সালাতের নিষিদ্ধ সময় কোনগুলো?  দলিলসহ জেনে নিন 

0
2

ইসলামের এই মহাগুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ নামাযের সময় বিষয়ে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা থাকা খুব জরুরি। যেকোন নামায অধিকাংশ সময়ই পড়া যায়; তবে সালাতের নিষিদ্ধ সময় রয়েছে আর এটাই আজকে আলোচনার মূল বিষয়।

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ্। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ তাআলার। দুরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। মহান আল্লাহ্ যাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য রসূল করে পাঠিয়েছেন। যাতে মানুষ হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়।

ইসলামের রয়েছে ৫টি স্তম্ভ। তার মধ্যে প্রথম স্তম্ভ ও সর্বপ্রধান হলো তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ, যা ছাড়া ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ নামায কবুল হয়না ও ব্যাক্তি মুসলিম হতে পারেনা। তাওহীদের পরেই হলো নামায, যা ছাড়া মানুষ মুসলিম থাকেনা। এটাই সর্বাধিক প্রাধান্যযোগ্য মত আলেমদের।

নামায প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত ফরয। বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত আছে যে, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামায।” অর্থাৎ নামায না পড়া কুফরী, যা ভয়াবহ বিষয়।

সালাতের নিষিদ্ধ সময় (দলিলসহ)

সমগ্র দিনে ও রাতে সালাতের নিষিদ্ধ সময় ৩টি। চলুন, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

সালাতের নিষিদ্ধ সময় সর্বমোট তিনটি। এ সময়গুলোতে সাধারণ কোন নফল পড়া ঠিক নয়। এর স্বপক্ষে দলীল হলোঃ

সাহাবি উকবা ইবনে আমির জুহানী রাদ্বিআল্লহু আনহু বলেছেন,

ثَلاثُ سَاعَاتٍ نَهَانَا رَسُولُ الله صَلَّى الله عَلَيهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُصَلِّي فِيهِنَّ, وَأَنْ نَقْبُرَ فِيهِنَّ مَوْتَانَا : حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتَّى تَرْتَفِعَ, وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ, وَحِينَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ حَتَّى تَغْرُبَ) [رواه مسلم

‘তিনটি সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নামায পড়তে এবং মৃতের দাফন করতে নিষেধ করতেন।

১। সূর্য উদয়ের সময়; যতোক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়।

২। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত।

৩। সূর্য ডোবার আগ মুহূর্তে সূর্য হলুদাভ হওয়া থেকে শুরু করে সূর্য ডোবা পর্যন্ত ’। [সুবুলুস সালাম : ১/১১১, মুসলিম : ১/৫৬৮]

সালাতের নিষিদ্ধ সময় সমূহ (বিস্তারিত) 

১) ফজর নামাযের পর থেকে তীর বরাবর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ, সূর্য উদিত হওয়ার পর ১৫/২০ মিনিট পর্যন্ত।

২) ঠিক দুপুরের সময়। অর্থাৎ যোহরের সময় হওয়ার ১০ মিনিট আগে থেকে যোহরের সময় হওয়া পর্যন্ত।

৩) আসর নামাযের পর থেকে পরিপূর্ণরূপে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মতো এ সময়টা থাকে।

তবে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ এর নামায যে কোন সময় আদায় করা শরীয়ত সম্মত। যখনই মসজিদে প্রবেশ করে বসতে যাবে তখনই দু’রাকাআত নামায আদায় করবে। যদিও তা নিষিদ্ধ সময়ে হয়ে থাকে। কেননা, এ নামাযের ব্যাপারে তাকীদ রয়েছে। মসজিদে প্রবেশ করে এ নামায না পড়ে বসতে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।

জেনে রাখা জরুরি যে, বিদ্বানদের মতামতের মধ্যে প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে, কারণ বিশিষ্ট নফল নামায সমূহ আদায় করার ক্ষেত্রে সালাতের নিষিদ্ধ সময় বলতে কোন কিছু নেই। নিষিদ্ধ সময়েও তা আদায় করতে কোন বাঁধা নেই।

সুতরাং ফজর নামায বাদ বা আছর নামায বাদ বা সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার সামান্য পূর্বে বা রাতে দিনে যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে, বসার আগে দু’রাকাআত নামায আদায় করবেন। অনুরূপভাবে তাহিয়্যাতুল উযুর নামাযও যে কোন সময় আদায় করা যায়। এতে কোন সমস্যা নেই।

অনুরূপভাবে, ঘুম বা ভুল বশত: ছুটে যাওয়া যে কোন ওয়াক্তের ফরজ নামায, ফজরের দু রাকাআত সুন্নাত নামায (তবে এ দু রাকআত নামায সূর্য উঠার পর পড়াই অধিক উত্তম), তাওয়াফ শেষে দু রাকাআত নামায, সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের নামায, জানাযার নামায ইত্যাদি এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে।

অর্থাৎ, এগুলো নিষিদ্ধ সময়েও পড়া জায়েয আছে। এতে কোন বাঁধা নেই। এ ব্যাপারে এটাই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও প্রাধান্যযোগ্য অভিমত। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

পরিশেষে কিছু কথা 

মোটকথা, কারণ ছাড়া সাধারণ নফল নামায আমরা সালাতের নিষিদ্ধ সময়ে পড়বোনা। এছাড়া ফরয ক্বাযা নামাযসহ অন্যান্য কারণবিশিষ্ট নফল নামাযগুলো সালাতের নিষিদ্ধ সময়ে পড়া যাবে। আল্লাহ্ আমাদেরকে সঠিক জেনে সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন। ধর্মীয় বিষয়ে সঠিক তথ্যের জন্য অনুসরণ করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ইসলাম ক্যাটাগরিটি। 

Visited 1 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here