ভুট্টা চাষ পদ্ধতি: বাড়তি ফলনের গোপন কৌশল!

0
70
ভুট্টা চাষ পদ্ধতি: বাড়তি ফলনের গোপন কৌশল!

ভুট্টা চাষের জন্য ভালো বীজ এবং সঠিক মাটি নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সঠিক পরিচর্যা ও সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ভুট্টা চাষ বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুট্টা খুব পুষ্টিকর খাদ্যশস্য এবং অনেক শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচালাম।

ভুট্টা চাষের জন্য প্রথমেই ভালো মানের বীজ নির্বাচন করতে হবে। মাটি ভালোভাবে চাষ করে বীজ বপন করতে হবে। সঠিক সময়ে সেচ দিতে হবে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হবে। সার প্রয়োগ এবং অন্যান্য পরিচর্যার বিষয়েও যত্নশীল হতে হবে।

ভালো ফলনের জন্য সঠিক সময়ে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। ভুট্টা চাষে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে কৃষকরা ভালো লাভ পেতে পারেন। এবার মূল বিষয় হচ্ছে এসকল কাজ কখন, কিভাবে ও কোন মাধ্যমে সঠিক ভাবে করবেন? এরই উত্তর ও সকল পদ্ধতি সঠিক ভাবে উপস্থাপনের জন্যই এবারের আর্টিকেলটি। খুব বিস্তারিত ও সঠিক ভাবে জানতে পারবেন ভুট্টা চাষ পদ্ধতি। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

ভুট্টা চাষের আদ্যোপান্ত

ভুট্টা আমাদের দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য। ভুট্টা চাষ করা সহজ এবং এর পুষ্টিগুণ অত্যন্ত বেশি। ভুট্টা চাষের কিছু মৌলিক তথ্য এবং পদ্ধতি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

মূলত ভুট্টা চাষের ইতিহাস অনেক পুরনো। প্রাচীন মায়া সভ্যতার লোকেরা প্রথম ভুট্টার চাষ শুরু করে। পরবর্তীতে এটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশেও একটি ব্যাপক প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য হিসেবে পরিচিত।

ভুট্টা এবং তার পুষ্টিগুণ

ভুট্টা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি এবং ই থাকে। এছাড়া এতে মিনারেলস যেমন ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম এবং আয়রনও থাকে।

উপাদান

পরিমাণ

কার্বোহাইড্রেট

৭৪%

প্রোটিন

৯%

ভিটামিন এ

২০%

ভিটামিন বি

১৫%

ফসফরাস

১২%

একনজরে ভুট্টা চাষের জন্য কিছু মৌলিক ধাপ অনুসরণ করা দরকার। নিচে ভুট্টা চাষের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • মাটি প্রস্তুত: ভুট্টা চাষের আগে মাটি ভালোভাবে প্রস্তুত করতে হবে। মাটি নরম ও উর্বর হওয়া উচিত।


  • বীজ বপন: ভালো মানের ভুট্টার বীজ নির্বাচন করতে হবে। বীজ বপনের সময় মাটি ভালোভাবে সেচ দিতে হবে।


  • সার প্রয়োগ: ভুট্টা গাছের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সার প্রয়োগ করতে হবে।


  • সেচ প্রদান: ভুট্টা গাছের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহ করতে হবে।


  • কীটনাশক ব্যবহার: বিভিন্ন রোগ ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।


ভুট্টা চাষের জন্য জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি

ভুট্টা চাষে সঠিক জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে জমি প্রস্তুত করতে পারলে ফলন বৃদ্ধি পায়। জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতির সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে।

উর্বর মাটির বাছাই

ভুট্টার জন্য উর্বর মাটি নির্বাচন করা জরুরি। উর্বর মাটি ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। মাটির পিএইচ মান ৬.০ থেকে ৭.৫ হওয়া উচিত। এর চেয়ে কম বা বেশি পিএইচ মান ভুট্টার ফলনের উপর প্রভাব ফেলে।

উর্বর মাটি জৈব পদার্থে সমৃদ্ধ হওয়া উচিত। জৈব পদার্থ মাটির গঠন ও পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। নদীর পাড়ের জমি বা উঁচু জমি ভুট্টা চাষের জন্য উপযুক্ত।

মাটি প্রস্তুতির পদ্ধতি

মাটি প্রস্তুতির সময় মাটিকে নরম ও সমান করা প্রয়োজন। নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করতে হবে:

  1. প্রথমে জমি গভীর চাষ করতে হবে। এটি মাটির নিচের স্তরের পুষ্টি উপরে আনে।


  2. এরপর জমি সমান করতে হবে। এতে পানি সঠিকভাবে জমিতে ছড়িয়ে পড়ে।


  3. মাটির পিএইচ মান পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজন হলে চুন বা গন্ধক প্রয়োগ করতে হবে।


  4. জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। এটি মাটির উর্বরতা বাড়ায়।


প্রতি একর জমিতে ৫-১০ টন জৈব সার প্রয়োগ করা উচিত।

উপাদান

মাত্রা

চুন

মাটির পিএইচ মান অনুযায়ী

জৈব সার

৫-১০ টন প্রতি একর

ভুট্টা চাষের জন্য সঠিক বীজের বাছাই

ভুট্টা চাষের সফলতার জন্য ভুট্টার সঠিক বীজ বাছাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক বীজ নির্বাচন করলে ফলন ভালো হয় এবং রোগবালাই কম হয়। তাই ভুট্টা চাষিরা যাতে সহজেই বীজ নির্বাচন করতে পারেন, তার জন্য নিচের উল্লেখিত পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে।

উন্নত জাতের বীজ নির্বাচন

উন্নত জাতের বীজ নির্বাচন ভুট্টা চাষের প্রথম ধাপ। উন্নত জাতের বীজ চাষ করলে ফলন বৃদ্ধি পায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। কিছু উন্নত জাতের ভুট্টা বীজের নাম:

  • হাইব্রিড ভুট্টা: এই বীজ থেকে উচ্চ ফলন পাওয়া যায়।


  • বায়োফর্টিফাইড ভুট্টা: এতে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে।


  • স্থানীয় জাতের ভুট্টা: এটি স্থানীয় আবহাওয়ার সাথে ভালো মানিয়ে নেয়।


বীজ পরিচর্যা ও বপন

ভুট্টা চাষে বীজ পরিচর্যাবপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ দেওয়া হল:

বীজ শোধন: বীজ শোধনের জন্য নিম্নলিখিত পদার্থ ব্যবহার করা যেতে পারে:

  • কার্বেন্ডাজিম


  • থিরাম


জমি প্রস্তুতি: জমি নিড়ানি দিয়ে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে হবে।

বীজ বপন: বীজ বপনের সময় সঠিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত:

  • সারি থেকে সারির দূরত্ব: ৭৫ সেমি


  • গাছ থেকে গাছের দূরত্ব: ২০ সেমি


এই নির্দেশিকা অনুসরণ করলে ভুট্টা চাষে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

সঠিক ভাবে সার ও জৈব পদার্থের ব্যবহার

ভুট্টা চাষে সঠিক সার ও জৈব পদার্থের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার ও জৈব পদার্থের সঠিক ব্যবহার ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। এটি মাটি স্বাস্থ্যও রক্ষা করে। নিচে ভুট্টা চাষে সার ও জৈব পদার্থের ব্যবহার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আলোচনা করা হলো।

জৈব সারের গুরুত্ব

জৈব সার প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি হয়। জৈব সার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এটি মাটির গঠন উন্নত করে। জলধারণ ক্ষমতা বাড়ায়।

নীচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জৈব সারগুলির তালিকা দেওয়া হলো:

  • কম্পোস্ট


  • কেঁচো সার


  • পশুর গোবর


  • সবুজ সার


রাসায়নিক সারের সঠিক মাত্রা

ভুট্টা চাষে রাসায়নিক সার ব্যবহারের সঠিক মাত্রা জানা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত সার প্রয়োগ ফসলের ক্ষতি করতে পারে। নিচের টেবিলটি ভুট্টা চাষে বিভিন্ন রাসায়নিক সারের সঠিক মাত্রা দেখায়:

সারের নাম

মাত্রা (প্রতি একর)

ইউরিয়া

৪০-৫০ কেজি

টিএসপি

২০-৩০ কেজি

এমওপি

১৫-২০ কেজি

সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগে ভালো ফলন পাওয়া যায়। কৃষকদের নিয়মিত মাটির পরীক্ষা করা উচিত। এতে সারের সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করা সহজ হয়।

ভুট্টা চাষে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা

ভুট্টা চাষে সঠিক সেচ ও জল ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে সেচ ও জলাধার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

সেচের সময় ও পদ্ধতি

ভুট্টা চাষে সঠিক সময়ে সেচ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। সাধারণত, ভুট্টা চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পরে প্রথম সেচ দিতে হয়। এরপর প্রতি ২০-২৫ দিন পর পর সেচ দেওয়া উচিত। এইভাবে সেচ দেওয়ার ফলে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন বৃদ্ধি পায়।

সেচের জন্য ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতি সবচেয়ে উপকারী। এই পদ্ধতিতে সরাসরি গাছের মূলের কাছে পানি সরবরাহ করা হয়। ফলে পানি অপচয় কম হয় এবং মাটি আর্দ্র থাকে

জলাধার ও নিকাশি ব্যবস্থা

ভুট্টা চাষে জলাধার ও নিকাশি ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিকাশি ব্যবস্থা না থাকলে জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। ফলে গাছের মূল পচে যায় এবং ফসলের ফলন কমে যায়

জমিতে উচ্চমানের নিকাশি ব্যবস্থা রাখতে হবে। এজন্য স্লোপিং পদ্ধতিতে জমি প্রস্তুত করা যায়। এই পদ্ধতিতে পানি সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে। জলাধার ব্যবস্থার জন্য চৌবাচ্চা বা পুকুর ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণ করা যায়। প্রয়োজনে সেচের কাজে ব্যবহার করা যায়।

উপাদান

কাজ

ড্রিপ ইরিগেশন

পানি সরাসরি মূলের কাছে সরবরাহ

স্লোপিং

নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত

চৌবাচ্চা

জল সংরক্ষণ

গুরুত্বপূর্ণ: রোগ ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনা

ভুট্টা চাষে রোগ ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকলে ফসলের উৎপাদন কমে যেতে পারে। তাই ভুট্টা চাষিরা যাতে সঠিকভাবে রোগ ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনা করতে পারে, তার জন্য কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো।

প্রচলিত রোগ প্রতিরোধ

  • পাতা পোড়া রোগ: এই রোগে ভুট্টার পাতা ঝরে পড়ে। প্রতিরোধের জন্য ভাল মানের বীজ ব্যবহার করুন।


  • ডাউন মাইলডিউ: এই রোগে পাতায় সাদা দাগ দেখা যায়। রোগ প্রতিরোধে সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।


  • রুট রট: এই রোগে গাছের শিকড় পচে যায়। জমির সঠিক ড্রেনেজ সিস্টেম নিশ্চিত করুন।


কীটনাশকের সচেতন ব্যবহার

কীটনাশক ব্যবহার করার সময় কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি।

  1. কীটনাশক প্রয়োগের আগে গাছের অবস্থা পরীক্ষা করুন।


  2. দীর্ঘমেয়াদী কীটনাশক ব্যবহার না করা ভালো।


  3. কীটনাশক প্রয়োগের সময় সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করুন।


  4. সঠিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করুন। বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে গাছের ক্ষতি হতে পারে।


  5. প্রয়োগের পর কয়েকদিন জমিতে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকুন।


এভাবে সঠিক রোগ ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভুট্টা চাষে ভালো ফলন পেতে পারেন।

সবশেষে ফসল কাটা ও মজুত করা

ভুট্টা চাষে ফসল কাটা ও মজুত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সঠিক সময়ে ফসল কাটা ও মজুত করা হলে উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায় এবং ভুট্টার গুণগত মান বজায় থাকে। নীচে ফসল কাটার উপযুক্ত সময় ও ফসল মজুতের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ভুট্টা কাটার উপযুক্ত সময়

ভুট্টা কাটার সঠিক সময় নিশ্চিত করতে হলে ভুট্টার দানাগুলোর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। দানাগুলো সম্পূর্ণ পরিপক্ক হলে, তা কাটার উপযুক্ত সময়।

  • দানার রঙ: দানার রঙ যদি ফ্যাকাশে হলুদ বা সোনালী হয়, তবে তা কাটার সময়।


  • শুকনো খোসা: খোসা যদি পুরোপুরি শুকিয়ে যায়, তবে ভুট্টা কাটা উচিত।


  • দানার আর্দ্রতা: দানার আর্দ্রতা ২০-২৫% হলে তা কাটার উপযুক্ত সময়।


ফসল মজুতের পদ্ধতি

ভুট্টা সঠিকভাবে মজুত করতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এতে ভুট্টার গুণগত মান বজায় থাকে এবং দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায়।

পদ্ধতি

বিবরণ

শুকনো স্থান

ভুট্টা শুকনো ও বায়ু চলাচল সুবিধাযুক্ত স্থানে মজুত করতে হবে।

আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ

আর্দ্রতা ১৩-১৫% এর মধ্যে রাখতে হবে। এতে ভুট্টা পচে না যায়।

বায়ু চলাচল

বায়ু চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত স্থান থাকতে হবে। এটি ভুট্টার আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ

পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে।

ভুট্টা বাজারজাতকরণ ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা

ভুট্টা চাষ করার পর, বাজারজাতকরণ ও অর্থনৈতিক দিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক বাজারজাতকরণ কৌশল এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ কৃষকদের লাভজনক চাষে সহায়ক হতে পারে। আসুন, ভুট্টার বাজারজাতকরণ কৌশল এবং চাষের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ নিয়ে আলোচনা করি।

ভুট্টা বাজারে বিক্রির কৌশল

ভুট্টা বাজারে বিক্রি করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল রয়েছে:

  • সঠিক সময়ে ফসল তোলা: ভুট্টার সঠিক পরিপক্কতা নিশ্চিত করতে হবে। এতে ফসলের মান ভালো থাকে।


  • স্থানীয় বাজারের সাথে যোগাযোগ: নিকটবর্তী বাজার এবং পাইকারি বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।


  • বাজারের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন: বাজারে কোন ধরনের ভুট্টার চাহিদা বেশি তা জেনে সে অনুযায়ী ভুট্টা চাষ করতে হবে।


  • উৎপাদনের গুণমান বজায় রাখা: সবশেষে ভুট্টার গুণমান বজায় রাখতে যথাযথ পরিচর্যা করতে হবে।


ভুট্টা চাষের খরচ বিশ্লেষণ

ভুট্টা চাষের খরচ বিশ্লেষণ করতে হলে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। সেগুলো হলো –

বিষয়

খরচ (টাকা) [আনুমানিক]

আয় (টাকা) [আনুমানিক]

বীজ

১০০০

সার এবং কীটনাশক

৫০০

পরিশ্রম এবং যন্ত্রপাতি

২০০০

মোট খরচ

৩৫০০

মোট আয়

৫০০০

মোট লাভ

১৫০০

ছকে চাষের খরচ এবং আয় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যা সম্পুর্ণ ভাবে সঠিক নয়, বর্তমান বাজারের দাম ও পরিমাণের উপর ভিত্তি করে এর সংখ্যার পরিবর্তন হবে। এখানে কেবল estimate ধারণা দেয়া আছে। তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং যত্ন নিলে ভুট্টা চাষ বেশ লাভজনক।

বোনাস পয়েন্ট: ফলন বৃদ্ধির উন্নত কৌশল

ভুট্টা চাষে ভালো ফলন পেতে কিছু উন্নত কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন। এই কৌশলগুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে ভুট্টার উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পায়। নিচে কিছু উন্নত কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো।

আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ

ভুট্টা চাষে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ করলে ফলন অনেক বৃদ্ধি পায়। যেমন –

  • সেচ ব্যবস্থাপনা: স্বয়ংক্রিয় সেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করুন। এটি সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে।


  • উন্নত বীজ: উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহার করুন। এটি ফলন বৃদ্ধিতে সহায়ক।


  • মাটি পরীক্ষা: মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করুন। এটি মাটির উর্বরতা বাড়ায়।


ফলন বৃদ্ধির বিশেষ টিপস

ফলন বৃদ্ধি করতে কিছু বিশেষ টিপস অনুসরণ করুন।

  1. পর্যাপ্ত আলো: ভুট্টা গাছ পর্যাপ্ত আলো পেতে হবে। প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা সরাসরি সূর্যালোক প্রয়োজন।


  2. সঠিক দূরত্ব: গাছের মধ্যে সঠিক দূরত্ব বজায় রাখুন। এটি গাছের বৃদ্ধি ও ফলন নিশ্চিত করে।


  3. কীটনাশক ব্যবহার: সঠিক কীটনাশক ব্যবহার করে পোকামাকড় থেকে রক্ষা করুন। এটি গাছের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।


এই কৌশলগুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে ভুট্টার ফলন অনেক বৃদ্ধি পাবে।

ভুট্টা চাষ পদ্ধতি: বাড়তি ফলনের গোপন কৌশল!

Credit: beejghor.com

ভুট্টা চাষের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা

ভুট্টা চাষে সফল হতে হলে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা অপরিহার্য। প্রশিক্ষণ ও সহায়তা ভুট্টা চাষের গুণগত মান বৃদ্ধি করে। এটি চাষিদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে। প্রশিক্ষণ ও সহায়তার মাধ্যমে তারা চাষের নতুন প্রযুক্তি ও কৌশল শিখতে পারে।

কৃষি প্রশিক্ষণের সুবিধা

কৃষি প্রশিক্ষণ চাষিদের জন্য অনেক উপকারী। এটি তাদের চাষাবাদের দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধি করে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষিরা মাটির স্বাস্থ্যসারের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারে। যেমন –

  • নতুন প্রযুক্তি ও কৌশল শেখা



    মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ


  • উৎপাদন বৃদ্ধি



  • খরচ কমানো


সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা

ভুট্টা চাষে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে সরকারি সংস্থা চাষিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়। অ্রাবার অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করে। মূলত কোন ধরণের সাহায্যের জন্য কোথায় যেতে হবে তা নিম্মের ছকে উল্লেখ্য রইলো:

সহায়তার ধরন

সরকারি সংস্থা

বেসরকারি সংস্থা

প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

এনজিও

বীজ ও সার

কৃষি মন্ত্রণালয়

এগ্রো-কোম্পানি

মার্কেটিং সহায়তা

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর

কৃষি ভিত্তিক সংস্থা

চাষিরা এই সহায়তার মাধ্যমে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি ও খরচ কমাতে পারে। তাদের জন্য এটি একটি মূল্যবান সুযোগ।

Frequently Asked Questions

ভুট্টা চাষে কত দিন সময় লাগে?

ভুট্টা চাষে সাধারণত ৯০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে। মাটি ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে সময় ভিন্ন হতে পারে।

১ বিঘায় কত মন ভুট্টা হয়?

১ বিঘায় সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ মন ভুট্টা হয়। ফলনের পরিমাণ নির্ভর করে মাটি ও আবহাওয়ার উপর।

বছরে কতবার ভুট্টা চাষ করা যায়?

ভুট্টা বছরে দুইবার চাষ করা যায়। মার্চ-এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

ভুট্টা এর ইংরেজি নাম কি?

ভুট্টার ইংরেজি নাম হলো “Corn”। এটি একটি জনপ্রিয় শস্য। বিভিন্ন খাদ্য তৈরিতে ভুট্টা ব্যবহৃত হয়।

Conclusion

ভুট্টা চাষের পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সঠিক যত্ন ও পদ্ধতি মেনে চললে সফলতা নিশ্চিত। প্রাকৃতিক উপায়ে ভুট্টা চাষ করলে খরচ কম এবং মুনাফা বেশি হয়। তাই, ভুট্টা চাষে উৎসাহিত হোন এবং উন্নত ফলন উপভোগ করুন। আপনার জমিতে ভুট্টা চাষ শুরু করুন আজই।

Visited 2 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here