ক্যাপসিকাম এর উপরকারীতা এবং চাষ করার পদ্ধতি

0
28

ক্যাপসিকাম বিশ্বের প্রতিটি দেশে খুবই জনপ্রিয়। এবং দরকারি একটি সবজি। ক্যাপসিকাম হলো মিষ্টি মরিচ। ঝাল বিহীন মিষ্টি মরিচ ই হলো ক্যাপসিকাম।

ক্যাপসিকাম বিভিন্ন আকারের এবং বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। এটি সাধারণত গোল আকৃতির হয়ে থাকে এবং এর রং লাল,সবুজ এবং হলুদ হয়ে থাকে। বড় বড় রেস্টুরেন্টগুলোতে ক্যাপসিকাম এর চাহিদা অনেক বেশি।

সব ধরনের চাইনিজ ফুড এবং ভেজিটেবল জাতীয় সব খাবারেই ক্যাপসিকামের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। 

বর্তমানে আমাদের দেশেও ইদানিং প্রচুর ক্যাপসিকাম চাষ হচ্ছে। এবং এটি অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

বর্তমানে সারাবিশ্বে ক্যাপসিকাম এর ব্যবহার অপরিসীম। কারণ বিশ্বে টমেটোর পর দ্বিতীয় স্থানে ক্যাপসিকাম রয়েছে।

ক্যাপসিকাম কি?

ক্যাপসিকাম হলো একটি সবজি। বর্তমানে বিশ্বের সব ধরনের ফুলে ক্যাপসিকামের ব্যবহার অনেক বেশি। 

এটি খাওয়ার ফলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এবং এটি ত্বকের জন্য অনেক উপকারী ক্যাপসিকামের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি।

এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। ক্যাপসিকাম খাওয়ার ফলে চোখের সমস্যা খুব কম হয় ।

এটাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং এটি মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ক্যাপসিকামের রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ।

ক্যাপসিকাম এর উপকারীতা

এটি ত্বকের জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ত্বকের সাথে সম্পর্কযুক্ত রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা। ক্যাপসিকাম খাওয়ার ফলে ত্বক জাতীয় সমস্ত রোগ হতে মুক্ত থাকা সম্ভব। 

ক্যাপসিকামে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কম থাকায় এটি খাওয়ার ফলে মোটা হওয়ার কোনো ভয় নেই। 

এছাড়াও এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়। এর উপকারীতা অনেক বেশি। দৈনন্দিন জীবনে এটির ব্যবহারে ত্বক ও নিজেকে সুস্থ রাখা সম্ভব।

টমেটোর পরের প্রয়োজনীয় সবজি হলো ক্যাপসিকাম। বিশেষ করে হোটেল-রেস্টুরেন্টে বেশি দরকার হয় এটি।  সব ধরনের মুখরোচক খাদ্যে ক্যাপসিকামের ব্যবহার হয়ে থাকে।

ক্যাপসিকাম ছাড়া চাইনিজ ফুড কল্পনাও করা যায় না। এছাড়া এটি খাওয়ার ফলে ত্বক সুস্থ থাকে। 

আমাদের দেশের তুলনায় বাইরের দেশে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই এটি রপ্তানি করে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ভাবে প্রচুর লাভ করা সম্ভব। let’s get started.. 

ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি 

 বর্তমানে আমাদের দেশেও এর চাহিদা রয়েছে। ক্যাপসিকাম চাষ একটি লাভজনক পেশা হতে পারে।

 

বীজ সংগ্রহ :

ক্যাপসিকাম চাষের জন্য প্রথমে প্রয়োজন বীজ। বীজ বাইরে বাজার থেকে সংগ্রহ করা যায় এবং আপনি চাইলে ঘরেও এটি উৎপাদন করতে পারেন। 

সে ক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে পরিপক্ক ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করে  মাটি দিয়ে ভরাট একটি পাত্রে বীজ বপন করতে হবে ।

এটি অবশ্যই মাটির ১০-১২ইঞ্চি গভীরে বপন করতে হবে। পরে এটিতে নিয়মিত পানি দিতে হবে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এর থেকে বীজ সংগ্রহ সম্ভব।

 

চারা বপন : 

বীজ দিয়ে চাষ করলে প্রথমে ক্যাপসিকামের চারা তৈরি করতে হবে। চারা তৈরির ক্ষেত্রে সংগ্রহকৃত বীজগুলো ১২ঘণ্টার মতো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে ।

তারপর বীজতলায় ১০সেমি দূরত্ব বজায় রেখে বীজ বপন করতে হবে। প্রয়োজন অনুসারে মাটি হালকা করে ঝুরঝুরে করে দেওয়া যেতে পারে।

বীজ বপনের সাত থেকে দশ দিন পরে গাছ দেখা যায়। চারা যদি ৩/৪পাতাবিশিষ্ট হয় তবে ৯-১২ সেমি পলিব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে। 

এরপর প্রোটিন মিডিয়াতে 3.11 অনুপাতে বালি, মাটি মিশাতে হবে এবং ছায়াযুক্ত একটি স্থানে নিতে হবে

 

জমি তৈরী : 

জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করলে আগে মই দিয়ে জমি তৈরী করে নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে চারা যেন প্রখর রোদ যেন না পায় ।

চারা লাগানোর জন্য অবশ্যই বেড তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে চারার সারির মাঝখানে ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

এবার প্রয়োজন অনুসারে সেচ দেয়া লাগবে। কোনভাবেই যেন জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়।

চারাগাছ খুঁটি দিয়ে দিতে হবে যাতে ফলের ভারে ঝুলে না যায়। প্রয়োজন অনুসারে আগাছা কাটতে হবে।

 

সার প্রয়াগ :

জমির পরিমাপ অনুযায়ী জমিতে সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। এক শতক জমির পরিমাপে: 

ইউরিয়া ১কেজি, 

গোবর ৪০ কেজি, 

এমওপি ১ কেজি, 

টিএসপি ১.৪ কেজি, 

এবং জিপসাম ৪৫০ গ্রাম করে নিতে হবে।

অর্ধেক গোবর জমি তৈরির সময় নিতে হবে এবং বাকি অর্ধেক গোবর অন্যান্য সকল উপাদানের তিনভাগের একভাগ এর সাথে মিশিয়ে চারা রোপণের জন্য যে গর্ত করা হয়েছে তাতে প্রয়োগ করতে হবে। 

বাকি অবশিষ্ট ২৫ দিন এবং ৫০ দিন যথাক্রমে ব্যবহার করতে হবে।

 

সময়সীমা :

ক্যাপসিকাম চাষের ক্ষেত্রে ও সঠিক সময়সীমা প্রয়োজন । যেহেতু এটি বেশি খরাএবং জলবদ্ধতা কোনোটি সহ্য করতে পারে না।

তাই এটি চাষের আদর্শ সময়সীমা হল অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস।

 

পরিচর্যা : 

যেকোনো কিছু চাষ করতে গেলে তার পিছনের শ্রম দিতে হয়। এবং শ্রমের পাশাপাশি সঠিক পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।

 ক্যাপসিকাম চাষের ক্ষেত্রে সঠিক পরিচর্যার প্রয়োজন। তাই ক্যাপসিকাম চারা রোপণের পর জমিতে প্রয়োজন অনুসারে সেচ দিতে হবে। 

কিন্তু প্রয়োজনের বাইরে মাত্রাতিরিক্ত সেচ দেওয়া যাবে না। এতে করে গাছের রোগ দেখা দিতে পারে। বৃষ্টির ফলে জমিতে যেন কোনোভাবেই জলের সৃষ্টির না হয় তার জন্য জমির মাঝে ড্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

ফলের ভারে যেন গাছ হেলে না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে এবং এর জন্য আগে থেকেই গাছে খুঁটি দিয়ে দিতে হবে।

গাছকে পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচাতে কয়দিন পর পর কীটনাশক স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। গাছের আগাছা কেটে ফেলতে হবে।

 

সংগ্রহ :

ক্যাপসিকাম মরিচ সবুজ অবস্থাতে গাছ থেকে সংগ্রহ করা প্রয়োজন। নয়ত এটাতে পোকার সংক্রমণ হতে পারে। 

এই গাছ থেকে সাধারণত সপ্তাহে একবার ফল সংগ্রহ করা যায়।তবে অনেক সময় গাছে একেবারে চার থেকে পাঁচটি ফল আসে। 

ফল সংগ্রহের পর বাজারজাতকরণের পূর্বে ফল কে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। এবং ফল সংগ্রহের সময় প্রতিটি ফলে সামান্য পরিমাণে বোটা রেখে দিতে হবে।

সঠিক নিয়মে সঠিক পরিচর্যার ক্যাপসিকাম চাষের বাণিজ্যিক ভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। স্বল্প মূলধনে এই ব্যবসায় অধিক লাভ করা সম্ভব।

 

 

 

Visited 10 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here