–
আপনি কি টাইপিং করে করে অতিষ্ঠ! হাতের আঙ্গুল ব্যাথা হওয়া থেকে মুক্তি চান? তবে বাংলা ভয়েস টাইপিং বিষয়ক এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। কারন এখানে আলোচনা করা হবে বাংলা ভাষায় কিভাবে শুদ্ধ ভাবে, নির্ভুল বানানে, দ্রুতগতিতে কিভাবে টাইপিং করতে পারবেন তাও আবার স্রেফ মুখে বলেই। জী হ্যা, কেমন মুখে বললেই অটোমেটিক ভাবে লেখা টাইপ করা হয়ে যাবে। কিভাবে এই কাজটি করতে পারবেন তা জানতে পড়ুন সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি।
কালের ব্যবধানে আমরা অনেক কিছুই দেখেছি, এই যেমন একটা সময় ছিলো যখন কেবল ইংরেজিতেই লেখা যেতো। তারপর ধিরে ধিরে আমাদের বাংলা ভাষা স্থান পেলো টাইপিংয়ের জগতে। এবং ধিরে ধিরে মানুষের জীবন আরো সহজ হতে শুরু করলো। এখন জীবনটা এতোই সহজ যে কষ্ট করে আংগুল দিয়ে কীবোর্ড চেপে টাইপ করতেও হচ্ছে না। স্মার্টফোনটি হাতে নিয়ে মুখ দিয়ে যাই বলা হচ্ছে খুব সহজ ভাবেই তা লিখিত আকাড়ে প্রকাশ পাচ্ছে। হ্যা বলছি ভয়েস টাইপিং এর কথা। আজকে আপনাকে দেখাবো বাংলা ভয়েস টাইপিং করা নিয়ে দারুন সব উপায় যা অনুসরণের মাধ্যমে আপনিও বেশ সহজেই মুখে বলেই যেকোনো লেখাতে পরিণত করতে সক্ষম হবেন।
বাংলা ভয়েস টাইপিং এর জন্য আপনি একাধিক উপায় ও একাধিক মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে ডিভাইস ভিত্তিক ভিন্নতাও লক্ষনীয়। আপনি যদি মোবাইল দিয়ে বাংলা ভয়েস টাইপিং করতে চান আপনি যে উপায়ে খুব সহজে করতে পারবেন, কম্পিউটারে যে ভাবে পারবেন না। তাই এখানে উভয় উপায়েই দেখানো হবে বিষয় গুলো। প্রথমেই মোবাইলের মাধ্যমে শুরু করা যাক।
মোবাইল দিয়ে বাংলা ভয়েস টাইপিং
কীবোর্ডের মাধ্যমে ভয়েস টাইপিং
মোবাইল দিয়ে বাংলা ভয়েস টাইপিং এখন খুবই সহজ। আমাদের সচারচর ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় কিছু টাইপিং সফটওয়্যার আছে যেগুলোর মাধ্যমেই আমরা সহজে উক্ত কাজটি করতে পারি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভাবে বাংলা ভয়েস টাইপিং সুবিধা দিয়ে থাকে জিবোর্ড কিবোর্ড এটা গুগলের নিজস্ব মোবাইল কীবোর্ড। এটার মাধ্যমে যেমন বাংলা ইংরেজি ভাষায় টাইপ করা যায় তেমনই ভয়েস অপশনের মাধ্যমেও ভয়েস টাইপিং করা যায়। ভয়েস টাইপিং এর ক্ষেত্রেও রয়েছে বাংলা ইংরেজি দুইটারই সুবিধা।
আপনি যদি G-board keyboard দিয়ে বাংলা ভাষায় ভয়েস টাইপিং করতে চান তবে প্রথমেই আপনাকে বাংলা লে-আউট টি সিলেক্ট করে রাখতে হবে। তারপর লে আউট থেকে মাইক চিহ্ন অপশনটিতে ক্লিক করার পর বাংলা ভাষায় যাই বলবেন তাই টাইপ হতে থাকবে আটোমেটিক ভাবেই। উক্ত কাজটি আপনি সোসাল মিডিয়া, নোট সহ যেকোনো স্থানেই করতে পারবেন।
তাছাড়াও আরো একটি জনপ্রিয় কীবোর্ড রয়েছে যার নাম রেডমিক কীবোর্ড। Ridmik keyboard দিয়ে শুধু মুখে বলুন বাংলায় অটো লিখা হয়ে যাবে। আপনি একই কাজ করতে পারবেন সেটার মাধ্যমেও। আমরা যারা বাংলা ভাষায় লিখে থাকি তাদের ৬০% লোকেই রেডমিক কীবোর্ড ইন্সটল করে রাখে এবং সেটিই ব্যবহার করে। তাই আপনিও যদি তাদের একজন হয়ে থাকেন তবে এখানেও সেম প্রসেস বাংলা ভয়েস টাইপিং করতে পারবেন। তবে এখানে একটা বিষয় খুব প্যারাদায়ক তা হলো আপনি পুরো কথা বলার পর কিছু ক্ষন প্রসেসিং এর জন্য সময় নিবে ড্যাশবোর্ডে টাইপিং দেখাতে। কিন্তু আপনি যদি গুগলের কীবোর্ডটা ব্যবহার করেন তবে এই সমস্যাটা দেখাবে না। সেখানে ঠিকই সাথে সাথে টাইপিং হয়ে যাবে।
অ্যাপ এর মাধ্যমে ভয়েস টাইপিং
আপনি যদি উপরের প্রসেসটিতে সন্তুষ্ট না হয়ে থাকেন তবে হতাশার কোনো কারন নেই। এখন জানাবো আরেকটি খুবই সহজ পদ্ধতি যেখানে সময় নষ্ট করতে হবে না এক সেকেন্ডও আপনি বলার সাথে সাথে হয়ে যাবে টাইপিং এবং তত ক্ষন অব্দি হতে থাকবে যতক্ষন অব্দি আপনি বলতে থাকবেন।
বর্তমানে গুগল প্লে স্ট্রোরে এমন অসংখ্য ভয়েস টাইপিং অ্যাপ পেয়ে যাবেন তবে সেগুলোর মধ্যে সব গুলো বাংলা ভয়েস টাইপিং এর জন্য কার্যকর নয়। আবার কিছু সফটওয়্যার আছে যেগুলো সরাসরি গুগলের স্ক্রিপ্ট অনুসরণ করেই তাদের অ্যাপ এর মধ্যে ইম্প্রিমেন্ট করে দেয়।
এখানে ক্লিক করে আপনি বেশ কিছু অ্যাপ দেখতে পারবেন বাংলা ভয়েস টাইপিং বিষয়ক। এখান থেকে যেগুলোর রেটিং ভালো ও ডাউলোড হয়েছে অনেক বেশি যেগুলো থেকে আপনার পছন্দ মোতাবেক যেকোনো একটি অ্যাপ ইন্সটল করে নিন। প্রায় সকল ধরনের অ্যাপ এর ক্ষেত্রেও ড্যাশবোর্ড ও নিয়ম একই হয়ে থাকে।
প্রথমেই অ্যাপে ঢুকে মাইক অপশনে ক্লিক করে আপনার যাবতীয় কথা বলতে থাকবেন সেটা অটোমেটিক ভাবেই পিছনে টাইপিং করতে থাকবে। খেয়াল রাখতে হবে টাইপিং এর জন্য আপনার বলার ধরন ও উচ্চারণ যেনো শুদ্ধ ও সুন্দর হয়।
অনলাইনে বাংলা ভয়েস টাইপিং
তাছাড়া আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও বাংলা ভয়েস টাইপিং করতে পারবেন। এটা কখন করবেন? যখন আপনি কোনো ধরনের সফটওয়্যার বা অ্যাপ ব্যবহার করতে চাচ্ছেন না উক্ত কাজের জন্য তখনই অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে উক্ত কাজটি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে গুগলের ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করতে হবে। এবং আপনি যদি মোবাইলের মাধ্যমে করেন তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই তবে পিসি বা কম্পিউটারের মাধ্যমে যদি করে থাকেন তবে অবশ্যই মাইক্রোফোন থাকতে হবে।
কম্পিউটারে ভয়েস টাইপিং
কম্পিউটারের মাধ্যমে বাংলা ভয়েস টাইপিং করা অনেকটাই সহজ। আপনার মাইক্রোসফটে যদি বাংলা ল্যাংগুয়েজ ভয়েস টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে ডাউনলোড করা থেকে থাকে তবে Voice to Text নামক সফটওয়্যারটি মাইক্রোসফটের স্ট্রোর থেকে ডাউনলোড করে নিবেন। এটা আমার দেখা ভয়েস টাইপিং এর জন্য সেরা সফটওয়্যার। এটার মাধ্যমে আপনি ভয়েস থেকে টাইপিং করতে পারবেন।
তাছাড়া কম্পিউটার থেকে যদি ভয়েস টাইপিং করার প্রয়োজন হয় তাহলে সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর উপায় হচ্ছে Google Docs এর মাধ্যমে ভয়েস টাইপিং করা। এবার আসুন দেখিয়ে দেই কিভাবে কম্পিউটার থেকে বাংলা ভয়েস টাইপিং করবেন Google Drive এর Docs এর মাধ্যমে।
১ম স্টেপ: প্রথমেই আপনাকে গুগল ডক্সস ওপেন করতে হবে। এক্ষেত্রে এখানে ক্লিক করুন।
২য় স্টেপ: এবার এখান থেকে নিউ ডকুমেন্টস ক্লিক করুন, ড্যাশবোর্ডে একটা ব্লাঙ্ক ফাইল দেখাবে। এই পর্যায়ে উপরের মেনু অপশন থেকে Tool নামক অপশনে ক্লিক করুন। সেখানে কিছু সাব মেনু দেখাবে যার মধ্যে থেকে Voice Typing অপশনে ক্লিক করুন।
৩য় স্টেপ: এই পর্যায়ে আপনার কম্পিউটারের সাথে মাইক্রোফোনটি সংযোগ দিয়ে ফেলুন। মাইক্রোফোন সেটাপ হয়ে গেলে সেখানে আপনি যেকোনো ভাষাতেই যা বলবেন সেটা গুগল ডক্সে অটমেটিক ভাবে টাইপ হতে থাকবে। আপনি উক্ত লেখা যেকোনো স্থানে ব্যবহার করতে পারবেন। আর সত্যি বলতে গুগলের এই সার্ভিসটি অন্য সকল ভয়েস টাইপিংকে হার মানাবে কারন এখানে রয়েছে অটো কারেকশন ফিচার্স যা আপনার সল্প ভুল গুলোকে নিজ থেকেই ঠিক করে নিবে। আর AI এর মাধ্যেমে আপনার কথা বলার ভঙ্গি খুব সহজেই বুঝে খুব দ্রুত আউটপুট দিতে সক্ষম হবে।
আইফোন থেকে বাংলা ভয়েস টাইপিং
আমরা সচারচর দেখে থাকি যত সব সার্ভিস সকল কিছুই এড্রোয়েড এর জন্যই বিশেষ করে ফ্রি সার্ভিস গুলো। তবে আপনি কি জানেন বাংলাতে ভয়েস টাইপিং এর স্বাদ গ্রহন করতে পারবেন আইফোন ইউজাররাও। আপনি যদি আইফোন ইউজার হয়ে থাকেন তবে এখানে ক্লিক করে জি-বোর্ড অ্যাপটি ইন্সটল করে নিন। উক্ত অ্যাপটি টাইপিং অ্যাপ যা গুগলের পক্ষ থেকেই তৈরি করা হয়েছে। উপরে উল্লেখ্যিত নিয়ম অনুসারেই আপনি এই কীবোর্ডের মাধ্যমেও আইফোন থেকে বাংলা ভয়েস টাইপিং এর কাজ খুব সহজেই করতে পারবেন।
আর্টিকেল শেষে কিছু কথা
অতঃপর শেষ হলো আমাদের বিশেষ টিউটরিয়াল ভিত্তিক আর্টিকেল যার বিষয় ছিলো বাংলা ভয়েস টাইপিং। অনেকের অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে টাইপিং করার ক্ষেত্রে যার মধ্যে অন্যতম হলো সময় বেশি লাগা ও হাতের আংগুল ব্যাথা হওয়া। উক্ত সমস্যার সমাধান আমরা দিয়েছি জানিয়েছি বিশেষ বিশেষ নিয়মে কিভাবে বাংলা ভাষায় বাংলা ভাষাতেই ভয়েস টাইপিং করতে পারবেন সেই বিষয়ে। আশা করছি টিউটরিয়ালটি আপনার ভালো লেগেছে। এমনই টেকনোলোজি বিষয়ক আপডেট জানতে ও ট্রিক্স শিখতে বাংলা আলোকে অনুসরণ করুন। ধন্যবাদ।