নির্ধারিত ওয়াক্তের মধ্যে নামাজ না পড়ে পরবর্তী সময়ে পড়লে তা কাযা নামায হিসেবে বিবেচিত হয়। ভুলবশত,অনিচ্ছায়-ইচ্ছায় অথবা বিশেষ কোন কারণে কোন ওয়াক্তের ফরজ কিংবা ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলে এবং যথা সময়ে আদায় করতে না পারলে পরবর্তীতে তা আদায় করে নেওয়া অপরিহার্য। আর অতীত জীবনে ছুটে যাওয়া নামাজগুলো পরবর্তীতে আদায় করে নেওয়াই হচ্ছে উমরি কাজা বা উমর কাজা।আরবিতে ‘উমর’ শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে জীবন, আর ‘কাজা’ হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের পরে আদায়কৃত নামাজ।আজ আমরা জানবো উমর কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম,নিয়ত ও ফজিলত সম্পর্কে।
উমর কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত
উমর কাজা আদায়ের বিশেষ কোনো পদ্ধতি নেই। সাধারণ নামাজের মতোই তা পড়া যায়। নামাজের নিষিদ্ধ সময় ছাড়া নামাজ আদায়ের বৈধ যেকোনো সময়ে কাজা নামাজ আদায় করা যাবে। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১৮০)।
কাজা নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো প্রত্যেক নামাজের সময় একাধিক ওয়াক্তের কাজা আদায় করে নেয়া। তবে কাজা নামাজের সংখ্যা যদি কম হয় এবং মনে রাখা সম্ভব হয়, তাহলে কাজা আদায় করার সময় নির্দিষ্ট করে নিলে ভালো। নিয়ত করার ক্ষেত্রে এভাবে বলতে হবে,আমি অমুক দিনের অমুক ওয়াক্তের নামাজের কাজা পড়ছি। আর কাজা নামাজের সংখ্যা যদি এত বেশি হয় যে, সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব নয় তাহলে একটা অনুমান করে কোন নামাজ কত ওয়াক্ত কাজা হয়েছে, তা নির্ধারণ করে নেবে।
অতঃপর যে ওয়াক্তের কাজা আদায় করতে চাইবেন ঐ ওয়াক্তের নিয়ত করবে যে,আমি অমুক ওয়াক্তের সবচেয়ে প্রথম বা শেষ নামাজ আদায় করছি। যেমনঃ কাজা হওয়া নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজের কাজা আদায় করতে চাইলে, নিয়ত করবে আমার জিম্মায় যত ফজরের নামাজ কাজা আছে, তার সবচেয়ে প্রথম অথবা শেষটা আদায় করছি। এভাবে একে একে সব আদায় করবে,যাতে জীবনের সব ছুটে যাওয়া কাজা নামাজ আদায় হয়ে যায়। তবুও শেষ না হলে জীবনের শেষ মুহূর্তে অবশিষ্ট নামাজের ফিদয়া দেওয়ার জন্য অসিয়ত করতে হবে। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/৬৮; ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৪/৩৩২)
উমর কাজা নামাজের ফজিলত ও হাদিস
হজরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত,নবীজি (সাঃ) কে নামায রেখে ঘুমিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও নামায সম্পর্কে গাফেল ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন-“এর কাফফারা হল যখনই নামাযের কথা স্মরণ হবে তখনই তা আদায় করে নিবে।”
— মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৩২৬২
মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে, প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি ঘুম বা অলসতার কারণে নির্ধারিত সময়ে কোনো নামাজ আদায় করতে না পারে, তাহলে নামাজের কথা স্মরণ হওয়ামাত্রই যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হচ্ছে আমার স্মরণে নামাজ কায়েম কর।” (মুসলিম : ৬৮৪)
উপরে উল্লেখিত এসব হাদিসে নবীজি (সা.) একটি মূলনীতি বর্ণনা করেছেন। সেটি হলো যদি কেউ কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারে, তার করণীয় হলো – পরবর্তীতে অবশ্যই এর কাজা আদায় করে নেওয়া।
কারো কারো মতে – ছুটে যাওয়া নামাজের সংখ্যা বেশি হলে কাজা আদায় করার প্রয়োজন নেই; বরং তওবা করলেই প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে, তা সঠিক নয়।
ফকিহদের বক্তব্য হচ্ছে উমরি কাজা নামাজের প্রায়শ্চিত্তের ব্যাপারে কাজা আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে তওবার অনুভূতিও জাগ্রত রাখতে হবে। আর মনে রাখতে হবে, ফরজ নামাজের কাজা আদায় করা ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজের কাজা আদায় করা ওয়াজিব।’ (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১৮০)
সারকথা
কাজা হয়ে যাওয়া নামাজ কম হোক আর বেশি হোক যাদের নামাজ বাদ পরে গেছে তাদের উচিত উমর কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে যতটুকু সম্ভব কাজা আদায় করা। কেননা মানুষ কাজা নামাজ সম্পর্কে কিয়ামতের দিন প্রথম প্রশ্নের মুখে পড়বে,নফল নামাজ সম্পর্কে নয়। আল্লাহতালা আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন