ব্যাংক ড্রাফট কি । ব্যাংক ড্রাফট  করার নিয়ম ও চেক থেকে পার্থক্য 

0
44

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন খাতে ফি প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক ড্রাফট ব্যবহার করতে বলা হয়ে থাকে যার কারণে ব্যাংক ড্রাফট কি,  ব্যাংক ড্রাফট করার নিয়ম সম্পর্কে সকলের অবগত থাকা জরুরি যার কারণে এবারের আর্টিকেলে জানানো হবে ব্যাংক ড্রাফটসম্পর্কে সকল খুঁটিনাটি বিষয়। 

মূলত ১৮৮১ সালে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন মোতাবেক ধারা ৮৫ (ক) নং অনুযায়ী একটি ব্যাংকের একটি শাখা থেকে অন্য একটি শাখা কিংবা অন্য কোনো প্রতিনিধি ব্যাংকের যে কোন শাখায় কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি কে অথবা ব্যাংকের আদেশ অনুসারে কোন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ চাহিবামাত্র প্রদান করার  লিখিত আদেশ দেয়া হলে সেটিকেই ব্যাঙ্ক ড্রাফট  বলা হয়ে থাকে। 

সাধারণত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কম খরচে যে কোন পরিমাণ অর্থ  বা টাকা হস্তান্তরের জন্য ব্যাংক ড্রাফট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্যাংক ড্রাফট একপ্রকার ঋণের দলিল যার সাহায্যে খুব অল্প খরচে এবং খুব অল্প সময়ে একই স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ হস্তান্তর করা যায়।  মূলত অর্থ প্রদানকারী নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ফি প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংক ড্রাফট গ্রহণ বা তৈরি করতে পারে। 

এছাড়াও ব্যাংক ড্রাফট  এর বেশ কিছু ব্যবহার রয়েছে।  অনেকের ধারণা ব্যাংক ড্রাফট একপ্রকার চেক কিন্তু বিষয়টি মোটেও সঠিক নয় কেননা ১৮৮১  সালের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন এর ধারা নাম্বার ৬ অনুসারে, ব্যাংক ড্রাফটকে কোন ভাবে চেক হিসেবে গণ্য করা যাবেনা। 

এই পর্যায়ে জানাবো ব্যাংক ড্রাফট সম্পর্কে বিস্তারিত সকল খুঁটিনাটি। ব্যাংক ড্রাফটে থাকা সকল বিষয়, আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম এবং সেইসাথে করণীয় সকল কাজ সমূহ সম্পর্কে পাশাপাশি থাকবে চেক ও ব্যাংক ড্রাফট এর মধ্যে যে সকল পার্থক্য গুলো রয়েছে সেগুলোর বিস্তারিত। 

ব্যাংক ড্রাফট কি? 

খুব সহজ ভাষায় যদি ব্যাংক ড্রাফটকে  বোঝাতে হয় তবে বলা যায়, ব্যাংক ড্রাফট হচ্ছে ব্যাংক কর্তৃক ইস্যু করা বিশেষ এক ধরনের কাগজ যার দ্বারা অর্থ প্রদান করা হয়।  সরকারি-বেসরকারি যে কোন ক্ষেত্রেই অর্থপ্রদানের বিষয়ে ব্যাংক ড্রাফট গ্রহণ করে থাকে। 

মূলত ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েই ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট  কিনতে হয় এবং আপনি যার কাছে টাকা পাঠাতে চান সে ব্যক্তি ব্যাংক ড্রাফট দেখিয়েই  স্থান থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবে। আবার ব্যাংক ড্রাফটকে  অনেক সময় ডিমান্ড ড্রাফট বলা হয়ে থাকে কারণ যেহেতু প্রদানকারী ব্যাংকে নির্দিষ্ট অর্থ জমা রেখে উক্ত ড্রাফটি গ্রহণ করে,  তাই ব্যাংক এই অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে যে –  যেকোনো সময় যে কেউ ব্যাংক ড্রাফটি  ব্যাংকে নিয়ে উপস্থিত হলে তার চাওয়া মাত্রই উক্ত ব্যাংক ড্রাফটে  উল্লেখিত অ্যামাউন্ট এর অর্থ নগদ প্রদান করতে হবে। 

ব্যাংক ড্রাফটে কি কি বিষয় উল্লেখ্য থাকে? 

একটি ব্যাংক ড্রাফটের বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ থাকে অর্থ প্রেরনকারী এবং তা গ্রহীতার সম্পর্কে নিম্নে সেই বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হলোঃ 

১) একটি ব্যাংকের কোন শাখা থেকে ব্যাংক ড্রাফটটি ইস্যু করা হচ্ছে সেই শাখার নাম ও কোড নাম্বার উল্লেখ থাকে।

২)  কোন তারিখে ব্যাংক ড্রাফটি ইস্যু করা হচ্ছে সেটি উল্লেখ থাকে।

৩) ব্যাংক ড্রাফট উল্লেখিত অ্যামাউন্ট কাকে পরিশোধ করা হবে সেই বিষয়ে উল্লেখ থাকে।

৪) উল্লেখিত এমাউন্টের  পরিমাণ সংখ্যা এবং কোথায় উল্লেখ থাকে।

৫)  ব্যাংক ড্রাফটি  ব্যাংকের কোন শাখায় পেমেন্ট হবে সেই শাখার নাম ও কোড নাম্বার উল্লেখ থাকে। 

৬) সব শেষে নিম্মে ব্যাংক ড্রাফটের নাম্বার থাকবে।  

৭) যে শাখা থেকে ব্যাঙ্ক ড্রাফটি ইস্যু করা হবে সেই শাখায় স্বীকৃত আধিকারিক কে স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে এবং স্বাক্ষর এর পাশাপাশি কয়েকটি অক্ষর ও সংখ্যা লিখে দিতে হবে। 

৮) সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান না করে যদি ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ড্রাফটের টাকা পাঠানো হয় তবে উক্ত একাউন্ট ধারীর পক্ষ থেকে স্ট্যাম্প মেরে দিতে হবে।

ব্যাংক ড্রাফট ফরম কোথায় পাওয়া যায়? 

বর্তমানে  সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে চাকরির আবেদন ফি প্রদানের জন্য ব্যাংক ড্রাফট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  তাছাড়া সরকারি বিভিন্ন ধরনের ফি প্রদানের ক্ষেত্রে উক্ত ড্রপ ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে।  এপর্যায়ে ব্যাংক ড্রাফট ফরম কোথায় পাওয়া যায় সেই বিষয়ে অবশ্যই ধারণা রাখতে হবে।  স্বাভাবিকভাবে সরকারি খাতে যেকোনো অর্থ প্রদান সংক্রান্ত কাজে সোনালী ব্যাংক প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাই ব্যাংক ড্রাফট গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সবার প্রথমে সোনালী ব্যাংকের  শরণাপন্ন হতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য সকল ব্যাংকের ব্যাংক ড্রাফট ফরম পাওয়া যায়।  উল্লেখ্য যে ব্যাঙ্ক ড্রাফটি মূলত এক পাতার হয়ে থাকে। 

একই কাজের জন্য অনেকে ট্রেজারি চালান ব্যবহার করে থাকে তবে ট্রেজারি চালান সরকারি কোড ব্যবহার করে সরাসরি সরকারের কোষাগারে অথবা সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখায় অর্থ প্রদান করতে হয়।  কিন্তু ব্যাংক ড্রাফটের ক্ষেত্রে নিয়ম কিছুটা ভিন্ন এটা যেকোন ব্যাংক থেকেই করা যায়।  তবে বিজ্ঞপ্তিতে যদি নির্দিষ্ট কোন ব্যাংকের নাম উল্লেখ থাকে তবে সেই ব্যাংক থেকে ড্রাফটে গ্রহণ করতে হবে অন্যথায় কোন কিছু উল্লেখ না থাকলে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমেই ব্যাংক ড্রাফট ফরম পূরণ করে অর্থ প্রদান করতে হয়।  এই পর্যায়ে ব্যাংক ড্রাফট করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া খুব জরুরী নিম্মে সেই বিষয়ে টিউটোরিয়াল দেওয়া হল

ব্যাংক ড্রাফট করার নিয়ম 

এবার জানাবো ব্যাংক ড্রাফট করার নিয়ম বা ব্যাংক ড্রাফটের যে ফরম রয়েছে সেটির দ্বারা কিভাবে অর্থ প্রদান করবেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত। এক্ষেত্রে যা করতে হবে – 

১) প্রথমেই TT BOX  এ টিক চিহ্ন দিতে হবে।

২)  আপনি যদি নগদ টাকা পরিশোধ করেন তবে নগদে টিক চিহ্ন দিবেন অন্যথায় চেক নামক বক্সে টিক চিহ্ন দিবেন। 

৩)  যত টাকা প্রদান করেছেন সেটি কোথায় এবং অংকে লিখতে হবে। 

৪)  এবার আপনার নাম ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বারটি লিখে দিন। 

৫)  অন্যদিকে যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে আপনি উক্ত ড্রাফটি পাঠাবেন তার নাম মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা পরিষ্কার ভাবে লিখে দিন। 

৬) আপনি যদি সরকারি কোন খাতে অর্থ প্রদান করতে চাচ্ছেন সে ক্ষেত্রে আপনি উক্ত খাতের মোবাইল নাম্বার বা ঠিকানা কিছু ভাবে না এক্ষেত্রে একটি কোড ব্যবহার করতে হবে যা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকবে। 

৭) সবশেষে আপনি যে ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট তৈরি করছেন সেই ব্যাংকের নাম কোন জেলায় অবস্থিত সেটি উল্লেখ করে জানিয়ে দিতে হবে। এবং সকল স্বাক্ষর প্রদান পূর্বক টাকার বিবরণী লিখে দিতে হবে।  উল্লেখ্য যে প্রতিটি ব্যাংক আলাদা আলাদা চার্জ  ধার্য করে থাকে ব্যাংক ড্রাফটের ক্ষেত্রে।  তাই সেই বিষয়ে পূর্বেই ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে জেনে নিবেন। 

ব্যাংক ড্রাফট করার ক্ষেত্রে করনীয় কাজ সমূহ 

ফরমটির সকল বিষয়  সঠিকভাবে পূরণ করা হয়ে গেলে সেটি আরো একবার চেক করে নিবেন তারপর টাকা ও ফরমটি নিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিন।  সেখান থেকে আপনাকে ব্যাংক ড্রাফট দিবে। যেটাকে যত্ন করে রেখে দিন। 

এটি বলা বাহুল্য যে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ফর্মে আপনাকে অবশ্যই ব্যাংক ড্রাফটের নাম্বার, তারিখ ও শাখার নাম লিখতে হবে। তাই এই সব বিষয়ে খুব সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। 

চেক ও ব্যাংক ড্রাফট এর মধ্যে পার্থক্য 

একদিকে চেক হলো এমন একটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল যার দ্বারা ব্যাংকের আমানতকারী লিখিতভাবে এবং কোন প্রকার শর্তবিহীন ব্যাংকে চেকের বাহক কে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করার নির্দেশ প্রদান করে থাকে। 

 অন্যদিকে ব্যাংক ড্রাফট হচ্ছে একটি পেমেন্ট পদ্ধতি। ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে প্রাপক কে নগদ টাকা প্রদান এর বিপরীতে ব্যাংক কর্তৃক চেকের নেয় পেমেন্ট করা হয়ে থাকে।  যে ব্যক্তি প্রেমেন্ট প্রদান করে সে নির্ধারিত অর্থ, ব্যাংক চার্জ এবং নির্দিষ্ট ফরম পূরণের মাধ্যমে ব্যাংক ড্রাফট তৈরি করে থাকে। 

চেক ও ব্যাংক ড্রাফট সাধারণভাবে দেখতে একই রকম এবং এর কাজ একই, যা হলো অর্থ হস্তান্তর করা। যার কারণে অনেকেই রয়েছে যারা এই দুইটি কে একত্রে মিলিয়ে ফেলে। কিন্তু চেক ও ব্যাংক ড্রাফট এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে যা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো। 

১) আমানতকারী ব্যাংকে লিখিত এবং শর্তহীন আদেশ প্রদান করা সড়ক যে কাগজটি ব্যবহার করে সেটি হলো চেক।  অন্যদিকে ব্যাংক ড্রাফটকে ডিমান্ড ড্রাফট বলা হয় কারন, এটি ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় ইস্যু করা হয়। 

২) চেক প্রস্তুতকারক চেকের যে ধারক রয়েছে তার কাছে দায়ী থাকে কিন্তু ব্যাংক ড্রাফটের ক্রেতা উহার ধারকের কাছে দায়ী থাকবে না। 

৩) একদিকে চেক তৈরি করে গ্রাহক নিজে অন্যদিকে ব্যাংক গ্রাহক বা ডিমান্ড ড্রাফ্ট ব্যাংক তৈরি করে থাকে। 

৪) চেকের টাকা কেবল আমানতকারী অথবা চেক এর বাহক তুলতে পারে অন্যদিকে যে কেউ নগদ অর্থ জমা দিয়েই ব্যাংক ড্রাফট সংগ্রহ করতে পারে। 

৫) চেকের ব্যবহার শুধুমাত্র নিজ দেশে করা সম্ভব অন্যদিকে ব্যাংক ড্রাফট দেশ বিদেশ যেকোনো স্থানে সমানভাবে কার্যকর এবং ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

৬) একটি ব্যাংকে যদি কোন প্রকার হিসাব খোলা না থাকে তাহলে চেকের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করা সম্ভব নয় অন্যদিকে ব্যাংক ড্রাফট যেকোনো সময় কোন প্রকার শর্ত ছাড়াই অর্থ  হস্তান্তর করা যেতে পারে। 

৭) চেক এর টাকা উত্তোলন করার জন্য ব্যাংকে কোন প্রকার কমিশন বা ফি দিতে হয় না অন্যদিকে ব্যাংক ড্রাফট ব্যবহার করলে বা কিনে থাকলে ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণের নগদ অর্থ কমিশন হিসেবে প্রদান করতে হয়।

পরিশেষে কিছু কথা 

যখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবাটি সচারাচর ব্যবহার করা হতো না  বা ছিল না, তখন সরকারি টেন্ডার থেকে শুরু করে যেকোনো বড় এমাউন্টের টাকা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ব্যাংক ড্রাফট  ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা টির কারণে  ব্যাংক ড্রাফট এর চাহিদা কমেছে। তবে এখনো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাংক ড্রাফট এর প্রচলন রয়েছে। সরকারি – বেসরকারি বিভিন্ন খাতে এবং বিশেষ করে চাকরি পর্যায় যেকোনো পেমেন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে এখনো ব্যাংক ড্রাফটের ব্যবহার হয়ে থাকে। 

আশাকরি উক্ত আর্টিকেল এর মাধ্যমে ব্যাংক ড্রাপ সম্পর্কে সকল খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নিয়েছেন পাশাপাশি যে কোন ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট কিভাবে করতে হয় সেই নিয়ম সম্পর্কেও এখন অবগত আছেন। ব্যাংক ও ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে অন্যান্য আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ব্যাংক নামক ক্যাটেগরিটি অনুসরণ করতে পারেন। ধন্যবাদ। 

Visited 53 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here