গ্রামে ব্যবসায়ের আইডিয়া | গ্রামে করা যায় এমন ১০ টি ব্যবসায় সম্পর্কে বিস্তারিত 

0
57

অনেকে হয়তো ভেবে থাকবেন যে, গ্রামে ব্যবসায় করার কথা। মনে হতে পারে যে, গ্রামেও কি ব্যবসায়ে সফল হওয়া সম্ভব যেমনটা শহরের অনেক মানুষ সফল হয়েছে?

 

গ্রাম এবং শহরের মধ্যকার অনেক পার্থক্য রয়েছে। যেমনঃ মানুষের পছন্দ, রুচি, ভৌগোলিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা সহ ইত্যাদি বিষয়। তবে গ্রামেও ব্যবসায় করে ভাল পরিমাণে সফলতা লাভ করা সম্ভব।

 

শহরে অনেক কিছু অনুকূলে থাকে না। কিন্তু গ্রামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুকূলে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ কাঁচামালের সহজলভ্যতা। এই সুবিধাটি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায় করা সম্ভব।

তাই গ্রামের পরিবেশের সাথে মানন্সই এবং অল্প পুজিতে শুরু করা যায় এমন কিছু ব্যবসায় আইডিয়া নিয়ে আর্টিকেলটি সাজানো।

গ্রামে করা যায় এমন ১০টি  ব্যবসায়ের আইডিয়া 

 

১. ছাগল পালন

 

গ্রামে লাভজনক ব্যবসায়ের মধ্যে ছাগল পালন সেরা। শুধুমাত্র গ্রামেই নয় বরং শহরেও ছাগল পালনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

 

এর মাংস বর্তমানে অনেক দামে বিক্রয় হয়। এছাড়া দুধ বিক্রয়ের মাধ্যমেও ভাল পরিমাণে আয় সম্ভব।

 

আর গ্রামে ছাগল পালনের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। সেখান থেকে ছাগলের মাংস এবং দুধ গ্রামে বিক্রয় করার মাধ্যমে ব্যবসায় করতে পারেন। এছাড়া আপনি শহরে সাপ্লাইয়ের মাধ্যমেও ব্যবসায় করতে পারেন।

 

কুরবানি ঈদের সময় বা অন্য যে কোনো সময় আপনি গ্রাম থেকে শহরে ছাগল ব্যবসায়িক ভিত্তিতে পাঠিয়ে আয় করতে পারেন। 

 

প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টাকা হলেই গ্রামে ছাগল পালনের মাধ্যমে ব্যবসায় শুরু করা সম্ভব।

 

২.মৎস্য চাষ

 

বাঙালিরা মাছপ্রিয়। তারা নিয়মিত তাদের খাদ্য তালিকায় মাছ রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট। এজন্য মাছের চাহিদা বিপুল পরিমানে লক্ষ্য করা যায় বাংলাদেশে। 

 

তাই আপনিও গ্রামে মৎস্য চাষ করতে পারেন। নদী নালা বা পুকুরে মৎস্য চাষ করা যায়। তবে এজন্য প্রথমে ভালমতো প্রশিক্ষণ নিয়ে নেয়া জরুরি। 

 

কেননা, প্রশিক্ষণ ছাড়া এ ব্যবসায়ে নামলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

 

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বা এ জাতীয় ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এ ব্যবসায়টি আপনার গ্রামে করতে পারেন। 

 

এটি লাভজনক গ্রামীণ ব্যবসায়ের মধ্যে একটি।

 

৩. কাঁচাবাজারের পণ্যের ব্যবসায়

 

প্রতিদিন প্রায় সবার বাড়িতেই বিভিন্ন রকম সবজি রান্না করা হয়। গ্রামে শহরে সর্বত্রই এর চাহিদা রয়েছে। তাই এ চাহিদাকে কাঁচাবাজারের পণ্য নিয়ে গ্রামে ব্যবসায় করতে পারেন।

 

নিজে সবজি উৎপাদন করে অথবা পাইকারি বাজার থেকে কিনে নিয়ে গ্রামে খুচরা বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসায় করতে পারেন। অথবা শহরে বাজারজাত করেও ব্যবসা করতে পারেন।

 

মাত্র ১০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে এই ব্যবসয়টি শুরু করতে পারেন। এটি একটি লাভজনক ব্যবসায়, যার মাধ্যমে অনেকেই সফলতা লাভ করেছে।

 

৪. হস্তশিল্পের মাধ্যমে ব্যবসা

 

বহুকাল আগে থেকেই হস্তশিল্পের চাহিদা চলে আসছে। গ্রামাঞ্চলে এ কাজের সমাহার প্রায়ই দেখা যায়। গ্রামের মানুষ হস্তশিল্পের পণ্য ব্যাপক ব্যবহার করে থাকে।

 

শুধু গ্রামেই নয় বরং শহরেও বিভিন্ন হস্তশিল্প জাত পণ্যের চাহিদা রয়েছে। হস্তশিল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ

 

  • নকশিকাঁথা
  • কাঠের শিল্প
  • বেত শিল্প
  • মাটির তৈরি বিভিন্ন শিল্প
  • শীতল পাটি
  • পাট শিল্প

 

আপনি যদি এসব হস্তশিল্পের কাজ জানেন, তাহলে গ্রামের পাশাপাশি ষহরে বাজারজাত করার মাধ্যমে ব্যবসায় করতে পারেন। শহরে সাধারণত ভাল দামে এসব পণ্য বিক্রয় হয়ে থাকে।

 

শহরের মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আপনার হস্তশিল্পের পণ্য বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দিতে পারেন।

 

অনেক এমন মানুষও রয়েছে, যারা গ্রাম থোে এসব পণ্য কিনে শহরে ব্যবসায় করে। তাতের কাছেও বিক্রয় করতে পারেন। 

 

এই ব্যবসায়ের জন্য গ্রামীণ পরিবেশ হলো অনুকূল। স্বল্প মূলধন বিনিয়োগে এ ব্যবসায়টি আপনিও শুরু করে দিতে পারেন।

 

৫. শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল সরবরাহ

 

একটি শিল্পের জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঁচামালের দরকার হয়। এই কাঁচামাল গুলো সাধারণত বিভিন্ন বন থেকে সংগ্রহ করতে হয়। গ্রামাঞ্চলে গাছগাছালি ও বনের আধিক্য রয়েছে।

 

এছাড়া বিভিন্ন শিল্পের জন্য দরকারি বিভিন্ন কাঁচামাল গ্রামীণ অঞ্চল থেকেই সংগ্রহ করতে হয়। 

 

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনি শিল্পকারখানা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করার মাধ্যমে ব্যবসায় করতে পারেন।

 

শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সাধারণত বিপুল পরিমাণে কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। তাই তাদের নিকট কাঁচামাল সরবরাহ করে বড় পরিমানে ব্যবসায়ীক লাভ পাওয়া সম্ভব।

 

এক্ষেত্রে আপনার মূলধন বেশি লাগলেও এই ব্যবসায় করার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। আর গ্রামে এটা করার অনুকূল পরিবেশও রয়েছে।

 

৬. আচারের ব্যবসায়

 

এখন বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বয়ামজাত আচার পাওয়া যায়। এগুলো বেশ ভাল দামে বিক্রয় হয়।

 

কিন্তু মানুষ সাধারণত এসব আচারের চেয়ে মানুষের হাতে বানানো আচারকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

 

গ্রামে আচার বানিয়ে ব্যবসায় করে সফল হয়েছেন এমন মানুষ রয়েছে। এমনকি পত্রিকাতে তাদের ব্যাপারে আলোচনাও হয়েছে। 

 

তাই আপনি গ্রামে থেকে আচার বানিয়ে সেগুলো গ্রামে খুচরা বিক্রয় করতে পারেন।

 

এছাড়া শহরে সেগুলো বাজারজাত করেও আয় করতে পারেন। বর্তমানে সোশ্যাল সাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অনেকে তাদের পণ্য বিক্রয় করছে।

 

তাই আপনিও ফেসবুকের মতো মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে আচার বানিয়ে ব্যবসায় করতে পারেন।

 

৭. খাঁটি খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়

 

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে ভেজাল খাদ্যে বাজার সয়লাব হয়ে আছে। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে চাল, চিনি, দুধজাতীয় পণ্যেও ভেজাল রয়েছে।

 

এসব ভেজাল খাদ্য খেয়ে অনেক মানুষই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই খাঁটি পণ্যের চাহিদা বর্তমানে অনেক বেড়েছে। শহরে ভেজাল বেশি মিললেও গ্রামে খাঁটি পণ্য পাওয়া যায়।

 

তাই আপনি সততার সাথে খাঁটি খাদ্যপণ্যের ব্যবসায় করতে পারেন। যেমনঃ খাঁটি মধু, ঘি, চাল, চিনি, মুড়ি, মাখন, অর্গানিক তেল ইত্যাদি নিয়ে ব্যবসায় করতে পারেন।

 

গাইবান্ধা জেলাল বেলাল হোসেন খাঁটি খাদ্যপণ্যের ব্যবসায় করে আজ সফল। তিনি চান খাঁটি পণ্য যেন সারা দেশে ছড়িয়ে যায়। 

 

পত্রিকায় তার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আপনিও খাঁটি ও অর্গানিক খাদ্যপণ্য নিয়ে ব্যবসায় করতে পারেন।

 

৮. হাঁসমুরগি ও কোয়েল পালন

 

এটি একটি বহুল পরিচিত ব্যবসায়ীক পদ্ধতি। গ্রামে প্রায় সর্বত্রই হাঁস-মুরগি পালন করতে দেখা যায়। 

 

এটি পালন করা সহজ ও লাভজনক। অল্প মূলধন বিনিয়োগ করে এ ব্যবসায়টি সহজেই গ্রামে শুরু করা যায়।

 

হাঁস-মুরগির ডিমের চাহিদা গ্রামে শহরে সর্বত্র দেখা যায়। ডিম বিক্রয়ের মাধ্যমে ভাল পরিমাণে অর্থ আয় সম্ভব। 

 

আপনি যদি নতুন হয়ে থাকেন তাহলে প্রশিক্ষণ নিয়ে আপনার গ্রামে এ ব্যবসায়টি শুরু করতে পারেন।

 

২০ হাজার টাকা যথেষ্ট ব্যবসায় শুরু করার জন্য। প্রথমে ছোট থেকে শুরু করা উত্তম। ব্যবসায় নিয়মিত লাভ হলে খামার করতে পারেন। হাঁস-মুরগির পাশাপাশি একইভাবে কোয়েল পাখিও পালন করতে পারেন।

 

৯. ট্রেনিং সেন্টার দ্বারা ব্যবসায়

 

গ্রামের যুবকদেরকে কর্মক্ষম করে কাজে নিয়োজিত করা বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু শহরের মতো ট্রেনিং সেন্টারের পরিমাণ গ্রামে কম মেলে।

 

তাই এই অভাবটি পূরণ করার মাধ্যমে গ্রামে ব্যবসায় করা যায়। যুবকদের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। 

 

এ লক্ষ্যে ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে আপনি নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি গ্রামের বেকার যুবকদেরও স্বাবলম্বী হওয়ার একটা পথ হবে ইনশা আল্লাহ্।

 

১০. ফার্মেসির ব্যবসায়

 

শহরের মতো গ্রামেও ঔষধের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু শহরের তুলনায় গ্রামে মানসম্মত ওষুধের ফার্মেসির পরিমাণ অনেক কম। 

 

তাই গ্রামে ফার্মেসির ব্যবসায় দিতে পারেন। দেশি বিদেশি বিভিন্ন ঔষধ রাখার পাশাপাশি একজন এমবিবিএস ডাক্তারের চেম্বার খুলে দিতে পারেন। 

 

এর ফলে গ্রামের মানুষের উপকারের পাশাপাশি আপনি ব্যবসায়ীক ভাবে লাভবান হবেন ইনশা আল্লাহ্।

আরো পড়ুন : সেরা ১০ টি ব্যবসা আইডিয়া 

যে ব্যবসায়ই করুন না কেন, প্রথমে ছোট থেকে শুরু করাটা কম ঝুঁকিপূর্ণ। আর প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসায় নামাটাও গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামে ব্যবসায় করার অনেক ভাল ভাল ক্ষেত্র রয়েছে। তাই আপনিও আপনার সুবিধানুযায়ী ব্যবসায়ে নেমে যেতে পারেন।

 

Visited 3 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here