অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তবে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সরকারি ব্যাংক গুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক অন্যতম যেখানে রয়েছে বিশেষ সুবিধা ও ভালো ইন্টারেস্ট রেট। জানুন সেসকল তথ্য ও ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ২৬ মার্চ দেশের জাতীয় ব্যাংক গুলোকে জাতীয়করণের প্রকল্প হাতে নেয়। সেসময়ে সাবেক হাবিব ব্যাংক, সাবেক কমার্স ব্যাংকে লিমিটেড এর বাংলাদেশে যে শাখা অংশ গুলো ছিলো সেগুলোকে পরবর্তীতে অগ্রণী ব্যাংকে নামকরণ করা হয়।
বর্তমানে ব্যাংকটি ঝুড়িতে রয়েছে ১১ টা সার্কেল অফিস, ৩৬ টি কর্পোরেট শাখা, ৫৩ টি আঞ্চলিক অফিস সহ ৯৬২ টি শাখা রয়েছে সারাদেশ জুড়ে। তাহলে বুজতেই পারছেন কতটা বড় একটা কমিউনিকেশন গড়ে তুলেছে অগ্রণী ব্যাংক। আর কোনো তথ্য দিচ্ছি না ব্যাংক সম্পর্কে জানতে হলে গুগল করে নিন, এখন সরাসরি চলে যাবো ব্যাংকের একাউন্টের ধরন গুলো সম্পর্কে জানাতে।
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্টের প্রকারভেদ
অগ্রনী ব্যাংকে প্রচলিত সবচেয়ে জনপ্রিয় একাউন্টের ধরন দুইটি। এখন মূলত প্রধানে এই দুই ধরনের একাউন্টই রয়েছে এখন সেগুলো হচ্ছে – Savings account এবং Student Account. এই পর্যায়ে জানবো এই দুই ধরনের একাউন্টের বিস্তারিত তথ্য গুলো এবং উভয় ধরনের অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম। তবে প্রথমেই জেনে নেয়া যাক কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে উক্ত ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য।
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য যা যা লাগবে
সেভিং একাউন্ট খোলার জন্য যে সব ডকুমেন্টস প্রয়োজন
- পিতামাতা এবং স্বামী – স্ত্রীর নাম সহ আবেদনকারীর নাম
- বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা
- জন্ম তারিখ
- জাতীয়তা
- টিআইএন (যদি থাকে)
বৈধ পাসপোর্ট / নিয়োগকর্তার শংসাপত্র / আইডি কার্ড / ড্রাইভিং লাইসেন্স / জাতীয় আইডি কার্ড বা স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার / ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রশংসাপত্র সম্পর্কে প্রশংসাপত্রের যথাযথভাবে সত্যায়িত ফটোকপি।
অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের দুটি কপি ছবি পরিচায়ক দ্বারা যথাযথভাবে সত্যায়িত। নমিনির পাসপোর্ট সাইজের ফটোগ্রাফের এক কপি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার দ্বারা যথাযথভাবে সত্যায়িত।
স্টুডেন্ট একাউন্ট ক্ষেত্রে যে কমন কাগজপত্র গুলো প্রয়োজন হবে
- প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান কর্তৃক সত্যায়িত ছাত্র পরিচয়পত্র।
- অ্যাকাউন্টধারীর পাসপোর্ট/জন্ম সনদ/ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
- অ্যাকাউন্টধারীর পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি।
- অ্যাকাউন্টধারীর নমিনি ব্যক্তির পাসপোর্ট আকারের ছবির ১ কপি।
চলতি ও ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট খোলার জন্য যে সকল ডকুমেন্টস প্রয়োজন
- পিতামাতা এবং স্বামী – স্ত্রীর নাম সহ আবেদনকারীর নাম
- বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা
- জন্ম তারিখ
- জাতীয়তা
- টিআইএন (যদি থাকে)
বৈধ পাসপোর্ট / নিয়োগকর্তার শংসাপত্র / আইডি কার্ড / ড্রাইভিং লাইসেন্স / জাতীয় আইডি কার্ড বা স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার / ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক শংসাপত্র সম্পর্কে শংসাপত্রের যথাযথভাবে সত্যায়িত ফটোকপি।
সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের দুটি কপি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের ফটোগ্রাফ যা পরিচায়ক দ্বারা যথাযথভাবে সত্যায়িত। নমিনির পাসপোর্ট সাইজের ফটোগ্রাফের এক কপি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার দ্বারা যথাযথভাবে সত্যায়িত।
জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, অ্যাসোসিয়েশন এবং ক্লাব ইত্যাদির জন্য চলতি হিসাব খোলার জন্য যে সকল এক্সট্রা ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হবে
- নকল নিবন্ধন বা সংস্থান (কোম্পানি বা নিবন্ধিত সংস্থার ক্ষেত্রে)
- ব্যবসা শুরুর তারিখের শংসাপত্রের নকল (শুধুমাত্র পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য)
- স্মারকলিপি এবং অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধের নকল (সীমিত কোম্পানির ক্ষেত্রে), সংবিধান এবং উপ-আইন (সংঘের ক্ষেত্রে)
- হিসাব পরিচালনার জন্য পরিচালনা পর্ষদ/ব্যবস্থাপনা কমিটি/গভর্নিং বডি সভার প্রস্তাব)
- পরিচালক/কর্মকর্তাদের নাম এবং তাদের স্বাক্ষরের প্রত্যয়িত কপ
- ঘোষণাপত্র
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম (বিস্তারিত)
অগ্রণী ব্যাংকে একাউন্ট খোলা খুবই সহজ। উক্ত কাজটি আপনারা দুইভাবে করতে পারেন, সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে অথবা অনলাইনে মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে প্রাথমিক ভাবে একাউন্ট ক্রিয়েট করে। এখানে দুইটা উপায় সম্পর্কেই ধারনা পাবেন। তবে প্রথমেই সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে কিভাবে একাউন্ট খলতে হয় সেই নিয়ম সম্পর্কে জানাবো।
আসলে এখানে নতুন কোনো নিয়ম নেই, অন্য সকল ব্যাংকে যে উপায়ে একাউন্ট খুলে থাকে এখানেও একই নিয়ম। যারা উক্ত বিষয়ে কোনো ধারনা না রাখেন তাদের জন্য বলছি – আপনি যে ধরনের একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সেই একাউন্ট অনুযায়ী কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে সেই বিষয়ে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। সেগুলো নিয়ে ব্যাংকে উপস্থিত হবেন।
ব্যাংকে কর্মরত থাকা লোকদের জানাবেন আপনি নতুন একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন, তারা আপনাকে একটি ফর্ম দিবে, যেটা সঠিক ভাবে পড়ে সেখানে চাওয়া সকল তথ্য একেক করে পুরন করবেন। বলে রাখা ভালো যে, নাম ঠিকানা সহ যাবতীয় তথ্য সঠিক ও জাতীয় পরিচয় পত্রের আলোকে তথ্য প্রদান করবেন।
উক্ত ফরমটি সম্পন্ন হলে সেই ফর্মের সাথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো একত্রে করে কর্মকর্তার কাছে জমা দিবেন, সে ওনার মত ভেরিফাই করবে। এবং আপনার প্রদানকৃত নাম্বারে একটি কোড যাবে, যা সাবমিট করার মাধ্যমে একাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে। অবশ্যই আপনি যে একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সে একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে যে চার্জ নির্ধারিত আছে তা পরিশোধ করতে হবে। এই ছিলো অফলাইনে বা সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে একাউন্ট তৈরি করার নিয়ম সংক্রান্ত নিয়ম। এবার জেনে নিন অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজ অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে।
অনলাইনে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অগ্রণী ব্যাংকও সেখানে একাউন্ট খোলার জন্য অনলাইনে ব্যবস্থা করে রেখেছে। উক্ত কাজের জন্য আপনাকে প্রথমেই অগ্রণী ব্যাংকের একক মোবাইল অ্যাপ “অগ্রণী ই-একাউন্ট” টি ইন্সটল করে নিতে হবে। এবার একাউন্ট করার যে প্রক্রিয়া সেটা ধাপে ধাপে বলছি:
১) অ্যাপটিতে ঢুকার পরেই আপনাকে প্রথমে ভাষা সিলেক্ট করতে হবে এবং পরপরই কোন ধরনের একাউন্ট করতে চাচ্ছেন সেটি সিলেক্ট করতে হবে। মূলত অপশন একটিই থাকবে “সেভিংস একাউন্ট” তাই সেটাই সিলেক্ট করবেন।
২) মোবাইল নাম্বার দিয়ে ভেরিফাই করার জন্য চলন নাম্বারটি প্রদান করুন এবং OTP আসলে সেটা সাবমিট করে দিন।
৩) এই পর্যায়ে জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে একাউন্টধারীর পরিচয় ভেরিফাই করতে হবে যার জন্য NID কার্ডের উভয় পাশের ছবি তুলে সাবমিট করতে হবে।
৪) এরপর একটি ফরম আসবে যেখানে আপনার একাউন্টের নমিনির সম্পর্কে তথ্য জানা হবে, সেগুলো একেক করে পুরন করুন। যেমন – নমিনির নাম, ঠিকানা, NID, সম্পর্ক ইত্যাদি।
৫) আপনি যে বিভাগ থেকে কোন জেলা ও আপনার নিকটবর্তী কোন শাখা থেকে একাউন্ট তৈরি করতে চাচ্ছেন সেই তথ্য প্রদান করতে হবে। তাছাড়া আপনার ইনকাম সোর্স, সহ বেশ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে।
এই ধাপেই সব শেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, সেটি হচ্ছে – আপনি যদি চেক বই বা এটিএম কার্ড চান তবে সেখান থেকে উক্ত বিষয় সিলেক্ট করে দিতে হবে।
৬) এবার একটি প্রিভিউ দেখাবে যেগুলো আপনি এতক্ষণ সাবমিট করলেন। সব ঠিক থাকলে KYEC প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন অথবা কোনো কিছু ভুল হয়ে থাকে তা ব্যাক অপশন থেকে শুদ্ধ করে নিন।
বিঃদ্রঃ উল্লেখ্য যে একাউন্ট হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে ব্যাংকের উক্ত শাখায় গিয়ে একাউন্ট ফাইনাল ভেরিফাই করে নিতে হবে। অন্যথায় একাউন্টটি আর সচল থাকবে না।
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট এর সুদের হার
এবার জানাবো অগ্রণী ব্যাংক এর একেক একাউন্টে যে সুদের হার বা ইন্টারেস্ট রেট প্রদান করা হয় সে সম্পর্কে।
সেভিংস একাউন্ট
সাধারণ সেভিং একাউন্টের জন্য 2.60%
কারেন্ট ডিপোজিট একাউন্টের জন্য 0.00%
ফিক্স ডিপোজিট একাউন্টের জন্য
৩ মাস 6.00%
৬ মাস ৬.২৫%
১ বছর এবং তার বেশি 6.50%
স্টুডেন্ট একাউন্ট
৪ বছরের মেয়াদের জন্য 6.50%
৬ বছরের মেয়াদের জন্য 7.00%
৮ বছরের মেয়াদের জন্য 7.25%
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট ও ব্যালেন্স চেক করার নিয়ম
অগ্রণী ব্যাংক এর যেকোনো ধরনের একাউন্ট চেক করা যাবে অনলাইন, অফলাইন দুই ভাবেই। তবে এবারের আর্টিকেলে কেবল আলোচনা করবো কিভাব স্রেফ একাউন্ট ব্যালেন্স চেক করা যায় সে সম্পর্কে। এখানে আমি মোট তিনটি মাধ্যম বলবো অগ্রণী ব্যাংক ব্যালেন্স চেক করার জন্য।
১) SMS এর মাধ্যমে
২) এটিএম বুথের মাধ্যমে
৩) সরাসরি ব্যাংকে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে
পুরো নিয়ম সম্পর্কে আমাদের ওয়েবসাইটে একক একটি আর্টিকেল রেখেছি যেখান থেকে খুব সহজেই জানতে পারবেন ব্যালেন্স চেক করার উপায় সম্পর্কে। এই আর্টিকেলটি পড়া শেষ হলে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট ও ব্যালেন্স চেক করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন।
অগ্রণী ব্যাংক ব্রাঞ্চ, এটিএম বুথ ও যোগাযোগের ঠিকানা
আপনার নিকটবর্তী অগ্রণী ব্যাংকের শাখার লোকেশন জানতে এখানে ক্লিক করুন
আপনার নিকটবর্তী অগ্রণী এটিএম বুথের লোকেশন জানতে এখানে ক্লিক করুন
অগ্রণী ব্যাংকের যোগাযোগের ঠিকানা
9/D দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-1000
পিবিএক্স রেঞ্জ: 9566153-54
9566160-69,9566074-75
ফ্যাক্স: (+8802) 956 2346, 956 3662
আর্টিকেল থেকে যা শিখলেন
পরিশেষে, এই ছিলো অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও অগ্রনী ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য যা আপনাকে সাহায্য করবে ব্যংক একাউন্ট খোলার জন্য পুর্ব প্রস্তুতি গ্রহন করতে। তাছাড়া আপনি যদি অগ্রণী ব্যাংক সংক্রান্ত আরো অন্যান্য তথ্য জানতে চান তবে এখানে ক্লিক করুন। এবং আপনি যদি এমনই ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য জানতে আগ্রহি হয়ে থাকেন তবে অনুসরণ করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটি। কারন আমরা প্রতিনিয়ত ব্যাংকিং কার্যক্রমের প্রতিটি আপডেট প্রদান করে থাকি।