–
যারা শারীরিক দিক থেকে অক্ষম বা যাদের আমরা প্রতিবন্ধী নামেও চিনে থাকি তাদের জন্য রয়েছে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বা সুবর্ণ কার্ড। এবারের আর্টিকেলে জানাবো প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
বাংলাদেশ সরকার দেশের কর্ম অক্ষম মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদানের প্রকল্প গ্রহন করেছে অনেকে আগে থেকেই। যার মধ্যে রয়েছে বিধবা ভাতা, বৃদ্ধ ভাতা সহ আরো অনেক এবং ২০১৩ সাল থেকে নিয়মিত প্রতিবন্ধীদের সুবিধার জন্য ভাতা প্রদান শুরু করেছে। সেটি গ্রহনের জন্য প্রয়োজন প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বা সুবর্ণ কার্ড। তাই এবার জানবো সুবর্ণ কার্ড সম্পর্কে।
প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট কি?
শারীরিক ভাবে যারা বিকলঙ্গ বা প্রতিবন্ধি তাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে বিশেষ এক ধরনের পরিচয় বাহক কার্ড তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন যেখানে দেশের যে নাগরিক শারীরিক ভাবে অক্ষম বা যাদের আমরা প্রতিবন্ধী হিসেবে চিনে থাকি তাদের জন্য অতিরিক্ত কিছু সুবিধা প্রদান করা যায়।
এই প্রকল্পের মাধ্যেম প্রদান করা কার্ডকেই প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড বা সুবর্ণ নাগরিক কার্ড বলে থাকে। এই কার্ড থাকলে সরকার হতে অতিরিক্ত কিছু সুযোগ সুবিধা যেমন প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে সরকার অনুদান ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। একজন স্বাভাবিক মানুষের যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে তেমনই একজন প্রতিবন্ধীকে পরিচিতি প্রদান করার জন্যই প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বা কার্ড রয়েছে।
প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট এর কাজ কি?
২০২২ সালে ১০ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে বসবাসকারী নাগরিকের মধ্যে যারা বিভিন্ন ভাবে প্রতিবন্ধী তাদের জন্য সরকার প্রদত্ত ভাতা প্রদান কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। আর একজন প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহন করতে অবশ্যই তার প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বা আইডি কার্ড, যাকে সুবর্ণ কার্ড বলা হয় সেটির প্রয়োজন রয়েছে।
তাছাড়া বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি আর্থিক সাহায্য গ্রহন ও বিশেষ সুযোগ সুবিধা পেতে সুবর্ণ কার্ড প্রদর্শনের প্রয়োজন হয়। প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট মূলত একটি প্রতিবন্ধীর আইডেন্টিটি ধারন করে। তাই শারীরিক ভাবে অক্ষম প্রতিটি প্রতিবন্ধীর উচিৎ প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট তৈরি করে ফেলা বা সংরক্ষন করে রাখা। এবং এই পর্যায়ে জানাবো প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এবং সেই কার্ড বা প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে ভাতা সহ সকল সুবিধা গ্রহন করা যাবে।
প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পাওয়ার নিয়ম
প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বা আইডি কার্ড বা সুবর্ণ কার্ড যাই বলা হোক না কেনো, পাওয়ার জন্য প্রথমেই আবেদন করতে হবে। বর্তমানে সরাসরি কোথাও গিয়ে আবেদন করতে হয় না, অনলাইনে খুব সহজে আবেদন কার্য সম্পাদান করা যায়।
আবেদন হয়ে গেলে আবেদন ফরমটি প্রিন্ট করে নিতে হবে এবং তারপরেই মেডিক্যাল টেস্টের জন্য যেতে হবে। মেডিক্যাল টেস্ট মূলত আবেদনকারী প্রকৃতপক্ষে প্রতিবন্ধী কি-না যেটা যাচাইয়ের জন্য। এরপর স্থানীয় সমাজসেবা অফিসে গিয়ে আবেদন ফরমের প্রিন্ট ও মেডিক্যাল রিপোর্ট সাবমিট করতে হবে।
এই পর্যায়ে জানাবো প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য একজন ব্যক্তিকে কোন কোন যোগ্যতা বা শর্ত পূরণ করতে হবে। মূলত একজন ব্যক্তি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু Critaria অনুসরণ করতে হবে যা পরের ধাপে উল্লেখ্য করছি।
প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পাওয়ার শর্ত ও যোগ্যতা
১) প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটের জন্য আবেদনকারীকে বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
২) অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উক্ত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার কোনো অবিভাবক অথবা কোনো সংস্থা উক্ত সাইট ব্যবহার করে আবেদন কার্য সম্পন্ন করতে পারবে।
৩) আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন থাকতে হবে।
৪) ফর্মে থাকা স্বাক্ষরের স্থানে আবেদনকারীর স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসাতে হবে।
৫) একটি সচল মোবাইল নাম্বার এবং একটি ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করতে হবে আবেদন করার সময়।
৬) অনলাইনে আবেদন করার সময় আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী সমাজসেবা কার্যালয়ের নাম বা ঠিকানা দাখিল করতে হবে।
৭) স্থানীয় উপজেলা শহর এর সমাজসেবা কার্যালয় হতে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাজির হতে হবে। মুক্ত ডাক্তারি পরীক্ষার মধ্যে প্রতিবন্ধীকতা রয়েছে কিনা তা যাচাই করা হবে।
৮) যখন ডাক্তারি পরীক্ষার হাজির হওয়া হবে তখন অনলাইনে আবেদন ফরম সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
৯) আবেদন সম্পন্ন হলে এবং মেডিকেল টেস্ট করা হয়ে গেলে সমাজসেবা কার্যালয় হতে এসএমএসের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট সুবর্ণ কার্ড সংগ্রহের জন্য জানিয়ে দেয়া হবে।
অনলাইনে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট আবেদন পদ্ধতি
বর্তমানে অনলাইনে আবেদন করা যাচ্ছে এক্ষেত্রে আবেদনের সময় যে ডকুমেন্টস গুলো সামনে রাখতে হবে সেগুলো হলো – আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র/ জন্মনিবন্ধন পত্র, আবেদনকারীর পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র এবং আবেদনকারীর স্ক্যান করা সিংনেচার।
এর পর সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ক্লিক করে আবেদন পেজে চলে যেতে হবে। একটি পপ আপ আসবে দেখানে কিছু দিন নির্দেশনা জানানো রয়েছে, সেটির নিম্মে “অবগত হলাম” বাটনে টিক দিলেই আবেদনের মূল পেজ চলে আসবে।
এই পর্যায়ে মোট ৪ টি পেজের ফরম পূরণ করতে হবে, প্রথম অংশে থাকবে আবেদনকারী ব্যক্তির ব্যাসিক তথ্য যেমন পরিচয়, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা। এবং বাকি ৩ টি পেজে থাকবে আবেদনকারী ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত বিষয়ে। সেগুলো ঠিক ভাবে একেক করে পূরণ করে যেতে হবে। এবং আবেদন প্রসেস সম্পন্ন হয়ে গেলে আবেদন ফরমটি প্রিন্ট করে রেখে দিতে হবে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য।
পরিশেষে কিছু কথা
মূলত এই ছিলো প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পাওয়ার নিয়ম বা সুবর্ণ কার্ড পাওয়ার নিয়ম যেখানে টিউটরিয়াল প্রদান করা হয়েছে শারীরিক ভাবে বিকলঙ্গ এমন ব্যক্তিদের বিশেষ সুবিধা প্রদানকারী কার্ড পাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এমনই জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সুবিধা ও সরকারি প্রকল্পে আবেদন সংক্রান্ত বিষয় জানতে অনুসরণ করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটের জাতীয় ক্যাটাগরিটি। ধন্যবাদ।