চালের ব্যবসা আইডিয়া । ধান চালের হোলসেল ব্যবসা । চালের ব্যবসা করার নিয়ম

0
36
চালের ব্যবসা করার নিয়ম

ভাত মানুষের প্রধান খাদ্য ও ভাত হয় চাল থেকে। যেহেতু এটা নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য তাই চালের ব্যবসা করা খুবই লাভজনক। আসুন চালের ব্যবসা করার নিয়ম ও আইডিয়া সম্পর্কে জানি। 

 

ভাত বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য। কেবল বাংলাদেশই নয় – ভারত, পাকিস্তান সহ বেশ কিছু দেশে প্রচুর পরিমানে ভাত খাওয়ার প্রচলন লক্ষ্যনীয়। আর ভাত আছে চাল থেকে। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে, ধান থেকে চাল তৈরি ও চালের ব্যবসা খুবই লাভজনক। নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য চাল বা চাউলের ব্যবসা কখনই থেমে থাকার মত নয়। তাই আসুন জেনে নেই  চালের ব্যবসা করার নিয়ম ও চালের ব্যবসায়ের সাথে জরিত সকল বিষয়গুলো। 

 

চালের ব্যবসা করার নিয়ম 

ব্যবসা করার নিয়ম মূলত ব্যবসা সফল ভাবে পরিচালনার সাথে যুক্ত সকল কার্যক্রমকে বুঝায়। চালের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় জানতে হবে এবং যা করতে হবে তা ধাপে ধাপে একেক করে বলা হবে আরটিকেলটিতে। চালদের ব্যবসা শুরু করার আগে পূর্ব প্রস্তুতি থেকে শুরু করে শেষ অব্দি যা যা করা ও জানা উচিৎ তা নিম্মে ধাপে ধাপে উপস্থাপন করা হলো। 

 

চালের ব্যবসার পূর্ব প্রস্তুতি 

শুধু চাল নয়, কেনো ব্যবসা শুরু করার আগেই সেই ব্যবসায়ের পূর্ব প্রস্তুতি রেডি করে নিতে হয়। অন্যসব ব্যবসায়ের মতই চালের ব্যবসা করার ক্ষেত্রেও কিছু পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে, তা হলোঃ 

 

১) প্রথমেই যে পন্যটা নিয়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন সেই পন্য সম্পর্কে সম্পুর্ন ধারনা রাখতে হবে, যার মানে এই যে চাল এবং চালের জাত সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। 

 

২) চালের ব্যবসা কোন পর্যায়ে করতে চাচ্ছেন সেটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনার বোঝার সুবিধার্থে বলে রাখি চাল বা চাউল নিয়ে একাধিক সেক্টরে ব্যবসা পরিচালনা করা যায়। নিম্মে চালের ব্যবসার ধরন সম্পর্কে আলোচনা করবো সেখান থেকে যেকোনো একটা বা একাধিক সেক্টর বাছাই করে ব্যবসায়ের পরিকল্পনা গঠন করতে পারেন। 

 

৩) ব্যবসায়ের অবস্থান খুব গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে এক্ষেত্রে। চালের ব্যবসায়ের জন্য এমন স্থান বেছে নিতে হবে যেখানে লোকের সমাগম বেশি আছে। হতে পারে কোনো বাজারে বা এমন স্থানে যেখানে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য দ্রব্য নিতে আসে। 

 

৪) সঠিক ভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য আপনাকে অবশ্যই বাজার বিশ্লেষন করতে হবে। আপনার প্রতিপক্ষ বিক্রেতারা কত টাকা কেজিতে চাল বিক্রি করছে তা চালাই করতে হবে। মনে রাখবেন এসব পন্যের ক্ষেত্রে লোকেরা যেখানে কম দামে পায় সেখানেই বেশি আকৃষ্ট হয়। 

 

৫) আপনি যে এড়িয়াতে বাস করছেন বা যেই এড়িয়াতে ব্যবসা পরিচালনা করছেন সেকাহ্নে কেমন লোকেরা থাকে এটাও একটা বড় প্রভাব বিস্তার করবে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে। একেবারে আঞ্চলিক গ্রামে যেমন মিনিকেট, বাসমতি চাল বেশি বিক্রি হবে না। তেমনই শহরের এড়িয়াতে মোটা চাল গুলো বেশি বিক্রি হবে না। তাই অবস্থান বুজে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। 

 

আচ্ছা, পূর্ব প্রস্তুতি সম্পর্কে কিছু তথ্য তো জেনে নিলাম এবার এই সব বিষয়ের গভিরে গিয়ে বিশ্লেষন দেখাতে হবে যাতে পুরো ব্যবসাটি যথাযথ ভাবে করা যায়। তার পেক্ষিতে প্রথমেই আসছে চালের প্রকারভেদ। আসুন জেনে নেই চাল বা চাউলের জাত ও কত ধরনের চাল পাওয়া যায় সে সম্পর্কে। 

চালের প্রকারভেদ । কত ধরনের চাল পাওয়া যায়? 

 

ধান থেকে চাল আসে দুই ধরনের। যথা : 

 

১) আতব চাল : এটি মূলত পিঠা বানানোর জন্য সবচেয়ে ভালো। সব ধরনের পিঠা আতব চালে তৈরি হয়। 

 

২) সিদ্ধ চাল : আমরা সাভাবিক ভাবে যে চালের ভাত খেয়ে থাকি সেগুলোই হলো সিদ্ধ চাল। তবে সিদ্ধ চলের মধ্যেও বেশ কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। যেগুলো হলো : 

 

  • ইরি 
  • বোরো 
  • আমন 
  • মিনিকেট 
  • নাজির শাইল 
  • লতা 
  • বাসমতি 
  • কালিজিরা 
  • চিনি গুড়া 
  • তুলসীমালা সহ আরো অনেক… 

 

চালের প্রকারভেদ জানার পর এবার জানবো ব্যবসা করতে চাল কত ধরনের ব্যবহার করা যায়। মানে ধান হতে চালে রুপান্তর থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে আসা অব্দি মোট কত ধরনের ব্যবসা হয়ে থাকে চাল নিয়ে। 

চালের ব্যবসায়ের প্রকারভেদ 

 

১) চালের খুচরা ব্যবসা 

২) পাইকারি চালের ব্যবসা 

৩) চাল রপ্তানির ব্যবসা

৪) চালের ব্র্যান্ড তৈরির ব্যবসা 

৫) সরকারি টেন্ডার নেয়া বা সরকারকে চাল বিক্রি 

চালের ব্যবসায় পুঁজি ও লাভের পরিমান 

 

দেখুন, চালের ব্যবসা করতে গেলে পুজি একটু বেশিই প্রয়োজন হবে। যত বেশি পুজি বিনিয়োগ করা হবে, তত বেশি লাভ হওয়ার সম্ভাওনা রয়েছে এই সেক্টরে। উপরের স্টেপে বলা হয়েছে চালের ব্যবসায়ের প্রকারভেদ গুলো। সেখানে থাকা খুরচা ব্যবসায়ীদের যেরুপ পুঁজির প্রয়োজন হবে তা কিন্তু পাইকারি বা চালের রপ্তানি কারকের পুঁজির মত হবে না। তাই ব্যবসায়ের ধরন অনুযায়ী প্রাথমিক পুজি উঠা নামা করবে। 

 

একটি সাধারন ধারনা দিলে বলা যায়, খুচরা ব্যবসায়ীরা ২,৫,১০ বস্তা চাল পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনে এনে খুচরা কেজি হিসেবে বিক্রি করতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের কেজি প্রতি লাভ অন্য ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি হয়। অন্যদিকে যারা পাইকারী বিক্রেতা আছে তারা সাধারনত এক ট্রাক করে চাল এনে থাকে। 

 

তবে এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, আপনি যদি একটি ট্রাকে ১০০-২০০ বস্তা চাল এনে থাকেন তাহলে ট্রাক ভাড়া যা দিতে হবে, আর আপনি যদি ৩০০ বস্তা চাল এনে থাকেন তাও একই ট্রাক ভাড়া দিতে হবে। তাইযারা ব্যবসায়ী আছে তাদের প্রায় সময় দেখা যায় ৩০০ বস্তার চাল আনতে এক ট্রাকে করে। এক্ষেত্রে ৩০ বস্তা চালে পুজি প্রয়োজন ক্ষেত্র বিশেষে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা। 

 

অন্যদিকে যারা চাল রকপানি করে, চালের ব্র্যান্ড তৈরি করে, অথবা সরকারের কাছে বিক্রি বা টেন্ডার গ্রহন করে তাদের চালাল প্রয়োজন হয় অনেক বেশি, ওই যে বললাম চালের ব্যবসায়ে যার যত বেশি বিনিয়োগ তার তত বেশি লাভ। তবে যে সব সময়ই লাভ হবে এমনটা কিন্তু নয়। অন্যসব ব্যবসায়ের মতই এই ব্যবসাতেও লাভ ক্ষতির ব্যাপার রয়েছে। 

 

চালের ব্যবসায়ের ৫ টি ধরনের সব কয়টি এক আর্টিকেলে বসে বুজানো যাবে না তাই খুচরা ও পাইকারি চালের ব্যবসায়ের দিকে বেশি ফোকাসে রেখে আর্টিকেলটি লিখছি। আচ্ছা, মোটামোটি ধারনা হলো চালের জাত, ধন ও চাল সংক্রান্ত ব্যবসায় গুলো নিয়ে এবার আসুন জেনে নেই পাইকারী ব্যবসায়ীরা কোথা থেকে চাল ক্রয় করতে পারবে বা কোন কোন স্থান থেকে চাল আনা যায়। 

চালের পাইকারী বাজার 

 

আপনি যদি খুচরা বিক্রেতাদের কাছ চাল বিক্রি করার পাশাপাশি সরাসরি ভোক্তাদের কাছেও চাল বিক্রি করতে চান তাহলে নিম্মে উল্লেখিত লোকেশন থেকে ট্রাকে করে চাল নিয়ে এসে ব্যবসা করতে পারেন। 

 

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ চালের আড়ত হচ্ছে বাবুবাজার – বাদামতলী চালের আড়ত। এটি মূলত বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে চাল এসে জমা হয়, এরপর এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চাল পাঠানো হয়। মূলত যে সকল স্থান থেকে বাবুবাজার কদমতলী চালের আরত চাল আসে তা হলো : শেরপুর, দিনাজপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, বগুড়া, নওগাঁ ইত্যাদি। 

 

এছাড়া ঢাকায় আরো অনেক স্থানে চালের আড়ৎ বসে থাকে। স্থান গুলোর নাম হচ্ছে : ” মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, বাসাবো, খিলগাঁও, মালিবাগ “

 

এইসব আড়ৎ এ যে সকল চালগুলো পাওয়া যায় তার নাম হচ্ছে : “ইরি-বোরো, আমল, নাজিরশাইল, পাইজম, মিনিকেট, লতা, বাসমতি, কালিজিরা, স্বর্ণা, আতব, কালিজিরা ইত্যাদি সহ মোটা ও চিকন সব ধরনের চাল। 

 

তাছাড়া যে সকল স্থানে চালের মিল রয়েছে সেখান থেকে চাল আনা খুব বেশি লাভজনক হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে চাল আনতে হবে বস্তাজাতকরণের মাধ্যমে। 

 

উক্ত কাজের জন্য পুরো বাংলাদেশের চালের পাইকারি বাজারের জন্য কুষ্টিয়া, পাবনা বিখ্যাত।

চালের ব্যবসা করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 

 

চালের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে তিনটি পর্যায়ে তিন ধরনের লাইসেন্স নিতে হয় প্রাথমিকভাবে লাইসেন্স নিতে হয় সেটি হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স। মোটামুটি সব ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্যই ট্রেড লাইসেন্স গুরুত্বপূর্ণ। 

 

তবে অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা কোন প্রকার লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে আইনগত কোন ঝামেলা হলে সে সমস্যার সমাধান আইনি উপায় দেওয়া সম্ভব হয় না। এই নিশ্চিন্তভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই উচিত লাইসেন্স এর প্রয়োজন আছে। 

 

সানির বাচ্চার অন্যান্য ধরনের ক্ষেত্রে আপনি যদি চালের ব্যাংক তৈরি করার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করতে চান তবে আপনার অবশ্যই একটি FSSAI লাইসেন্স থাকতে হবে। 

 

এবং উক্ত ধ্বংস হতে আপনি বাৎসরিক ইনকাম যদি 30 থেকে 40 লক্ষ টাকা কত হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই জিএসটি লাইসেন্স করা বাধ্যতামূলক। 

চালের ব্যবসাতে সম্মুখিত হওয়া সমস্যা ও সমাধান 

 

ব্যবসা করা কখনোই সহজ কোনো কাজ নয়। একটি ব্যবসা সফল করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রচন্ড ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস এবং সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার জন্য মানসিকতা। চালের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিষয়টা এরকম কারণ এখানে আপনার প্রচুর পরিমাণে পুঁজি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে সামান্য ভুল হতে পারে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ। 

 

চালের ব্যবসা ক্ষেত্রে প্রথম যে সমস্যাটি সম্মুখীন হতে হবে তা হচ্ছে কাস্টমার না পাওয়া। আপনি অবশ্যই জানেন যে ইতিমধ্যে বাজারে অনেক চালের ব্যবসায় রয়েছে। যারা হয়তো অনেক আগে থেকেই এ ব্যবসার সাথে জড়িত এবং ইতিমধ্যে পরিচিত মুখ। 

 

তাই নতুন করে শুরু করতে গেলে কাস্টমার কম পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। বিভিন্ন মার্কেটিং কৌশল অবলম্বন, অন্যান্য প্রতিপক্ষ বিক্রেতাদের থেকে কম রেটে চাল বিক্রি ও এরিয়া ভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবেন।

 

আগে থেকে যারা এই সেক্টরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমে আপনি ও চালের ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। 

 

পরিশেষে, এই ছিলো চালের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে যেসকল বিষয় জানা ও বুঝার প্রয়োজন সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত আর্টিকেল যা আপনাকে সাহায্য করবে উক্ত ব্যবসা বুজতে ও সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ব্যবসা পথে পদার্পন করতে। আপনার জন্য শুভকামনা। 

 

Visited 157 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here