এমন অনেক বিষয় আছে যা উম্মতে মোহাম্মদী হিসেবে একমাত্র আমরাই পেয়েছি। সেগুলো সম্পর্কে অন্য নবীর উম্মতরা অজ্ঞ ছিলেন। এর মধ্য অন্যতম একটি নিয়ামত হলো জুম্মার দিন। জুমা নামে পবিত্র কুরআনে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল হয়েছে। এ দিন ইসলামী ইতিহাসে বড় বড় ও মহৎ কিছু ঘটনা ঘটেছে। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোর থেকে আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো জুম্মার দিন। মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক উৎসবের দিন শুক্রবার। এই দিনের বিশেষ কিছু আমল ও ফজিলত রয়েছে। আজ আমরা আলোচনা করবো জুম্মার দিনের ফজিলত ও বিশেষ আমল সমুহ নিয়ে।
দুনিয়ায় দিনের হিসাবে জুমার দিনকে শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কেননা হাদিসে এসেছে,নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে দিনগুলোতে সূর্য উদয় হয়- তন্মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম। সেদিন হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়। সেদিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং সেদিন তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়।’ -সহিহ মুসলিম
আল্লাহ তায়ালা বলেন পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! জুমার দিন যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামাজ শেষ হলে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা : ৯-১০)
জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি।জুমার নামাজ ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে।এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৯৮)। জুম্মার দিনকে দোয়া কবুলের দিন হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে৷ কেননা আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় আছে। কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায়, আর তখন সে যদি নামাজে থাকে তাহলে তার কোনো কল্যাণ কামনা থাকলে- আল্লাহ তা পূরণ করেন।’
— বুখারি, হাদিস : ৬৪০০
জুম্মার দিন মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদের জন্যও হাদিসে ঘোষণা এসেছে।যে ব্যক্তি জুমার দিনে মৃত্যুবরণ করবে, সে কবরের ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকবে। হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে অথবা রাতে মৃত্যুবরণ করবে, তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করা হবে।’ -মুসনাদে আহমদ
শুক্রবারের দিনকে বেশ কিছু বিধান ও আদব-কায়দা দ্বারা বিশেষিত করেছেন মহান আল্লাহতালা। এদিনে তিনি জুমার নামাজ ফরজ করেছেন।এ দিনের সুন্নতসমূহ ও ফরজ বিধিবিধান পালন করা সকল মুমিনদের উপর অবশ্য পালনীয়।
এজন্য নবী কারিম (সা.) জুমার নামাজ আদায়ের প্রতি বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং তাতে উৎসাহ প্রদান করেছেন,আর জুমার নামাজ পরিত্যাগ করা থেকে সতর্ক করেছেন।
সহিহ মুসলিম শরীফের হাদিসে,নবীজি (সা.)-কে মিম্বরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন,লোকদের অবশ্যই জুমার নামাজ পরিত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নতুবা আল্লাহ অবশ্যই তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবেন, অতঃপর তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’
জুমার দিন সাপ্তাহিক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হওয়ার কারণে বিশেষ কিছু আদব ও শিষ্টাচার রয়েছে। এর মধ্য কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো –
১) জুম্মার দিন গোসল করা।
যাদের উপর জুম’আ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন(বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮)
পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা উত্তম কাজ।
২) সামর্থ্য থাকলে জুমার নামাজের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা।
বুখারি, হাদিস নং: ৮৮০
৩) জুম্মার দিন মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ৮৪৩)
৪) ভালো পোশাক পরিধান করে জুমা আদায় করা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১০৯৭)
৫) মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩, আহমাদঃ১/২৩০)
৬) আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)
৭) জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দুরুদ পড়া। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ১০৪৭)
৮) মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
৯) বেশী বেশী দোয়া করা। । (বুখারি, হাদিস নং: ৯৩৫)
১০) পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)
এই দিনের বিশেষ কিছু আমল ও ফজিলত রয়েছে।সাপ্তাহিক অন্য ছয় দিনের তুলনায় অধিক মর্যাদাসম্পন্ন দিনটির আমলও অনেক ফজিলতপূর্ণ।
১) সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা
ফজিলতপূর্ণ এই দিনের বিশেষ একটি আমল হচ্ছে সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত,নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করবে তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে। (আমালুল ইয়াওমী ওয়াল লাইল, হাদিস : ৯৫২)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি অজুর পর এই দোয়া পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কেয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)
২) বেশি বেশি দুরুদ পড়া
আবু দাউদ শরীফের হাদিসে এসেছে,
নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়।
৩) বেশি বেশি দোয়া করা
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় আছে। কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায়, আর তখন যদি সে নামাজে থাকে— তাহলে তার কোনো কল্যাণ কামনা থাকলে- আল্লাহ তা পূরণ করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪০০)
মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাসনুন আমলগুলোর মাধ্যমে জুমার দিনের ফজিলত ও বিশেষ আমল সমুহ আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং জুম্মার পবিত্রতা রক্ষা করে এই দিনের কল্যাণ, সওয়াব ও ফজিলত দিয়ে আমাদের ভূষিত করুন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন।
শরীর ভালো তো মন ভালো” ছোটবেলা থেকে আমরা এই কথায় অভ্যস্ত হলেও ঠিকঠাকভাবে মানতে নারাজ। মানসিক সুস্থতা ও শারীরিক স্বাস্থ্য…
লাললালালালালালালালালালালালালালালালালালালালা যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়তবে…
ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে পুরো দেশে সবুজায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে কাতার সরকার। বাংলাদেশি নার্সারি ব্যবসায়ীরাও অংশ নিচ্ছে সবুজায়ন প্রকল্পে। কাতারে ফুটবল…
এআইয়ের সাহায্যে সরু রাস্তার নির্দেশনাও দেখতে পারবেন চালকরা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কুয়াশা ও বন্যার পানি রয়েছে কি-না, তা গুগল ম্যাপসের…
রাগের কারণে আপনার কর্মজীবনেও প্রভাব পড়ে একটুতেই রেগে যান? রাগের মাথায় প্রিয়জনকে কটূ কথা বলে আফসোস করতে হয়? এবার একটু…
সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং দুদেশের জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে ১. ইসলামপন্থি কিংবা জঙ্গিরা নয় সম্প্রতি যে আন্দোলনের মুখে শেখ…
This website uses cookies.