যে কোনো ধরণের পণ্য বা সার্ভিসকে মানুষের নিকট বাজারজাত করার জন্য কৌশল অবলম্বনই হচ্ছে মার্কেটিং। যদি কাজটি ইন্টারনেট ব্যবহার করে করা হয়, তাহলে তা অনলাইন মার্কেটিং বলে গণ্য হয়।
বর্তমান সময়ে অসংখ্য মানুষ অনলাইনে তাদের পণ্য বা সার্ভিস মার্কেটিং করছে। অনেকে সফল, অনেকে ব্যর্থ। সবাই সঠিক কৌশলে কাজ করে না। কারণ, তারা সঠিক মার্কেটিং গাইডলাইন মানার ক্ষেত্রে সচেতন নয়।
অনলাইন মার্কেটিং এ সফল হওয়ার টিপসগুলো খুব কঠিন কিছু নয় বরং সহজ। আজ আপনাদেরকে সেরা কিছু অনলাইন মার্কেটিং কৌশল শেখাবো ইনশা আল্লাহ্। চলুন কৌশলগুলো জেনে নেইঃ
ভুল পণ্য বা সার্ভিস নিয়ে মার্কেটিং না করা
আমরা কতকিছুই দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি দোকান থেকে ক্রয় করি। হাতের কাছেই পাওয়া যায় – এমন পণ্য আমরা সাধারণত অনলাইন থেকে ক্রয় করি না।
তাই আপনাকে অতি সাধারণ পণ্য বা সার্ভিস মার্কেটিং করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নাহলে আপনার শ্রম ও টাকা হয়তো বিনষ্ট হয়ে যাবে। এমন প্রোডাক্ট বাছাই করুণ, যেটা সহজে পাওয়া যায় না।
আনকমন বিষয়ে মার্কেটিং করলে সাধারণত অনলাইন থেকে বেশ ভাল সাড়া মেলে। তাই এ বিষয়টা মাথায় রাখুন এবং সে অনুযায়ী কাজ করুন।
ভাল কনটেন্ট তৈরি করুন
আপনি যে প্রোডাক্টই মার্কেটিং করুন না কেন, অনলাইনে ভাল কনটেন্ট একটি জরুরি বিষয়। শুধুমাত্র পণ্যের ছবি ফেসবুক পেজে আপলোড দিয়ে বুস্ট করে দেয়া হলো ভুল পদ্ধতি।
আপনি নিজস্ব ওয়েবসাইটে, ফেসবুক বিজনেস পেজে, টুইটারে বা অন্য কোথাও যখন মার্কেটিং করার জন্য মনস্থির করবেন, তখন প্রোডাক্টটির ব্যাপারে সুন্দর একটি আর্টিকেল লিখুন।
তার সাথে পণ্যের ভাল, স্পষ্ট এবং আসল ছবি যুক্ত করে দিন। ভিডিও যুক্ত করতে পারেন। এভাবে সাজিয়ে পোস্ট করবেন। কারণ, ক্রেতারা ভাল কনটেন্ট দেখে আগ্রহ বোধ করে।
ফেসবুকে মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে শুধু পেজ নয়
মার্কেটিং যদি ফেসবুকে করতে চান, তাহলে শুধু পেজ ব্যবহার করবেন না। কারণ, প্রসিদ্ধ ব্র্যান্ড নয় – এমন কোনো বিষয়ের পেজে মানুষ বিশ্বাস করতে চায়না সহজে এবং আগ্রহবোধ করেনা তেমন।
আপনি প্রধান ফোকাস করুন ফেসবুকে গ্রুপ মার্কেটিং এ। কারণ, গ্রুপে জনসাধারণের নিজস্ব মত প্রকাশ এবং পাবলিক রিভিউ বোঝার একটা ভালো ক্ষেত্র থাকে, যা পেজে থাকে না।
ফেসবুক গ্রুপে মানুষ তুলনামূলক বেশি বিশ্বাস করে থাকে। তাই বিজনেস পেজের পাশাপাশি গ্রুপেও মার্কেটিং করুন। খেয়াল রাখুন, গ্রুপ যেনো সবসময় অ্যাকটিভ থাকে। এজন্য বিভিন্ন কনটেস্টও দিতে পারেন।
সুযোগ বুঝে পেইড মার্কেটিং এ ট্রান্সফার হোন
যদি আপনি অনলাইন মার্কেটিং এ নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে প্রাথমিকভাবে ফ্রী মার্কেটিং দিয়ে শুরু করতে পারেন সহজেই। আপনার আয় যদি ভাল পরিমাণে হতে থাকে এবং ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ হয়, তাহলে টাকা খরচ করে পেইড মার্কেটিং এ যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।
কারণ, পেইড মার্কেটিং এ এমন অনেক সুবিধা পাওয়া যায়, যা ফ্রী মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। যেমন ধরুন, ফেসবুক পেজ বুস্টের কথা। টার্গেট করে অনেক পরিমাণে সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে পণ্য মার্কেটিং করা যায়, যা ফ্রী তে সম্ভব নয়। তাই সুযোগ বুঝে পেইড মার্কেটিং এ শিফট করুন। এটা গুরুত্বপূর্ণ।
প্যাকেজ এবং অফার প্রস্তাব করুন
প্রতি সপ্তাহ বা মাসে অন্তত একবার করে হলেও প্যাকেজ এবং অফার প্রস্তাব করুন। যেমন ধরুন, আপনি ফাস্টফুড খাবারের বিজনেস করেন আর সেটা অনলাইন মার্কেটিং করেন।
প্রতি সপ্তাহে বা মাসের যেকোনো একদিনের জন্য এমন অফার দিবেন যা সম্ভাব্য ক্রেতাদের আকর্ষন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়৷ ধরুন, ১টি স্যান্ডউইচ এর দাম ২০০ টাকা কিন্তু ৩টির প্যাকেজ মূল্য ৪৫০ টাকা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ছাড়ের দিনের জন্য।
এছাড়া যেকোনো সময়ে প্রতিটি ফাস্টফুড আইটেমে নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজ ধরে ছাড় দিতে পারেন। যেমনঃ পিজা তে ১৫% ছাড়, স্যান্ডউইচ এ ২০% ছাড় – এরকম।
এ ধরনের প্যাকেজ এবং অফারে সাধারনত মানুষ আকর্ষণ বোধ করে। সেলস বৃদ্ধি এবং মার্কেটিং চাঙ্গা করার জন্য এই কৌশলটি অবলম্বন করতে পারেন। সোশ্যাল সাইটে এবং ওয়েবসাইটে প্যাকেজ এবং অফারগুলো প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে অবগত করবেন, যাতে মানুষ ক্রেতাতে পরিণত হয়।
গতানুগতিক ধারায় কাজের চেয়ে কৌশলের সাথে কাজ করুন, কেননা এটা সফলতা লাভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধৈর্য্য, বিশ্বস্ততা, সততা এবং পরিশ্রমের সাথে কৌশলগত অনলাইন মার্কেটিং করতে পারলে বড় সফলতা পাবেন ইনশা আল্লাহ্।