গাড়ি চালাতে কি কি কাগজপত্র লাগে: আমরা সবাই জানি– গাড়ি চালানোর জন্য অবশ্যই গাড়ির লাইসেন্স এর প্রয়োজন পড়ে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। গাড়ি চালাতে কিছু কাগজ পত্রের প্রয়োজন পড়ে যেগুলো অতীব জরুরী এবং যেকোন সময় দরকার পরতে পারে।
আজকের আলোচনায় আমরা, গাড়ি চালাতে কি কি কাগজপত্র লাগে সে সকল ডকুমেন্ট গুলোর নাম উল্লেখ করবো। পাশাপাশি আলোচনা করব গাড়ির ফিটনেস করতে কি কি প্রয়োজন হয়, বাইক চালাতে কি কি কাগজপত্র লাগে এবং গাড়ির কাগজ করতে কত টাকার প্রয়োজন পড়ে।
গাড়ি চালাতে কি কি কাগজপত্র লাগে
যে কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হয়। সেগুলো হলো:
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
- ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট
- ট্যাক্স টোকেন
- ফিটনেস সার্টিফিকেট এবং
- রুট পারমিট
গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই গাড়ির সঙ্গে এই কাগজপত্র গুলো আপনাকে রাখতে হবে। এবার আসুন সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে এই ডকুমেন্টগুলো নিয়ে অল্প কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
আরো দেখুন: Zkteco f18 price in Bangladesh
ড্রাইভিং লাইসেন্স
মূলত ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি অনুমতি পত্র। ১৯৮৩ অধ্যাদেশ অনুযায়ী সড়কে বা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য জায়গায় গাড়ি চালানোর জন্য যে অনুমতি পত্র গ্রহণ করা হয় সেটাই হচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স।
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর প্রয়োজনীয়তা অনেক। কেননা একজন ড্রাইভার যখন গাড়ি চালায় তখন রাস্তায় চলাচলরত সাধারণ মানুষসহ অন্য গাড়ি ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সঠিকভাবে গাড়ি চালনার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করার জন্য এই লাইসেন্স অধিক বেশি কার্যকরী।
তাছাড়াও ড্রাইভিং লাইসেন্স মূলত সেই সকল মানুষের থেকে থাকে, যারা গাড়ি চালানোতে দক্ষ। আর আমরা প্রত্যেকেই জানি বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রচুর হারে বেড়ে যাচ্ছে। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে– অদক্ষ ড্রাইভার রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা এবং গাড়ি চালানো। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্স মূলত গাড়ি চালনায় দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিকেও চিহ্নিত করে।
রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
গাড়ির ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে আপনাকে। মূলত গাড়ি চালাতে এই কাগজটিও অধিক বেশি জরুরী। এখন কথা হচ্ছে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট গ্রহণের জন্য আপনি কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবেন এবং আপনাকে কি কি করতে হবে? এ পর্যায়ে মূলত ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এর জন্য বায়োমেট্রিক্স প্রদানে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট গ্রহণের পদ্ধতি আমরা আপনাদেরকে সাজেস্ট করব। তাহলে আসুন জেনে নেই।
- প্রথমত: আপনি আপনার মোবাইল ফোনের এসএমএস অপশনে প্রবেশ করুন।
- দ্বিতীয়ত: NP<SP>Space>B<Space>Date টাইপ করুন।
- তৃতীয়ত: পাঠিয়ে দিন ৬৯৬৯ এই নম্বরে।
ঠিক একইভাবে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট গ্রহণের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণের পদ্ধতি হলো:
- প্রথমত: মোবাইল থেকে এসএমএস এর অপশনে প্রবেশ করুন।
- দ্বিতীয়তঃ NP<Space>C<Space>Date টাইপ করুন।
- তৃতীয়ত: পাঠিয়ে দিন ৬৯৬৯ এই নম্বরে।
আরও দেখুনঃ Convex mirror price in bangladesh.
ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট
ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট মূলত এমন একটি সার্টিফিকেট যেটা দেখানোর মাধ্যমে আপনি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দান করা থেকে বেঁচে যেতে পারেন। বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে নিচের ইমেজটি মনোযোগ সহকারে এক নজরে পড়ে ফেলুন।
ট্যাক্স টোকেন
মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ট্যাক্স টোকেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্যাক্স টোকেন মূলত বাংলাদেশের রাস্তায় বৈধভাবে বাইক চালানোর অনুমতি পত্র। এত ভিন্ন ভাবে বললে বলা যায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বৈধভাবে বাইক চালানোর জন্য সরকারকে যে ট্যাক্স প্রদান করা হয় তার সার্টিফিকেট বা একটি ছোট্ট টোকেন আকারের কাগজটিই ট্যাক্স টোকেন।
যেটার মেয়াদ থেকে থাকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আর সেই নির্দিষ্ট সময় পরবর্তীতে ১৫ দিনের মধ্যে নতুন ট্যাক্স টোকেন এর জন্য আবেদন করতে হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় কিছু ফ্রি প্রদান করতে হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। বছরে মূলত ১০০ সিসির ওপরে বাইকের জন্য পেমেন্ট দিতে হয় ১০১৫০ টাকা এবং দুই বছরের জন্য ২৩০০ টাকা।
ফিটনেস সার্টিফিকেট
ফিটনেস সার্টিফিকেট হচ্ছে মোটর কার, জিপ ও মাইক্রো বাস চালানোর একটি নথিপত্র। মূলত দুই বছর অন্তর অন্তর ফিটনেস নবায়নের সুযোগ করা হয়েছে সম্প্রতি। আর এর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করতে হয়।
একজন মানুষকে মূলত ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার আগে বি আর টি এর পরিদর্শক সে গাড়িটির যান্ত্রিক অবস্থা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। আইন বিধি অনুযায়ী যদি গাড়ির কোন যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে এবং কাগজপত্রে ভেজাল থাকে তাহলে সেটা পুনরায় নবায়ন করা হয়। তাই ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য ফিটনেস সার্টিফিকেট অবশ্যই কাছে রাখাটা জরুরী।
রুট পারমিট
গাড়ি চালানোর জন্য এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। যেটা আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আবেদন করার মাধ্যমে। রুপার নেট ইস্যু ও নবায়ন প্রক্রিয়া জানতে এখনই ভিজিট করুন এখানে- লিংক ।
মূলত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ২৮ ধারা মোতাবেক যে কোন গাড়ি চালানোর জন্য রুট পারমিট থাকতে হবে এমনই বিধান কার্যকর করা হয়েছে। তবে হ্যাঁ এটি মোটরসাইকেল অথবা ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য একেবারেই প্রযোজ্য নয়।
গাড়ির ফিটনেস করতে কি কি লাগে
গাড়ির ফিটনেস এর জন্য বেশকিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। কেননা সেই ডকুমেন্টসগুলো জমা দেওয়ার মাধ্যমে বিআরটিএস অফিস হতে একজন ড্রাইভার বা গাড়ির মালিক তার গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি গুলো হলো:
- প্রয়োজনীয় ফ্রি প্রদানের রশিদ
- অনুমিত আয়কর প্রদানের প্রমাণ পত্র
- টিন সংক্রান্ত কাগজপত্রের সত্যায়িত কপি
- হালনাগাদ ট্যাক্স টোকেন এর সত্যায়িত ফটোকপি
- নির্ধারিত ফরমে পূরণকৃত ও স্বাক্ষরকৃত আবেদন পত্র
বাইক চালাতে কি কি কাগজপত্র লাগে
মোটরসাইকেল চালাতে আপনার কাছে কি কি কাগজপত্র রাখবেন? জানতে হলে নিচের পয়েন্টগুলো মনোযোগ সহকারে দেখুন।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- ট্যাক্স টোকেন
- স্মার্ট কার্ড বা রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট।
গাড়ির কাগজ করতে কত টাকা লাগে
গাড়ির কাগজ করতে মূলত নির্ধারিত পরিমান টাকা লাগে। এ পর্যায়ে আমরা আপনাদেরকে সম্মখ একটি ধারণা প্রদান করব। জানা যায় মূলত প্রাইভেট কার মালিকদের সিসিভিদে গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের জন্য অগ্রিম ১৫ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়।
অপরদিকে ১৫০০ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে ৩০ হাজার টাকা, ২০০০ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা, ২৫০০ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকা, ৩০০০ থেকে ৩৫০০ সিসি পর্যন্ত ১ লাখ টাকা, ৩৫০০ সিসি বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির ক্ষেত্রে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং মাইক্রোবাস ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। তবে টাকার এই পরিসীমাটা সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে বাড়তে চলেছে।
গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য
পরিশেষে: তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকের আলোচনা পর্ব এখানেই শেষ করছি। যেহেতু এই দেশ আমাদের, দেশের মানুষ গুলো আমাদের তাই সড়ক দুর্ঘটনা থেকে সকলকে বাঁচাতে আমাদের উচিত সঠিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো এবং আইন অনুযায়ী গাড়ি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সর্বদা নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করা।