বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মোবাইল ফোন হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের একটি। তাই এই যন্ত্রটিকে কেন্দ্র করে সমগ্র বিশ্বে হয়েছে অনেক মোবাইল কোম্পানি। সে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিশ্বের সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি কোনগুলো? এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল।
প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় সকলের কাছেই থাকে স্মার্টফোন। একটি জরিপে পাওয়া গেছে যে, শতকরা ৯০ জনের বেশি মানুষ স্মার্টফোন মোবাইল ব্যবহার করে। তাই এ বিষয়ে জানাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই বটে!
তাই বিশ্বের সেরা মোবাইল ব্র্যান্ড বা কোম্পানি কোনগুলো; সেগুলো সম্বন্ধে আমাদের একটু বিস্তারিত জেনে নেয়া দরকার। সারা বিশ্বের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি সম্পর্কে চলুন জেনে নেয়া যাকঃ
বিশ্বের সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি
১। স্যামসাং
সারা বিশ্বের সেরা মোবাইল সরবরাহ করার দিক বিবেচনায় এবং মান বিবেচনায় স্যামসাং সেরা একটি মোবাইল কোম্পানি। স্যামসাং কোম্পানিটি দক্ষিণ কোরিয়ান একটি কোম্পানি; যেটি ১৯৩৮ সালের ১ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হলেন লি ব্যুং-চুল।
বিভিন্ন রকম বাটন ফোন, স্মার্টফোন, ট্যাব থেকে শুরু করে অনেক রকম ইলেকট্রনিকস উৎপাদনে স্যামসাং সফল। তাই সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি এর মধ্যে এটির অবস্থান। সচেতন মানুষেরা সাধারণত মানসম্মত মোবাইল কিনে থাকেন। তাই আপনি সে লক্ষ্যে সেরা ব্র্যান্ড স্যামসাং কোম্পানির মোবাইল ট্রাই করতে পারেন।
২। এইচটিসি
ট্যাবলেট-পিসি এবং স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি মোবাইল কোম্পানি হচ্ছে এইচটিসি। উইন্ডোজ এবং অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলার উপযোগী মোবাইল প্রস্তুত করে এই কোম্পানিটি।
এইচটিসি মোবাইলগুলোর মান বেশ ভালো; তা ব্যবহারকারীরা বলেছেন। এইচটিসি কোম্পানিটি তাইওয়ানের একটি প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য করে থাকে।
এইচটিসি কোম্পানি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় তারা নোটবুক কম্পিউটার প্রস্তুত করতো। পরবর্তীতে তারা ২০০২ সালে প্রথম মোবাইল প্রস্তুত করে। ওই মোবাইলটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে চলতো।
স্মার্টফোনের কথা প্রসঙ্গে বলা যায়; তাদের মোবাইলগুলো ভাল। আপনি আপনার পছন্দের এইচটিসি কোম্পানির মোবাইলটি রিসার্চ করে, বিশ্বস্ত মানুষের পরামর্শ নিয়ে কিনতে পারেন। বিশ্বের সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি এর মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য।
৩। হুয়াওয়ে
আজ থেকে প্রায় ৩৪ বছর আগে; ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭ সালে হুয়াওয়ে মোবাইল কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্ত হলো চীনের শেনজেন। হুয়াওয়ে বিশ্বের ১৭০ এরও অধিক দেশ ও এলাকায় তার প্রোডাক্ট ও পরিষেবা স্থাপন করেছে।
হুয়াওয়ের মোবাইলগুলো ভাল মানের বলা যায়। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হলেন রেন ঝেংফেই এবং চেয়ারম্যান হলেন লিয়াং হুয়া। হুয়াওয়ে মোবাইল কোম্পানি সারা বিশ্বব্যাপী কাজ করছে। তবে ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাদে। সবকিছু মিলিয়ে এটি বিশ্বের সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি এর একটি।
৪। অ্যাপল আইফোন
অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড হলো একটি আমেরিকান বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি। আয়ের দিক বিবেচনায় এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি। ২০২১ সালে অ্যাপলের আয়ের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৩৬৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অ্যাপল কোম্পানিই আইফোন প্রস্তুত করে থাকে।
আজ থেকে প্রায় ৪৬ বছর আগে ১৯৭৬ সালের ১ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাপল কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। আইফোনের ব্যাপারে আমরা প্রায় সবাই কমবেশি জানি। মান বিবেচনায় এটি দুর্দান্ত একটি ফোন। বিশ্বের সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি এর মধ্যে অ্যাপল কোম্পানি অন্যতম।
৫। শাওমি
২০১০ সালের ৬ এপ্রিল শাওমি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। শাওমি কোম্পানির সদর দপ্তর চীনের বেইজিং এ অবস্থিত। মোবাইল ফোন এবং স্মার্টফোনের পাশাপাশি ট্যাবলেট, কম্পিউটার, ট্রিমার, ল্যাপটপ এবং স্মার্ট টিভি প্রস্তুত করে এই কোম্পানিটি।
শাওমির পণ্যের মান ভাল। তারা সারা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য করে থাকে।লি জুন হলেন এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী শাওমির মোট সম্পদ ১৮৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর অধীনস্থ কোম্পানি হলো সানমি, মেইটু ও ইয়োপিন।
বর্তমানে অসংখ্য স্মার্টফোন কোম্পানির মধ্যে শাওমি সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি এর একটি। ২০১১ সালে শাওমির প্রথম ফোন বাজারে আসে এবং পরবর্তী ৪ বছরের মধ্যে এটি চীনের সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হয়।
৬। ওপো
২০০৪ সালে ওপো সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে এটি ব্র্যান্ড হিসেবে নিবন্ধিত হয়; যা বিশ্বব্যাপী। ওপো হলো ইলেক্ট্রনিক ও বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। স্মার্টফোন এবং ব্লু রে এর মতো বৈদ্যুতিক সামগ্রী প্রস্তুত করে থাকে এটি।
এই ওপো কোম্পানির অধীনস্থ হলো ওয়ানপ্লাস প্রতিষ্ঠান। চীনের কুয়াংতুং প্রদেশে ওপো কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন টোনি চেন। বর্তমানে ওপো কোম্পানির স্মার্টফোন এর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি এর তালিকায় এটি স্থান পেয়েছে।
এর মূল প্রস্তুতকেন্দ্রগুলি চীনে অবস্থিত হলেও , এখন ভারতে মোবাইলের কারখানা করেছে। নয়ডায় স্মার্টফোন প্রস্তুতকেন্দ্র রয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে অপো বাংলাদেশ এ তাদের উৎপাদন কারখানা চালু করে, যার নাম “বেনেলি ইলেকট্রনিক এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড” ও কারখানাটি গাজীপুর জেলায় অবস্থিত এবং এটি তাদের দশম বৈশ্বিক উৎপাদন কারখানা।
৭। ভিভো
এটিও চীনের একটি কোম্পানি; যা ২০০৯ সালে চীনের কুয়াংতুং এ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন শেন উই। ভিভো কোম্পানির স্মার্টফোন এর মান বেশ ভাল। চীনের পাশাপাশি বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশ হলো ভিভোর বাণিজ্যিক অঞ্চল। ২০১২ সালে ভিভো এক্সওয়ান মডেলের স্মার্টফোন বাজারে আনে।
সে সময় এটি বিশ্বের পাতলাতম স্মার্টফোন ছিল। এক্সওয়ান ভিভোর প্রথম এমন ফোন ছিল যাতে হাই-ফাই চিপ ব্যবহার করা যেত। ২০১৫ সালে সংস্থাটি পৃথিবীর ১০ বৃহৎ মোবাইল উৎপাদকে পরিণত হয়। বিশ্বের সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি এর মধ্যে তারা অন্যতম ভাল একটি মোবাইল কোম্পানি।
৮। এলজি
এলজির আমাদের বাংলাদেশে বেশ পরিচিত। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এলজি কর্পোরেশন ১৯৪৭ সালের ৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত। এর সদর দপ্তর দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল শহরে অবস্থিত।
এলজি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ইলেকট্রনিক পণ্যের মান ভাল। ২০১২ সালে তাদের আয় ছিল প্রায় ১৪৩ বিলিয়ন ডলার এবং কর্মীসংখ্যা ছিল দুই লক্ষাধিক। তারা সারা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য করে থাকে। বিশ্বের সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি এর মধ্যে এলজি রয়েছে।
৯। নকিয়া
একটা সময় নকিয়ার বাটন মোবাইল গুলো আমাদের দেশে অনেক চলতো। শুধু বাটন ফোনই নয়; বরং বিভিন্ন স্মার্টফোনও প্রস্তুত করে থাকে নকিয়া কোম্পানি। এটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
এটি খুব পুরনো একটি কোম্পানি। ১৮৬৫ সালে ফিনল্যান্ড এর টেমপারে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর ফিনল্যান্ড এর ইসপু তে অবস্থিত। নকিয়া কোম্পানি সারা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য করে থাকে।
২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী নকিয়া কোম্পানির মোট সম্পদ ছিল ৪১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। নকিয়া মোবাইল ফোনের মান বেশ ভাল। বিশ্বের সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি এর মধ্যে নকিয়া অন্যতম সেরা একটি মোবাইল কোম্পানি।
১০। লেনোভো
চীনের বেইজিং শহরে ১৯৮৪ সালে লেনোভো কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা হলে লিউ চুয়ানঝি। পৃথিবীর ৫০টিরও অধিক দেশে লেনোভো কোম্পানির কার্যক্রম চলে এবং দেড়শোটিরও বেশি দেশে তাদের পণ্য বিক্রয় হয়।
শুধু স্মার্টফোন নয়; বরং স্মার্ট টেলিভিশন, কম্পিউটার, ওয়ার্কস্টেশন সহ বিভিন্ন কিছু প্রস্তুত করে থাকে তারা। বিক্রয় হিসাবে ২০১২ সালে লেনোভো ছিলো বিশ্বের ২য় বৃহত্তম কম্পিউটার বিক্রেতা।
২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী লেনোভো কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিলো ১৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এসব দিক বিবেচনায় লেনোভো হলো বিশ্বের সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি এর একটি।
ইন্টার্নাল এবং এক্সটার্নাল দিক দিয়ে আমরা সাধারণত ভাল ফোনই কিনতে চাই। কিন্তু সব মোবাইল কোম্পানি একরকম নয়। সারা বিশ্বে মোবাইল কোম্পানিগুলোর মধ্যে কোনগুলো সেরা এ ব্যাপারে মোবাইল কেনার পূর্বেই আমাদের জেনে নেয়া উচিত।
এই আর্টিকেলে সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। ভাল মানের পণ্যের দাম সাধারণত বেশি হয়। তবে আপনি মানসম্মত পণ্যের ক্ষেত্রে আপোষ করতে না চাইলে এই সেরা ব্র্যান্ডগুলোর মোবাইল ফোন কিনতে পারেন। আপনি তাহলে ঠকবেন না ইনশা আল্লাহ্।