নিম পাতার উপকারিতা-অপকারিতা। মুখে দিলে কি হয় ও ব্রণ দূর করার নিয়ম
একটি উপকারী বৃক্ষ হিসেবে আমরা নিম গাছকে আপরা প্রায় সবাই চিনি।
আপনি কি জানতে চান নিমপাতার জানা-অজানা বহু গুণাবলীর কথা ?
আমাদের দেশের এই প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে, চারদিকে শুধুমাত্র গাছের সমারোহ। সুজলা-সুফলা এই দেশে আমাদের পরিবেশের এক বিশাল প্রান্ত জুড়ে রয়েছে নানা ধরণের গাছপালা। গাছপালা আছে বলেই প্রতিবার নানা ধরণের প্রাকৃতিক দুর্য্যগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান থেকে থেকে আমরা রক্ষা পাই। কারণ গাছ আছে বলে আমরা আছি ,গাছ না থাকলে আমরাও নেই। তাই আমাদের উচিত আমাদের চারপাশে বেশি বেশ গাছ লাগানো। গাছকে ভালোবাসার মধ্যে দিতে আমাদের পরিবেশকে জলবায়ুর প্রভাব থেকে রক্ষা করা যাবে।
আমাদের চারপাশে যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে শুধু বিস্তীর্ণ প্রান্তর। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই সকল গাছপালা আমাদের জীবনে নানা ক্ষেত্রে উপকার করে থাকে। গাছপালা সমূহ আমাদের পরিবেশকে যেমন রক্ষা করে, ঠিক তেমনি আমাদের নানা উপকারে লাগে। আমাদের চারপাশে বিদ্যমান গাছপালাগুলো কিছু যেমন খাদ্যের যোগান দেয়, তেমনি পরিবেশ রক্ষা করে। আবার কিছু গাছপালা আমাদের শরীরে নানা ধরণের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে থাকে।
নিম পাতা
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরণের ঔষুধি গুনাগুন সম্পন্ন গাছ। এই সকল গাছগুলো প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে আমাদের নানাদের উপকার করে থাকে। ওষুধি গুণাগুণ সম্পন্ন কিছু গাছ আমরা চিনে থাকলেও বাকি গাছগুলো আমাদের পরিচিতির আড়ালেই রয়ে গেছে। ঔষুধি গুনাগুন সম্পন্ন অন্যতম একটি গাছ হলো নিম পাতা। এটি এমন একটি গুনাগুন সম্পন্ন গাছ যার ছাল, বাকল ,পাতা ,ফল সব মানুষের উপকারে ব্যবহার করা হয়। চলুন তাহলে জেনে নেই নিম গাছের নানা বিধ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে।
নিম পাতা খেলে শরীরের কি হয়। ভিডিও দেখুন
নিম পাতা ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম
নানা ধরনের ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন গাছ হল নিম গাছ। নিম গাছ বহু বছর যাবৎ বেঁচে থাকে বিধায় এটি একটি বহু বর্ষজীবী গাছ। নিম গাছের ইংরেজি নাম হলো Neem। এটি একটি চিরহরিৎ উদ্ভিদ। নিম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো AZADIRACHTA INDICA। এরা প্রায় আকৃতিতেই ৩০ থেকে ৪০ ফুট লম্বা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে স্থান, কাল, পাত্রভেদে নিম গাছ জন্মে থাকে। ভারত ও বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে জন্মে থাকে নিম গাছ। তবে উষ্ণ আবহাওয়া যুক্ত অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি জন্মে থাকে এই গাছ।
নিম পাতার উপকারিতা
নিম পাতা আমাদের জীবনে নানা ধরনের কাজে লাগে। এর উপকারিতার কথা এক বাক্যে বলে বেশ করা যাবে না। আপনি কি জানেন নিম পাতার উপকারিতার কথা? না জানলে এখনই জেনে নিন নিম পাতা বহুবিধ উপকারিতার কথা।
-
এলার্জি প্রতিরোধক
আমাদের প্রত্যেকের শরীরে নানা ধরণের এলার্জি থাকে। এসব এলার্জি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে নিম গাছ। নিম গাছ এর পাতা বেটে তার সাথে সামান্য হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে যেকোনো এলার্জি যুক্ত স্থানে ৭-৮ দিন প্রলেপ দিলে এলার্জি প্রতিরোধ হবে।
-
কৃমি প্রতিরোধক
ছোট বাচ্চাদের একটি সাধারণ সমস্যা হল কৃমি। কৃমির ফলে শিশুদের নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। যদি কোন শিশুর কিংবা কোন ব্যক্তির কৃমির সমস্যা হতে থাকে তাহলে নিম গাছের ছাল গুঁড়া করে গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে কৃমির সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।
-
ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধক
বহু বছর ধরে আমাদের নানা ধরণের রূপচর্চায় নিমের ব্যবহার জুড়ি নেই। নিমপাতা আমাদের মুখের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে তাই অনেকে নিম পাতা বেটে ত্বকে ব্যবহার করে। এছাড়া নিম পাতা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে নিমের ব্যবহারের জুড়ি নেই।
-
দাঁতের সমস্যা প্রতিরোধক
দাঁতের নানা ধরণের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে নিমপাতা। নিমপাতার চূর্ণ, গাছের ছালের চূর্ণ ব্যবহারের পাশাপাশি সাথে নিমের ডালের মেসওয়াক সহ দাঁতের মাজন হিসেবে ব্যবহার করলে দাঁতের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
-
বহুমূত্র রোগ প্রতিরোধক
নিম পাতা আমাদের শরীরে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এটি ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রেণে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
-
চুলের যত্নে ব্যবহার
নিম পাতা আমাদের চুল ঝলমলে ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। যাদের চুলে রুক্ষতা এবং খুষ্কিজনিত রোগ রয়েছে তারা নিয়মিত নিম পাতা সিদ্ধ করে মাথায় মাখলে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
-
পোকা মাকড় দমনে ভূমিকা
বিভিন্ন ধরণের পোকা মাকড় প্রতিরোধে নিম পাতা বেশ কার্যকর। অনেকে নিম পাতার ডাল ঘরে সংরক্ষন করে যাতে কোনো ধরণের পোকামাকড় ঘরে আক্রমণ না করে থাকে।
-
ঠান্ডা নিরাময়ে ভূমিকা
ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন ধরণের ব্যাথা প্রতিরোধ করতে বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে এই গাছ। ব্যথা প্রতিরোধে নিমতির গরম পানির সাথে ৩ টি নিম পাতা মিশিয়ে পানিয় পান করলে উপকার পাওয়া যায়।
-
জন্ডিস প্রতিরোধে ভূমিকা
জন্ডিস নিরাময়ে পাতা সিদ্ধ করে রোগীকে খাওয়ালে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
-
বাত ব্যাথা প্রশমনের
বাত ব্যাথা প্রশমনে বেশ কার্যকর হল নিম পাতা। কারণ নিম পাতার তেল যেকোনো স্থানের ব্যাথায় লাগিয়ে মালিশ করলে বাত ব্যাথায় উপকার পাওয়া যায়।
-
চোখ ব্যথা প্রশমনে
যাদের চোখে ব্যাথা হয় তারা নিমপাতা সিদ্ধ ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে চোখ ধুলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
নিম পাতা মুখে দিলে কি হয়
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আমাদের ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা ধরনের বনজ ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। নিম পাতা তার মধ্যে অন্যতম। নানা গুনে গুনান্নিত নিম পাতা আমাদের ত্বকের যত্নে বেশ কার্যকর। আমরা অনেকেই মুখের দাগ নিয়ে বেশ বিরাট সমস্যায় ভূগে থাকি।কিন্তু এক্ষেত্রে নিম পাতা আমাদের উপকারে আসতে পারে।
নিম পাতা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের ত্বকের বিদ্যমান কালো দাগ দূরীকরণে ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম পাতা আমাদের ত্বকে ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। নিমপাতা আমাদের ত্বকে উজ্জ্বল রাখতে সাজায্য করে। ত্বকে নানা ধরনের এলার্জি প্রতিরোধে কার্যকর। যাদের ত্বকের ঘাম হয় তারা নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন নিম পাতার রস।
নিম পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার নিয়ম
সৌন্দর্য চর্চায় নিম পাতার ব্যবহারের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের সকল বয়সী নারীরের একটা প্রধান সমস্যা হলো ব্রণ। ব্রণ আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা কেড়ে নেয়। আমাদের ত্বককে মলিন করে তুলে ব্রণ। তাই এই ব্রণের সমস্যা দূর করা যেন সকলের একটি প্রধান কর্তব্য।
ত্বক থেকে ব্রণের সমস্যা দূর করতে চাইলে ত্বকের নিমের ব্যবহারের বিকল্প নেই। প্রথমে নিম পাতা বেটে, সেই নিম পাতার সাথে খানিকটা হলুদ বেটে একসাথে একটি উপটান বানাবেন। সেই উপটান সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করলে আপনি ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
এছড়াও ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনি নিমপাতা পানির সাথে মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে প্রতিদিন মুখ ধুয়ে ফেললে আপনি ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি।
Like Fishing tips Visit Now
নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম
নানা ধরণের রোগের প্রতিষেধক হিসেবে আমরা অনেকে নিম পাতা খেয়ে থাকি। কিন্ত নিম পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম আপনি জানেন কি?
নিম পাতা যদি আপনি খেতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে নিম পাতা পরিষ্কার করে সেই নিম পাতা গুলো বেটে আপনি খেতে পারেন। এছাড়া আপনি নিম পাতা চূর্ণ করে নিম পাতা খেতে পারেন। নিম পাতা আপনি পানির সাথে মিশিয়ে সেই পানি আপনি খেতে পারেন।
তেলাকুচা পাতা উপকারিতা-অপকারিতা ও গুনাগুন
নিম পাতার অপকারিতা
উপকারিতার পাশাপাশি বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে নিম পাতার। সঠিক উপায়ে নিম পাতা না খেলে আপনার অকালে প্রাণহানীর হবার মত সম্ভাবনা রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেই নিম পাতার অপকারিতা সম্পর্কে:
- ৫ বছরের ছোট শিশুদের কখনো নিম পাতা খেতে দেওয়া উচিত না।৫ বছরের কম বয়সের শিশুদের নিম পাতা খেতে দিলে তাদের দুর্বলতা, বমি ভাব, শরীরিক অবসাদের মতো মারাত্নক শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
- মাসিকের সময় কখনো নিম পাতা খাওয়া উচিত নয়। মাসিকের সময় নিম পাতা খেলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- সন্তান নিতে ইচ্ছুক দম্পতিদের কখনো প্রয়োজনের অধিক নিম পাতা খাওয়া উচিত নয়। এতে পুরুষের বীর্যের সংখ্যা কমে যেতে পারে আর নারীরা সন্তান ধারণে অক্ষম হতে পারে।
- যারা অবহিউম্যান সমস্যায় ভুগছেন তাদের কখনো নিম পাতা খাওয়া উচিত নয়। এতে সমস্যাগুলো বৃদ্ধি করে শরীরের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলাদের কখনো নিম পাতা খাওয়া উচিত নয়। এতে অকালে প্রসব বেদনা হতে পারে, গর্ভপাত হবার সম্ভাবনা হতে পারে।
- নিম পাতা উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তাদের নিম পাতা খেলে নানা ধরণের শারিরীক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- অতিরিক্ত নিম পাতা খেলে নানা ধরনের কিডনির রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
- অতিরিক্ত নিম পাতা খেলে শরীর থেকে টক্সিক পদার্থ বের হতে পারে না। ফলে নানা ধরণের শারিরীক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
- নিমপাতা ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা প্রতিদিন নিম পাতা খেতে থাকেন তারা নিম পাতা খেলে শরীরে ব্লাড সুগার কমিয়ে নানা ধরেনের শারীরিক সমস্যার দেখা দেয়।
- যারা নানা ধরণের শারীরিক সমস্যায় নিম পাতা খেয়ে থাকে তাদের নিম পাতা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। এতে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেয়
উপসংহার
নিম একটি উপকারী বৃক্ষ। আমাদের নানা ধরনের সমস্যা সমাধানের প্রতিষেধক নিম।তাই আমাদের উচিত প্রত্যকের বাড়িতে অন্তত একটি করে নিম গাছ রোপন করা। এতে বাঁচবে প্রকৃতি, বাঁচবে সম্পদ।