তেলাকুচা পাতা উপকারিতা-অপকারিতা ও গুনাগুন

0
82

তেলাকুচা পাতা উপকারিতা-অপকারিতা ও গুনাগুন

দেয়ালে কিংবা ঝোপঝাঁড়ে লতানো এক ধরণের গাছ হলো তেলাকুচা

আপনি কি জানেন এই লতানো গাছটির রয়েছে নামা ধরণের ঔষুধি গুণাবলী

 

বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে না ধরণের উদ্ভিদ।সেই সকল উদ্ভিদের মধ্যে কিছু উদ্ভিদ যেমন আমাদের উপকারি, ঠিক তেমনি করে কিছু উদ্ভিদ আমাদের জীবনে নানা ধরণের শারীরিক সমস্যায় প্রতিকার হিসেবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জীবন রক্ষার্থে এ সকল গাছ হয়ে উঠে আমাদের প্রত্যাহিক জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। জরাজীর্ণ এই জীবনে এই সকল গাছ খানিকটা প্রশান্তির পরশ নিয়ে আসে আমাদের এই জীবনে।

 

প্রকৃতি আমাদের অনেক কিছু দেয় ঠিক তেমনি করে আবার অনেক কিছু কেড়েও নেয়। তবুও নানা ধরণের শারীরিক সমস্যায়, আমাদের জীবণ যখন প্রাণহীন হয়ে উঠে তখন আশ্রয়ের পরশতার হাত বাড়িয়ে দেয় এই বৃক্ষসমূহ। বৃক্ষ কখনো ফুল দিয়ে, কখনো ফল দিয়ে, কখনো তার সেবা দিয়ে সব সময় মানুষের মনকে প্রফুল্ল করে রাখে।কিছু কিছু বৃক্ষের রয়েছে নানা ধরণের ঔষুধি গুনাগুন যা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে আমাদের নানা ধরণের উপকার সাধন করে।

 

আজ আমরা তেমনি একটি ঔষুধি গুণাগুণ সম্পন্ন লতানো গাছ তেলাকুচা পাতা সম্পর্কে জানবো।কখনো লক্ষ করেছেন আপনার পাশের দেয়ালে কিংবা কোন ঝোঁপ ঝাড়ে অনেক সময় কালচা সবুজ আকৃতির এক ধরণের লতানো গাছ আছে।আর এই গাছই তেলাকুচা নামে আমাদের কাছে বেশ পরিচিত।আমরা এই লতানো গাছটিকে জঙ্গল মনে করলেও এই গাছটির রয়েছে নানা গুনাগুনে গুনান্বিত। চলুন আজ জেনে নেই তেলাকুচা পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

 

তেলাকুচা পাতা

বহুল পরিচিত ঝোঁপের মত ছড়ালো একটি গাছ হল তেলাকুচা পাতা। বাংলাদেশের আনাচে কাচানে দেখা মেলে এই গাছের। এই গাছ লতানো ধরণের গাছ। মূলত অনেকে এ এর পাতা তরকারি কিংবা ঔষুধি হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।  

 

এই গাছ এর নির্দিষ্ট বয়সে ছোট সাদা রঙের ফুল হয় এবং সেই  ফুল থেকে একসময় ফল হয়।এটি মূলত একটি ভেজক উদ্ভিদ হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। তবে এই তেলাকুচা উদ্ভিদটির ভোটানিক্যাল নাম হলো Coccinia grandis বা Coccinia Cordifolia Cogn। এটি মূলত  Cucurbitaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তেলাকুচার ভেষজ নাম হল Coccinia। তবে স্থানভেদে এই তেলাকুচা নানা স্থানে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। কোন কোন স্থানে এর নাম- তেলাকুচা, তেলাকুচো, কুন্দ্রি শাক, কুচিলা, তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি, তেলাচোরা কেলাকচু, কেলাকুচ, তেলাকুচা বিম্বী ইত্যাদি নামে নানা ধরণের নামে পরিচিত এই গাছ। 

 

তেঁতুলের উপকারিতা অপকারিতা ও গুনাগুন

তেলাকুচা পাতার উপকারিতা

তেলাকুচা মূলত এমন একটি উদ্ভিদ যা আমাদের নামা ক্ষেত্রে উপকার করে থাকে। চলুন তাহলে জেনে আসি এই তেলাকুচা পাতার উপকারিতা সম্পর্কেঃ

 

  • রূচি বৃদ্ধিকরণে ভূমিকা

 তেলাকুচা পাতা একটি ঔষুধি গুনাগুন সম্পৃদ্ধ পাতা। আমাদের মধ্যে অনেকেরই খাবারে রূচিজনিত সমস্যা নিয়ে আক্রান্ত। অনেকেই খাবারে কোন ধরণের রুচি পায় না। নিয়মিত তেলাকুচা পাতা খেলে খাবারে রুচি বৃদ্ধি করতে বেশ ভূমিকা পালন করে। 

 

  • পাকস্থলির সমস্যা প্রতিরোধে

আমাদের প্রত্যাহিক জীবনে খাবারের অনিয়মের কারণে পেটের মধ্যে নানা ধরণের সমস্যা যেমন পেটের পীড়া, পেট ব্যথা ইত্যাদি নানা ধরণের সমস্যায় আক্রান্ত থাকে। আপনি যদি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে নিয়মিত তেলাকুচা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে সমস্যাটি থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।

 

  • পরিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণে

এই তেলাকুচায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থায়ামিন। যা আমাদের পরিপাক তন্ত্রকে সাজায্য করে।তাই যারা খাদ্যের পরিপাক জনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত কেলাকুচা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুণ। এই পাতা নিয়মিত খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

 

  • ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে

কালকুচি পাতার রয়েছে এক বিশাল গুণ। নিয়মিত কেলাকুচি খাওয়ার ফল মানব শরীরের ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণের তা ভূমিকা পালন করে থাকে। 

 

  • স্থূলতা কমাতে 

তেলাকুচা পাতা আমাদের শরীরে মেদ এবং অতিরিক্ত চর্বি পরিহারে বেশ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত এই তেলাকুচা পাতা খাওয়ার ফলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ, সেই সাথে চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ফলে এই তেলাকুচা পাতা মানবদেহে স্থলটা ক্ষমতা বাড়ারে ভূমিকা পালন করে। 

 

  • অবসন্যতার প্রতিষেধক

তেলাকুচা আমাদের অবসন্যতা কাটাতে সাহায্য করে। তাই  আমরা যারা  ডিপ্রেশন নামক মহামারী রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাই তাদের উচিত নিয়মিত তেলাকুচা পাতা খাওয়া। 

 

  • স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণে

স্নায়ু আমাদের মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম। অনেক সময় আমরা কখনো কোন কথা ভুলে যাই, কিংবা কোন ঘটনার কথা আমাদের মস্তিষ্ক খুব দেরিতে প্রতিক্রিয়া পায়। তা শুধুমাত্র স্নায়ুবিধ নানা সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। নিয়মিত তেলাকুচা পাতা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রেও ভালো রাখতে বেশ জোড়ালো ভূমিকা পালন করে।

 

  • পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে

তেলাকুচা পাতার রয়েছে বিশেষ গুন। আমাদের মধ্যে অনেকেই পরিপাকতন্ত্র এর নানা ধরণের সমস্যায় ভুগে থাকি। আপনি যদি এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চান তাহলে তেলাকুচা পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলন। কারণ এই পাতা আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে,পরিপাকতন্ত্রকে সচল রাখতে বেশ ভূমিকা পালন করে। 

 

  • কিডনির পাথর প্রতিরোধে

আমাদের মাঝে অনেকের কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে। সেই সাথে এই সমস্যার কারণে নানা ধরণের জটিলতা দেখা দেয়। আপনি যদি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে তেলাকুচা পাতা খাওয়ার অভ্যেস করুণ। কারণ তেলাকুচা পাতা আমাদের কিডনিতে বিদ্যমান পাথর প্রতিরোধ করতে বেশ জোরালো ভূমিকা পালন করে। 

 

  • জ্বর ও হাঁপানি প্রতিরোধে

আমাদের অনেকের শরীরে জ্বরের সাথে সাথে হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানে খেতে পারেন তেলাকুচা পাতা। তেলাকুচা পাতা আমাদের শরীরে জ্বর এবং হাঁপানি প্রতিরোধ করতে বেশ জোরালো ভূমিকা পালন করে।

তেলাকুচা ফুল ও ফল

  • ব্রঙ্কাইটিস ও জন্ডিস প্রতিরোধে

জন্ডিস আমাদের শরীরের একটি সাধারণ সমস্যা।জন্ডিসের পাশাপাশি অনেকই ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। তাই জ্বর কিংবা ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা সমাধানে আপনি খেতে পারেন কেলাকুচা পাতা। ব্রঙ্কাইটিস ও জন্ডিস প্রতিরোধে বেশ জোরালো ভূমিকা পালন করে থাকে এই পাতা।

 

  • খাবারের অরুচি

যারা দীর্ঘদিন ঘরে খাবারের অরুচির সমস্যায় ভুগছেন তারা খেতে পারেন এই তেলেকুচার পাতা। নিয়মিত তেলেকুচার পাতা খেলে আপনি খাবারের অরুচির সমস্যাটি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

 

  • আমাশয় প্রতিরোধে 

আমাদের মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে থাকে আমাশয়ে।আপনি কি জানেন?আমাশয় প্রতিরোধে বেশ কার্যকর যারা আমাশয়ের সমস্যার আক্রান্ত তারা নিয়মিত কেলাকুচার পাতা খেলে নানা ধরণের সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পেতে পারেন। 

 

  • ব্রণ বা ফোরা প্রতিরোধে

বয়সভেদে আমরা অনেকেই ব্রণ কিংবা ফোঁড়ার সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ব্রণ কিংবা ফোঁড়ার সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকর এই পাতা।

আপনি যদি ব্রণ কিংবা ফোঁড়ার সমস্যায় আক্রান্ত তাহলে আপনি খেতে পারেন এই কেলাকুচা পাতা।

Like Best Shoes Review Visit Now

তেলাকুচা ফলের অপকারিতা

তেলাকুচা একটি লতানো উদ্ভিদ হলেও এর নির্দিষ্ট সময় ফল হয়। ফল দেখতে অনেকটা লালচে হয়, সেই ফলের বীজ থেকে নতুন চারা উৎপাদিত হয়। তবে এর ফল আমাদের কি ধরণের সাহায্য করে কিংবা এর ফল আমাদের কি উপকারে লাগে, কিংবা নিয়ে কোনো ধরণের চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে দরকার লাগে তা এখনো বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেনি। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে গবেষণা করতে পারে বলে আশা করা যায়।

 

কিভাবে খেতে হয় তেলাকুচা

শরীরের নানা ধরণের সমস্যার কারণে আমরা তেলাকুচা পাতা খেয়ে থাকি।তেলাকুচা পাতা মূলত পরিষ্কার করে অনেকে এই পাতাকে তরকারি হিসেবে খেয়ে থাকি।এছাড়া অনেকেই তেলাকুচা পাতাকে শুকিয়ে চূর্ণ করে রেখে দেয়।আবার অনেকেই তেলাকুচাকে ভর্তা হিসেবে খেয়ে থাকি।

 

উপসংহার

ঘরের কাছে,ঝোঁপঝাঁরে পড়ে থাকা এক উদ্ভিদ হলো এই কেলাকুচা পাতা। মানবদেহে নানা ধরণের রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অনন্য। নিয়মিত এই তেলাকুচা খেলে আপনার শরীর সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। আপনি যদি উপরোক্ত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে নিয়মিত খেতে পারেন এই তেলাকুচা। আশা করি উপকার পাবেন।

 

Visited 165 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here