ইসলামে মৃত মানুষকে দাফন করার আগে তার মরদেহ সামনে নিয়ে মাগফিরাত কামনা করার উদ্দেশ্যে যে বিশেষ নিয়মে দোয়া করা হয়, তাকে জানাজার নামাজ বলা হয়। আরবি ‘জানাজা’ শব্দের অর্থ মৃতদেহ। আর সালাতুল জানাজা মানে মৃতদেহের নামাজ। জানাজার নামাজের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে,যথাযথ ভাবে নিয়ম মেনে জানাজার নামাজ আদায় করা একান্ত আবশ্যক। তাই এই পর্যায়ে আমরা জানাজার নিয়ম সম্পর্কে জানবো বিস্তারিত।
মূলত জানাজার নামাজ হচ্ছে আল্লাহর কাছে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করার মাধ্যম। জানাজার নামাজ ফরজে কিফায়া। আর অন্য সকল নামাজের মতো এই নামাজেরও রয়েছে ফরজ ও সুন্নত।
জানাজার নামাজের ফরজ দুইটি। যথা :
১) চার তাকবিরের সহিত নামাজ আদায় করা। তবে এই নামাজে রুকু ও সিজদা নেই।
২) জানাজার নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া। যথাযথ কারণ ব্যতিত জানাজার নামাজ বসে পড়া বৈধ নয়।
জানাজার নামাজের সুন্নত চারটি। এগুলো হলো –
১) মহান আল্লাহর হামদ ও সানা পড়া।
২) নবীজি (সাঃ) এর প্রতি দুরুদ পাঠ করা।
৩)মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা।
৪)জানাজার নামাজের জন্য ন্যুনতম ৩ কাতার করা। বেশি কাতার হলেও সমস্যা নেই। তবে কাতার বেজোড় করা উত্তম।
কোনো মুসলমান মারা গেলে তার জানাজার নামাজ পড়া এবং তার কবর জিয়ারত করা সওয়াবের কাজ। জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া তথা সমগ্রিক ফরজ। কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে মুসলমান সমাজের পক্ষ থেকে অবশ্যই জানাযার নামাজ পাঠ করতে হবে। তবে কোনো এলাকা বা গোত্রের পক্ষ থেকে একজন আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়। আর কেউ তা আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হবে।
প্রিয় নবী (স.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের ওপর (জানাজার) নামাজ পড়া ওয়াজিব, চাই সে নেককার হোক বা বদকার, যদিও সে কবিরা গুনাহ করে।’ (আবু দাউদ: ১/৩৫০)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় নবীজি (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মৃত মুসলিম ব্যক্তির জানাযায় ঈমান সহকারে ও ছাওয়াবের আশায় শরিক হয় এবং জানাযা ও সমাধি পর্যন্ত থাকে, সে দুই কিরাত নেকি পাবে।
কোনো এক সাহাবি প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল সাঃ! দুই কিরাত কী?’ নবী করিম (সা.) বললেন, ‘দুই কিরাতের ক্ষুদ্রতম কিরাত ওহুদ পাহাড়ের সমান।’ (ইবনে কাছির)
উক্ত হাদিস শরীফ থেকে জানা যায় যে, জানাজার নামাজে উহুদ পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। আর এই সুযোগ যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি পেয়ে থাকে তাহলে এই সুযোগটি হাতছাড়া করা অনুচিত। তাছাড়া একজন প্রতিবেশী হিসেবে অন্য আরেকজন প্রতিবেশী জানাজার নামাজ আদায় করা ঐ মুসলমানের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
মানুষ মরণশীল৷ প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতেই হবে। (সূরা: আল-ইমরান। আয়াত নং :১৮৫)। জানাজার নামাজ মুসল্লিদের জন্য সাওয়াব বর্ধন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ। জানাজার নামাজ পুরুষ ইমাম বা ওছীয়তকৃত ব্যক্তির দ্বারা আদায় করতে হয়৷ এটি ৪ তকবিরের নামাজ। জানাজার নামাজ শুধু পুরুষদের জন্য আবশ্যক। নারীদের জন্য এতে অংশগ্রহণ করার বিধান নেই। পবিত্রতা ছাড়া জানাজার নামাজ পড়া যায় না।
জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম হলো, মৃত ব্যক্তির মরদেহ কিবলার দিকে রেখে ইমাম তার বক্ষ বরাবর দাঁড়ান। তারপর নিয়ত করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবির দিয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা পড়া হয়। এরপর নবীজি (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়া হয়। মাইয়্যেতের জন্য দোয়া করা হয়। এরপর সালাম ফেরানো হয়। জানাজা নামাজে ‘আল্লাহু আকবার’ তাকাবিরটি চারবার বলতে হয়।
নিয়ত মনে মনে করা ফরজ। মুখে পড়া ফরজ নয়। তাই মনে মনে শুধু এতটুকু নিয়ত করলেই হবে যে “জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া, চার তাকবিরের সহিত এই ইমামের পেছনে আদায় করছি।”
তবে কেউ চাইলে আরবিতেও নিয়ত করতে পারেন।
আরবি নিয়তের বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহে তায়ালা আরবা আ তাকবীরাতে ছালাতিল জানাজাতে ফারজুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আললাহু আকবার।”
এখানে নিয়তে ‘লেহাযাল মাইয়্যেতে’ পুরুষ/ছেলে লাশ হলে পড়তে হবে, আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলতে হবে।
নিয়ত করার পর তাকবিরে তাহরিমা বলবে অর্থাৎ আল্লাহু আকবর বলে কান পর্যন্ত হাত ওঠাবে এবং অন্যান্য নামাজের মতো হাত বেঁধে নিতে হবে। এই তাকবির পড়া ইমাম ও মুক্তাদি উভয়ের উপর ফরজ।
তাকবিরে তাহরিমার পর হাত বেধে সানা পড়বে।
জানাজার নামাজের সানা নামাজের সানার চেয়ে একটু ভিন্ন।
বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানা-উকাও ওয়া লা-ইলাহা গায়রুক।
এরপর (দ্বিতীয়) তাকবির বলে দরুদ পাঠ করবেন। এই তাকবিরে হাত ওঠাবেন না। (নামাজে পঠিতব্য দরুদ)
তারপর তৃতীয় তাকবির বলে মৃত ব্যক্তি ও মুসলমানদের জন্য দোয়া করবে। তখনো হাত ওঠাবে না। (দোয়া গুলো লেখার শেষে পাওয়া যাবে।)
মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করার পর চতুর্থ তাকবীর দিতে হবে। হাত বাধা অবস্থায়ই তাকবির বলতে হবে। তাকবীর বলার পর প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে জানাজার নামাজ শেষ করতে হবে।
বাংলা উচ্চারণ :
আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িইবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর রাহামার রাহীমিন।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত ও মৃতদের, উপস্থিত ও অনুপস্থিতদের, ছোট ও বড়দের এবং আমাদের নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাকে জীবিত রাখবেন, তাকে ইসলামের ওপরই জীবিত রাখুন। যাকে মৃত্যু দান করবেন, তাকে ইমানের সঙ্গেই মৃত্যু দিন। (তিরমিজি: ৯৪৫)
মৃত ব্যক্তি নাবালক হলে জানাযার দোয়া :
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাজ আলহু লানা ফারাতাও ওয়াজ আলহু লানা আজরাও ওয়াজ আলহু লানা শাফিআও ওয়া মুশাফফাআ।’
অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে হলে ‘হু’ (هُ) স্থানে ‘হা’ (هَا) বলতে হবে।
কেউ যদি দেরিতে পৌঁছান এবং ইমাম চতুর্থ তাকবির বলার পর সালাম ফেরানোর আগ মুহূর্তেও তাকবির বলতে পারেন, তাহলে সে জানাজা পেয়েছে বলে গণ্য হবে। আর কেউ দেরি করে ফেললে তখন লাশ উঠিয়ে নেওয়ার আগে সানা, দরুদ ও দোয়াসহ তাকবির বলে সালাম ফেরাতে পারলে, তা-ই করে নিতে হবে। যদি লাশ উঠিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে শুধু তিন তাকবির বলে সালাম ফিরিয়ে নেবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/১১৬)
জানাজার নামাজের নিয়ম শিখা এবং যথাযথ ভাবে নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুন্নাহসমর্থিত পদ্ধতিতে যথাযথ নিয়মে জানাজার নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন।
শরীর ভালো তো মন ভালো” ছোটবেলা থেকে আমরা এই কথায় অভ্যস্ত হলেও ঠিকঠাকভাবে মানতে নারাজ। মানসিক সুস্থতা ও শারীরিক স্বাস্থ্য…
লাললালালালালালালালালালালালালালালালালালালালা যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়তবে…
ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে পুরো দেশে সবুজায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে কাতার সরকার। বাংলাদেশি নার্সারি ব্যবসায়ীরাও অংশ নিচ্ছে সবুজায়ন প্রকল্পে। কাতারে ফুটবল…
এআইয়ের সাহায্যে সরু রাস্তার নির্দেশনাও দেখতে পারবেন চালকরা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কুয়াশা ও বন্যার পানি রয়েছে কি-না, তা গুগল ম্যাপসের…
রাগের কারণে আপনার কর্মজীবনেও প্রভাব পড়ে একটুতেই রেগে যান? রাগের মাথায় প্রিয়জনকে কটূ কথা বলে আফসোস করতে হয়? এবার একটু…
সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং দুদেশের জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে ১. ইসলামপন্থি কিংবা জঙ্গিরা নয় সম্প্রতি যে আন্দোলনের মুখে শেখ…
This website uses cookies.