গল্পের বই পছন্দ করেন? পড়ার জন্য সেরা গল্পের খোজে আছেন? সে সুবাদে অনলাইনে সার্চ করে যাচ্ছেন “সেরা ১০ টি গল্পের বই” আশা করি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনার সার্চ করা বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ ফলাফলটি পেয়ে যাবেন। কেননা, এই আর্টিকেলটিতে কভার করতে যাচ্ছি বাছাইকৃত লেখকের সেরা ১০ টি বই। থাকছে বই সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও সংক্ষেপে রিভিউ যা বই পড়ার প্রতি আপনার আগ্রহ জাগ্রত করতে সক্ষম। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে যেনে নেয়া যাক সেরা ১০ টি গল্পের বই সম্পর্কে।
- বাছাইকৃত লেখকের সেরা ১০ টি গল্পের বই
- শেষের কবিতা || রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- পথের পাঁচালি || বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
- সাতকাহন || সমরেশ মজুমদার
- শ্রীকান্ত || শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- মিসির আলি সমগ্র || হুমায়ুন আহমেদ
- আমি তপু || মুহম্মদ জাফর ইকবাল
- দুর্গেশনন্দিনী || বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শার্লক হোমস' সমগ্র || স্যার আর্থার কোনান ডোয়েল
- মাসুদ রানা সিরিজ || কাজী আনোয়ার হোসেন
- দ্য ফেলুদা সিরিজ || সত্যজিৎ রায়
- পরিশেষে কিছু কথা
বাছাইকৃত লেখকের সেরা ১০ টি গল্পের বই
এই পর্যায়ে একেক করে ১০ টি বাছাইকৃত লেখকের দারুন কিছু বই সম্পর্কে জানাবো। উল্লেখ্য যে, এবারের আর্টিকেলে বাংলা বই গুলোর দিকেই দৃষ্টিপাত করা হয়েছে তাই সকল বই বাংলা ভাষাভাষীর মানুষের জন্য।
শেষের কবিতা || রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বইয়ের নাম | লেখকের নাম | প্রকাশনার সাল | জনরা |
শেষের কবিতা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | ১৯২৯ | উপন্যাস |
জনপ্রিয়তার কারণ:
- প্রেম, জীবন, মৃত্যু, এবং বিশ্বাসের গভীর অনুভূতির বর্ণনা: এই উপন্যাসটি প্রেম, জীবন, মৃত্যু, এবং বিশ্বাসের মতো সার্বজনীন থিমগুলি অন্বেষণ করে। লেখকের সাবলীল লেখনী পাঠকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
- রোমান্টিকতার সাথে আধ্যাত্মিকতার মিশেল: শেষের কবিতা রোমান্স ও আধ্যাত্মিকতার এক অসাধারণ মিশেল। এটি শুধু একটি প্রেমের গল্প নয়, বরং আত্ম-আবিষ্কারেরও একটি যাত্রা।
- সুন্দর ও কাব্যিক ভাষা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাবলীল ও কাব্যিক ভাষা এই উপন্যাসটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
- চরিত্রগুলির বাস্তবতাবাদী চিত্রায়ণ: এই উপন্যাসের চরিত্রগুলি বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য। তাদের ভাবনা, অনুভূতি এবং কাজগুলি পাঠকদের সাথে সহজেই তাল মিলিয়ে চলে।
- বাংলা সাহিত্যের একটি অসামান্য রচনা: শেষের কবিতা বাংলা সাহিত্যের একটি অসামান্য রচনা। এটি লেখকের সেরা কাজগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।
শেষের কবিতা – রোমান্টিকতার মাঝে লুকিয়ে থাকা জটিল জীবনের প্রতিচ্ছবি। অমিত রায়, একজন প্রতিভাবান কবি, যার জীবন রহস্যে ঘেরা। লাবণ্য, একজন স্বাধীনচেতা, বুদ্ধিমতী তরুণী, যার জীবনের লক্ষ্য স্পষ্ট। দুজনেই ভিন্ন পৃথিবীর মানুষ, কিন্তু শিল্পকলার প্রতি তাদের ভালোবাসা তাদের একত্রিত করে।
শিলং এর মনোরম পরিবেশে তাদের প্রেমের বীজ অঙ্কুরিত হয়। কিন্তু নিয়তির পরিহাসে তাদের সম্পর্কের পথে বাধা সৃষ্টি করে কেতকী, অমিতের অতীতের সাথে জড়িত এক রহস্যময়ী নারী। প্রেম, বন্ধুত্ব, দায়িত্ব, এবং সামাজিক শৃঙ্খলার মধ্যে দ্বন্দ্বে জর্জরিত হয় অমিত, লাবণ্য, এবং কেতকী।
শেষের কবিতা কেবল একটি প্রেমের উপন্যাস নয়, এটি জীবনের জটিলতা, বাস্তবতার তিক্ততা, এবং মানসিক দ্বন্দ্বের এক অসাধারণ চিত্রায়ণ। বইটি আপনাকে মুগ্ধ করবে, আপনার ভাবনা ও অনুভূতিকে নাড়া দেবে।
পথের পাঁচালি || বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বইয়ের নাম | লেখকের নাম | প্রকাশনার সাল | গল্পের বিষয় |
পথের পাঁচালি | বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় | ১৯২৯ | অপু ও দুর্গা নামক দুই ভাইবোন এবং তাদের পরিবারের গ্রাম্য জীবনের সংগ্রাম ও আনন্দের গল্প |
জনপ্রিয়তার কারণ:
- সহজ সাবলীল ভাষা: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পথের পাঁচালি’ লেখার জন্য সহজ সাবলীল বাংলা ভাষা ব্যবহার করেছেন।
- গ্রাম বাংলার অসাধারণ চিত্রায়ণ: উপন্যাসটিতে গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের আনন্দ-বেদনা, সংগ্রাম, সরলতা, এবং প্রকৃতির সাথে তাদের সম্পর্কের অসাধারণ চিত্রায়ণ করা হয়েছে।
- গল্পের বাস্তবতা: ‘পথের পাঁচালি’তে বর্ণিত গল্পটি বাস্তব জীবনের ঘটনার উপর ভিত্তি করে রচিত।
- কালজয়ী রচনা: ‘পথের পাঁচালি’ কেবল একটি উপন্যাস নয়, এটি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।
- চলচ্চিত্র: সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালি’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে।
সংক্ষেপে রিভিউ
অপু আর দুর্গা, দুই ভাইবোন, যাদের জীবন কেটে যায় নদীর তীরে ঝুপড়ি ঘরে। তাদের দরিদ্র সংসারে অভাব অনটন নিত্যসঙ্গী। কর্মঠ হরিহর এবং স্নেহময়ী সর্বজয়া তাদের মা-বাবা। ইন্দির ঠাকুরুণ, হরিহরের বিধবা পিসি, তাদের সাথে থাকেন।
অপু কৌতূহলী, জ্ঞানপিপাসু, প্রকৃতি প্রেমী। দুর্গা সাহসী, স্বাধীনচেতা, ভাইয়ের প্রতি স্নেহশীলা। তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সংগ্রাম, কষ্ট, আনন্দ, দুঃখ এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।
পথের পাঁচালি শুধু একটি গল্প নয়, এটি বাংলার গ্রাম জীবনের এক অনন্য চিত্রায়ণ। এখানে আপনি পাবেন মানুষের জীবনের সরলতা, তাদের আন্তরিক সম্পর্ক, প্রকৃতির সাথে তাদের অবিচ্ছেদ্য যোগাযোগ। এই বইটি আপনাকে নিয়ে যাবে এক অন্য লোকে, যেখানে আপনি পাবেন জীবনের নতুন অর্থ, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।
পথের পাঁচালি পড়লে আপনার মনে হবে যেন আপনি নিজে ওই গ্রামের এক অংশ, অপু ও দুর্গার এক সঙ্গী। আপনি যদি খুঁজে থাকেন একটি অসাধারণ বই, যা আপনার মন কেড়ে নিবে, তাহলে পথের পাঁচালি আপনার জন্য একটি অবশ্যই পড়ার মতো বই।
এই বই আপনাকে দেখাবে জীবনের নতুন আলো, নতুন পথ।
সাতকাহন || সমরেশ মজুমদার
বইয়ের নাম | লেখকের নাম | প্রকাশনার সাল | গল্পের বিষয়বস্তু |
সাতকাহন | সমরেশ মজুমদার | ১৯৭৪ | দীপাবলী নামক এক সাহসী নারীর জীবন, সংগ্রাম এবং বিজয়ের কাহিনী। |
জনপ্রিয়তার কারণ
- চরিত্রের বাস্তবতাসম্মত চিত্রায়ণ: উপন্যাসের চরিত্রগুলি বাস্তব জীবনের মানুষের মতো। তাদের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা সবকিছুই পাঠকের মনে প্রতিফলিত হয়।
- গল্পের আকর্ষণীয়তা: উপন্যাসের গল্পটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও রোমাঞ্চকর। পাঠকের মনে কৌতূহল জাগিয়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত বইটি হাতে রাখতে বাধ্য করে।
- ভাষার সাবলীলতা: সমরেশ মজুমদারের লেখার ভাষা অত্যন্ত সাবলীল ও সহজবোধ্য।
- সামাজিক বার্তা: উপন্যাসটি সমাজের বিভিন্ন দিকের সমালোচনা করে। নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক রীতিনীতি, প্রেম ও বিয়ে, মানবিক মূল্যবোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তুলে ধরে।
- সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকা: উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার অনেক বছর পরও এর প্রাসঙ্গিকতা অটুট। আজও পাঠকদের মনে সমানভাবে আকর্ষণ করে।
সংক্ষেপে রিভিউ
সাতকাহন: এক সাহসী নারীর অসাধারণ জীবন। দীপাবলী – এক নারী, যে জন্মগ্রহণ করে চা-বাগানের কোলে। ছোটবেলা থেকেই সে ছিল স্বাধীনচেতা ও সাহসী। পিতার সহায়তায় সে শিক্ষিতা হয়ে ওঠে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তার জীবনে নেমে আসে একের পর এক ঝড়।
- প্রেমিকের অকাল মৃত্যু।
- বিয়ের পর স্বামীর অসুস্থতা।
- স্বামীর মৃত্যুর পর একাকী জীবন।
সমাজের রক্ষণশীল রীতিনীতি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই।
তবুও দীপাবলী কখনো ভেঙে পড়ে না। সে নিজের জীবনের পথ নিজেই বেছে নেয়।
- সে হয় শিক্ষিকা।
- গড়ে তোলে নিজের স্কুল।
- সাহায্য করে অসহায় মানুষদের।
সাতকাহন কেবল একটি গল্প নয়, বরং এক নারীর জাগরণ, সংগ্রাম এবং বিজয়ের কাব্য।
শ্রীকান্ত || শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বইয়ের নাম | লেখকের নাম | প্রকাশনার সাল | গল্পের বিষয়বস্তু |
শ্রীকান্ত | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | ১৯১৭-১৯৩৩ | শ্রীকান্ত নামক এক যুবকের জীবন, ভ্রমণ, প্রেম, বেদনা ও আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের কাহিনী। |
উল্লেখ্য: শ্রীকান্ত উপন্যাসটি মোট চার খণ্ডে সমাপ্ত।
- প্রথম খণ্ড – ১৯১৭
- দ্বিতীয় খণ্ড – ১৯১৮
- তৃতীয় খণ্ড – ১৯২৭
- চতুর্থ খণ্ড – ১৯৩৩
জনপ্রিয়তার কারণ
১. চরিত্রের বাস্তবতাপূর্ণ চিত্রায়ণ: “শ্রীকান্ত”-এর চরিত্রগুলো খুবই বাস্তব। তাদের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, আবেগ-অনুভূতি সবকিছুই খুব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
২. মানসিক জটিলতার অনুসন্ধান: শরৎচন্দ্র শুধু চরিত্রের বাইরের রূপটাই দেখাননি, বরং তাদের ভেতরের জটিল মানসিকতারও অনুসন্ধান করেছেন।
৩. সাবলীল এবং আকর্ষণীয় ভাষা: “শ্রীকান্ত”-এর ভাষা খুবই সহজবোধ্য এবং সাবলীল।
৪. সময়হীন থিম: “শ্রীকান্ত”-এর থিমগুলো, যেমন প্রেম, বন্ধুত্ব, আধ্যাত্মিকতা, জীবনের অর্থ ইত্যাদি, আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
৫. আবেগের স্পর্শ: “শ্রীকান্ত”-এর কাহিনী পাঠকদের মনে আবেগের স্পর্শ
সংক্ষেপে রিভিউ
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস “শ্রীকান্ত” একজন তরুণের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে। শ্রীকান্ত, উপন্যাসের মূল চরিত্র, একজন আবেগপ্রবণ, উদার এবং অস্থির ব্যক্তি।
কাহিনী শুরু হয় যখন শ্রীকান্ত গ্রামের জীবনে বিরক্ত হয়ে কলকাতায় চলে যান। সেখানে সে বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচিত হয় এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
কাহিনীর মূল থিম হলো প্রেম, বন্ধুত্ব, আধ্যাত্মিকতা এবং জীবনের অর্থ। শ্রীকান্তের জীবনে অনেক নারী আসে, কিন্তু সে সত্যিকারের প্রেম খুঁজে পায় না।
উপন্যাসের শেষে, শ্রীকান্ত জীবনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে এবং আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
“শ্রীকান্ত” বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চরিত্রগুলোকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এবং তাদের মানসিক জটিলতাকে তুলে ধরেছেন।
মিসির আলি সমগ্র || হুমায়ুন আহমেদ
বইয়ের নাম | লেখকের নাম | প্রকাশনার সাল | গল্পের বিষয়বস্তু |
মিসির আলি সমগ্র | হুমায়ুন আহমেদ | ১৯৮৫ (দেবী) – ২০১২ (যখন নামিবে আঁধার) | মিসির আলির কাহিনী গুলো রহস্যমাত্রিক যা ঠিক গোয়েন্দা, ক্রাইম ফিকশন বা থ্রিলার নয়, এটা মানস্তাত্ত্বিক ও বিজ্ঞাননির্ভর কাহিনী ঘেরা। |
মিসির আলি সমগ্রতে রয়েছে মোট ২২ টি উপন্যাস ও গল্প গ্রন্থ। মিসির আলি চরিত্রটি নিয়ে বললে, মিসির আলি এমন একজন মানুষ, যিনি দেখার চেষ্টা করেন চোখ বন্ধ করে। যে পৃথিবীতে চোখ খুলেই কেউ দেখে না, সেখানে চোখ বন্ধ করে দেখার এক আশ্চর্য ফলবতী চেষ্টা।
সর্বোমোট ২২টি উপন্যাস গুলোর হলো:
- দেবী
- নিশীথিনী
- নিষাদ
- অন্যভূবন
- বৃহন্নলা
- ভয়
- বিপদ
- অনীশ
- মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য
- আমি এবং আমরা
- তন্দ্রাবিলাস
- হিমুর দ্বিতীয় প্রহর
- আমিই মিসির আলি
- বাঘবন্দি মিসির আলি
- কহেন কবি কালিদাস
- হরতন ইশকাপন
- মিসির আলির চশমা
- মিসির আলি আপনি কোথায়?
- মিসির আলি Unsolved
- পুফি
- যখন নামিবে আঁধার
উল্লেখ্য যে, যদিও এখানে একত্রে এতো গুলো বইয়ের কথা বলা হচ্ছে তবে আর আমাদের আর্টিকেলটির মূল বিষয় সেরা ১০ টি গল্পের বই তবে যেহেতু বর্তমানে মিসির আলি বইয়ের সকল গল্প একত্রে করে সমগ্র আকারে প্রকাশ করা হয়েছে তাই এটাকে একটি একক বই হিসেবেই উপস্থাপন করছি।
হুমায়ুন আহমেদ স্যার এবং মিসির আলি চরিত্র নিয়ে খুব একটা বলার দরকার নেই। নাম দ্বারাই সম্পূর্ণটা ধারণা হয়ে যায় আর হুমায়ুন আহমেদের তৈরি সেরা চরিত্রটি সম্পর্কে যতই জানবেন তখন যেনো ইহাতে মুগ্ধ হয়ে হারাবেন আর নিজেকে মিসির আলির স্থানে অবস্থান দিতে চাইবেন।
আমি তপু || মুহম্মদ জাফর ইকবাল
বইয়ের নাম | লেখকের নাম | প্রকাশনার তারিখ | গল্পের বিষয়বস্তু |
আমি তপু | মুহম্মদ জাফর ইকবাল | ১৯৮৯ | কিশোর তপুর দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা, তার বন্ধুবান্ধব, স্কুল, খেলাধুলা, এবং পরিবারের সাথে তার সম্পর্কের উপর আলোকপাত করে। |
“আমি তপু” বইটি বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কিশোর উপন্যাস। বইটিতে তপু চরিত্রের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে বন্ধুত্ব, সাহস, কৌতুহল, এবং পরিবারের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
“আমি তপু” বইটি তের বছরের কিশোর আরিফুল ইসলাম তপুর জীবনের হৃদয়স্পর্শী গল্প। তপু বেড়ে ওঠে এক অসুখী পরিবারে, যেখানে তার মা তাকে অবহেলা করে এবং নির্যাতন করে। বন্ধু-বান্ধব, স্নেহ, এবং সুখের পরিবর্তে তার জীবন পূর্ণ নিঃসঙ্গতা, বেদনা, এবং অপমানে।
তপুর জীবনে আলোর আঁচ দেখা যায় যখন সে প্রিয়াঙ্কা নামের এক সাহসী ও বুদ্ধিমতী মেয়েটির সাথে পরিচিত হয়। প্রিয়াঙ্কা তপুর প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তার বেদনার ভাগীদার হয়। তার সাহায্য ও সহমর্মিতা তপুকে তার জীবনের প্রতি আবার আগ্রহী করে তোলে।
দুর্গেশনন্দিনী || বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
লেখক: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশনা: ১৮৬৫
ধরণ: ঐতিহাসিক রোমান্স
মূল চরিত্র:
- দুর্গেশনন্দিনী: গজপতি রাজা মানসিংহের কন্যা
- সুভাষিণী: দুর্গেশনন্দিনীর বান্ধবী
- জগৎসিংহ: মুঘল সেনাপতি
- সুরথ: দুর্গেশনন্দিনীর দাসী
- কতলু খাঁ: পাঠান সেনাপতি
কাহিনী:
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস “দুর্গেশনন্দিনী” ষোড়শ শতাব্দীর উড়িষ্যার পটভূমিতে রচিত। গল্পটি শুরু হয় যখন গজপতি রাজা মানসিংহের কন্যা দুর্গেশনন্দিনী এবং তার বান্ধবী সুভাষিণী এক রাতে শৈলেশ্বর মন্দিরে পূজা দিতে যান। ঝড়ের কবলে পড়ে তারা জঙ্গলে আটকা পড়েন। সেখানে তাদের সাথে দেখা হয় মুঘল সেনাপতি জগৎসিংহের। দুর্গেশনন্দিনী ও জগৎসিংহের মধ্যে প্রেমের সূচনা হয়।
এদিকে, পাঠান সেনাপতি কতলু খাঁ উড়িষ্যা আক্রমণ করে। দুর্গেশনন্দিনী ও তার পরিবারকে বন্দী করে নেওয়া হয়। জগৎসিংহ তাদের উদ্ধার করার জন্য যুদ্ধে নামেন।
শার্লক হোমস’ সমগ্র || স্যার আর্থার কোনান ডোয়েল
চরিত্র:
শার্লক হোমস: একজন অসাধারণ গোয়েন্দা, যিনি তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং deduction-এর মাধ্যমে জটিল রহস্য সমাধান করেন।
ডাক্তার ওয়াটসন: হোমসের বন্ধু ও সহকারী, যিনি তার অভিযানে তাকে সঙ্গ দেন এবং গল্পগুলো বর্ণনা করেন।
অন্যান্য চরিত্র: মিসেস হাডসন, ইন্সপেক্টর লেস্ট্রেড, ইত্যাদি।
কাহিনী:
- রহস্য: হত্যা, চুরি, অপহরণ, ইত্যাদি।
- তদন্ত: হোমস ওয়াটসনের সাহায্যে রহস্যের কিনারা করার চেষ্টা করেন।
- সমাধান: হোমস তার অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্তির মাধ্যমে রহস্যের সমাধান করেন এবং অপরাধীকে চিহ্নিত করেন।
শার্লক হোমসকে নিয়ে লেখা মোট ৫৬টি ছোট গল্প এবং ৪টি উপন্যাস রয়েছে।
উপন্যাস:
- এ স্টাডি ইন স্কার্লেট (১৮৮৭)
- দ্য সাইন অফ দ্য ফোর (১৮৯০)
- দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অফ শার্লক হোমস (১৮৯২)
- দ্য হাউন্ড অফ দ্য বাস্কারভিলস (১৯০২)
ছোট গল্প:
- দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অফ শার্লক হোমস (১২টি গল্প)
- দ্য মেময়ার্স অফ শার্লক হোমস (১১টি গল্প)
- দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অফ শার্লক হোমস (৮টি গল্প)
- দ্য রিটার্ন অফ শার্লক হোমস (১৩টি গল্প)
- দ্য কেস-বুক অফ শার্লক হোমস (১২টি গল্প)
মোট: 56 টি ছোট গল্প + 4 টি উপন্যাস = 60 টি
শার্লক হোমস গল্প রহস্য-রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্য অবশ্যই পাঠ্য। হোমসের অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্তি এবং রহস্য সমাধানের কৌশল পাঠকদের মুগ্ধ করে। গল্পগুলো বারবার পড়ার উপযোগী।
বাংলায় শার্লক হোমসের বেশ কিছু অনুবাদ পাওয়া যায়। মণীন্দ্র দত্তের অনুবাদ সবচেয়ে জনপ্রিয়। শার্লক হোমসের গল্পের উপর ভিত্তি করে অসংখ্য চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ, এবং রেডিও নাটক তৈরি করা হয়েছে।
মাসুদ রানা সিরিজ || কাজী আনোয়ার হোসেন
মাসুদ রানা সিরিজ বাংলা সাহিত্যের এক অমর অধ্যায়। কাজী আনোয়ার হোসেন রচিত এই সিরিজটি বাংলাদেশের সর্বকালের জনপ্রিয়তম বই সিরিজগুলির মধ্যে একটি।
সিরিজের বৈশিষ্ট্য:
চরিত্র: মাসুদ রানা একজন দেশপ্রেমিক, সাহসী, বুদ্ধিমান এবং রহস্য সমাধানে দক্ষ গোয়েন্দা।
কাহিনী: রোমাঞ্চ, রহস্য, অ্যাকশন, থ্রিলার এবং কমেডির মিশ্রণ।
পটভূমি: বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন রহস্যময় ঘটনার সমাধানে মাসুদ রানার অভিযান।
প্রকাশনা: ১৯৬৬ সালে “ধ্বংস-পাহাড়” বই দিয়ে শুরু, ৪০০ টিরও বেশি বই প্রকাশিত।
সেবা প্রকাশনা কতৃক এখন অব্দি মাসুদ রানা সিরিজের প্রায় ৪৭০ টির মত বই বের হয়েছে। এক্ষেত্রে সেরা ১০ টি গল্পের বই এর তালিকায় এই সংখ্যা অত্যাধিক হলেও ধংসাত্বক পাহাড় নামক মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম বই পড়ে অবশ্যই দেখতে পারেন।
মাসুদ রানা সিরিজের সকল বইয়ের তালিকা দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
দ্য ফেলুদা সিরিজ || সত্যজিৎ রায়
ফেলুদা সিরিজ হল বাঙালি লেখক সত্যজিৎ রায় রচিত গোয়েন্দা কাহিনীর একটি সংকলন। গল্পগুলিতে প্রিয় গোয়েন্দা প্রদোষ চন্দ্র মিত্র (ফেলুদা) এবং তার সহকারী জটায়ু এবং লালমোহন বাগচী (তোপসে) রয়েছেন। ফেলুদা একজন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমান যুবক। , যিনি তার পর্যবেক্ষণ দক্ষতা এবং যুক্তির মাধ্যমে রহস্য সমাধান করেন। তিনি কলকাতায় তার বন্ধু তোপসের সাথে থাকেন।
ফেলুদা চরিত্রটি প্রথম আবির্ভূত হয়েছিলেন ১৯৬৫ সালে “ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি” গল্পে। এই গল্পটি “এক ডজন গল্প” সংকলনে প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর ফেলুদা ৩৯টি গল্পে এবং সত্যজিৎ রায়ের দুটি উপন্যাসে উপস্থিত হন। ফেলুদা গল্পগুলি বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজগুলির মধ্যে একটি এবং এগুলি অনেক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
ফেলুদা গল্পগুলি তাদের রহস্য, রোমাঞ্চ এবং হাস্যরসের জন্য পরিচিত। ফেলুদা একটি আইকনিক চরিত্রে পরিণত হয়েছে এবং বাংলা সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে।
ফেলুদা সিরিজের কিছু জনপ্রিয় গল্পের মধ্যে রয়েছে:
- ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি
- বাদশাহী আংটি
- সোনার কেল্লা
- যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে
- গোলাপি মুক্তা রহস্য
- হত্যাপুরী
- বোম্বাইয়ের বোম্বেটে
- শেয়াল দেবতা রহস্য
- অম্বর সেনের কাণ্ড
ফেলুদা সিরিজটিও অভিযোজিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ এবং রেডিও নাটক। সত্যজিৎ রায় নিজেই “সোনার কেল্লা”, “জয় বাবা ফেলুনাথ” এবং “গোলাপি মুক্তা রহস্য” উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তিনটি ফেলুদা চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন।
পরিশেষে কিছু কথা
এই ছিলো বাছাইকৃত লেখকের সেরা ১০ টি গল্পের বই। আশা করি আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি দারুন কিছু তথ্য পেয়েছেন। পরবর্তীতে লেখক ভিত্তিক প্রতিটি লেখকের পৃথক পৃথক সেরা ১০ টি বই সম্পর্কে জানাবো যা পেয়ে অবশ্যই বাংলা আলো ওয়েবসাইটের বই রিভিউ ট্যাগটি অনুসরণ করবেন। ধন্যবাদ।