হাঁস পালন পদ্ধতি কেন ও কিভাবে হাঁস পালন করবেন খরচ কত?

0
65

বর্তমানে গ্রাম্য এড়িয়ায় হাঁস পালন খুবই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। নতুন যারা লাভজনক হাঁস পালতে চাচ্ছে তাদের জন্য হাঁস পালন পদ্ধতি নিয়ে পুরো আর্টিকেল।

আমাদের দেশে হাঁসের বেশ ভালই জনপ্রিয়তা আছে । তবে আমাদের দেশের আবহাওয়া হাঁস পালনের ক্ষেত্রে উপযোগী।

কিন্তু আমাদের দেশে হাসের চেয়ে মুরগির জনপ্রিয়তা টাই বেশি। কিন্তু বর্তমানে ও হাঁসের ভালোই জনপ্রিয়তা রয়েছে আমাদের দেশে।

আর এটা সকলেই জানে যে, বাড়িতে যদি হাঁস পালন করা হয় তবে ডিমের যোগান নিশ্চিত। এতে করে শিশুদের অপুষ্টি দূর হয় এবং পুষ্টির ঘাটতি মিটে ।

হাঁসের ডিম অনেক পুষ্টিকর ।আমরা সবাই জানি যে, হাঁসের মাংস অন্য যেকোনো মাংসের তুলনায় শরীরের জন্য অনেক উপকারী ।

তবে বাংলাদেশের আবহাওয়া হাঁস পালনের জন্য একদম উপযোগী। 

তাই আমাদের দেশের দীর্ঘকাল ধরে খুব সহজে হাঁস পালন সম্ভব ।আমাদের দেশে হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা।

বর্তমানে অনেকেই এখন তার প্রধান পেশা হিসেবে হাঁস পালন পদ্ধতি কে বেছে নিয়েছে ।

অন্যান্য কাজের পাশাপাশি হাঁস পালন করেও মানুষ তার বাড়তি আয়ের নিশ্চিত করছে। উন্নত জাতের একটি হাঁস ডিম দিয়ে থাকে বছরে প্রায় 300 টি ।

পুকুরপাড়ের দিকে হাঁস পালন খুবই লাভজনক ।হাঁস পালনের সঠিক জ্ঞান থাকলে এই ব্যবসায় প্রচুর লাভবান হওয়া সম্ভব।

আমাদের দেশের প্রায় বেশিরভাগ মানুষই চাকরির সন্ধানে থাকে। যার ফলে বেশীরভাগ মানুষই বেকার ।

আর এই দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে হাঁস পালনে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

এছাড়া যারা চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের চিন্তা করছে ,তাদের জন্য এক কথায় হাঁস পালন পদ্ধতি হচ্ছে সেরা। 

আর কিছু মানুষ আছে যারা স্বল্প মূলধনের কারণে ব্যবসায় আগাতে পারছে না তাদের জন্যও হাঁস পালন একটি সুবিধাজনক ব্যবসা।

কারণ হাঁস পালনে ব্যয়ের তুলনায় লভ্যাংশের পরিমাণ অনেক বেশি ।

 

যারা মাছ চাষ করে থাকেন তাদের জন্য মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস পালন করা উচিত । কারণ হাঁস ও মাছ চাষের সমন্বয়ে মাছের জন্য আলাদা খাদ্য দিতে হয় না। 

আর হাস থাকলে মাছ খুবই দ্রুত বৃদ্ধি পায় ।তাই বলা যেতে পারে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে হাঁস পালন খুব ভালো ভূমিকা পালন করছে। কারণ এতে করে দেশের বেকারত্বের পরিমাণ হ্রাস হচ্ছে।

 

হাঁস পালন কেন করবেন?

 

হাস হলো আমাদের দেশের একটি প্রচলিত গৃহপালিত প্রাণী ।আর আমাদের দেশে গ্রামের দিকেই বেশি হাস পালিত হয় ।

হাঁসের ডিম বা মাংস অন্যান্য সব কিছুর তুলনায় তুলনামূলকভাবে শরীরের জন্য অনেক পুষ্টিকর খাদ্য। তাই বর্তমানে  আমরা হাঁসের ডিম ও মাংসের জন্য হাঁস পালন করে থাকি।

বাংলাদেশে বিভিন্ন জেলায় হাঁসের ফার্ম রয়েছে ।অন্যান্য যেকোন ফার্মের তুলনায় হাঁসের ফার্ম এ ব্যয় ও শক্তি খুব কম লাগে। 

মুরগির চেয়ে হাঁসের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে পরিশ্রম কম হয়, কারণ বেশিরভাগ সময়ে হাস পানিতে, ধানক্ষেতে থাকে

যার কারণে বেশিরভাগ সময় হাস বাইরে বাইরে ঘুরে এবং তার নিজের খাদ্য ঘাটতি পূরণ কর।

হাঁস ছোট ছোট মাছ খায় যার কারণে এর বৃদ্ধি ও খুব তাড়াতাড়ি হয় ।আমরা যেসব কারণে হাঁস পালন করব তা হলঃ

১. হাঁস পালনে ব্যয়ের চেয়ে অধিক আয় সম্ভব।

২. হাঁস পালনে পরিশ্রম খুব কম হয়।

৩. একটি মুরগির চাইতে হাস অনেক বেশি ডিম দিয়ে থাকে এবং একটি হাঁসের ডিম মুরগির চাইতে 10 – 15 গ্রাম বড় হয়ে থাকে।

৪.হাঁস খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায় এবং এরা নিজের খাদ্য নিজেরাই বাইরে ঘুরে ঘুরে খেয়ে থাকে।

৫. হাঁসের ডিম একটি পরিবারের পুষ্টির ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে।

৬. হাঁস তুলনামূলকভাবে অনেক বড় হয়ে থাকে। এবং শারীরিক দিক থেকে এরা অনেক শক্তিশালী হয় ।

এছাড়া হাস খুব সহজেই রোগবালাই থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে।

 

হাঁস পালনের উপকারিতা

 

বাংলাদেশ হাঁস পালনের অনেক উপকারিতা রয়েছে ।হাঁস পালন মুরগি পালন অপেক্ষায় অনেক সহজ ও উপকারী । যে কেউ খুব সহজেই হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারে।

হাঁস পালনের মাধ্যমে আমিষের অভাব খুব সহজে দূর হয়ে থাকে । এ ছাড়া হাঁস পালনে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।

আমরা এখন হাঁস পালনের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবঃ

১. হাঁস পালনে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না কারণ অনেকগুলো হাঁস একগুচ্ছ হয়ে একটু জায়গাতেই বসবাস করতে পারে।

২. হাঁস পালনে হাঁসের বিষ্ঠা সংগ্রহ করা যায়।আর হাঁসের বিষ্ঠা হলো ভালো মানের জৈব সার।

৩. মুরগির তুলনায় হাঁসের রোগবালাই অনেক কম হয়ে থাকে।

৪. হাঁস সাধারনত সকালে ডিম দিয়ে থাকে। এতে করে যারা ব্যবসা করে তাদের ব্যবসার জন্য এটা খুব জরুরী।

৫.হাসকে যদি খোলা অবস্থায় পালন করা হয়, তবে হাঁসের জন্য তেমন খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে না।

৬. হাঁস পালনে আমিষের অভাব দূর করা সম্ভব।

৭. হাঁস ও মাছ   একসাথে চাষ করা সম্ভব।

৮. হাঁস পালনে খরচ অনেক কম।

৯. হাঁসের মল, মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের ফলে ,মাছ চাষে বাড়তি খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে না।

১০. হাঁসের ডিমের খোসা ও খোসার নিচের আবরণ মোটা হওয়ার ফলে ,ডিম নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না।

১১. হাঁসের মল কৃষি জমির জন্য উৎকৃষ্ট একটি সার।

১২. মুরগির তুলনায় অনেক বেশি ডিম দিয়ে থাকে।

১৩. হাঁসের বৃদ্ধি খুব তাড়াতাড়ি হয়।

তাই হাঁস পালনে উপকার অনেক আর এর ক্ষতিকর দিক নেই বললেই চলে।

 

হাঁস পালনের খরচ

 

আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী হাঁস পালন একটি উপযোগী ব্যবসা ।হাঁস পালনে খরচ খুব কম হয়ে থাকে ।

যে যত খরচ করবে তার তুলনায় আয় ততবেশি। হাঁস পালন করে বাড়তি আয় করা সম্ভব হাঁস পালনে খরচ কম। 

কারণ খোলা অবস্থায় হাঁস পালন করলে হাঁসের খাদ্য তেমন প্রয়োজন নেই ।তারা বাইরে ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে থাকে।

আমরা ধরে নেই যে, প্রতিদিন শ্রমিকসহ হাঁসের খাবারের খরচ হয় আনুমানিকভাবে 4000 টাকা।

সেই হিসেবে খরচ টা বাদ দিয়ে তার প্রতিদিন আয় থাকবে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা ।

তাহলে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা ।তাই স্বল্প মূলধনী বেশি আই এর অনেকগুলো ব্যবসার মাঝে অন্যতম একটি ব্যবসা হল হাঁস পালন।

 

চিনা হাঁস পালন পদ্ধতি

 

হাঁস একটি গৃহপালিত প্রাণী। হাসের মাঝে অনেকগুলো জাত রয়েছে। এর মধ্যে একটি জাত হলো চিনা হাঁস ।

চিনাহাসের আরেকটি নাম হল মাসকোভি। চিনা হাঁস বছরে প্রায় ৬০-১২০টি সাদা ডিম দিয়ে থাকে। চিনা হাঁস এবং এই হাঁসের ডিম খুবই জনপ্রিয় ।

বাণিজ্যিক ভাবে হাঁস চাষে, চিনা হাঁস খুব ভালো একটি ধারনার মধ্যে একটি। বর্তমানে সারা বিশ্বেই হাঁস পালন করা হয়।

নিম্নে চিনা হাঁস পালন পদ্ধতি দেয়া হলঃ

১. প্রথমেই আপনাকে চীনা হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করতে হবে ।এবং হাঁসের বাচ্চা গুলো যেন রোগ বালাই মুক্ত ও স্বাস্থ্যকর থাকে।

২. তারপর অন্যান্য জাতের হাঁসের মতো চিনা হাঁসের জন্য ঘর নির্মাণ করতে হবে।

তবে চিনা হাঁসের ঘর আরামদায়ক ,পরিষ্কার এবং নিরাপদ থাকতে হবে।

নয়তো এরা ভালো থাকবে না ।চার থেকে পাঁচ ফুট জায়গা প্রতি হাঁসের জন্য যথেষ্ট।

৩. হাঁসের খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা করতে হবে। চিনা হাঁসের ক্ষেত্রে পুষ্টিকর ও ভালো মানের খাবার প্রয়োজন।

এই ব্যবসার ক্ষেত্রে এটা হল গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।তাই এদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী পরিষ্কার পানি দিতে হবে।

৪. সঠিক পরিচর্যা ও পুষ্টিকর খাবারের এই হাস খুব সহজেই বড় হয়ে ওঠে এবং এটির মাংস অনেক পুষ্টিকর 35 দিন অব্দি ডিম ছাড়ার আগ পর্যন্ত ডিমে তা দিতে থাকে। 

চিনা হাঁসের বাচ্চা ১২ সপ্তাহে একটি ভালো মাপের হাসে পরিণত হয়। হাঁসের সময়মতো ভ্যাকসিন দিতে হবে। 

এবং কোন ভেটেরিনারি ডাক্তারের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। এরপর সময়মতো বাজারে নিয়ে ভালো দামে বিক্রি করা সম্ভব।

 

বেইজিং হাঁস পালন পদ্ধতি

 

বেইজিং হাঁস  হল হাঁসের  অন্য আরেকটি জাত। বেইজিং হাঁসের নাম চীনের রাজধানীর নাম অনুসারে রাখা হয়েছে । 

এই হাঁস পালনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী দেশ হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আবহাওয়া এই হাঁস পালনে অত্যন্ত সুফলদায়ক।

জাতের হাঁস মূলত তিন ভাবে পালন করা যায়ঃ

   ১. আবদ্ধ পদ্ধতি

   ২. আবদ্ধ ও আংশিক খোলা পদ্ধতি

   ৩. উন্মুক্ত পদ্ধতি

বেইজিং হাঁস দেখতে অনেকটাই সাধারণ হাঁসের মতই।তবে এই জাতের হাঁসের পায়ের রং লালচে ও ধূসর হলুদ লালচে হয়। 

এই হাঁসগুলোর গায়ের রঙ ধবধবে সাদা হয় আর ঠোঁট হলুদ হয়। যেভাবে আমরা বেইজিং হাঁস পালন করবঃ

১. প্রথমেই উপরোক্ত গঠন অনুযায়ী বেইজিং হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করতে হবে।

যদি বেইজিং হাঁসের খামার দিতে চান তবে অবশ্যই এক মাস বয়সের বাচ্চা দিয়ে শুরু করতে হবে।

২. বেইজিং হাঁসের জন্য বাসস্থান তৈরি করতে হবে । এজাতীয় হাঁসের ক্ষেত্রে জায়গার পরিমাণ খুব কম লাগে। 

কিন্তু এমন একটি স্থান নির্ধারিত করতে হবে যেখানে নদী ,পুকুর থাকে ।কারণ পানি ছাড়া বেইজিং হাঁস পালন সম্ভব নয়।

৩. বেইজিং হাঁসের জন্য আলাদা করে খাদ্যের তেমন ব্যবস্থা করার প্রয়োজন নেই ।

কারণ এজাতীয় হাস শামুক-ঝিনুক ,কচুরিপানা ,লতা পাতা ,শেওলা, কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে।

৪. হাঁসের বৃদ্ধি ও রোগবালাই থেকে মুক্ত রাখার জন্য ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। এবং সর্বদা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চার মাস পর পর টিকা দেওয়া দরকার।

তাই উপরোক্ত পয়েন্টগুলো থেকে বেইজিং হাঁস পালনের একটি ভাল ধারণা নেয়া যেতে পারে।

 

পুকুরে হাঁস পালন পদ্ধতি

 

বর্তমানে হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। আর যদি তা একটি উপযুক্ত  স্থানে হয়, তাহলে আর ও ভালো ফলাফল পাওয়া যায় ।

পুকুরে হাঁস পালন করলে খরচ ও সময় অনেকাংশে কমে যায়।

পুকুরে হাঁস পালনের ক্ষেত্রে আপনাকে যেটা করতে হবেঃ

১. প্রথমেই আপনাকে একটি খামার স্থাপন করতে হবে পুকুরে বা তার আশেপাশে।

২. সারা বছর জল থাকে। এবং মোটামুটি আয়তকার একটি পুকুর নির্বাচন করতে হবে।

৩. যেহেতু হাঁস বেশিরভাগই পানিতে থাকবে, তাই পানিতে প্রতি মাসে 30 গ্রাম চুনা দিতে হবে।

৪. প্রতি বিঘা জলের জন্য ৩০-৪০ টি হাঁস রাখতে হবে।

৫. প্রতি 10 টি হাঁসের জন্য একটি পুরুষ হাস রাখা আবশ্যক।

৬. পুকুরে হাঁস পালনের ক্ষেত্রে ভাল জাতের শংকর হাঁসের প্রয়োজন।

আর হাঁস পালন ও মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাছের বাড়তি খাবারের প্রয়োজন নেই ,কারণ হাঁসের মলই হল উৎকৃষ্ট সার।

 

পরিশেষে আমরা এটাই বলতে পারি যে ,বর্তমানে আমাদের দেশে বেকারত্বের পরিমাণ অনেক। তাই বেকারত্ব দূরীকরণে হাঁস পালন একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে । আর যারা অল্প পুঁজিতে ব্যবসা করতে চান ,তাদের জন্য এটি একটি সফল ব্যবসা।

 

 

Visited 24 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here