ব্যবসা বাণিজ্য

কাচা তরকারি ও সবজির ব্যবসা । সবজির ব্যবসা করার নিয়ম

বাংলাদেশের বাজারে সবজির ব্যবসা অন্যতম লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে একটি। আপনি যদি কাচা তরকারির ব্যবসা বা সবজির ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তবে উক্ত আর্টিকেলটি আপনার জন্যই কেননা এখানে পাবেন সে সকল তথ্য যা একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনাকে অবশ্যই জানা উচিৎ। 

বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটা মানুষই প্রচন্ড রকম খাদ্য প্রিয়। এদেশে খাদ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ব্যবসা কখনও বিফলে যায় না। তবে খাবারের মধ্যে রয়েছে অনেক ক্যাটাগরি এবং প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে একেক ধরনের খাবারের চাহিদা একেক রকম। এই দিক থেকে বিবেচনা করলে যেসকল খাবার মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় সেগুলোর চাহিদা সর্বদা শীর্ষে অবস্থান করে থাকে। এবং এবারের আইডিয়া সিরিজে এমন এক ধরনের খাদ্যের ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করবো যা মানুষের প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় থাকেই। 

জী, এবারের আর্টিকেলে আলোচনা করবো কাচা তরকারি বা সবজির ব্যবসা সম্পর্কে। কেননা সবজি এমন এক উপাদান যা মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় স্থান পাবেই। বাঙ্গালি সেই প্রাচীন থেকেই ভাত খাওয়াতে অভ্যস্ত এবং সেই ভাতের সঙ্গে নানান ভাবে তরকারি বা সবজি গ্রহনের মাধ্যমেই নিজেদের খুদা নিবারণ করে থাকে। 

তা যাই হোক, মানুষের খাদ্যভাসে এখন না যাই, আমরা ছিলাম ব্যবসার আইডিয়া সেশনে এবং বলছিলাম সবজির ব্যবসা করার কথা। তাই এবার জানাবো সবজির ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে এবং কিভাবে আপনি সবজিকে কেন্দ্র করে নিজের একক ব্যবসা তৈরি করে ফেলতে পারবেন সেই পদ্ধতি সম্পর্কে। তাই গুরুত্বপূর্ণ এবং অতি লাভজনক সবজির ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পড়তে থাকুন সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি। প্রথমেই শুরু করবো সবজির ব্যবসায়ের আইডিয়া তথা পরিকল্পনা সম্পর্কে। 

সবজির ব্যবসায়ের আইডিয়া ও পরিকল্পনা

আপনার যদি অর্থায়ন অল্প থাকে বা মূলধন অল্প থাকে পাশাপাশি আপনি একক ভাবে ব্যবসা করতে চান তবে সবজির ব্যবসা হতে পারে অন্যতম পছন্দ। কেননা, সবজির ব্যবসা করা খুবই সহজ এবং অতন্ত লাভজনক। আপনি প্রতিদিন কিছু না কিছু অর্থ আয় করতে পারবেন সবজির ব্যবসা করার মাধ্যমে। 

যারা সল্প মূলধনে ব্যবসা করতে চান তাদের জন্য সবজির ব্যবসা আদর্শ। এই ব্যবসাটি অনেক ভাবেই করা যায়, সামান্য মেধা ঘাটালেই এখান থেকে ভালো পরিমাণের অর্থ আয় করা সম্ভব। যেহেতু সবজির ব্যবসা করার জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে তাই প্রথম দিকে অনেকেই কনফিউশানে থাকেন যে কোন পদ্ধতির সাথে বা কোন ধরনের সাথে শুরু করা যায়? কনফিউশানে থাকা সকল মানুষের সকল কনফিশান দূর করতে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানিয়ে যাবো প্রতিটি ধরন বা উপায় সম্পর্কে। এখানে থেকে আপনার যে ধরনটি পছন্দ সেটিকে আকড়ে ধরেই নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। পরের ধাপেই সবজির ব্যবসা করার নিয়ম তথা কত ভাবে সবজির ব্যবসা করা যায় সে সম্পর্কে জানানো হলো। 

কত ভাবে সবজির ব্যবসা করা যায়

মূলত বেশ কিছু উপায়েই তরকারি – সবজির ব্যবসা করা যায়। সেগুলোকে একেক করে উপস্থাপনের মাধ্যেম বিষয় গুলোকে সহজ করার প্রয়াসেই নিম্মে প্রতিটা ক্যাটাগরির সবজির ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে জানানো হলো। 

গ্রাম থেকে ক্রয় করে শহরে বিক্রি

বাংলাদেশে প্রায় সব ধরনের ফসল ফলানো হয়ে থাকে গ্রাম অঞ্চলের দিকেই। কেননা শহর পর্যায়ের এতোটা স্পেস নেই যেখানে চাষাবাদ করা যায়। তাছাড়া শহর পর্যায়ে বেশির ভাগ স্থানই শিল্প এলাকায় আচ্ছন্য। তা যাই হোক, যেহেতু সকল ধরনের সবজিই উৎপাদন হয় গ্রাম অঞ্চলে তাই সেসব স্থান থেকে ক্রয় করে শহর পর্যায় (যেখানে প্রচুর জনবহুল, চাহিদা প্রচুর কিন্তু যোগান তেমন নেই) বিক্রি করার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। একটু খুলে বলি… 

ধরুন আপনি এমন স্থানে গেলেন বা থাকেন যেখানে সবজি (যেকোনো এক ধরনের) প্রচুর পরিমাণের উৎপাদন করে থাকে। এবং যখন উৎপাদন হয় তখন চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি থাকায় উক্ত স্থানে দাম কম থাকে। অন্যদিকে, এমন স্থান রয়েছে (ধরে নেয়া যাক ঢাকা) চাহিদা থাকার পরেও পর্যাপ্ত যোগান থাকে না। ঠিক এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করেই নিজের ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি মধ্যস্থ কারবারি বা ব্যবসায়ি হয়ে কাজ করবেন। আপনি গ্রামের সে সকল কৃষক থেকে পণ্য গুলো কিনবেন যারা নিদিষ্ট ফসল উৎপাদন করে, এবং খুবই বুদ্ধিমতার সাথে সেগুলোকে কাঙ্ক্ষিত থানে স্থানন্তর করবেন। মাঝখানে নিজের খরচ বাবদ মুনাফা যুক্ত করে দিবেন। ঠিক এই প্রসেসটি যথাযথ বুদ্ধিমতার সাথে করতে পারলে সবজির ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ভালো আয় করতে পারবেন। তবে গ্রাম থেকে সবজি এনে পাইকারি বা খুচরা দোকানে সরাসরি বিক্রি করতে পারবেন না। কেননা এই কাজের জন্য যেমন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আপনাকে বাধা দিতে পারে অন্যদিকে আপনি গ্রাম থেকে আনলে একত্রে অনেক পরিমাণের সবজি নিয়ে আসবেন যার কারনে আপনাকে সেগুলো উল্লেখ্যযোগ্য স্থানে বা বিভিন্ন স্থানের আড়ত-এ বিক্রি করতে হবে। ঢাকা সহ কোথায় কোথায় আড়ত রয়েছে সেই বিষয়ে নিম্মে আলোকপাত করা রয়েছে। 

পাইকারি সবজির ব্যবসা

সবজির ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আরেকটি উত্তম উপায় হলো পাইকারি মূল্যে সবজি বিক্রি করা। কেননা এখানে আপনার কেবল বিনিয়োগ এবং উপযুক্ত স্থান সমূহে নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে বিজনেস প্লানিং করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই চলে যেতে হবে স্থানীয় আড়ত কিংবা যেখানে সবচেয়ে বড় বাজার রয়েছে সেখানে। উক্ত স্থান থেকে আপনি ঠিকা দরে (কেজি হিসেবে দাম করে নয়, কেননা এতে অনেক সময় লাভ হয় না) আপনার নিদিষ্ট করা সবজি গুলো কিনে নিতে হবে এবং আপনি তাদের সাথে ইতিমধ্যে ডিল করেছেন বা আপনার ক্লাইয়েন্ট গুলোর কাছে ডেলিভারি দিবেন। এই প্রসেসটিতে একটু বেশি মূলধন থাকতে হবে কেননা বাকিতে বিক্রি করার প্রবনতা এই সেক্টরে রয়েছে, তাছাড়া যেহেতু খুচড়া বিক্রেতাই আপনার মূল গ্রাহক সেক্ষেত্রে দেখা যায় তারা সেগুলো বিক্রি করার পরেই পাইকারকে টাকা দিয়ে থাকে অনেক সময়, তবে এটা সচারচর হয় না। 

তাছাড়া পাইকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে দেখা যায়, বেশি লাভের আশায় অনেক পাইকাররা এমন করে যে, যে যদি কোনো স্থানে কোনো এক নিদিষ্ট সবজির চাষ যদি ভালো হয় এবং পাইকারের নিজ এড়িয়ায় যদি একই সবজির চাহিদা থাকে তবে যোগান কম। সেক্ষেত্রে অন্য স্থান থেকে পাইকার একত্রে বেশি কিনে এনে নিজ এড়িয়ায় ছোট ছোট খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে আয় করে থাকে। 

আপনি পাইকারি সবজি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যত বেশি মূলধন খাটিয়ে ক্রয় এবং বিক্রয় করতে পারবেন তর বেশি লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু পাইকারি দামে সবজি বিক্রি করছেন সেক্ষত্রে বেশি কোয়ান্টিটির বিক্রি হবে এবং একক প্রতি লাভের হার কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। 

খুচরা সবজির ব্যবসা

এবার আসছে খুচরা সবজির ব্যবসাতে। এই ধরনের ব্যবসায়ীদের আমরা সবাই চিনে থাকি। আমাদের নিত্যদিনকার বাজার যেখানে রয়েছে সেখানে কেজি হারে যে বিক্রেতারা সবজি বিক্রি করে তারাই মূলত খুচরা বিক্রেতা। তারা বিভিন্ন পাইকার থেকে একেক পণ্য পাইকারি মূল্যে কিনে তাদের নিজেদের মুনাফা যুক্ত করে কেজি হারে চুড়ান্ত ভোক্তার কাছে বিক্রি করে থাকে। সবজি ব্যবসায়ে মূলত সবচেয়ে বেশি লাভ করে থাকে যারা গ্রাম থেকে শহরে স্থানন্তরের মাধ্যমে সবজি বিক্রি করে এবং যারা খুচড়া পর্যায়ে সবজি বিক্রি করে তারা। কেননা এক্ষেত্রে তারা নিজেকের মত করে দাম রাখার সামান্য সুযোগটুকু পেয়ে থাকে। 

মূলত পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তুলনামূলক অল্প পরিমাণের সবজি ক্রয় করে চুড়ান্ত ভোক্তাদের কাছে কেজি মাফিক বিক্রি করে থাকে এবং কেজি প্রতি লাভ করে থাকে। তাছাড়া যেহেতু মানুষ সর্বদা টাটকা সবজি কিনতে পছন্দ করে তাই খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই অল্প অল্প পরিমাণের সবজি ক্রয় করে এবং প্রতিদিনই ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে। এই পর্যায়ে জানাবো বাংলাদেশে থাকা কিছু পাইকারি বাজার সম্পর্কে। 

বাংলাদেশে সবজির পাইকারি বাজার বা আড়ত

পাইকারি বাজার বলতে এমন বাজারকে বোঝানো হয়েছে যেখানে তুলনামূলক ভাবে অল্প মূল্যে (খুরচা মূল্যের থেকে কম দামে) পাওয়া যায় এমন স্থান। এটা বিভিন্ন স্থানে হয়ে থাকে যেখানে সকল আমদানীকারকরা এখানে নিজেদের পণ্য নিয়ে এসে পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকে। এই পর্যায়ে বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় পাইকারি বাজার গুলোর সম্পর্কে জানানো হলো। 

  • কাওরান-বাজার, ঢাকা
  • পাইকপাড়া বাজার, ঢাকা
  • বদরগঞ্জ পাইকারি সবজির হাট
  • ওয়াপদা বাজার, ঝিনাইদাহ
  • শালি কুপা বাজার, ঝিনাইদাহ
  • পাইকারি সবজি বাজার, খুলনা
  • বগুড়া মহাস্থানগড় পাইকারি বাজার, বগুড়া, রাজশাহী

তাছাড়াও আরো অনেক পাইকারি বাজার রয়েছে প্রতিটি বিভাগেই কিছু না কিছু। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো নিজ এড়িয়ায় বা নিজ বিভাগে কোনো কোনো পাইকারি বাজার রয়েছে সেগুলোর খোজ নিতে হবে। 

সবজির ব্যবসায়ে মূলধন ও লাভের পরিমাণ

এই পর্যায়ে দেখে নিবো সবজি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কি পরিমাণের মূলধন প্রয়োজন পাশাপাশি কোন কোন খাতে খরচ করার প্রয়োজন রয়েছে ও কি পরিমাণের লাভের আশা করা যায়। প্রথমেই ব্যবসা শুরুর খরচের দিক থেকে দেখানো হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, এখানে যে হিসাব কষা হয়েহে তা একটি সুপার শপের আলোকে যেখানে সবজি বিক্রয় করা হয়। আপনি এখান থেকে কেবল ধারনা নিবেন, এটা কোনো ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয় যে আপনারও একই খরচ হবে। কেবনা আপনি নিজের মত করে খুচরা পর্যায় কিংবা বড় ছোট দোকান এর মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করবেন। 

তাছাড়া সবজির ব্যবসায়ে প্রথম দুই ক্যাটাগরিতে থাকা ব্যবসায় এমন খরচের স্পেসিফিক কোনো হিসাব না থাকায় তা উল্লেখ্য করছি না তবে লাভের একটি আইডিয়া মূলত দেয়া যায়। কথা না বাড়িয়ে দেখা যাক কোন কোন খাতে খরচ করতে হয় সবজির ব্যবসা করার জন্য।  

ব্যবসায়ের শুরুর খরচ

যেকোনো আউটলেট / দোকান / সুপারশপ খোলার ক্ষেত্রে নিম্মের খরচ গুলো করতে হয়।

  • স্থান ভাড়া ও প্রয়োজনীয় নকশাকরনে ৩০ থেকে ৫০ হাজার
  • মেরামত কাজ ও সেট করা বাবদ পছন্দ অনুযায়ী ১০ হাজার
  • প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয়ের ক্ষেত্রে ধরা যাক ৫ থেকে ১০ হাজার
  • সবজি সহ অন্যান্য পণ্য ক্রয় বাবদ প্রথম দিকে ২০ – ৩০ হাজার
  • তাছাড়া অতিরিক্ত খরচের খাতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ধরা হোক

সবজির ব্যবসাতে চলমান খরচ

যখন ব্যবসা পুরোদমে চলতে থাকবে এমন সময়ে রেগুলার বা প্রতিমাসে করতে হবে এমন কিছু ব্যয় হলো: 

  • প্রতি মাসের ভাড়া (যার যার নিজস্ব দিক থেকে)
  • ইউটিনিটি বিল (বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি)
  • কোনো কর্মচারী রাখলে তার বেতন
  • রেগুলার পণ্য ক্রয়ের জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা ক্যাশ।

লাভের পরিমাণ

মূলত কাচা বাজারের ক্ষেত্রে স্পেসিফিক ভাবে লাভের কথা জানানো সম্ভব নয়, কারন বিভিন্ন স্থান ভেদে একেক পণ্যের একেক রকম দাম হয়ে থাকে। মূলত বিভিন্ন দামের উঠা – নামা কাচা বাজারে লেগেই থাকে। একদিন দেখা যায় ক্রয় মূল্য থেকে অনেক বেশি মূল্যে বিক্রি করা গেছে আবার কোনো দিন দেখা যায় প্রত্যাশা থেকে অনেক কম বিক্রি + লাভ হয়েছে। তাই এটা নিদিষ্ট করে বলা যায় না। তবে এটা ঠিক যে সবজির ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের লাভ প্রতিদিন হিসাব করা হয়ে থাকে।

সবজির ব্যবসায়ে সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ

এই পর্যায়ে জানাবো সবজি ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে। আপনি যখন কোনো ব্যবসা করতে যাবেন তখন ওই ব্যবসায়ের ভালো মন্দ দিক গুলোতে দৃষ্টিপাত করা অবশ্যই জরুরি কেননা আপনি একটা ব্যবসায়ের ভালো মন্দ দিক ও আপনার জন্য উক্ত ব্যবসায়টি কতটা উপযুক্ত তা জানতে পারবেন উক্ত বিষয়ে জানার মাধ্যমেই। তাই জেনে নিন সবজি ব্যবসায়ের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে। 

সুবিধা সমূহ

  • তুলনামূলক কম মূলধন বিনিয়োগ করার মাধ্যমে উক্ত ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
  • যেহেতু এটা মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলোর মধ্যে পড়ে তাই গ্রাহকের কম হবে না।
  • এই ব্যবসা শুরু করার জন্য কোনো প্রকার অফিসিয়াল ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হয় না, তবে পাইকারি ও স্থানন্তর ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স থাকলে ভালো হয়।
  • সল্প সময়ে উচ্চ হারে মুনাফা অর্জন করা যায় সবজির ব্যবসা করার মাধ্যমে।
  • পরোক্ষ কোনো ব্যয় যেমন: (বিজ্ঞাপন খরচ) হয় না বিধায় মুনাফার অংশই বেশি থাকে।
  • প্রায় প্রতিটা সিজনেই কোনো না কোনো সবজির উৎপাদন হয় বিধায় এটা সারাবছরই করা যায়।

অসুবিধা সমূহ

  • প্রায় প্রতিটা সুবিধামূলক জিনিসের কিছু না কিছু অসুবিধা থাকে, সেটা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও। এবং সবজির ব্যবসায়ের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এটা পচনশীল পণ্য। দেখা যায় এমন অনেক পণ্য রয়েছে যা ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে বিক্রি করতে না পারলে সব নষ্ট হয়ে যায়।
  • আরেকটি মেজর নয়, তবে তুলনামূলক বড় অসুবিধা হলো প্রচুর প্রতিযোগিতা। পাইকার থেকে শুরু করে খুচরা বাজারে দেখা যায় প্রচুর দোকান রয়েছে সবজির তাই এই সেক্টরে প্রতিযোগিতা অনেক, এটা একটা অসুবিধা।

কিভাবে সবজির ব্যবসা করবেন । সবজির ব্যবসা করতে যা করনীয়

এই পর্যায়ে জানাবো কিভাবে নিজের একক ভাবে সবজির ব্যবসা করে থাকবেন। সবজির ব্যবসায়ে করনীয় যে স্টেপ গুলো রয়েছে যা ধাপে ধাপে করতে হয় সেই বিষয়ে ধারনা দেয়া হচ্ছে। 

স্থান নির্বাচন

প্রথমেই আপনাকে নিজের ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন করে নিতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা, আপনি এমন একটা স্থানে নিজের ব্যবসায়ের আউটলেট  বা দোকান দিলেন যেখান থেকে মানুষ সচারচর কাচা বাজার করে না তাহলে কিন্তু আপনি যত ভালো ও বেশি মূলধন বিনিয়োগ করে থাকেনই না কেনো, আপনার ব্যবসায়ে আশানুরূপ ফল পাবেন না। তাই চেষ্ঠা করবেন লোক সমাজম রয়েছে এমন স্থানে অথবা এরিয়ায় স্পেসিফিক স্থানে (যেখান থেকে মানুষ রেগুলার বাজার করে) নিজের ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন করতে। 

সারঞ্জাম ক্রয়

এই পর্যায়ে নিজের ব্যবসা পরিচালনে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গুলো ক্রয় করতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ঝুড়ি, সবজি ভালো ভাবে রাখার স্থানে উপযুক্ত বাহক সহ তাক, সবজি কেজি দরে মাপার জন্য দাড়ি পাল্লা, টাকা গোনার মেশিন, শিতল রাখার ব্যবস্থা, পানির ব্যবস্থা ও বিদ্যুতের বা আলোর ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় সারঞ্জাম গুলো। 

কর্মী নিয়োগ

আপনি নিজের ব্যবসা বা দোকান যেখানেই দেন না কেনো, একা কখনই এমন কাজ করা সম্ভব না। উক্ত কাজের জন্য আপনাকে অন্তত্য একজন কর্মচারী রাখার প্রয়োজন রয়েছে যে কি-না আপনাকে মালামাল গুছিয়ে রাখতে, নিয়ে আসতে সহ ব্যাসিক সকল কাজে সহায়তা করবে।  

সরবরাহকারী

আপনাকে অবশ্যই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সরবরাহকারীকে, কেননা আপনি খুচরা ব্যবসায়ী হয়ে থাকলে আপনাকে খুব সকাল সকাল দোকান খুলতে হবে এবং দোকানের সব গুছিয়ে নিতে হবে। বেশির ভাগ স্থানে সকাল ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে সকল কাচা বাজার খুলে থাকে। আর এই কাজের মধ্যে আপনার নিজের গিয়ে কোনো আড়ত থেকে কাচা মাল আনা সম্ভব হয়ে উঠবে না। যার কারনে আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে কোনো সরবরাহকারীর সাথে যারা উপযুক্ত সময়ে আপনার কাচা বাজার যথাসময়ে আপনার কাছে পৌছে দিবে। 

গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

পরিশেষে বলা যায়, এই ছিলো কাচা তরকারি ও সবজির ব্যবসা করার নিয়ম সংক্রান্ত আর্টিকেল যেখানে উক্ত ব্যবসায়ের আইডিয়া প্রদান থেকে শুরু করে সবজির ব্যবসায়ের ধরন ও কোন ধরনের ব্যবসা কিভাবে করতে হয় সেই নিয়ম জানানো হয়েছে। ব্যবসা সংক্রান্ত এমনই আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আইডিয়া ও নিয়ম জানতে বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ব্যবসা বাণিজ্য ক্যাটাগরি অনুসরণ করুন। 

Bangla Alo

Recent Posts

অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি, রোগবালাই দমন, ফলন ও ফুল সংগ্রহ

অর্কিড, খুব কঠিন একটা নামের সুন্দর একটা ফুল। আজকে আপনাদের সাথে চমৎকার একটি ফুল নিয়ে…

2 weeks ago

৫টি জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানের লিরিক্স

প্রতিটা দেশেরইই একক কিছু দেশাত্মবোধক গান থাকে তেমনি বাংলাদেশেও রয়েছে এমন অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান।  আমরা…

2 weeks ago

ইসলামিক পদ্ধতিতে ওজন কমানো এবং সুস্থ থাকার উপায় জানুন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমাদের আজকের জানার বিষয় হলো -…

2 weeks ago

বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন, নিজে চাষ শুরু করুন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে বেগুন চাষ…

2 weeks ago

ওমরা ভিসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য ২০২৪

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আশা করি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ও অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো…

2 weeks ago

কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া || শুরু থেকে শেষ অব্দি

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই ভালো আছেন। আমাদের দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ…

2 weeks ago