তেঁতুলের উপকারিতা অপকারিতা ও গুনাগুন

0
12

তেঁতুলের উপকারিতা অপকারিতা ও গুনাগুন

একটি ফল হিসেবে আমাদের অনেকের কাছে পরিচিত হল তেঁতুল। 

আপনি কি জানতে চান তেঁতুলের নানা ধরনের উপকারী গুণ গুলো সম্পর্কে?

আমাদের দেশ একটি প্রাকৃতিক সমৃদ্ধশালী একটি দেশ। নানা ধরনের গাছে ঘেরা, আমাদের এই দেশ। আমাদের এই দেশে, যেদিকে চোখ যায় চারদিকে শুধু গাছ আর গাছের সমারোহ। এদের  মধ্যে কিছু যেমন ফুল গাছ রয়েছে, তেমনি রয়েছে ফল গাছ, রয়েছে নানা ধরণের ওষুধি গাছ। প্রতিটি ফুল গাছের যেমন সময়কাল আছে, ঠিক তেমনি করে ফলগাছের একটি নির্দিষ্ট সময়কাল আছে। যদিও বাংলা জৈষ্ঠ্যমাসকে ফলের মাস বলা হয়। তবুও সারা বছরই কোন না কোন ফলের দেখা মিলে আমাদের এই দেশে।  

নানা ধরণের জানা অজনায়া ফল গাছ রয়েছে আমাদের চারপাশে। এই গাছগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ গাছ আমাদের অক্সিজেন সরবরাহকারী পাশাপাশি,আমাদের খাদ্যের যোগানদাতা বটে। গাছপালা থেকে আমরা নানা ধরনের ফলমূল থেকে আমাদের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে থাকি। তাই সেই জন্য গাছ আমাদের পরম বন্ধু হিসেবে কাজ করে।

তেঁতুলর বৈজ্ঞানিক নাম

একটি টকজাতীয় ফল হিসেবে অনেকের কাছেই বেশ পছন্দের হল তেঁতুল। তেঁতুলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো ( Tamarindus Indica )

তেঁতুলের ইংরেজি নামঃ

তেঁতুলের ইংরেজি নাম হলো ( Melanesian Papeda ) । এটি একটি দানা যুক্ত ফল। বিশেষ আবরণের খোসা দ্বারা পানি আবৃত থাকে এই ফলটির। এটি কাঁচা অবস্থায় যেমন খাওয়া যায় ঠিক তেমনি এটি পাকা অবস্থায় ভালো খাওয়া যায়। তাই আমাদের দেশের ছোট বড় সকলের কাছে জনপ্রিয় একটি ফল হল তেঁতুল।

তেতুলের পুষ্টিগুণ
তেঁতুলের উপকারিতা

তেঁতুলের উপকারিতাঃ

তেঁতুল শুধুমাত্র আমরা শুধু যে ফল হিসেবে খাই তা কিন্তু নয়। বরং তেঁতুল আমাদের শরীরে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা সমাধানে, বেশ উপকার সাধন করে। কিন্তু আপনি কি জানেন তেঁতুলের উপকারিতার কথা? আপনাদের সুবিধার্থে চলুন জেনে আসি তেঁতুলের বেশ কিছু উপকারিতার কথা-

  • শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

তেঁতুল আমাদের শরীরে হজম শক্তি বাড়তে সাহায্য করে। যার কারণে আমাদের পেটের পীড়া, গ্যাস্ট্রিক, ডাইরেরিয়ার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। 

  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে :

নিয়মিত তেতুল খেলে আমাদের শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

  • পেটের ব্যাথা দূর করে :

তেঁতুল গাছের ছাল বা বাকল আমাদের শরীরে পেটের ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে। তাই যাদের এই সমস্যাটি রয়েছে তারা প্রক্রিয়াকরণ খেয়ে নিতে পারেন তেঁতুল গাছ ছাল বা বাকল। 

  • বহুমূত্র রোগ নিয়ন্ত্রণ:

তেঁতুলের বীজ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে চিনির পরিমান কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত তেঁতুলের বীজে খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ডায়বেটিক রোগ নিরাময় করতে ভূমিকা পালন করে। অন্যদিক ডায়বেটিক আক্রান্ত রোগীদের শরীরে সুগার নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এর অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে ডায়বেটিক রোগ।

তাই যারা ডায়বেটিক সমস্যায় আক্রান্ত তাদের রোগটি নিয়ন্ত্রণে খেতে পারেন তেঁতুলের বীজ। 

Like Fishing Visit Now 

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন

তেঁতুল সম্পূন ফ্যাট ফ্রি। পাশাপাশি তেঁতুল সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় তেঁতুল আমাদের শরীরে ওজনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। 

  • ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী:

তেঁতুলে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট। যা আমাদের মানব ক্যান্সার এর জীবাণু প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। তেতুলের ফলে শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 

  • বিভিন্ন ক্ষত নিরাময়ে:

তেঁতুল গাছের পাতা এবং ছালে রয়েছে তীব্র পরিমানে এন্টি সেপটিক। যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের ক্ষত নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 

  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেঃ

তেঁতুল আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সেই সাথে ত্বককে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করে। 

  • আলসার প্রতিরোধে:

নিয়মিত তেতুলের বীজ গুঁড়ো করে নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে আলসার প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে। 

  • হার্ট সু্স্থ রাখতে :

তেঁতুল আমাদের শরীরে বিদ্যমান কোলেস্টেরল এর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে আমাদের হার্ট সুস্থ থাকে। 

  • সর্দি-কাশি প্রতিরোধে ভূমিকা পালন:

নিয়মিত তেঁতুল খাওয়ার ফলে ট্যাবআমাদের শরীরে সর্দি কাশি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। 

  • এলার্জি প্রতিরোধে:

আমাদের শরীরে নানা ধরনের এলার্জি প্রতিরোধে ভূমিকা  পালন করে থাকে তেঁতুল। 

  • লিভারের সুরক্ষা প্রদান:

নিয়মিত তেঁতুল খাওয়ার ফলে আমাদের লিভার সুরক্ষিত থাকে। ফলে লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

তেতুলের উপকারিতা
তেঁতুলের উপকারিতা

তেঁতুলের অপকারিতাঃ 

উপকারিতার পাশাপাশি তেতুলের বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে। চলুন জেনে নেই তেঁতুলের অপকারিতা সম্পর্কে

  • শরীরে রক্তপাত বৃদ্ধি করে:

অনেক সময় নির্দিষ্টি কিছু ঔষুধ যেমন এন্টি প্ল্যাটিলেট ড্র্যাগ ,ওইস্পিরিন ইত্যাদি ওষুধ যদি কোন কারণেই খেয়ে থাকেন, তার পাশাপাশি তেতুল খাওয়ার ফলে শরীরে রক্তপাত বৃদ্ধি পায়। 

  • গ্লুকোজের মাত্রা কমেঃ

অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। ফলে অনেকেই হাইপোগ্লেসিমিয়াতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 

  • শরীরে এলার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পায় :

অনেক সময় অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে এলার্জির বৃদ্ধি পায়।  অনেক সময় সেই এলার্জি থেকে নানা ধরনের ক্ষতের সৃষ্ট হয়। 

  • ওজন কমে যাওয়া

অতিরিক্ত পরিমাণে তেঁতুল খেলে শরীরের ওজন কমে যেতে পারে। 

  • দাঁত নষ্ট হয়:

এছাড়াও অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়।ফলে দাঁতের ক্ষতি হয়। দাঁত নষ্ট হবার মতো সমস্যা হয়ে থাকে।

  • পিওথলি সমস্যা:

অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে পিত্তথলিতে সমস্যা হয়। এই সমস্যা থেকে অনেকের পিত্তথলিতে পাথর হতে সাহায্য করে। 

  • জন্ডিস

অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে জন্ডিসের মতো সমস্যা হতে পারে। 

  • শরীরে এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়ঃ

তেঁতুলে প্রচুর পরিমানে রয়েছে এসিটিক এসিড। যা খাওয়ার ফলে শরীরে এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে।

অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি  জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছেন। তেঁতুল তার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম নয়। তবুও আমরা তেঁতুলে ভালো দিক গ্রহণ করে খারাপ দিক বর্জন করব। 

Like Nike Running Shoes Visit Now 

তেঁতুলের আচার

অনেকেই তেঁতুল কাঁচা খেতে পছন্দ করে,আবার অনেকে তেঁতুল পাকা খেতে বেশ পছন্দ করে। অনেকে আবার ভর্তার সাথে খেতে পছন্দ করে আবার অনেক তেঁতুল জুস বানিয়ে তেঁতুল খেতে পছন্দ করে। তাই অনেক ক্ষেত্রে তেঁতুলের বহুমুখি ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

 

কিন্তু তেঁতুলের সবচেয়ে যে দিকটি সবার পছন্দ তা হলো তেঁতুলের আচার। বয়স ভেদে যে কোনো মানুষ তেঁতুলের আচার অনেক বেশি পছন্দ করে। তেঁতুলের আচারের বেশ কিছু উপকারিতা থাকার সবাই এই আচার বেশ পছন্দ করে। 

চলুন জেনে নেই তেতুলের আচারের উপকারিতা সম্পর্ক;

  • তেঁতুলের আচার আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। 
  • তেঁতুলের আচার আমাদের হৃদরোগ সুস্থ করতে সাহায্য করে। 
  • শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে দেয়।  

এত্তসব গুনাবলি যখন এক আচারে পাওয়া যায় তাহলে সেই আচার তৈরি করা সময়ের দাবি।চলুন জেনে নেই কিভাবে বানাতে হয় তেঁতুলের আচারঃ

থানকুনি পাতার উপকারিতা-অপকারিতা ও গুনাগুন ভিজিট করুন

উপকরণসমূহঃ

তেঁতুলের আচার তৈরি করতে সবার প্রথমে আমাদের যে যে উপকরণ গুলো লাগবে তা হলো-

  • তেঁতুল (এক কেজি)। 
  • চিনি (পরিমাণমতো)। 
  • সরিষার তেল (এক কাপ)।
  • পাঁচফড়ন( এক কাপ )।
  • জিরা ও ধনিয়া গুঁড়া (প্রত্যেকটি এক চা চামচ করে)।
  • লবণ(স্বাদমতো)।

রান্নার প্রণালিঃ

প্রথমে আচার তৈরি করার সমস্ত মসলা হালকা গরম করে নিয় তা গুঁড়ো করে  বা ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তেঁতুল থেকে বিচি আলাদা করে নিতে হবে। একটি কড়াইয়ের সরিষার তেলের সাথে হালকা পাঁচ ফোড়ন ভেজে নিতে হবে। তারপর তেঁতুল ঢেলে দিতে হবে। পানি না শুকিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত অনবরত নাড়তে হবে। 

এরপর সকল মসলার সাথে লবন চিনি মিলিয়ে ভালোমতো অল্প আঁচে চুলার উপর রাখতে হবে কিছুক্ষন। ধীরে ধীরে পানি শুকিয়ে গেলে নামিয়ে পরিবেশন করুন ত্বক ঝাল ,মিষ্টি তেঁতুলের আচার।

উপসংহারঃ

একসময় মানুষ তেঁতুলকে শুধুমাত্র ফল হিসেবে কল্পনা করলেও এখন মানুষ এর উপকারিতার কথা জানছে।নিজের আঙ্গিনায় রোপন করঋে এই গাছ।এভাবে আমরা প্রত্যেকটি গাছকে সংরক্ষণ করতে পারব।

Visited 23 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here