পেঁপে চাষ-সময়-পদ্ধতি-নিয়ম ও পেঁপে পাতার উপকারিতা
একটি ফল হিসেবে আমাদের নিকট বেশ পরিচিত হল পেঁপে।
আপনি কি জানতে চান পেঁপের জানা-অজানা উপকারিতা সম্পর্কে?
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গাছপালা। এই সকল গাছপালা আমাদের শরীরে, অক্সিজেনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি, আমাদের খাদ্যের উৎস হিসেবে, ভূমিকা পালন করে গাছ। এক বাক্যে, গাছের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না । গাছ আমাদের শরীরে ভিটামিনের উৎস নানা ধরণের ফলমূল দিয়ে থাকে। যা আমাদের যা প্ৰত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে উপকার করে থাকে। গাছপালা থেকে প্রাপ্ত এই ফলমূলসমূহ বিভিন্ন ধরণের খাদ্যগুন সম্পন্ন হয়, যা আমাদের শরীরে ভিটামিনের পাশাপাশি, পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে ভুমিকা পালন করে থাকে।
প্রতিটি গাছপালা আমাদের জন্য উপকারী। কোন কোন গাছ ফল দিয়ে, কোন গাছ ফুল দিয়ে, কোন গাছ ওষুধি গুণাগুণ দিয়ে উপকার করে থাকে আমাদের। আমাদের আশেপাশে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এইসব গাছপালা। প্রতিটি বৃক্ষ নানা ধরণের গুনাগুন সম্পন্ন হয়ে থাকে। আজ আমরা আলোচনা করব নানা ধরণের উপকারিতা সম্পন্ন অন্যতম জনপ্রিয় একটি ফল পেঁপে নিয়ে।
পেঁপে আমাদের অতি পরিচিত একটি ফল। পেঁপের বৈজ্ঞানিক নাম হল Carica papaya)। পেঁপে মূলত Caricaceae পরিবারের একজন সদস্য। এছাড়াও পেঁপের ইউনানী নাম হল পাপিতা। এটি মূলত একটি ওষুধি গুণসম্পন্ন ফল। পেঁপের আয়ুর্বেদিক নাম হল অমৃততুম্বী। পেঁপে একটি ফল হলেও অনেকে এটি আমাদের শরীরে সবজির চাহিদা পূরণ করে । মূলত একটি পেঁপে কাঁচা কিংবা পাঁকা দুই অবস্থায় খাওয়া যায়। পেঁপে নিয়ে একসময় গ্রাম বাংলায় একটি প্রচলিত উক্তি রয়েছে-
“প্রতিদিন পেঁপে খাও বাড়ির বাইরে ডাক্তার তারাও “।
-
পেঁপে চাষ
পেঁপে শুধুমাত্র কোন সাধারণ ফল হিসেবে নয়, পেঁপে হল নানা ধরণের গুনাগুনের উৎস। আমাদের বাসায় একটি পেঁপে গাছ থাকবেই। কিন্তু আপনি কি জানেন? শুধুমাত্র পেঁপে চাষ করে আপনি হতে পারেন একজন সফল চাষী। পেঁপে চাষ করে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সক্ষম হবেন। খুব অল্প জায়গাতেই আপনি পেঁপে চাষ করে নিজেকে সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারেন।
-
পেঁপে চাষ পদ্ধতি
আপনি যদি পেঁপে চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে।
জাত নির্বাচন
আপনি যদি পেঁপে চাষ করতে চান সবার আগে পেঁপের জাত নির্বাচন করতে হবে। কারণ জাত নির্বাচনের উপর ব্যবসায়ের সাফল্য ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে। আমাদের দেশে পেঁপের জনপ্রিয় জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হল শাহি লেডি, শাহী পেঁপে, যশোরি, ছোট পেঁপে, কাশিমপুরী ইত্যাদি।
আলোচিত জাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত জাত হল শাহী লেডি। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটের উদ্ভাবিত আরেকটি উচ্চ ফলনশীল জাত হল শাহী লেডি। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে এই জাতটি চাষের উপযোগী। তাই আপনি পেঁপে চাষ করতে চাইলে উচ্চ ফলনশীল জাত দেখে নির্বাচন করা শ্রেয়।
চাষ উপযোগী মাটি তৈরি
পেঁপে একটি উচ্চ ফলনশীল উদ্ভিদ। আমাদের দেশে প্রায় সব অঞ্চলে, পেঁপের চাষ হয়ে থাকে। তবে পেঁপে চাষের জন্য জমির নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো হতে হবে। কারণ পেঁপে এমন একটি ফল যা জলাবদ্ধতা মোটেও পছন্দ করে না। তাই পেঁপে চাষের জন্য আপনাকে প্রথমে জমির মাটিতে গোবর মিশিয়ে ঝরঝরা করে বা উর্বর করে তুলতে হবে। সেচ সুবিধা এমন দিতে হবে যাতে পানি জমিতে আটকে থাকতে না পারে।
চারা উৎপাদন
পেঁপের চাষের জন্য উচ্চ ফলনশীল একটি জাত নির্বাচন করে তার বীজ বাজার থেকে কিনে নিতে হবে। বীজ যেমন জমিতে রোপনে সুবিধা হয়, ঠিক তেমনি করে বীজ থেকে উৎপাদিত ছাড়া বেশ ভালো হয়। প্রথমে একটি বীজতলা নির্বাচন করে প্রতি সারিতে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি নিচে বীজ পুঁতে ফেলতে হয়।
এছাড়া অনেকে পলিব্যাগে বীজ রোপন করে চারা তৈরি করে। পলিব্যাগে চারা তৈরি করতে হলে প্রথমে একটি পলিব্যাগে মাটি গোবর মিশ্রিত মাটিতে ২ টি করে বীজ বপন করতে হবে।
নিচে পানি নিষ্কাশনের জন্য অবশ্যই একটি ছিদ্র ব্যবহার করতে হবে।
থানকুনি পাতার উপকারিতা-অপকারিতা ও গুনাগুন ভিজিট করুন
পেঁপের চারা রোপণ পদ্ধতি
প্রত্যেকটি চারার বয়স যখন দুই মাস হবে তখন পেঁপের চারা রোপন করতে হবে। অবশ্যই চারা রোপনের জন্য জমির মাটি তৈরী করে নিতে হবে।
একটি গর্ত করে ৩ টি চারা, তুলনামূলক ত্রিভুজ আকারে রোপন করতে হবে। চারা বড় হলে চাষের উপযুক্ত হলে আগের পাতাগুলো ছাটাই করে নিতে হবে।
পেঁপে গাছে সার দেওয়ার নিয়ম
আপনি চাষাবাদ ব্যবস্থাপনা তখনি সফলতার মুখ দেখবে, যখন আপনি জমিতে পরিমিত ও নিয়মিত পরিমানে সার প্রদান করবেন। গাছকে প্রথমে রোপন করার জন্য বীজতলা বানাতে কিংবা চারা রোপনের জন্য প্রথমে মাটি তৈরি করতে হবে।
প্রথমে একটি চারাকে ইউরিয়া ও এসপি প্রদান করতে হবে। ধীরে ধীরে গাছটি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে। সেই সাথে গাছে যখন ফুল হবে, সেই সাথে ফল ধরার আগে মুহূর্তে গাছে সারের পরিমান দ্বিগুণ করে দিতে হবে।
পেঁপে গাছের পরিচর্যা
আপনি পেঁপের চাষ করতে হলে সবার আগে পেঁপে গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। চলুন জেনে নেই পেঁপে গাছের সঠিকভাবে পরিচর্যা করার নিয়ম সম্পর্কে-
- পেঁপে চাষের জমিকে সবসময় আগাছা মুক্ত করতে হবে। কোন পেঁপে কোন ধরণের আগাছা দেখলে তা পরিষ্কার করতে দিতে হবে।
- মাটির মধ্যে যাতে ফাটল না ধরে, মাটি যাতে আলাদা না হয় সেই দেকে নজর দিতে হবে।
- মৌসুমে সঠিকভাবে পানি দিতে হবে। সেচ ব্যবস্থা ভালো করতে হবে।
- ফুল আশার পর পুরুষ গাছের পাতা কেটে দিতে হবে।
- তুলমামূলক পরাগায়নের জন্য একটি পেঁপে বাগানে সর্বোচ্চ ১০% পুরুষ গাছ রাখতে হবে।
Like Fishing Visit Now
পেঁপে পাতার উপকারীতা
পেঁপে একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল হলেও পেঁপে পাতার রয়েছে নানা ধরণের ঔষুধি গুণাগুণ। আপনারা কি জানেন পেঁপে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে? চলুন তাহলে জেনে নেই পেঁপে পাতার গুণাগুণ সম্পর্কেঃ
-
লিভারে সুরক্ষায়
নিয়মিত পেঁপে পাতার রস পানে আপনার লিভার পরিষ্কার থাকে। এছাড়াও লিভার সিরোসিসের প্রকোপ কমায় পেঁপে পাতার রস।
-
জন্ডিস থেকে সুরক্ষায়
জন্ডিস প্রতিরোধে বেশ উপকারী হল এই পেঁপে পাতা। এছাড়াও জন্ডিস রোগীরা এই পেঁপে পাতার রস পানের ফলে শরীরে সুরক্ষা পায়।
-
হজম ক্ষমতা বাড়ায়
নিয়মিত পেঁপে পাতার রস পান করলে আমাদের শরীরে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
-
আলসার নিরাময়
পেঁপে পাতার রস আলসার প্রতিরোধে বেশ ভূমিকা পালন করে।
-
বহুমূএ রোগ নিরাময়ে
ডায়বেটিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে পেঁপে পাতার রস।
-
কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধে
কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধে বেশ উপকারী এই পেঁপে পাতা।
-
মাসিকের ব্যাথা কমাতে
মাসিকের ব্যাথা প্রশমনে বেশ কার্যকর এই পাতা।
-
ক্যান্সার প্রতিরোধে
পেঁপে পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারী।
-
ডেঙ্গু সুরক্ষায়
ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষায় পেঁপে পাতার বেশ প্রচলন রয়েছে। পেঁপে পাতা রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে।
-
ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য রক্ষায়
আমাদের ত্বক এবং চুলের সুন্দর রক্ষায় পেঁপে পাতা বেশ উপকারী।
-
পেঁপে চাষ সময়
আপনি যদি পেঁপে চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে জানতে হবে পেঁপে চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে। পেঁপে এমন একটি গাছ যা সারা বছর রোপন করলেও এই গাছ যদি আপনি চাষে উদ্দ্যেশ্যে রোপন করেন তাহলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে রোপন করতে হয়ে।
মূলত এপ্রিল মাসে যখন বর্ষাকালে পেঁপের চারা রোপনের উপযুক্ত। এছাড়া সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরে পেঁপের চারা রোপন করা যায়।
তেঁতুলের উপকারিতা অপকারিতা ও গুনাগুন ভিজিট করুন
উপসংহার
নানা গুণে গুণান্বিত এই পেঁপে আমাদের দেশে এখন বিপুল পরিমাণে চাষ করা হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের পেঁপে চাষ নিয়ে সঠিক প্রশিক্ষণ দিলে এই পেঁপে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম।