কাঁঠাল-কাঁঠাল পাতার উপকারিতা ও কাঁঠালের পুষ্টিগুণ
আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল আমাদের সকলের খুব পছন্দের একটি ফল।
আপনি কি জানতে চান এর জানা-অজানা গুনাবলি সম্পর্কে?
আমাদের এই পৃথিবীর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য উপাদান। এই সকল উপাদানসমূহ প্রত্যক্ষ কিংনা পরোক্ষভাবে আমাদের কোন না কোন কাজে প্রয়োজন হয়ে থাকে। বেঁচে থাকার স্বার্থে, আমাদের উপকারের স্বার্থে এই সকল উপাদানসমূহ আমাদের উপকার করে থাকে। তাই আমাদের পৃথিবীর অস্তিত্তের স্বার্থে এই সকল উপাদানসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের জীবিকা অর্জন এর স্বার্থে এই সকল প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে অন্যতম হল বিভিন্ন ফলফলাদি যা আমাদের খাদ্যের পাশাপাশি আমাদের শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমরা কয়জনইবা সেই সকল ফলফলাদি সম্পর্কে। তাই আজ আমরা জেনে নেব আমাদের দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল সম্পর্কে নানা ধরণের জানা অজানা তথ্যসমূহ। চলুন তাহলে জেনে নেই কাঁঠাল সম্পর্কে।
-
কাঁঠাল
কাঁঠাল আমাদের সকলের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি ফল। কারণ আমাদের দেশের জাতীয় ফল হল কাঁঠাল। কাঁঠাল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। এটি নিম্নভূমিতে ভালো জন্মে থাকে। এর আদিনিবাস ভারতের পশ্চিমঘাট এবং মালোয়শিয়ান রেইন ফরেস্ট অঞ্চলে মধ্যে রয়েছে বলে ধারণা করা যায়। কাঁঠাল একটি বাংলা শব্দ। কাঁঠালের ইংরেজি নাম হল Jackfruit। কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম হল
Artocarpus heterophyllus। আমাদের দেশের প্রায় সকল অঞ্চলে জন্মে থাকে কাঁঠাল। প্রতিবারই এর অত্যাধিক ফলন হয়ে থাকে আমাদের দেশে।
-
কাঁঠাল পাতার উপকারিতা
কাঁঠাল আমাদের দেশের জাতীয় ফল হওয়ার সুবাধে আমাদের দেশে গ্রীষ্ণকালে কাঁঠালের সর্বত্র দেখা মিলে। কাঁঠাল শুধুমাত্র ফল হিসেবে উপকারি তা কিন্তু নয়। এই ছাড়াও আমাদের নানাবিধ সমস্যার সমাধান হল এই কাঁঠাল। চলুন তাহলে জেনে নেই কাঁঠাল পাতার উপকারিতা সম্পর্কে-
- বরং কাঁঠাল পাতা বিভিন্ন প্রাণীর জন্য একটি উৎকৃষ্ট এবং উপাদেয় খাদ্য। কারণ কাঁঠাল পাতা বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে মাংশ এবং দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
- এছাড়াও কাঁঠাল পাতার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- কাঁঠাল পাতা ডায়বেটিক কমাতে ভূমিকা পালন করে। যারা ডায়বেটিক এর সমস্যায় আক্রান্ত তারা খেতে পারেন কাঁঠাল পাতার রস। মূলত ডায়বেটিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা এই পাতার রস খেলে ডায়বেটিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।
- যেকোনো ধরনের ব্যথা প্রশমনের ক্ষেত্রে ডায়বেটিক পাতা অনেক বেশি কার্যকরি। কোন জায়গায় ক্ষত হলে আপনি সেই ক্ষততে লাগিয়ে দিয়ে পারেন ডায়বেটিক পাতার রস। খুব দ্রুতই দেখবেন সেড়ে উঠবে সেই ক্ষত।
- চর্মরোগ নিয়ন্ত্রণে বেশ ভূমিকা পালন করে কাঁঠাল পাতার রস।
-
কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা
কাঁঠাল আমরা শুধুমাত্র ফল হিসেবে খেয়ে থাকলেও কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে বেশ উপকারিতা। আপনি কি জানেন কাঁঠালের জানা-অজানা নানা ধরনের উপকারিতা সম্পর্কে? চলুন তাহলে জেনে নেই কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে-
-
মাংস পেশী গঠন
কাঁঠালের দানা আপনি শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রেখে দিয়ে তরকারি রান্না করতে পারেন। কারণ কাঠালের দানা মাংশপেশীর গঠন বৃদ্ধি করতে ভূমিকা পালন করে থাকে।
-
বার্ধক্য রেখা দূর করতে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকে এক ধরণের বলিরেখা দেখা দিয়ে থাকে। এই রেখা আমাদের ত্বক এর স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট করে দেয়। তাই আপনি যদি কাঁঠাল খেয়ে থাকেন কাঁঠাল আপনাদের ত্বকের বলিরেখা দূর করতে।
-
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
নিয়মিত কাঁঠাল খেলে আমাদের শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
-
ওজন কমাতে
কাঁঠালে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে কাঁঠাল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ওজন কমতে সাহায্য করে।
-
দাঁতের মাড়ি শক্ত রাখতে
কাঁঠালে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন সি। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে আমাদের দাঁতের মাড়ি শক্ত থাকে।
-
টেনশন কমায়
নিয়মিত কাঁঠাল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে টেনশন কমাতে সাহায্য করে।
-
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে
নিয়মিত কাঁঠাল খেলে কোষ্টকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে।
-
খুদা নিবারণে ভূমিকা পালন
কাঁঠাল আমাদের খুদা নিবারণ করতে বেশ ভূমিকা করে।
-
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
নিয়মিত কাঠাল খেলে আমাদের শরীরে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
-
গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টি পূরণে
নিয়মিত কাঁঠাল খেলে গর্ভবতি মহিলাদের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে।
Like Fishing Visit Now Fishing Blog
-
কাঁঠালের উপকারিতা
কাঁঠাল আমাদের নানাবিধ উপকারিতা প্রদান করে থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেই কাঁঠালের উপকারিতার কথা-
-
হাঁপানি প্রতিরোধে
কাঁঠালের বাকল হাঁপানি প্রতিরোধে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
-
কাঁঠাল চিনির পরিমাণ কমায়
কাঁঠালে এ বিদ্যমান রয়েছে ম্যাংগানিজ যা চিনির পরিমাণ কমাতে বেশ সাহায্য করে।
-
চুল পড়া রোধ করে
কাঁঠাল এ বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন ই। যা আমাদের চুল পড়া রোধ করে চুলের গোড়া শক্ত করে ভূমিকা পালন করে থাকে।
-
চোখের সমস্যা সমাধানে
কাঁঠাল আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে চোখের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করে থাকে।
-
ত্বকের বলিরেখা দূর করতে
আমাদের ত্বকের নানা ধরনের বলিরেখা দূর করতে বেশ ভূমিকা পালন করে কাঁঠাল।
-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
কাঁঠালে রয়েছে ভিটামিন সি, যা আমাদের শরীরে নানা ধরণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে।
-
এজমা প্রতিরোধ করে
আমাদের শরীরে এজমা প্রতিরোধ করতে বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে।
-
সর্দি-কাশি দূর করে
কাঁঠালে বিদ্যমান রয়েছে এন্টিওক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে সর্দি কাশি প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে।
-
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
কাঁঠাল আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
-
শর্করার অভাব পূরণে
কাঁঠাল আমাদের শরীরে শর্করার অভাব পূরণে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
-
কোলেস্টেরল অভাব পূরণ
কোলেস্টেরলের অভাব পূরণে বেশি কার্যকর হলো কাঁঠাল।
-
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
কাঁঠাল আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
-
হাড় শক্ত রাখতে
আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে হাড় শক্ত রাখতে বেশ ভূমিকা পালন করে।
-
পাইলস প্রতিরোধে
মানব দেহে পাইলসের সমস্যা প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
-
রক্তস্বল্পতা সমস্যা সমাধানে
আমাদের শরীরে রক্ত স্বল্পতা সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করে কাঁঠাল।
বাংলা আলো নতুন নতুন খবর পড়ুন
-
কাঁঠালের পুষ্টিগুণ
একটি কাঁঠালে বিদ্যমান রয়েছে পরিমিত পরিমাণ প্রোটিন।একটি পাঁকা কাঁঠালে প্রায় ১.৮ গ্রাম এবং একটি কাঁচা কাঁঠালে প্রায় ৬.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। একটি কাঁঠালে ০.১ গ্রাম শ্বেতসার এবং ০.৪ গ্রামে শ্বেতসার পাওয়া যায়।একটি কাঁঠালে ২১ মিটার বীজে ১১ মি. ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
এছাড়াও কাঁঠালে বিদ্যমান রয়েছে বিটা ক্যারটিন,ভিটামিন এ,সি,বি-১,বি-২,ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম সহ নানা ধরণের খনিজ উপাদান। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে বেশ ভূমিকা পালন করে।
কাঁঠাল শুধুমাত্র ফল হিসেবে খায় তা কিন্তু নয়,বরং কাঁঠাল এর বীজ বেশ উপকারি একটি খাদ্য।
একটি পাকা কাঁঠালের পুষ্টির পরিমাণ
পানি- ৭৭.২ গ্রাম।
শ্বেতসার -১৮.৯ গ্রাম।
আমিষ-১.৯ গ্রাম।
চর্বি-০.১ গ্রাম।
আঁশ-১.১ গ্রাম।
খনিজ দ্রব্য -০.৮ গ্রাম।
ক্যালসিয়াম-২০ গ্রাম।
ফসফরাস-৩০ গ্রাম।
লৌহ-৫০০ গ্রাম।
পটাশিয়াম-২৪৬ গ্রাম।
ভিটামিন ৫৪০ গ্রাম।
থায়ামিন-৩০ মিলিগ্রাম।
রাইবোফ্ল্যাভিন-০.১১ মিলিগ্রাম।
ভিটামিন সি-১১ মিলিগ্রাম।
খাদ্যশক্তি-৮৪ কিলো ক্যালরি।
উপসংহার
আমাদের জাতীয় ফল হিসেবে কাঁঠাল বেশ পুষ্টিসম্পন্ন একটি খাবার।কাঁঠাল শুধুমাত্র ফল হিসেবে নয় নানাবিধ পুষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করে কাঁঠাল।তাই নানাবিধ শারীরিক সমস্যা সমাধান করতে চাইলে আজই খেতে পারেন কাঁঠাল। নানাবিধ পুষ্টির আধার হিসেবে কাজ করে এই কাঁঠাল।এটি এমন একটি ফল যার সকল কিছুই কোন না কোন অংশ কাজে লেগে থাকে।