সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম: আল্লাহর ইবাদতের জন্য সকল মুসলিম দিনে ৫ ওয়াক্ত বাধ্যতামূলক সালাত আদায় করে থাকে। তবে এসকল ফরজ সালাত ছাড়াও ইবাদতের আরো মাধ্যম রয়েছে যার মধ্যে একটি হলো সালাতুত তাসবিহ। যাকে অনেকে তাসবীহের নামাজ বলেও আখ্যায়িত করে। বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ইসলামিক আর্টিকেলের ধারাবাহিকতায় এবারে – ৪ রাকাতের ৩০০ তাসবিহ পাঠের মাধ্যমে সম্পন্ন করা বিশেষ এই নামাজ সম্পর্কে জানানো হবে বিস্তারিত।
সালাতুত তাসবিহ
সালাতুত তাসবিহ হলো এক প্রকার সালাত বা নামাজ, অন্যদিকে তাসবীহ হলো: “সুবাহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার” এই বাক্যটি। মূলত যেই নামাজে এই তাহবীহ গুলো পড়া হয় সেই নামাজকে সালাতুত তাসবিহ বলা হয়। উক্ত নামাজটি অন্য সকল নামাজের মত ফরজ নয়, এটি অনেকটা ঐচ্ছুক নামাজ। তবে আমাদের নবী (সঃ) সাহাবীদের এটা জানিয়েছেন যে, সালাতুত তাসবিহ এমন এক ধরনের নামাজ যা একজন মুসলিম জীবনে একবার হলেও যেনো পড়ে।
হাদীসে উল্লেখিত সালাতুত তাসবিহ
আমাদের নবী (সাঃ) তার নিজ চাচা আব্বাস (রাঃ) কে বলেছিলেন যে, চাচা আপনি সপ্তাহে ১ বার সালাতুত তাসবিহ পড়বেন, সেটি সম্ভব না হলে মাসে একবার পড়বেন, তাও না হলে বছরে একবার পড়বেন, এতেও যদি অক্ষম হয়ে থাকেন তবে জীবনে ১ বার পড়বেন।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফজিলত
উক্ত নামাজে অনেক বেশি ফজিলত থাকে। এর মাধ্যমে জীবনের ছোট – বড়, স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছাকৃত ভাবে করা ভুল, নতুন হোক বা পুরোনো কিংবা প্রকাশ্য বা গোপন – সকল ধরনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আমাদের জীবনে স্বজ্ঞানে বা অজান্তে করা অনেক গুন্নাহ করে থাকি। সেই সকল গুন্নাহ মাফ করানোর জন্য রয়েছে অনেক গুলো মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালার রহমতে অনেক গুলো উপায়ের মধ্যে সবই কার্যকর ও ফজিলত সম্পন্ন। তাই আমাদের সকলেরই জীবনে একবার হলেও সালাতুত তাসবিহ পড়া উচিৎ।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের ক্ষেত্রে প্রতি রাকাতে ৭৫ বার আসবিহ পড়ার মাধ্যমে ৪ রাকাতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়া হয়। তাছাড়া রমজান মাসে উক্ত নামাজের ফজিলত আরো বেশি হয়ে থাকে।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
এই পর্যায়ে সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানানো হবে। সালাতুত তাসবিহ পড়তে হয় ৪ রাকাতে। প্রতি রাকাতে ৭৫ ভার বিভিন্ন স্টেপে তাসবিহ তথা, সুবাহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার পড়তে হয়। এক্ষেত্রে পুরো নামাজের নিয়ম নিম্মে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
১) নামাজের প্রথমেই সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ত করে নিতে হবে। তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতই তাকবিরে তাহরিমা দিয়ে নামাজ শুরু করতে হবে।
নিয়ত: “নাওয়াইতু আন উসালিলয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবা’আ রাকা’আতাই সালাতিল তাসবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
২) প্রথমেই সানা পড়তে হবে। সানা এর পর ১৫ বার তাসবিহ পাঠ করতে হবে।
৩) এরপর স্বাভাবিক নামাজের মত সুরা ফাতিহা ও তার সাথে যেকোনো একটি সুরা মিলাতে হবে। এটুকু শেষ হলে পুনরায় তাসবিহ পড়তে হবে ১০ বার।
৪) তাসবিহ পাঠ শেষে রুকু করতে হবে। এক্ষেত্রে রুকু করা অবস্থায় রুকুর দোয়া পড়ার পর আবার ১০ বার তাসবিহ পাঠ করতে হবে।
৫) এই পর্যায়ে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে “রাব্বানা লাকাল হামদ” পড়ার পর পুনরায় ১০ বার তাহবিহ পড়তে হবে।
৬) পরবর্তীতে সিজদা দিতে হবে, যেখানে সিজদা থাকা কালীন সময় সিজদার দোয়া পড়ার পর ১০ বার, সিজদা থেকে মাথা তুলে ১০ বার এবং পুনরায় সিজদায় দেয়ার পর ১০ বার একই তাহবিহ পড়তে হবে।
এভাবে প্রতি রাতে মোট ৭৫ বার তাসবিহ পড়া হবে। এবং মোট ৪ রাকাত ঠিক একই নিয়মে তাসবিহ পাঠ করতে হবে। এভাবেই মোট ৩০০ তাসবিহ এর সালাতুল তাসবিহ নামাজ সম্পন্ন হবে।
নামাজে ভুল হলে করনীয়
১) যেহেতু সালাতুল তাসবিহ নামাজ পড়ার মূল বিষয় বস্তু তাসবিহ পাঠ করা, সেটিও মোট ৩০০ বার। তাই হিসেব রাখতে গিয়ে অনেকেই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পরে। এক্ষেত্রে বলা আছে – উক্ত নামাজ পড়ার সময় দানাদার তাসবিহ যা বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করা মাকরুহ বা যাকে আমরা উনুচিত কাজ বলে আখ্যায়িত করতে পারি।
২) হাতের আঙ্গুল গুলোর কর গুনে গুনে হিসেব রাখার নিয়ম নেই বা এটা করা যাবে না। তবে তাহরিমা বাধা অবস্থায় তাসবিহ গননা করতে চাইলে সেই অবস্থায় হাতের আঙ্গুল টিপে টিপে হিসাব রাখা যাবে।
৩) যেকোনো অবস্থানে তাসবিহ ভুলে গেলে বা ভুল করলে পরের তাসবিহ পাঠের সময় তা সমন্বয় করে নিতে হবে।
৪) রুকু করার পর দাঁড়ানো থাকা অবস্থায় এবং দুই সিজদায়ের মাঝখানের অবস্থাকালীন সময়ে তাসবিহ ভুলে গেলে তা আর আদায় করতে হবে না।
৫) সূরা পড়ার পূর্বে তাসবিহ ভুলে গেলে সূরা পড়াকালীন সময়ে ভুলে যাওয়া তাসবিহ আদায় করতে হবে।
৬) কেরাত পাঠের পর তাসবিহ ভুলে গেলে রুকুতে গিয়ে তা আদায় করতে হবে।
৭) রুকু করার সময় তাসবিহ ভুলে গেলে প্রথম সিজদা কালীন সময়ে তাসবীহ আদায় করে নিতে হবে।
৮) একইভাবে প্রথম সিজদা কালীন সময়ে তাসবিহ ভুলে গেলে দুই সিজদা এর মাঝখানে সময়ে তাজবি আদায় করে নিতে হবে। মাঝসময়ে তাসবিহ ভুলে গেলে তা দ্বিতীয় সিজদায় তাসবিহ আদায় করতে হবে।
৯) এবং সবশেষে দ্বিতীয় সিজদা সময় যদি তাসবিহ ভুলে যাওয়া হয় তবে পরের রাকাতের কেরাতের সময় আদায় করে নিতে হবে।
১০) একই ধারায় যদি ৪ রাকাত শেষের দিকে তাসবিহ ভুল হলে সালাম ফেরানোর আগে অবশ্যই পড়তে হবে।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের দোয়া
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
উচ্চারন: সুবাহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার
গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য
এই ছিলো সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত যেখানে আলোচনা করা হয়েছে সালাতুত তাসবিহ নামাজ কি, সেটির ফজিলত, নিয়ত ও পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত। মুসলিমদের কাছে এই নামাজটির মর্যাদা খুবই বেশি কেননা, রাসুল (সঃ) সকলকে জীবনে একবার হলেও উক্ত নামাজ আদায় করার জন্য বলেছেন। ইসলাম সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও বিশেষ সব ইবাদতের নিয়ম জানতে বাংলা আলো ওয়েবসাইটের “ইসলাম” ক্যাটাগরিটি অনুসরন করুন।