একজন মুমিন ব্যক্তি হিসেবে আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত আপনি যে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাকে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক হচ্ছে কিনা। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ব্যবসায় রেখেছে বরকত, এবং ব্যবসাকে করা হয়েছে সর্বোত্তম উপায় অর্থ উপার্জন করার জন্য। তবে অবশ্যই এর জন্য ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক। ইসলামে নিষিদ্ধ ব্যবসা করার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ কখনোই হালাল হিসেবে গণ্য হবে না। উল্লেখ্য যে নিষিদ্ধ কিংবা হারাম জিনিসের ব্যবসা মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ হারাম হবে আর হারাম উপার্জনের গড়া দেহ জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি পাবে না। (হালাল-হারামের বিধান, ড. ইউসুফ আল-কারজাভি, অনুবাদ : আসাদুল্লাহ ফুআদ, সমকালীন প্রকাশন, পৃষ্ঠা : ২৬০)।
তাহলে বুঝতে পারছেন ইসলামে নিষিদ্ধ ব্যবসা সম্পর্কে জানা জরুরী তাই এই পর্যায়ে যে সকল ব্যবসা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম সেগুলো তুলে ধরা হচ্ছে যাতে করে এই ধরনের ব্যবসা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখা যায় এবং ব্যবসাকে হালাল ভাবে পরিচালনা করা যায়।
ইসলামে মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। মানব শরীরে যে সকল জিনিস ক্ষতিকারক সে সকল জিনিসকে নিষিদ্ধ বা হারাম করা হয়েছে সে সুবাদে মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের নেতিবাচক প্রভাব মানুষের শরীরে পরে বিধায় ইসলামে মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্য নিষিদ্ধ এবং এ সংক্রান্ত যেকোনো ব্যবসা পরিচালনা করাও নিষিদ্ধ বা হারাম। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এর স্পষ্ট নির্দেশাবলী রয়েছে।
কুরআনের দলিল:
সূরা বাক্বারা, আয়াত ২১৯: “তোমাকে লোকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বল, ‘ঐ দু’টোতে আছে ভয়ঙ্কর গুনাহ এবং মানুষের জন্য উপকারও কিন্তু এ দু’টোর পাপ এ দু’টোর উপকার অপেক্ষা অধিক’। তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কী তারা ব্যয় করবে? বল, ‘যা উদ্বৃত্ত’। এভাবে আল্লাহ তোমাদের প্রতি আদেশাবলী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছেন, যাতে তোমরা চিন্তা করো।”
সূরা মায়িদা, আয়াত ৯০: “হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা, ভাগ্যের শলা (আঁকড়া) শুধু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাক, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”
হাদিসের দলিল:
সহীহ মুসলিম: “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মদ তৈরি করে, সে তা পান করে, সে তা বিক্রি করে, সে তা কিনে, সে তা বহন করে, এবং সে যার জন্য তা বহন করা হয়, তারা সকলেই পাপী।”
সুনান আবু দাউদ: “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যেকোনো নেশাদ্রব্য হারাম।”
অতএব, মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ হলো এগুলো:
প্রশ্ন হচ্ছে এটা নিদিদ্ধ, কিন্তু কেনো নিষিদ্ধ? কারণ, মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে। এর প্রভাবগুলি শারীরিক, মানসিক, আর্থিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে বিস্তৃত।
শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি:
মানসিক ক্ষয়ক্ষতি:
আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি:
সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি:
সুতরাং মদ এবং নেশা জাতীয় দ্রব্যের সুস্পষ্ট ক্ষতিকর দিকগুলোর জন্যই আল্লাহ আমাদের কল্যাণের জন্যই মদ এবং নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা নিষিদ্ধ বা হারাম করেছেন।
শূকর নোংরা পরিবেশে বাস করে এবং নোংরা খাবার খায়। শূকরের শারীরিক গঠন অনেকটা মানুষের মত, এমনকি এদের হজম শক্তিও মানুষের মতো। অন্যদিকে শূকরের মাংসে বিভিন্ন ধরণের পরজীবী এবং রোগজীবাণু থাকে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আর সে কারণেই শূকরকে ইসলামে নিষিদ্ধ প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। যেহেতু শূকর একটি নিষিদ্ধ প্রাণী তাই এ প্রাণী সংক্রান্ত ব্যবসা পরিচালনা করাও নিষিদ্ধ বা হারাম। এ বিষয়ে আমরা কুরআন এবং হাদিসে বেশ কিছু তথ্য পাই, সেগুলো হলোঃ
কুরআনের নির্দেশ:
সূরা আল-বাকারাহ 2:173: “তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস, এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে, গলা টিপে মারা, কষাঘাতে মারা, শিঙে মারা, পতিত হওয়া, এবং যা অন্য পশুর দ্বারা খাওয়া হয়েছে, তবে তোমরা যা কুরবানি কর তা বাদ দিয়ে।”
সূরা আল-মায়িদাহ 5:3: “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস, এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে, …”
হাদিস:
সহীহ বুখারী: “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা শূকরকে হারাম করেছেন, তার মাংস, চর্বি, এবং এর থেকে উৎপন্ন সকল কিছু।”
সহীহ মুসলিম: “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শূকরের মাংসের এক টুকরো খায়, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য এক মাস জাহান্নামের খাবার হারাম করে দেন।”
অতএব একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত ইসলামের নিষিদ্ধ করা প্রাণীর কোন ধরনের ব্যবসা না করা তাই ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই শূকরকে বাদ দিতে হবে।
মৃত প্রাণীর মাংস দ্রুত পচনশীল এবং এতে বিভিন্ন জীবাণু ও রোগের জীবাণু থাকতে পারে যা গ্রহণ করলে খাদ্য বিষক্রিয়া, টাইফয়েড, কলেরা, ডায়রিয়া, জন্ডিস ইত্যাদি মারাত্মক রোগ হতে পারে। এছাড়াও, মৃত প্রাণীর মাংস সংরক্ষণের জন্য প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় যা পরিবেশ দূষণের কারণ।
এমনকি প্রাণীটি যদি হালাল কোন প্রাণীও হয়ে থাকে (যেমন – গরু, ছাগল) তবুও সেটি যদি মৃত হয় তবে তার মাংস কেনাবেচা বা ব্যবসা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে কোরআন এবং হাদিসে যে তথ্যগুলো পাওয়া যায়…
কোরআন:
সুরা বাকারা, আয়াত ১৭৩: “তিনি তোমাদের জন্য কেবলমাত্র হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শূকরের গোশত এবং যার উপর আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে।”
সুরা মায়েদা, আয়াত ৩: “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের গোশত,…”
হাদিস:
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মৃত জীব বিক্রি করে, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করে এবং তার রাসুলের অবাধ্যতা করে।”
সুনান আবু দাউদ: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “মৃত জীব, রক্ত, শূকরের গোশত এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জবাই করা হয়েছে তা খাওয়া হারাম।”
যেকোনো ধরনের মূর্তি কিংবা প্রতিমূর্তি ক্রয়-বিক্রয় পরিবহন সংক্রান্ত ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত থাকা অবশ্যই সুনির্দিষ্ট ভাবে হারাম। ইসলামে মূর্তি বা প্রতিমূর্তি প্রকৃতি, তৈরি, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ কারণ এটি শিরকের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব করা।এ বিষয়ে কোরআন এবং হাদিস থেকে যে সকল দলিল পাওয়া যায়…
আল-কুরআন:
সূরা আন-নাহল (16):106: “তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহ বানাবেন না।”
সূরা আল-আ’রাফ (7):133: “তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহের ইবাদত করো না।”
হাদিস:
সহীহ মুসলিম: “যে ব্যক্তি কোনো ছবি তৈরি করে, আল্লাহ্ তাকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত জীবিত করার নির্দেশ দেবেন যতক্ষণ না সে তার জন্য রুহ তৈরি করে।”
সুনান আবু দাউদ: “আল্লাহ্ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে লানত করেছেন যে মূর্তি তৈরি করে, ঐ ব্যক্তিকে লানত করেছেন যে মূর্তির মুখ তৈরি করে, ঐ ব্যক্তিকে লানত করেছেন যে মূর্তিকে পোশাক পরিধান করে এবং ঐ ব্যক্তিকে লানত করেছেন যে মূর্তির কাছে প্রার্থনা করে।”
ইসলামে সুদ বরাবরই পরিত্যাজ্য। সবচেয়ে বেশি যে কাছ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে সেটাই সুদ গ্রহণ। সুতরাং সুদ আছে বা সুদের কারবারের সাথে জড়িত যে কোন ধরনের ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ বা হারাম হিসেবেই বিবেচিত। সুদের টাকায় উপার্জিত সকল কিছুকেই হারাম হিসেবে গণ্য করা হবে। এ বিষয়ে দলিল স্বরূপ কোরআন থেকে যা পাওয়া যায়..
সূরা বাকারা:
আয়াত 275: “যারা সুদ খায়, তারা জিনে ধরা পাগলের মতো হাশরের মাঠে দাঁড়াবে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ব্যবসা তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।”
আয়াত 278: “তোমরা যদি সুদ বন্ধ না কর, তবে জেনে রেখো, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমাদের যুদ্ধ। আর তোমরা যদি তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদের জন্য। তোমরা কারো উপর অত্যাচার করবে না এবং কারো উপর অত্যাচার করা হবে না।”
সূরা আলে ইমরান:
আয়াত 130: “যারা সুদ খায়, তারা আল্লাহ্র সাথে যুদ্ধ করছে।”
অন্যদিকে হাদিসে সুদ বিষয়ক যে নির্দেশনা গুলো রয়েছে সেগুলো হলো:
সুনান আবু দাউদ: রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “সুদখোর, সুদ খাওয়ানো, সুদের সাক্ষী এবং লেখক – এরা সকলেই জাহান্নামে যাবে।”
অতএব ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে অন্যদিকে রিবা বা সুদকে হারাম করা হয়েছে অবশ্যই ব্যবসায়ী কার্যক্রমে কোনোভাবে সুদ সংক্রান্ত কোনো বিষয় লিপিবদ্ধ থাকা চলবে না যদি থেকে থাকে তবে সেটাকে হারাম হিসেবে বিবেচনা করা হবে তাই এই বিষয়ে ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
স্বাভাবিকভাবেই যে সকল পণ্য এবং দ্রব্য ক্রয় বিক্রয় কিংবা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো ইসলামী শরীয়া মোতাবেক ব্যবসা পরিচালনা করা অবশ্যই বৈধ হবে না বরং এটি নিষিদ্ধ বা হারাম হিসেবে বিবেচিত হবে।
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই হালাল এবং হারামের পার্থক্যগুলো বুঝতে হবে এবং সেগুলোর আয়ত্তে রেখেই জীবন পরিচালনা করতে হবে। যে সকল পণ্য দ্রব্য ব্যবহার ইসলামে নিষিদ্ধ সে সকল পণ্য দ্রব্য এর কারবার করা যাবে না।
অতএব বলা যায় হারাম পণ্যদ্ব্যের ক্রয়-বিক্রয় বা ব্যবসা-বাণিজ্য করাও হারাম। এক্ষেত্রে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর রাসুল মদ, মৃত দেহ, শূকর ও প্রতিমা বেচাকেনা হারাম করেছেন।’ তখন সেখানে উপস্থিত একজন বললো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি মনে করেন যে, লোকেরা মৃত পশুর চর্বি দ্বারা নৌকায় প্রলেপ দেয়, তা দিয়ে চামড়ায় বার্নিশ করে এবং লোকেরা তা চকচকে করার কাজে ব্যবহার করে?’
তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, ‘না, তা হারাম।’ অতঃপর তিনি আরো বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ইহুদিদের বিনাশ করে দেন; কারণ, মহান আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম করেছেন, অথচ তারা সেটাকে গলিয়ে নেয় এবং তা বিক্রি করে ও তার মূল্য ভক্ষণ করে।’ (বোখারি : ২২৩৬)
ইসলামের দৃষ্টিতে মজুতদারি বা গুদামজাতকরণ সাধারণ দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। ইসলামে মজুদদারের ব্যবসা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ:
১) মজুদদাররা পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এবং দাম বৃদ্ধি করে। এর ফলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি পায় এবং অনেক মানুষ দুর্ভোগে পড়ে।
২) মজুদদাররা অতিরিক্ত মুনাফা লোভে পণ্য মজুদ করে। এটি অন্যায়ভাবে সম্পদ অর্জনের একটি উপায়।
তবে উক্ত কাজটি যদি করা হয় পণ্যের সংরক্ষণ এর জন্য এবং এতে যদি বর্তমান বাজার পরিস্থিতির কোন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেক্ষেত্রে সমস্যা নেই। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরবর্তীতে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করার আশায় গুদামজাতকরণ ব্যবসা নিষিদ্ধ বা হারাম।
মজুদদারের ব্যবসা নিষিদ্ধ করার দলিল:
হাদিস:
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য গুদামজাত করে সে অভিশপ্ত।” (ইবনে মাজাহ)। রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার মজুদ রাখে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে বেরিয়ে যায়।” (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)
কুরআন:
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “তারা যখন স্বর্ণ-রৌপ্য এবং আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ না করার জন্য তা জমা করে, তখন তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনের সুসংবাদ দাও। সেদিন সেই স্বর্ণ-রৌপ্যকে জাহান্নামের আগুনে তপ্ত করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপাল, পাঁজর এবং পিঠে দাগ দেওয়া হবে। বলা হবে, ‘এই হল তোমরা যা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা কিছু জমা করে রেখেছিলে, এখন তার স্বাদ গ্রহণ করো।'” (সূরা ত্ব্বা-হা: ৩৪-৩৫)
ব্যবসায় লেনদেনের সময় ওজন বা মাপে কম দেওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ক্রেতাকে তার প্রাপ্য পণ্যের পূর্ণ ওজন বা মাপ না দেওয়া প্রতারণার শামিল এবং এটি একটি জঘন্য অপরাধ।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেও না। তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা।’ (সুরা নিসা : ২৯)।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ওজন করার সময় কম দেয়, তার জন্য আল্লাহর রহমত নেই।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং: ৩৩২৪)
খাদ্য বা অন্য কোনো পণ্যে ভেজাল মেশানো, যা পণ্যের গুণগত মান কমিয়ে দেয়, ইসলামে নিষিদ্ধ। এটি ক্রেতার সাথে প্রতারণা এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘন।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্তূপীকৃত খাদ্যশস্যের পাশ দিয়া যাচ্ছিলেন। তখন তিনি স্তূপের মধ্যে হাত ঢুকালেন। তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো আদ্র দেখতে পান। তিনি বললেনঃ হে খাদ্যশস্যের মালিক! এটা কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসুল বললেনঃ কেন তুমি ভিজা অংশ খাদ্যশস্যের উপরে রাখনি, যাতে লোকেরা তা দেখতে পায়। যে ব্যাক্তি ধোকা দেয় সে আমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না। (মুসলিম : ১০২)
মিথ্যা কথা বলার স্বাভাবিকভাবে মহাপাপ তবে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বেশি দামে বিক্রি করার জন্য বিক্রেতা প্রায় সময় এমনটা বলে থাকে যে, তার যদি একটি পণ্য ১০ টাকা কেনা হয় তবে সেটাকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা কেনা হয়েছে এমনটা দাবি করে ক্রেতার কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে চায়।এই ধরনের কাজ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও ব্যবসায় মিথ্যা বলা, যেমন পণ্যের গুণাবলী সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়া, কৃত্রিমভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মিথ্যা প্রচার করা ইত্যাদি ইসলামে নিষিদ্ধ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “সত্যবাদিতা মানুষকে জান্নাতের দিকে ধাবিত করে এবং মিথ্যাবাদিতা মানুষকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে।” (সাহিহ বুখারী, হাদিস নং: ৬০৯৪)
ব্যবসায় মিথ্যা শপথ করা, যেমন পণ্যের বৈধতা সম্পর্কে মিথ্যা শপথ করা, ক্রেতাকে প্রতারিত করার জন্য শপথ করা ইত্যাদি ইসলামে মহাপাপ।
হাদিসে রয়েছে – যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে ব্যবসার পণ্য বিক্রি করে তার দিকেও আল্লাহ তাকাবেন না। রাসুল সা. বলেছেন, তোমরা ক্রয়-বিক্রয় করার সময় শপথ করা থেকে বিরত থাক। কেননা মিথ্যা শপথের ফলে পণ্য বিক্রয় হলেও তার বরকত নষ্ট হয়ে যায়। (ইবনে মাজাহ ২২০৯, মুসলিম ১৬০৭, নাসাঈ ৪৪৬০)
সুতরাং বুঝা গেলো যে, মিথ্যা শপথ দ্বারা ব্যবসা পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ইসলামে নিষিদ্ধ ব্যবসা বা যে সকল ব্যবসা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম সে ব্যবসা গুলো থেকে বিরত থাকা মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই করণীয়। ব্যবসাকে করা হয়েছে হালাল এবং বরকতময় এক্ষেত্রে আমরা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে এমন কোন কাজ করবো না যার জন্য এই হালাল ও বরকতময় কাজটি হারাম এবং আমাদের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল্লাহ তায়ালা সকলকে হালালভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার তৌফিক দান করুক আমিন। ব্যবসা ও ইসলামিক কন্টেন্টের জন্য অনুসরণ করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটকে।
শরীর ভালো তো মন ভালো” ছোটবেলা থেকে আমরা এই কথায় অভ্যস্ত হলেও ঠিকঠাকভাবে মানতে নারাজ। মানসিক সুস্থতা ও শারীরিক স্বাস্থ্য…
লাললালালালালালালালালালালালালালালালালালালালা যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়তবে…
ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে পুরো দেশে সবুজায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে কাতার সরকার। বাংলাদেশি নার্সারি ব্যবসায়ীরাও অংশ নিচ্ছে সবুজায়ন প্রকল্পে। কাতারে ফুটবল…
এআইয়ের সাহায্যে সরু রাস্তার নির্দেশনাও দেখতে পারবেন চালকরা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কুয়াশা ও বন্যার পানি রয়েছে কি-না, তা গুগল ম্যাপসের…
রাগের কারণে আপনার কর্মজীবনেও প্রভাব পড়ে একটুতেই রেগে যান? রাগের মাথায় প্রিয়জনকে কটূ কথা বলে আফসোস করতে হয়? এবার একটু…
সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং দুদেশের জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে ১. ইসলামপন্থি কিংবা জঙ্গিরা নয় সম্প্রতি যে আন্দোলনের মুখে শেখ…
This website uses cookies.