ইন্টারন্যাশনাল ই-কমার্সে কেনাকাটা হোক বা যেকোনো পেমেন্ট গ্রহন ও রিসিভ – প্রয়োজোন ডুয়েল কারেন্সি কার্ড। বিভিন্ন ব্যাংক বর্তমানে ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট কার্ড গ্রহনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। খুব সহজেই কিভাবে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নেয়া যায় সেই সম্পর্কে থাকছে এবারের আর্টিকেল।
ব্যাংক থেকে তো আমাদের এমনিতেই কার্ড দেয়। সেগুলো দিয়েও আমরা অনলাইন, অফলাইন সব স্থানেই কেনাকাটা করতে পারি বা এটিএম বুথ থেকে দিন রাত ২৪ ঘন্টাই টাকা উত্তোলন ও জমা দিতে পারি। তবে এর মাঝে কারেন্সির ব্যাপারটা কোথা থেকে আসলো? কত রকমের রয়েছে এই ক্যারেন্সি এবং ডুয়েল কারেন্সি কি এই সম্পর্কে প্রথমে জানা উচিৎ। তবে চলুন জেনে নেয়া যাক
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড কি
দুইটি দেশের মুদ্রা ব্যবহার করা যাবে একটি কার্ডের মাধ্যমেই এমন সার্ভিস প্রদানকৃত কার্ডকে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড বলে। ডুয়েল কারেন্সি কার্ড হতে পারে কোনো ডেবিট কার্ড, মাস্ট্রার বা ভিসা কার্ড। এই ধরনের কার্ড থেকে আপনি যেমন বাংলাদেশে যেকোনো স্থানে ব্যবহার করতে পারবেন, তেমনই দেশের বাইরে যেকোনো মার্কেটপ্লেস থেকে এই কার্ড দিয়ে কেনাকাটা সহ যেকোনো আর্থিক ব্যাপারে ব্যবহার করতে পারবেন। ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে মূকত একটি বাংলাদেশের কারেন্সি থাকবে এবং আরেকটি থাকবে সর্বজনীন কারেন্সি ইউ এস ডলার। যার কারনে যেকোনো স্থানে সহজেই ব্যবহার করা যায়। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক আর কি কি ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড প্রয়োজন।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড এর প্রয়োজনীয়তা
আপনি যদি বিদেশে যাতায়াত করেন তবে অবশ্যই এই বিষয়ে অবগত যে, দেশের বাইরে গিয়ে আমাদের দেশের কারেন্সি বা BDT টাকা ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে সব স্থানেই মার্কিন ডলার গ্রহনীয়। তাই বলা যায়। তাই দেশের বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডুয়েল কারেন্সি কার্ড প্রয়োজন।
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন এক্ষেত্রে প্রায় সময় অনলাইনে মার্কেট প্লেস থেকে কাজের পেমেন্ট গ্রহন করার প্রয়োজন হবে। তাছাড়া অনলাইনে যদি মার্কেট প্লেস সংক্রান্ত কোনো কিছু কেনা ও প্রয়োজন হয় তবে একই কার্ডের মাধ্যমে কিনতে পারবেন।
আমরা জানি যে, বর্তমান বিশ্বে ই-কমার্স সাইট গুলোর মধ্যে Amazon and Alibaba সবচেয়ে বেশি পপুলার। এমন কোনো পণ্য নেই যা এই দুই ধরনের সাইটে নেই। সেই হিসেবে আপনি যদি সেখান থেকে কোনো ধরনের প্রোডাক্ট ক্রয় করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করতে হবে কারন সেখানে বাংলাদেশি কারেন্সিতে ক্রয় বিক্রয় করা যায় না।
কিভাবে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড পাওয়া যাবে বাংলাদেশে
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেমে সকল ব্যাংক থেকে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ইস্যু করা না হলেও বেশ কিছু ব্যাংক রয়েছে যারা বর্তমানে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড দিয়ে থাকে। মূলত অন্য সব ডেবিট কার্ড, মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ডের মতই ডুয়েল কারেন্সির কার্ড ইস্যু করা হয়ে থাকে। যদিও কার্ডের চার্জ এর পরিমাণ এর দিক থেকে কিছুটা কম বেশি লক্ষ্যনীয় সেটিও আবার বিভিন্ন ব্যাংক এর আলোকে চার্জ উঠা নামা করে থাকে। যে সকল ব্যাংকে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ইস্যু করা হয় সেই সকল ব্যাংক থেকে খুব সহজেই এই ধরনের কার্ড গ্রহন করা যায়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংকের ভেরিয়েন্ট অনুযায়ী বেশ কিছু ভিন্যতা রয়েছে যা পরের ধাপ গুলোকে আলোচনা করবো। নিম্মে ব্যাংক অনুযায়ী একেক ব্যাংকে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড করার ক্ষেত্রে কি কি করা লাগবে তা উপস্থাপন করা হলো।
বিভিন্ন ব্যাংকের ডুয়েল কারেন্সি কার্ড
এই পর্যায়ে আমরা জানবো এমন কিছু ব্যাংক সম্পর্কে যারা বর্তমানে ডুয়েল কারেন্সির কার্ড ইস্যু করে এবং তাদের কাছ থেকে কার্ড নেয়ার ক্ষেত্রে কি কি প্রয়োজন এবং প্রসেস গুলো সম্পর্কে। শুরু করা যাক।
ইসলামি ব্যাংক ডুয়েল কারেন্সির কার্ড
ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় ব্যাংক যেখানে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক ব্যাংকিং লেনদেন করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ইসলামি ব্যাংক খিদমাহ কার্ড নামক একটি ডুয়েল কারেন্সির কার্ড নিয়ে এসেছেন।
এই কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে একটি নিদ্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ লেনদেন করা যাবে এক্ষেত্রে – সিলভার কার্ড হলে ৫০,০০০ টাকা; গোল্ড কার্ড হলে ১,০০,০০০ টাকা এবং প্লাটিনাম হলে সেক্ষেত্রে ২,০০,০০০ টাকা অব্দি লেনদেন করা যাবে।
কার্ডটি গ্রহন করলে প্রতি মাসে এর সার্ভিস চার্জ হিসেবে দিতে হবে – সিলভার এর ক্ষেত্রে ৫০০; গোল্ড এর ক্ষেত্রে ১০০০ এবং প্লাটিনামের ক্ষেত্রে ১৫০০ টাকা। উপরে যে সকল সুবিধা ও প্রয়োজন পূরনের কথা উল্লেখ্য করেছিলাম তার প্রায় প্রতিটি কাজই এই কার্ডের মাধ্যমে করা যাবে।
আপনি যদি ইসলামি ব্যাংকের খিদমাহ কার্ড সম্পর্কে ইন-ডীপ ডিটেইলস জানতে চান তবে লিংকটিতে ক্লিক করে ইসলামি ব্যাংকের ডুয়েল কারেন্সির কার্ড সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ব্যাংক এশিয়া ডুয়েল কারেন্সি কার্ড
বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সারদের কথা মাথায় রেখে ব্যাংক এশিয়া নিয়ে এসেছে তাদের ডুয়েল কারেন্সি স্বাধিন মাস্টার কার্ড। এটি মূলত বাংলাদেশি কারেন্সি ও USD কারেন্সির আলোকে গঠিত। উক্ত কার্ডটি গ্রহন অনেক সহজ এবং এর ব্যবহার করতে পারবে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান উভয় পক্ষই। তাছাড়া এই কার্ডটির আরেকটি বিশেষ সুবিধা হলো মোট টাকার প্রায় ৭০% ই ইউ এস ডি স্ট্রোর করে রাখা যাবে।
তাছাড়াও ব্যাংক এশিয়া এর স্বাধিন মাস্টারকার্ডটির অন্যান্য সুবিধা ও বিস্তারিত তথ্য জানতে উক্ত লিংকে ক্লিক কার মাধ্যমে জেনে নিন। তবে ব্যাংক এশিয়া এর স্বাধিন মাস্টার কার্ডটি পেতে হলে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন তা হলো –
- পূরণকৃত কার্ড আবেদন পত্র
- জাতীয় পরিচয়পত্র / পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স
- TIN সার্টিফিকেট/ ট্যাক্স রিটার্ন কপি
- দুই কপি রঙিন ছবি
- কাজের আদেশ/ মার্কেট প্লেস ID নম্বর/ পেমেন্ট রিসিভ কপি/ ফ্রীলান্সিং নিশ্চিত করা কাগজ পত্র
ডাচ বাংলা ব্যাংক ডুয়েল কারেন্সি কার্ড
ডাচ বাংলা ব্যাংক সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। দেশের সবচেয়ে বেশি এটিএম বুথ সম্পন্ন ব্যাংক হচ্ছে এটি। যার পেক্ষিতে দেশে বিদেশে প্রচলিত সকল ধরনের কার্ড পাওয়া যাবে এই ব্যাংকটিতে। বিভিন্ন ধরনের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, মাস্টার ও ভিসা কার্ড রয়েছে। আরো রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার ও ভিসা কার্ড। বলে রাখা ভালো যে, ইন্টারন্যাশল মানেই এখানে বুঝাতে চেয়েছে এটা ডুয়েল কারেন্সির কার্ড।
অন্য সব ব্যাংকের মতই এখানেও কিছু কমন ডকুমেন্টস এর মাধ্যমে উক্ত কার্ডটি পেতে হয়। নতুন করে আর ডুকমেন্টস গুলোর কথা উল্লেখ্য করলাম না, পূর্বের ব্যাংক গুলোতে দেয়া ইনফো থেকেই দেখে নিন। তবে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ক্ষেত্রে যে তথ্যটি নতুন বা জানার প্রয়োজন তা হচ্ছে এই কার্ডটি গ্রহন করতে প্রতি বছর গুনতে হবে ১৪৭৬ টাকা।
তবুও যদি শর্ট করে হাইলাইট করতে হয় যে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন জমাদানের ক্ষেত্রে তবে বলবো প্রথমেই আপনাকে আবেদন ফর্মটি পূরন করতে হবে। আপনার পাসপোর্ট, ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রয়োজন হবে এবং যদি TIN সার্টিফিকেট থেকে থাকে তবে তা সাবমিট করতে পারেন। আপনি যদি না জানেন যে, TIN সার্টিফিকেট কি তবে লিংকটিতে ক্লিক করে জেনে নিন।
সিটি ব্যাংক ডুয়েল কারেন্সি কার্ড
সাভাবিক ভাবে যাকে ডুয়েল কারেন্সির কার্ড বলে থাকে সিটি ব্যাংক সেটিকে নাম দিয়েছে আমেরিয়ান এক্সপ্রেস। মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে একাউন্ট খোলার মাধ্যমে খুব দ্রুত হাতে পেয়ে যাবেন সিটি ব্যাংকের আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডটি।
প্রথমেই আপনাকে সিটি ব্যাংকে একাউন্ট তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি না জানেন কিভাবে সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায় তবে লিংকে ক্লিক করে জেনে নিন। পরবর্তীতে আপনি তাৎক্ষনিক ভাবে অফিসারের সাথে কথা বলবেন আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড বিষয়ক। আপনাকে একটি ৪ পৃষ্ঠার ফর্ম দেয়া হবে যা পূরন করবেন। এবং তারপরেই আপনাকে একটি কার্ড দেয়া হবে ইন্সট্যান্ট।
উক্ত কার্ডটি একটিভ করার জন্য আপনাকে সিটি ব্যাংকের হটলাইন নাম্বারে কল করতে হবে। সিটি ব্যাংকের হটলাইন নাম্বারটি হচ্ছে 16234 । আপনি একাউন্টটি একটিভ করতে কল দেয়ার পর যে যে ইনফরমেশন চাওয়া হবে তা ঠিক ভাবে দিবেন এবং কিছু প্রসেসিংয়ের পরেই আপনার একাউন্ট একটিভ হয়ে যাবে।
পাসপোর্ট ছাড়া ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নেয়া যায়?
এই পর্যায়ে সকলের একটা প্রশ্ন থাকে যে, আমি কি পাসপোর্ট ছাড়া ডুয়েল কারেন্সির কার্ড ওপেন করতে পারবো? আসলে মূল বিষয়টি হচ্ছে কার্ড ওপেন করা কখনই কোনো বড় বিষয় না। আপনি চাইলেই যেকোনো সময়ে ডুয়েল কারেন্সির কার্ডটি যেকোনো ব্যাংক থেকে ওপেন করতে পারবেন। এবং তার দ্বারা লেনদেন করাও সম্ভব হবে সেটা কেবলই বাংলাদেশ অব্দিই সীমাবদ্ধ থাকবে। যার মানে হচ্ছে আপনি পাসপোর্ট সাবমিট করা ছাড়া কোনো ভাবেই ডুয়েল কারেন্সির কার্ড ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না। আপনার কাছে যদি কোনো ধরনের পাসপোর্ট না থাকে এবং আপনার ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে আর্থিক লেনদেন করতেই হয় তবে আপনি ডুয়েল কারেন্সির কার্ড ছাড়াও আরো একটি উপায়ে লেনদেন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে পেওনিয়ার ব্যবহার করতে হবে এবং জেনে খুশি হবেন যে, এটি বাংলাদেশে সাপোর্ট করে। বিকাশের মাধ্যমে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম জানুন এখান থেকে।
–
পরিশেষে বলা যায়, এই ছিলো সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ডুয়েল কারেন্সির কার্ড বিষয়ক যেখানে আলোচনা করেছি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড কি, এর প্রয়োজনীয়তা, সুবিধা ও বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে ডুয়েল কারেন্সির কার্ড নেয়ার উপায় ও কন্ডিশন গুলো সম্পর্কে। আরো জানিয়েছি যাদের পাসপোর্ট নেই তারা কিভাবে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট প্লেস গুলোতে লেনদেন করতে পারবে সেই উপায় সম্পর্কে। আশা করি উক্ত আর্টিকেলের তথ্য গুলো আপনার কাছে গ্রহনীয় হয়েছে এবং এর দ্বারা কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে উপকৃত করার জন্যই বাংলা আলো এর প্রতিনিয়ত নতুন তথ্য প্রদানের প্রচেষ্ঠা।