আমরা অনেকেই হয়তো নামাজের অনেক বিষয় জানিনা। আজকে আমাদের জানার বিষয় হলো ফজরের নামাজ কাযা পড়ার নিয়ম ও কিভাবে পড়তে হয় এবং এর সময়, নিয়ম, নিয়ত বিষয়ে। কাযা নামাজ কিভাবে আদায় করবেন – সে বিষয়ে ক্বুরআন এবং সহিহ সুন্নাহর আলোকে সঠিকটা তুলে ধরবো ইনশা আল্লাহ্।
নামাজ যথাসময়ে আদায় করতে আমরা নির্দেশিত। ইচ্ছাকৃতভাবে যেকোন ফরয নামাজ কাযা করা গুনাহর কাজ এবং কুফরী। তাই এ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে কারও কোন ওয়াক্তের ফরয নামাজ ছুটে গেলে গুনাহ হয়না কিন্তু সেটা কাযা করতে হয়। সেটা ফজর থেকে ইশা – যেকোন ফরয নামাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
অনেকেরই ফজরের নামাজ কাযা হয়ে যায়। এজন্য ফজরের কাযা নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়ম জানা জরুরি। যারা সঠিক নিয়ম জানেন না; তারা কোন সময়ে, কোন নিয়মে এবং কি নিয়তে তা আদায় করবেন, তা নিচে তুলে ধরা হলোঃ
ফজরের কাযা নামাজ যেভাবে আদায় করবেন
ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে কারও ফজরের কাযা নামায আদায় করার প্রয়োজন হলে বা ৫ ওয়াক্তের যেকোন ওয়াক্তের ফরয নামাজ ছুটে গেলে তার করণীয় হল, ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া বা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে তা কাযা করে নেয়া। তাহলে এতে কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু স্মরণ আসা বা ঘুম ভাঙ্গার পরও কাযা করতে বিলম্ব করলে গুনাহ হবে।
যেমন নিম্নোক্ত হাদিসটি:
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ نَسِىَ صَلاَةً فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا لاَ كَفَّارَةَ لَهَا إِلاَّ ذَلِكَ
“যে ব্যক্তি কোন নামায পড়তে ভুলে যায়, সে যেন তা স্মরণ হওয়া মাত্র পড়ে নেয়। (এই কাযা আদায় করা ছাড়া) এর জন্য আর অন্য কোন কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) নেই।” (বুখারী ৫৯৭, মুসলিম ১৫৯৮, মিশকাত ৬০৩ নং হাদীস)
অনুরূপভাবে, কোন ব্যক্তি যদি বিনা ওজরেও ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, তাহলে সে আল্লাহর নিকট তওবা করবে, কালেমা পাঠ করে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় শুরু করবে। উল্লেখ্য যে, অতীতের ছুটে যাওয়া নামাজের জন্য উমরি কাযা করা বিদআত এবং গুনাহর কাজ, সুতরাং এটা করা যাবেনা।
এক্ষেত্রে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার পাশাপাশি সুন্নাত এবং সাধ্যমতো নফল নামাজ আদায় করার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। বিশেষ করে প্রতিদিন ফরয নামাজের আগে পরে ১২ রাকআত সুন্নাতে রাতেবা নামাযগুলো পড়ার প্রতি যত্নবান হতে হবে; যেহেতু হাদিস দ্বারা এর ফযীলত প্রমাণিত হয়েছে।
এছাড়াও একাধিক নামাজ ছুটলে আগেরটা আগে; পরেরটা পরে- এই পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে নামাজ আদায় করতে হবে। যেমনঃ কারও যদি মাগরিব আর ইশার নামাজ ছুটে যায়; তাহলে প্রথমে মাগরিবের তারপর ইশার নামাজ পড়তে হবে। আর কাযা নামাজ নিষিদ্ধ সময়েও পড়া যাবে। আল্লাহ্ সবচেয়ে ভাল জানেন।
ফজরের কাযা নামাজ এর জন্য সময় হলো – যখনই স্মরন হবে বা ঘুম থেকে উঠবে; সে সময়ই তা আদায় করে নিতে হবে। কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম ফজরের ফরয নামাজের মতোই। আর ফজরের কাযা নামাজ এর জন্য মুখে উচ্চারণ করে কোন বিশেষ নিয়ত পড়ার বিষয়টি শরী’আতে নেই। মনে মনে ফজরের কাযা নামাজ আদায় করার নিয়ত বা সংকল্প করাই যথেষ্ট।
উল্লেখ্য যে, কোন নামাজের জন্যই মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত নেই; বরং এটা করা বিদআত এবং গুনাহর কাজ। কেননা, রসূল (সঃ) এবং তার সাহাবিরা তা করেন নি। নিয়ত হলো অন্তরের সংকল্পের নাম। তাই নিয়ত মনে মনে করতে হবে।
ফজরের কাযা নামাজ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ফজরের কাযা নামাজ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর আপনার সুবিধার্থে নীচে তুলে ধরা হলোঃ
প্রশ্ন ১ – ঘুম থেকে উঠে যদি দেখি যে, সূর্য উঠে গেছে। তাহলে ফজরের কাযা নামাজ কিভাবে পড়তে হবে?
উত্তরঃ যদি এরকম হয়, তাহলে উযূ করে যত দ্রুত সম্ভব কাযা নামাজ পড়ে নিতে হবে। দেরি করা যাবে না।
প্রশ্ন ২ – ঘুম থেকে উঠার পর যদি কেউ দেখে যে, সূর্য উদয় হচ্ছে আর নামাজের মাকরুহ সময় চলছে, তাহলে কি সূর্য উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে?
উত্তরঃ যদি সূর্য উদয় হওয়ার মুহূর্তে বা নামাজের মাকরুহ সময়ে কেউ ঘুম থেকে উঠে, তাহলে সে সময়েই নামাজ কাযা পড়ে নিবে। কারণ, নামাজের মাকরুহ সময়ে শুধু নফল নামাজ পড়া নিষেধ, ফরয নামাজের কাযা আদায়ে নিষেধ নেই।
প্রশ্ন ৩ – ঘুম থেকে উঠে যদি দেখে যে, সূর্য উঠে গেছে, তাহলে সকালে যদি ফজরের কাযা নামাজ তখন না পড়ে যোহরের নামাজের সাথে একসাথে পড়ে নেয় তাহলে কি তা জায়েয হবে?
উত্তরঃ ফজরের কাযা নামায ইচ্ছাকৃত ভাবে বিলম্ব করে যোহরের সাথে আদায় করা জায়েয নয়। অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে। সুতরাং ওজর বশত: কোন নামায ছুটে গেলে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি তা আদায় করে দায়িত্বমুক্ত হওয়া জরুরি।
প্রশ্ন ৪ – কাযা নামায কি সিরিয়াল অনুযায়ী পড়তে হয়? যেমন: ফজর আর যোহর যদি কাযা হয়, তাহলে যখন আসরের নামাজ পড়ব তখন আসরের নামাযের পূর্বে কি ফজর অত:পর যোহরের নামাজ আদায় করে নিতে হবে? আর তা না করে যদি ইশার সময় ঐ কাযাগুলো একসাথে পড়ে নেই তাহলে কি হবে?
উত্তরঃ একাধিক ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেলে সেগুলো পরবর্তীতে কাযা করার সময় ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব অর্থাৎ আগেরটা আগে এবং পরেরটা পরে আদায় করতে হবে। (এটি জুমহুর বা অধিকাংশ আলেমের অভিমত)
সুতরাং, আমাদের সবাইকে যথাসময়ে এবং সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে সাহায্য করুন, আমীন।