বেশি ভীড় হয়না। আর এর জন্যই আপনি এই সৈকতের পাশে আসলে পাবেন নীরব পরিবেশ এবং মনে পাবেন অনেকটা প্রশান্তি। আমরা যারা একাকিত্ব ভালোবাসি অথবা বন্ধুদের নিয়ে নিরবে সময় কাটাতে চাই তারা এখানে ঘুরতে আসতেই পারি।
প্রকৃতির সব মায়া যেন এই গুকিয়াখালি সৈকতের চারপাশে আছে। যেটা আপনি এই সৈকতে না আসলে বুঝতেই পারবেন না।
শেষ কথা
বন্ধুরা আজকে আমরা চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে জানলাম। যদি আপনি চট্টগ্রামে আছেন বা যাবেন বলে ভাবছেন, এবং চট্টগ্রামের নিকটবর্তী কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন তবে আপনি চলে যেতে পারেন এই ৫ টি জায়গাতে।
একেকদিন একেক জায়গায় যাওয়ার জন্য প্ল্যান করতে পারেন। বিশেষ করে এই ৫ টি জায়গাতে যদি আপনি ভ্রমণে যান তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আমাদের দেশেও ভ্রমণ করার মতো জায়গা আছে। সবকিছুই যেন প্রকৃতির মায়ায় পরিপূর্ণ । আর্টিকেলটা কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না, ভালো লাগলে শেয়ার করে দিতে পারেন।