বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের স্ত্রী জাতীদের পাড়া একটি ডিম্বাকার জিনিস যা মেমব্রেন স্তর দিয়ে ঘেরা থাকে এবং বাইরে আবরনের মাধ্যমে সৃষ্ট জিনিসকেই ডিম বলা হয়ে থাকে। ডিমের বাইরের আবরনকে সাধারণত খোসা বলা হয়ে থাকে। ডিমের খোসা বাদে প্রায় সব অংশই খাবারের উপযোগী।
আমরা সাধারণত নিদিষ্ট কিছু প্রাণীর ডিম খেয়ে থাকি যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে : হাঁস, মুরগি, কোয়েল। এবং নানান ভাবে এই ডিম খাওয়া ও ব্যবহার করা যায়। কাচা ডিমের ক্ষেত্রে উপকারিতা ও ব্যবহার এক রকম আবার সিদ্ধ ডিমের ক্ষেত্রে ভিন্ন।
উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানবো। পাশাপাশি থাকবে ডিমের প্রতিটা অংশ বিশেষের ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে। সুতরাং, হারিয়ে যাওয়া যাক ডিমের রাজ্যে, ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার উদ্দেশ্যে।
ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা হাইলাইটেড
এই পর্যায়ে বুলেটিং পয়েন্টের মাধ্যমে এক কথায় ধারনা দিবো ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এতে করে শর্ট টাইমে বুজতে সুবিধা হবে ব্যাপার গুলো পাশাপাশি বিস্তারিত জানার ক্ষেত্রেও উপকৃত হবেন।
উপকারিতা :
- ডিম প্রোটিনের উৎস
- দেহে শক্তি যোগান দেয়
- চোখের সমস্যা দূর করে থাকে
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- পেশির ব্যাথা কমায়
- হার্ড ভালো রাখে
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে
- কোলাইনের উৎস হিসেবে কাজ করে
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে
অপকারিতা :
- অতিরিক্ত ডিম খাওয়ার ফলে বদহজম হতে পারে
- খারাপ কোলেস্টেরল দেহে হ্রদরোগের কারন
- শরীরে আর্থ্রাইটিসের এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়
- দিনে একটির বেশি ডিম খাওয়া কখনই উচিৎ নয়
হাঁসের ডিমের উপকারিতা
আমরা জানি মুরগির ডিম থেকে হাঁসের ডিম বড় হয়ে থাকে সেই তুলনায় হাঁসের ডিমের কুসুমের অংশটিও বড়। এতে কি এক্সট্রা কোনো পুষ্টি পাওয়া যাবে? এটা সাভাবিক ভাবে সবাই জানি যে হাঁসের ডিম খেতে খুবই সুস্বাদু যদিও অনেকেই আছে যারা হাঁসের ডিম খেতে পছন্দ করে না। তবে যাই হোক সেটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার, এখনে আমি উল্লেখ্য করছি হাঁসের ডিমের উপকারিতা যা অবশ্যই আপনার জানা প্রয়োজন।
- হাঁসের ডিমে অন্যনা ডিম থেকে বেশি প্রোটিন পাওয়া যায় এক্ষেত্রে প্রোটিন শরীরের চর্বিহীন পেশি গঠনে সাহায্য করে। পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রনে হাঁসের ডিম উপকারি।
- হাঁসের ডিমে বিধ্যমান জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়ান – শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সক্ষম
- হাঁসের ডিমের উপকারিতা এর তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন যেমন :
- ভিটামিন বি১ – স্ট্রেস কমায়
- ভিটামিন বি৩ – ব্রণ, একজিমা, ডার্মাটাইটিস করে
- ভিটামিন বি৫ – ত্বক আদ্রতা প্রদান করে
- ভিটামিন বি৭ – ত্বককে সংক্রামণ থেকে মুক্তি দেয়
- ভিটামিন বি৯ – মৃত কোষকে নতুন কোষে প্রতিস্থাপন করে
- হাঁসের ডিম ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে
তবে হাঁসের ডিম খাওয়ার ফলে এলার্জি, হ্রদরোগ এর দেখা এবং রান্না করে খাওয়ার ক্ষেত্রে পুষ্টির গুনগত মান কমে যেতে পারে।
মুরগির ডিমের উপকারিতা
মুরগির ডিম বলতে আমরা বুজি ফার্মের মুরগির ডিম গুলোকে যা লাল রঙ ধারন করে থাকে। তাদের যখন ফার্মে পরিচর্চা করা হয় তখন তাদের খাবারের সাথে বিভিন্ন ভিটামিন মিশিয়ে দেয়া হয় যেখানে থাকে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। তাছাড়া মুরগির ডিমের আকার তুলনামূলক ভাবে বড় হওয়ার কারনে এর ডিমের কুসুমের পরিমাণ ও বেশি থাকে। ওভারল দিক থেকে বিবেচনা করলে মুরগির ডিমের উপকারিতা অনেক।
নিম্মে কিছু মুরগির ডিমের উপকারিতা এর বর্ননা করা হলো :
- মুরগির ডিমে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখের জন্য বেশ উপকারী
- ওমেগা-৩ এর বড় উৎস হলো মুরগির ডিম
- ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণে মুরগির ডিমের হাত রয়েছে
- মুরগির ডিম হ্রদয়ের জন্য খারাপ না
- অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায় মুরগির ডিমের মাধ্যমে
- মুরগির ডিমের উপকারিতা এর লিস্টে রয়েছে কোলিনও।
কাচা ডিমের উপকারিতা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের মতে কাচা ডিমের উপকারিতা অনেক। আসলে কথাটি কতটা সত্য তা দেখতে বেশ কিছু বিজ্ঞানী নিজেদের মত করে গবেষনা চালিয়েছে। দিন শেষে যা ফলাফল আসলো তা দিয়ে উক্ত কথায় সম্মতি প্রসন করা যেমন যায় না আবার ফেলে দেয়াও যায় না।
এটা অবশ্যই ঠিক যে ডিম সিদ্ধ বা রান্না করে খাওয়ার ফলে কিছু পরিমানের প্রোটিন, খনিজ, ভিটামিন কমে যায় তবে যতটুকু কমে তার সংখ্যা খুবই নগণ্য। যেমন একটা উদাহরণ দেয়া যাক : কাচা ডিমের মধ্যে ভিটামিন বি এর পরিমাণ থাকে .৮৫ মাইক্রোগ্রাম। অপরদিকে, রান্না করা ডিমের মধ্যে একই ভিটামিন লক্ষনীয় .৭২ মাইক্রোগ্রাম। এতে সহজেই বোঝা যাচ্ছে কাচা ডিমের উপকারিতা আছে তবে তা খুবই কম।
অন্যদিকে কাচা ডিম খাওয়ার ফলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়ে থাকে। হজমের ব্যাপার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে কাচা ডিম না খাওয়াই উত্তম। কাচা ডিম খেলে বেশি শক্তি পাওয়া যায় এমন যুক্তি সম্পূর্ণ ভুল এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
সিদ্ধ ডিমের উপকারিতা
সবচেয়ে ভালো ব্যাপারটা হচ্ছে সিদ্ধ করে ডিম খেলে সিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ডিমে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলো ধংস হয়ে যায়। সিদ্ধ করা ডিমে ক্যালারির পরিমাণ কম থাকার কারনে এটি খেলে মেদ বাড়ার চান্স থাকে না।
শিশুরা নিয়মিত সিদ্ধ ডিল খেলে তাদের দাত, হাড়, শক্তিশালী হয়। তাছাড়া গর্ভকালীন সময়ে সিদ্ধ ডিম সন্তানের জন্য উপকারি হিসেবে গন্য করা হয়। তাছাড়া চুল, নখ, চোখের জন্যও সিদ্ধ ডিমের উপকারিতা অনেক।
বিশেষজ্ঞদের মতে দিনে তিনটি পর্যন্ত ডিম খাওয়া অব্দি সব ঠিক ঠাক থাকবে সমস্যা হবে না তবে এর বেশি ডিম খাওয়া উচিৎ হবে না, হোক সেটা সিদ্ধ কিংবা কাচা।
দেশি মুরগির ডিমের উপকারিতা
সাভাবিক ভাবে দেশি মুরগির ডিম ও ফার্মের মুরগির ডিমের মধ্যে পুষ্টিগত দিক থেকে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয় আছে যে, যেহেতু আমাদের দেশের মরগি গুলোকে ছেড়ে পালা হয় তাই তারা প্রতিদিন বিভিন্ন পোকা মাকর, কেচো, গাছের কচি পাতা খেয়ে থাকে এবং এতে করে তাদের ডিম গুলোতে একটু বেশি পুষ্টির দেখা মিলে।
ডিমের সাদা অংশের উপকারিতা
সাদা অংশে থাকা পুষ্টির কারনে অনেক চিকিৎসক এটা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নিম্মের এর কিছু উপকারিতার কথা উল্লেখ করা হলো
- ডিমের সাদা অংশ থাকে ক্যালসিয়ামে ভরপুর। যা শরীরের হাড় মজবুদ করতে সহায়তা করে থাকে। তাছাড়াও রয়েছে অস্টিওপোরোসিস যা হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূরকরনে কাজে আসে।
- ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে যা রক্ত জমাট বাধার মত সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন।
- সাদা অংশে থাকা পটাশিয়াম হ্রৎযন্তের যেকোনো সমস্যার জন্য বেশ উপকারী
- মাথা ঘোরা ও ক্লান্তি ভাবের মত সমস্যা দূর করতে ডিমের সাদা অংশ বেশ কার্যকর হয়ে থাকে।
- যারা শরীর চর্চা করে থাকেন নিয়মিত তাদের প্রতিদিন ডিমের সাদা অংশ খাওয়া উচিৎ
ডিমের কুসুমের উপকারিতা
- দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর কাযে ডিমের কুসুমের প্রয়োজনীয়তা লক্ষ্যনীয়। এতে থাকা করাটেনোয়েডস নামক পুষ্টি ডিমের কুসুমের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা মানুষের চোখের যেকোনো সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে।
- স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য কোলিন প্রয়োজন যা থাকে পুরো ডিমের মধ্যে কুসুমেই
- কুসুমে থাকা আরেকটি উপাদানের নাম বেটাইন যা কাজ করে রক্তকণিকায় হেমোসিস্টেইনের মাত্র নিয়ন্ত্রন রাখার ক্ষেত্রে।
- ফসফলিপিডস নামক একধরনের অত্যাবশিকীয় উপাদান রয়েছে ডিমের কুসুমে যা বিশেষ ধরনের চর্বি দ্বারা গঠিত। এটি দেহের কোষ গঠন ও কোষের মেমব্রেইন গঠনে সাহায্য করে থাকে।
- ডিমের কুসুমকে সম্পূর্ণ প্রোটিন ভিত্তিক খাবার বলা হয় কারন এতে আছে এমন ৯ টি অ্যামিনো এসিড যা শরীর নিজ থেকে তৈরি করতে পারে না বরং খাদ্য থেকে গ্রহন করতে হয়।
পরিশেষ, এই ছিলো ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বহুল আর্টিকেল যেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ডিমের সাদা অংশ, কুসুমের উপকারিতা সম্পর্কে। ডিমের সঠিক গুনাগুন জানুন এবং সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এর উপকারিতা গ্রহন করুন।