–
মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায় জানতে ইচ্ছুক? তবে অল্প কিছু অভ্যাস প্রাকটিস করার মাধ্যমে মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারেন। আধুনিকায়নের ছোয়ায় আমরা সকলেই নিজেদের এতোই ব্যস্ত রাখছি যে নিজের জন্য, নিজেকে ভালো রাখার জন্য কোনো সময়ই নেই। আজ থেকে নিজের জন্য একটু সময় বের করে, এবং নিম্মে উল্লেখিত অভ্যাসগুলি শুরু করতে পারেন। প্রতিদিন একই নিয়মে প্রাকটিস করতে থাকুন। তবে এবার জেনে নেয়া যাক সেই কাজগুলো সম্পর্কে।
মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায় [৫ টি]
(১) প্রতিদিন অল্প সময় পেলেও একটু মাইন্ডফুলনেন্স মেডিটেশন (যারা ইসলাম ধর্মের অবলম্বনকারী তাদের জন্য নামাজের চেয়ে উত্তম কিছু নেই) প্রাকটিস করতে পারেন। নিজেকে স্থির রাখতে জোরে জোরে শ্বাষ নিয়ে বুকের ভিতর আটকে রেখে আস্তে আস্তে ছাড়ুন। একটু চোখ বন্ধ করে সারা শরীরে মনোযোগ দিন। পঞ্চ ইন্দ্রিয়র প্রতিটিতে ১ মিনিট করে মনোযোগ দিন।
(২) নিজের গুনগুলির তালিকা করে ফেলুন। প্রতিদিন তালিকাটি নিয়ে ১০ মিনিট বসে আপনার আরও নতুন কোন গুন খুঁজে পেলে যুক্ত করুন। প্রতিদিন নিজের প্রশংসা করবেন। এই গুনগুলির জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিবেন। কখনোই নিজেকে খারাপ ভাববেন না। আজ থেকে ভাবুন আপনি খারাপ না। সময়, পরিস্থিতি, ও পাত্রের কারণে কিছু কাজ করে ফেললেও যেগুলোর জন্য সবসময় আপনি দায়ী না।
(৩) আশে পাশের প্রিয় মানুষদের ভালো লাগা দিকগুলোরও তালিকা করুন। প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট তালিকাটি নিয়ে বসুন এবং নতুন নতুন কোন গুনাবলি থাকলে যুক্ত করুন। প্রিয় মানুষগুলোর ভালোলাগা দিকগুলো মন খুলে প্রশংসা করবেন। তার এই প্রশংসা করতে গিয়ে ভাববেন না যে সে অহংকারি হয়ে যাবে কিংবা অদি আল্লাদে নষ্ট হয়ে যাবে। আপনার নিজের ভালো থাকার জন্য এবং সুখের প্রবাহ ছড়িয়ে দেবার জন্য ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড় মানুষ পর্যন্ত সবার প্রসংশা দরকার। যখনই ভালো কাজ করবে পারলে তখনই প্রশংসা করুন।
(৪) আপনাকে বলা খারাপ কথাটি ডাস্টবিনে ফেলে দিন। জী ঠিক শুনেছেন। কবে কে কি বলেছে এসব মনে রেখে নিজের শান্তি নষ্ট করবেন কেন? মান-অভিমান কেউ বুঝে না। আপনি অপমান মনে করে যে কথাটি মনে রেখেছেন সেটাতে আপনার কষ্ট ছাড়া আর কার কি এসে যায়। এরপরেও ভুলতে না পারলে আপনাকে বলা খারাপ কথাটি প্রয়োজনে একদিন প্রিয় মানুষটিকে শান্তভাবে বলতে পারেন। আপনার এইজন্য কেমন অনুভুতি হয়েছিল সেটিও শেয়ার করতে পারেন। তবে শেয়ার করার আগে তার অনেক অনেক প্রশংসা করুন।
(৫) আজ থেকে অন্যদের বিচার করা ছেড়ে দিন। কারও কিছু খারাপ লাগলেও বলবেন না। মনে রাখবেন তাদের নিজের ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা আছে। তাকে নিয়ে বেশি ভেবে মন খারাপ করার দরকার নেই।
যে উপায়ে নিজের মনের যত্ন নেবেন
আসুন জানি মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায় গুলোর পাশাপাশি নিজের মনের কিভাবে যত্ন নিতে হয়। নিম্মে বেশ কিছু ধারাবাহিক তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো যা নিয়ে আপনি আরেকবার ভাবতে পারেন।
১) সবাইকে খুশি করতে চাইবেন না: সবাই কে খুশি করা যায় না। সব মানুষকেই খুশি করতে গিয়ে দেখবেন আপনার খুশির জায়গাটা কোথায় হারিয়ে গেছে। তাই নিজের সাধ্যের বাইরে অন্য কে খুশি করতে যাবেন না।
২) সব সিদ্ধান্তে এবং দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নেবেন না: আমাদের মাঝে একটা প্রবণতা থাকে যে, সব কিছু নিজের ঘাড়ে নেবার চেষ্টা করা। এটা করবেন না ,আপনাকে ছাড়া যে কাজ গুলো হওয়া সম্ভব সেই কাজের প্রেশার আপনার নেবার কোন দরকার নাই।যত পারুন রিলাক্স থাকুন। আপনাকে ছাড়াও পৃথিবী চলবে কিন্তু আপনাকে ছাড়া আপনি চলবেন না। তাই নিজেকে সবার আগে নিজের দরকার এটা মাথায় রাখুন।
৩) সাধারণ কাজের রুটিন থেকেও মাঝে মাঝে অবসর নিন: অন্তত মাসে পুরো একটা দিন শুধু নিজের জন্য রাখুন। যেখানে অন্য কোন কাজ করবেন না। ধুলো পরা গিটার কিংবা পুরাতন বই অথবা প্রিয় কোন গানের জন্য ঐ দিনটা বরাদ্দ রাখুন ।
৪) রাতে দ্রুত ঘুমের অভ্যাস করুন: শরীরের জন্য ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরী। ঘুমাবার সময় একটা বই নিয়ে পড়তে পারেন তাহলে ঘুম দ্রুত আসবে কিংবা ঘুমাবার দুই ঘণ্টা আগে একটু হাটা হাটি করতে পারেন। এক কাপ গরম পানি তে একটা এলাচি দিয়ে পান করতে পারেন। অথবা কিছুটা সময় বাসার মানুষদের সাথে আড্ডা দিতে পারেন। তবে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মোবাইল কাছে রাখবেন না।
৫) খুব ভোরে ওঠার অভ্যাস করুন: আপনার আসেপাশে কোন মাঠ থাকলে খালি পায়ে হাটুন, বুক ভোরে নিঃশ্বাস নিন। পায়ে ঘাসের স্পর্শ আপনার মনে স্বস্তি আনবে।
৬) নেগেটিভ, ঝগরাটে, মানুষ থেকে দূরে থাকুন: যে মানুষের আশেপাশে গেলে আপনার মেজাজ খারাপ হয় তাদের এড়িয়ে চলুন। আর যদি একান্ত সেটা সম্ভব না হয়, তবে তাদের সাথে কাজের সম্পর্ক টুকুই শুধুই রাখুন , আর কোন সম্পর্ক না।
মনকে শান্তি দেয়ার উপায়
৭) কষ্ট পেলে চিৎকার করে কাদুন: কাঁদলে মন হালকা হয়। কাজে উদ্যম ফিরে আসে। তাছাড়া ইমোশনাল টিয়ার্স আপনার শরীরের স্ট্রেস কমিয়ে দেয়। কারো সামনে কাঁদতে না চাইলে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে রুম বন্ধ করে কাদুন। আয়নার সামনে কাদুন। কান্না খুব স্বাভাবিক বিষয় এটা নিয়ে লজ্জিত হবে না।
৭) নিজেকে ক্ষমা করুন: কোনো ঘটনার জন্য নিজেকে লাগাতার দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন। যা হয়ে গেছে তা আপনি বদলতে পারবেন না, বরং যা হতে চলেছে তার জন্য প্রস্তুত হোন। আপনি যদি নিজেকে না বোঝেন তাহলে অন্য কেউ বুঝবে না ।
৮) অন্যের আয়নায় নিজেকে দেখবেন না: মানে হল আপনি মোটা , ফর্সা , বেটে কালো, লম্বা এগুলো অন্য কে ডিসাইড করতে দেবেন না । আপনার কাছে আপনি পৃথিবীর সমচেয়ে সুন্দর মানুষ। আয়নার সামনে যে মানুষটা দাঁড়ান তার চেয়ে সুন্দর মানুষ আর কেউ না । কে কি বলল তাতে আপনার কিছুই আসে যায় না। মনে রাখবেন আপনি যদি নিজেকে সুন্দর না দেখেন অন্যরাও দেখবে না ।
৯) যতটা পারবেন অন্যের সমব্যথী হবেন: চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব হেল্প করার। প্রানীদের ক্ষেত্রে সদয় হোন । একটা পিপড়াও অকারনে মারবেন না।
১০) কষ্টের মুহূর্তে অন্যের সাহায্য নিন: মন উজাড় করে কথা বলুন । নিজেকে একা না রেখে যতটা পারা যায় প্রিয়দের সাথে মিশুন। ঘুরুন, আড্ডা দিন, যাদের সাথে থাকতে ভালো লাগে তাদের মাঝেই থাকুন। আর দরকার হলে অবশ্যই একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে যাবেন।
আর্টিকেল থেকে যা শিখলেন
পরিশেষে এই ছিলো “মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায়” সম্পর্কে সুপরিচিত কিছু কথায় সাজানো আর্টিকেলটি এখানে সে সকল কথা জানানোর চেষ্ঠা করেছি যা আমরা সচারচর শুনে থাকি বিভিন্ন মনবিজ্ঞানীদের ও খ্যাতি সম্পন্ন মনিষীদের কাছ থেকে। আশা করছি বাংলা আলো এর পক্ষ থেকে আপনার মানসিকতা ভালো রাখার প্রয়াসটি আপনাকে কিছুটা হলেও উপকৃত করেছে। আমাদের সঙ্গেই থাকুন, আমরা আছি আপনার লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করাতে।