আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়াবারকাতুহ। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলার। দুরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। যার জীবনীতে রয়েছে সমগ্র মানবজাতির জন্য হিদায়াত। আমরা আজকে জানবো ইস্তেখারা নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে। তো চলুন একে একে বিষয়গুলো জেনে নেয়া যাকঃ
ইস্তেখারার অর্থ কারো কাছে সঠিক বিষয় বেছে দেওয়ার প্রার্থনা করা। যে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা একাধিক বিষয়ের মধ্য থেকে একটি বেছে নেওয়ার অবকাশ আছে সেখানে আল্লাহর সাথে পরামর্শ না করে কোনো কিছু বেছে নেওয়া বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা মুমিনের উচিত নয়।
ছোট, বড়, গুরুত্বপূর্ণ বা গুরুত্বহীন সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে আল্লাহর সাথে পরামর্শ করা, অর্থাৎ তাঁর মহান দরবারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের তাওফীক চাওয়া মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব। আল্লাহর মুমিন বান্দার উচিত ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা এবং তা আমল করা।
জেনে রাখা জরুরি যে, ইস্তেখারা নামাজের জন্য বিশেষ ও নির্দিষ্ট কোন নিয়ত নেই। মনে মনে ইস্তেখারার জন্য ২ রাকআত নফল নামাজ আদায়ের দৃঢ় সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যাবে। শুধু ইস্তেখারা নামাজের ক্ষেত্রেই নয়, বরং সকল নামাজের জন্যই মনে নিয়ত করতে হয়।
মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা বিদআত। কেননা, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবাগণ কখনো এরকম করেন নি। কোন বিশুদ্ধ সনদে তার উল্লেখ নেই।
এই নামাজের নিয়ম ২ রাকআত বিশিষ্ট সুন্নাত নামাজের মতোই। ফরয সালাত ব্যতীত ২ রাকআত বিশিষ্ট যেকোন নামাজে ইস্তেখারা করা যায়। যেমনঃ সুন্নাতে রাতেবা, তাহাজ্জুদ, সালাতুত দুহা, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ, তাহিয়্যাতুল উযূ – এই সমস্ত ২ রাকআত বিশিষ্ট নামাজের নিয়তের সাথে ইস্তেখারা করার নিয়ত করে ইস্তেখারার নামাজ পড়া যায়, এতে কোন অসুবিধা নেই।
ইস্তেখারার নিয়ত প্রথমে অবশ্যই করতে হবে। যেমনঃ যুহরের ২ রাকআত সুন্নাতের নিয়তের সাথে ইস্তেখারার নিয়ত করে নামাজের শেষে ইস্তেখারার দুআ করলে তা শুদ্ধ হবে। ইস্তেখারার সুন্নাত দুআটি নামাজ শেষে সালাম ফেরানোর পর করতে হয়।
প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহার পর যেকোন সূরা পড়া যাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, ইস্তেখারার নামাজ অন্যকে দিয়ে পড়ানো যায়না, এ নামাজ নিজে পড়তে হয়।
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে সকল বিষয়ে ‘ইস্তিখারা’ করতে শিক্ষা দিতেন, যেমন গুরুত্বের সাথে তিনি আমাদেরকে কুরআন কারীমের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজের ব্যাপারে মনের মধ্যে চিন্তা করবে তখন (সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে) ফরয নয় এরূপ, অর্থাৎ নফল দুই রাক’আত সালাত আদায় করবে অতঃপর বলবেঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ (يسمي حاجته) خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي (أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ) فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ اللَّهُمَّ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي (أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ) فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بهِ
“হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি যে, আপনি আপনার জ্ঞান থেকে আমার জন্য সঠিক বিষয় নির্বাচন করবেন, আমি আপনার নিকট ক্ষমতা চাই আপনার ক্ষমতা থেকে এবং আমি আপনার নিকট চাই আপনার মহান করুণা ও বরকত থেকে।
কারণ আপনি ক্ষমতাবান আর আমি অক্ষম, আপনি জানেন আর আমি জানি না, আর আপনি সকল গাইবের মহাজ্ঞানী। হে আল্লাহ, যদি আপনি জানেন যে, এই বিষয়টি (নির্দিষ্ট বিষয়টির উল্লেখ করবে) কল্যাণ ও মঙ্গলময় আমার জন্য, আমার ধর্ম, আমার পার্থিব জীবন এবং আমার পরিণতির জন্য (অথবা বলেছেন আমার নিকটবর্তী ও দূবরর্তী পরিণতির জন্য), তাহলে আপনি একে আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন, সহজ করে দিন এবং আমার জন্য এতে বরকত প্রদান করুন।
হে আল্লাহ, আর আপনি যদি জানেন যে, এই কর্মটি অমঙ্গলকর বা অকল্যাণকর আমার জন্য, আমার ধর্ম, জাগতিক জীবন ও আমার ভবিষ্যৎ পরিণতির জন্য (অথবা তিনি বলেন : আমার নিকটবর্তী ও দূরবর্তী পরিণতির জন্য) তাহলে একে আমার নিকট থেকে সরিয়ে নিন এবং আমাকে এর নিকট থেকে সরিয়ে নিন।
আর যেখানেই কল্যাণ ও মঙ্গল থাকুক তাকে আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন এবং আমাকে তার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন। (সহীহ্ বুখারী ১/৩৯১, ৫/২৩৪৫, ৬/২৬৯০, নং ১১০৯, ৬০১৯, ৬৯৫৫, ফাতহুল বারী ১১/১৮৩-১৮৭)
কোন বৈধ বিষয় বা কাজে; যেমন – ব্যবসা – বাণিজ্য, বিয়ে – শাদী, সফর ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভালো – মন্দ বুঝতে না পারলে, মনে দ্বিধা – দ্বন্দ্ব থাকলে কিংবা উচিত – অনুচিত বুঝতে না পারলে আল্লাহর নিকট কল্যাণ প্রার্থনা করার জন্য দুই রাকআত নামাজ পড়ে ইস্তিখারার নুন্নাতসম্মত দুআ পড়তে হয়।
এ নামাজ পড়লে আল্লাহ্ তাআলা সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার তাওফীক দান করেন। তবে মনে রাখতে হবে যে, সাতবার ইস্তেখারা করার কোন ভিত্তি ইসলামি শরীয়তে নেই। ইস্তেখারা একবার করতে হয়। ৭ বার ইস্তেখারা করার মর্মে বর্ণিত হাদীসটি সহীহ্ নয়।
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে ইস্তেখারার দুআ এমনভাবে শিখাতেন, যেমনভাবে ক্বুরআনুল কারীমের সূরা শিখাতেন। এতে বুঝা যায় যে, ইস্তেখারার নামাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম ফজিলত সহ জানলাম। ইস্তেখারা নামাজের মাধ্যমে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তাআলার কাছে সঠিক সিদ্ধান্ত পাওয়ার আশা করবো এবং এর ফলে আমরা ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে অনেক উপকৃত হতে পারবো ইনশা আল্লাহ।
মহান আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম জেনে সে অনুযায়ী সঠিকভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
শরীর ভালো তো মন ভালো” ছোটবেলা থেকে আমরা এই কথায় অভ্যস্ত হলেও ঠিকঠাকভাবে মানতে নারাজ। মানসিক সুস্থতা ও শারীরিক স্বাস্থ্য…
লাললালালালালালালালালালালালালালালালালালালালা যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়তবে…
ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে পুরো দেশে সবুজায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে কাতার সরকার। বাংলাদেশি নার্সারি ব্যবসায়ীরাও অংশ নিচ্ছে সবুজায়ন প্রকল্পে। কাতারে ফুটবল…
এআইয়ের সাহায্যে সরু রাস্তার নির্দেশনাও দেখতে পারবেন চালকরা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কুয়াশা ও বন্যার পানি রয়েছে কি-না, তা গুগল ম্যাপসের…
রাগের কারণে আপনার কর্মজীবনেও প্রভাব পড়ে একটুতেই রেগে যান? রাগের মাথায় প্রিয়জনকে কটূ কথা বলে আফসোস করতে হয়? এবার একটু…
সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং দুদেশের জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে ১. ইসলামপন্থি কিংবা জঙ্গিরা নয় সম্প্রতি যে আন্দোলনের মুখে শেখ…
This website uses cookies.