থানকুনি পাতার উপকারিতা-অপকারিতা ও গুনাগুন

0
15

থানকুনি পাতা উপকারিতা-অপকারিতা ও গুনাগুন

রাস্তার আশেপাশে ঝোপঝাড়ে, রাস্তার ধারে দেখা যায় থানকুনি পাতা 

কিন্তু আপনি এই উদ্ভিদকে শুধুমাত্র সাধারণ কোন ধরণের গাছ ভেবে ভুল করছেন কি?

 

প্রকৃতি আমাদের জন্য একটি আশীর্বাদ। বিস্তীর্ণ জানা না জানা গাছ গাছালিতে ঘেরা আমাদের এই প্রকৃতি। প্রত্যেকটি গাছ-গাছালি আমাদের কোন না কোন ভাবে উপকার করে আসছে। আমরা কিছু কিছু  সাধারণ গাছকে আমরা তেমন একটা যত্নআত্তি না করলেও প্রত্যেকটি গাছের রয়েছে নানা ধরণের ঔষুধি গুণাগুণ। মানব জীবনে শরীরের যত ধরণের শারীরিক সমস্যা আছে, তা থেকে মুক্তি পাবার জন্য, আমরা চাইলে আমাদের ভেষজ গুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ সমূহকে ব্যবহার করতে পারি। 

 

থানকুনি পাতা 

ভেষজ উদ্ভিদসমূহ গ্রহণের ফলে আমরা যেমন উক্ত রোগসমূহ থেকে মুক্তি পেতে পারব। ঠিক তেমনি আমাদের নাম না জানা গুণসম্পন্ন এইসকল উদ্ভিদ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারব। আমাদের চারপাশের ঝোপঝারে, বিস্তীর্ণ মাঠে, জঙ্গলের মধ্যে ছোট ছোট, একধরনের গোল আকৃতির খাঁজ খাঁজ কিছু পাতার দেখা মিলে। মূলত ঝোপঝাড়ে দেখা মেলা সেই উদ্ভিদটি থানকুনি পাতা নামে আমাদের সকলের কাছে বেশ পরিচিত। থানকুনি পাতা শুধুমাত্র কোনো উদ্ভিদ নয় বরং এর রয়েছে নানান ধরণের ঔষুধি গুনাগুন। 

 

থানকুনির উদ্ভিদটির ল্যাটিন নাম হল Centella Asiatica। গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার কিছুটা দেখা মিললেও শহরে থানকুনির পাতার দেখা নাই বললেও চলে। তাই শহরের মানুষ বুঝতেই পারেনা যে কত গুনাগুন সম্পন্ন উদ্ভিদ এই থানকুনি। থানকুনিকে গ্রামাঞ্চলে অনেকেই আদমকুনী নামেও পরিচিত। আবার কিছু কিছু অঞ্চলভেদে থানকুনিকে আদামানি, আদাগুনানী, মানামানি, ধূলাবেগুন ইত্যাদি সব অদ্ভুদ নামে পরিচিত।  

 

বহুবছর ধরে গ্রামাঞ্চলগুলোতে থানকুনিকে তাদের নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করে আসছে । কিছু কিছু অঞ্চলে, নানা ধরণের রোগের  উপকারিতার জন্য মামুষ খেয়ে থাকে থানকুনি পাতার রস। আবার অনেক অঞ্চলে থানকুনি পাতাকে ভর্তা আকারে খাওয়া হয়। 

 

বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র প্রাকৃতিক মালিকানা, পেটেন্ট-মুলতুবি সূত্র, যা কফির সাথে মিলিত হলে, বিপাকের গতি এবং দক্ষতা উভয়ই বৃদ্ধি করতে পারে। আর ও জানতে ক্লিক করুন 

 

থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ 

থানকুনি পাতায় ভেষজ গুনের পাশাপাশি রয়েছে জানা অজানা নানা ধরণের ঔষুধি গুনাবলি। এই ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদটি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে আমাদের নানা ধরনের উপকার করে থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেই থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে-

 

  • চুলের বৃদ্ধি বাড়াতেঃ

বর্তমানে নারীদের একটি প্রধান সমস্যা হল চুল পড়ার সমস্যা। লিঙ্গভেদে যেকোন ধরণের বয়সের মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত। কিন্তু আপনি জানেন কি? শুধুমাত্র কিছু উপায় মেনে চললেই মুক্তি পেতে পারেন এই সমস্যা থেকে। চুল পড়ার সমস্যায় বেশ কার্যকরি হল এই থানকুনি। 

 

প্রথমে কিছু থানকুনি পাতাকে ভালোমতো ধুয়ে, তা বেটে কিংবা থেঁতো করে নিতে হবে। তার সাথে সামান্য কিছু তুলসী পাতা বেটে একসাথে একটি প্যাক বানিয়ে নিতে হবে। প্যাকটি বানানো হলে গেলে তা চুলের স্কাল্পে লাগিয়ে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট রেখে  দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২ বার ব্যবহার করলে, আপনার চুল পড়ার সমস্যা বেশ খানিকটা কমে যাবে। 

 

  • মানবদেহ থেকে বিষাক্ত উপাফান প্রশমেনের ক্ষেত্রে :

আমরা যখন কোন ধরণের খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে থাকি, সেই খাদ্য উপাদানটি থেকে ভালো উপাদান যেমন আমাদের দেহে একদিকে জমা হয়। ঠিক অন্যদিকে, খারাপ বা বিষাক্ত উপাদান একদিকে জমা হয়।

 

বিষাক্ত উপাদান সমূহ নিঃস্বরণ না করা হলে তা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে। তাই আপনি চাইলে শরীরের সব বিষাক্ত উপাদান ঝেড়ে ফেলতে পারেন খুব  সহজে। তা কিভাবে? চলুন জেনে নেই। 

 

নিয়মিত প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতা বেটে সেই থেকে প্রাপ্ত রসের সাথে, এক চামচ মধু যুক্ত করে প্রতিদিন খাওয়ার ফলে শরীর থেকে সমস্ত বিষাক্ত উপাদান ছড়িয়ে ফেলতে পারে একদম মুহূর্তে।

 

Like You Fishing Visit Now

  • শরীরে নানান ধরণের ক্ষত রোগ চিকিৎসায়ঃ

 

আমরা প্রতিদিন নানা ধরণের কাজ করতে গেলে ধুর্ঘটনা জড়িত নানান ধরণের সমস্যার ফলে হাতে, পায়ের ক্ষত দেখা দেয়। কিন্তু আপনি জানেন কি? শরীরে নানা ধরণের ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে এই থানকুনি। 

 

আপনার যদি শরীরে কোথাও কাঁটা ছেঁড়া হয়ে থাকে, কিংবা আপনি যদি শরীরে কোথাও ব্যাথা পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনি থানকুনি পাতা বেটে সামান্য রস লাগিয়ে দিতে পারেন ক্ষতস্থানে। এতে আপনি সহজে ক্ষতটি যেমন সাড়িয়ে উঠতে পারবেন ঠিক তেমনি ক্ষতস্থানের জ্বালাপোড়ার ভাব কমে যাবে। 

 

  • শরীরে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে :

আমরা প্রতিদিন বেঁচে থাকতে নানা ধরণের খাবার গ্রহণ করে থাকি। পাকস্থলীর বিভিন্ন ধরণের সমস্যার কারণে অনেক সময়ে আমাদের গ্রহণকৃত সব খাবার পরিপূর্ণরুপে হজম হয় না। 

 

কিন্তু এই ঔষুধি গুণসম্পন্ন থানকুনির ফলে আমাদের শরীরে বদ হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। থানকুনি পাতা খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে মানব শরীরে খাবারের হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

 

  • ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার্থে:

আমাদের মধ্যে অনেকেরই অল্প বয়সে, চেহারায় এক ধরনের বয়স্ক ভাব চলে আসে। একে ফলে আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়। কিন্ত আপনি চাইলে খুব সহজে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।

 

এই থানকুনি পাতা বেটে, তার সাথে মধু কিংবা গোলাপজল মিশিয়ে তার সাথে প্রতিদিন মিশ্রণটি মুখে ব্যবহার করলে, আপনার ত্বকের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে, ঠিক ত্বকের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সমাধন করতে ভূমিকা পালন করবে। 

 

  • আমাশয় প্রতিকার হিসেবে:

আজকাল বিভিন্ন বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি দেখা দেয়। কিন্তু আপনি যদি আমাশয়ের সমস্যাটি থেকে মুক্তি পেতে চান, তাহলে আপনি নিয়মিত খেতে হবে থানকুনি পাতা।

 

 প্রথমে আপনি কয়েকটি থানকুনি পাতাকে পরিষ্কার করে তার সাথে চিনি মিশিয়ে প্রতিদিন দুইবার খেলে, আপনি সহজে আমাশয় থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।

 

আমলকি উপকারিতা জানতে ভিজিট করুন  

  • পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগে নিরাময়ের ক্ষেত্রে

আমাদের মাঝে, অনেকেই নানা ধরণের পাকস্থলীর সমস্যায় আক্রান্ত। পাকস্থলীর বিভিন্ন ধরণের সমস্যা নিরাময়ের ক্ষেত্রে আপনি থানকুনি  গাছের পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে, তার সাথে খানিকটা আনারসের পাতা বেটে হলুদের রস সমন্বিত একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। একটি মিশ্রনটি নিয়মিত খেলে পাকস্থলির নানা ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন। 

 

  • ঠান্ডাজনিত সমস্যা সমাধান:

আপনার শরীরে কাশির সমস্যা সমাধানে সামান্য পরিমানে থানকুনি পাতা বেটে, তার সাথে চিনি মিশিয়ে, খেলে ঠান্ডা কাশি জনিত নানা ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।

 

  • জ্বরের প্রকোপ পরে

আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে আমাদের অনেকের শরীরে জ্বরের দেখা দেয়। জ্বর থেকে পরিত্রাণ পেতে, আপনি একটু থানকুনি পাতার রসের সাথে, শিউলির রস মিশিয়ে খাওয়ার ফলে শরীরে আবাহাওয়া জনিত জ্বর থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।

 

  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে

গ্যাস্ট্রিক আমাদের অনেকের ক্ষেত্রে, একটি কঠিন সমস্যা। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে আপনি প্রতিদিন অল্প করে থানকুনি পাতা খেলে, আপনি খুব সহজে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।

 

  • রক্ত জমাট সমস্যা সমাধানেঃ

শরীরে রক্ত জমাটের সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে এই থানকুনি পাতা। 

 

  • রক্ত প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে 

 

সারা শরীরে রক্তের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে এই থানকুনি। 

 

  • পায়ের ব্যাথা প্রশমনে

থানকুনি পাতা খেলে পা ফুলে যাওয়া থেকে শুরু করে পায়ের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করবে।

 

  • মস্তিষ্কের সমস্যা সমাধানে

মস্তিষ্কের নানা ধরণের সমস্যা সমাধানে বেশ জোরালো ভূমিকা পালন করে এই থানকুনি পাতা। 

 

  • অনিদ্রার সমস্যা সমাধানে 

মানব দেহে অনিদ্রার সমস্যা সমাধান কার্যকর ভুমিকা পালন করে থাকে এই থানকুনি পাতা। 

 

থানকুনি পাতার অপকারিতাঃ

উপকারিতার পাশাপাশি থানকুনি পাতার রয়েছে বেশ কিছু অপকারিতা। চলুন তাহলে জেনে নেই থানকুনি পাতার অপকারিতা সম্পর্কেঃ

 

  • কোনো খাদ্যই প্রয়োজনের বেশি খেতে নেই। অতিরিক্ত কোন খাবার খাওয়ার ফলে নানা ধরণের বিপত্তির দেখা মেলে। থানকুনি পাতায় তার ব্যতিক্রম নেই। অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে পেটের পীড়া বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। 

 

  • প্রয়োজনের তুলনায় অত্যাধিক থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে আপনার মাথা ঘুরার মতো নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

 

  • বিভিন্ন ধরণের খোস পাচড়ার কিংবা এলার্জি জনিত  সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

  • যারা লিভারের নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত রয়েছেন, তাদের কোনভাবেই থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত নয়। থাককুনি পাতা খাওয়ার ফলে তারা নানা ধরণের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে।

 

  • যারা বিভিন্ন ধরণের অপারেশনের রোগী রয়েছেন তাদের থানকুনি পাতা না খাওয়া উচিত।

থানকুনি পাতা উপকারিতা

কিভাবে খেতে পারেন থানকুনি পাতা:

যাদের শরীরে নানা ধরণের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে থানকুনি পাতা। শরীরকে ঠিক রাখতে আমাদের থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে ,কিভাবে থানকুনি পাতা খেতে হয়। চলুন আপনাদের সুবিধার কথা জেনে নেই কিভাবে কিভাবে খেতে  পারেন থানকুনি পাতা-

  

  • নানান ধরণের ঔষুধি গুণ সম্পন্ন থানকুনি পাতা খেতে চাইলে, প্রথমে আপনাকে থানকুনি পাতা ধুয়ে তার থেঁতো করে কিংবা ব্ল্যান্ড করে আপনি খেতে পারবেন। 

 

  • থানকুনি পাতা আপনি রোদে শুকিয়ে চূর্ণ করে খেয়ে পারেন। 

 

  • থানকুনি পাতা কেটে তার আলু, মাছের সাথে মাখিয়ে ভর্তা হিসেবে আপনি খেতে পারবেন।

 

  • খালি থানকুনি পাতাসমূহ কেটে পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারবেন।

 

  • থানকুনিকে পাতাকে বড়া  কিংবা পেঁয়াজু এর মতো তৈরি করে খেতে পারেন। 

 

  • থানকুনি পাতাকে আপনি পানীয় হিসেবে খেতে পারেন।

Like Nike Running Shoes Visit Now

থানকুনি পাতা খেলে কি হয়

সময়ের সাথে সাথে মানুষ এখন সচেতন হয়েছে। নানা ধরণের শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে, মানুষ এখন ভেষজ উপাদানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

 

 ভেষজ উপাদান খাওয়ার ফলে, আমাদের শরীরে রক্ত বিশুদ্ধ হয়ে থাকে। ফলে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভবনা কমে যায়। নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে মানব শরীরে সর্বএ  স্তরে অক্সিজেন পৌঁছে যায়। থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন প্রান্তে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে। 

 

উপসংহার:

নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা, কিংবা খাদ্য হিসেবে থানকুনি পাতার ব্যবহারের জুড়ি নেই। কিন্তু কালের বির্বতনে উপকারী এই উদ্ভিদটি হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই সময় এসেছে, এই উপাদানটি সংরক্ষণ করার। তাই চলুন থানকুনি সহ অন্যান্য সকল ধরণের ভেষজ উদ্ভিদ সমূহ নিজের প্রয়োজনে কিংবা পরিবেশের অস্তিত্ব রক্ষায় সংরক্ষণ করে থাকি।এতে বাঁচবে দেশ,বাঁচবে প্রকৃতি। 

 

Visited 11 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here