Categories: ইসলাম

আল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলত ও আমল সমূহ (বিস্তারিত)

মহান আল্লাহ’তালার রয়েছে অসংখ্য সিফাতি বা গুণবাচক নাম। ইমাম তিরমিজি (রহ.) এক হাদিসে মহান আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে।বলা হয়েছে যে এসব নাম মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

মহান আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোকে বলা হয়- আল আসমাউল হুসনা বা সুন্দর নামসমূহ।আসমাউল হুসনা হলো তাওহিদ বিষয়ক যাবতীয় জ্ঞানের মূল উৎস। আল্লাহতায়ালার একেকটা গুণ তাঁর একেকটা নাম। আল্লাহর অসংখ্য নাম রয়েছে, কিন্তু মানুষকে জানানো হয়েছে মাত্র ৯৯টি। নবীজি (সাঃ) এর একজন সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ কর্তৃক বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, “আল্লাহ্ তার কিছু নাম মানবজাতির অজ্ঞাত রেখেছেন। ইসলাম ধর্ম মতে বুনিয়াদি নাম বা ভিত্তি নাম একটিই। আর তা হলো আল্লাহ্।”
আল্লাহর ৯৯ নাম সম্পর্কিত হাদিস
আল্লাহতালার গুণবাচক নামসমূহ অতি মোবারক ও পবিত্র। মহান আল্লাহর পরিচয় সঠিকভাবে জেনে ঈমানকে পূর্ণাঙ্গ করার জন্য আসমাউল হুসনা সম্পর্কে জানা আবশ্যক। এ ছাড়া আল্লাহ তাআলার এসব নামের জিকিরের প্রচুর ফজিলতের কথা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

হাদিসে এসেছে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার এক কম একশত অর্থাৎ ৯৯ নাম আছে। যে ব্যক্তি এই নামসমূহের হিফাযাত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ্ বিজোড়। তিনি বিজোড় পছন্দ করেন।
সহীহ বুখারী (হাদিসঃ ৬৪১০)

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে –
“বলে দাও, তোমরা আল্লাহকে ডাক বা রহমানকে ডাক, যে নামেই তোমরা (আল্লাহকে) ডাক, (একই কথা। কেননা) সমস্ত সুন্দর নাম তো তাঁরই।
— সূরা বনী-ইসরাঈল আয়াত ১১০।

যখন জান্নাতে বিশেষ পরীক্ষার সম্মুখীন হলেন হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) তখন তাঁরা মুক্তিলাভের আশায় ‘আসমাউল হুসনা’র অন্যতম নাম ‘আত-তাউয়্যাবুর রাহিম’ বেশি বেশি করে পাঠ করেছেন।এই নামের উছিলায় আল্লাহতায়ালা বান্দার তওবা কবুল করে থাকেন।

এভাবে ৯৯টি নামের আলাদা আলাদা ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, যা মানুষের ইহকাল ও পরকালীন জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

আল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলত ও নামের তালিকা
১. আল্লাহ

প্রত্যহ এই নামটি ১০০০ বার পাঠ করে, তবে আল্লাহ আপনার হৃদয় থেকে সমস্ত সন্দেহ এবং অনিশ্চয়তা দূর করবেন এবং দৃঢ় সংকল্প ও বিশ্বাসের ব্যবস্থা করবেন।

২. আর-রাহমান
অর্থঃ পরম করুণাময়, সবচেয়ে দয়ালু।

প্রতি নামাযের পরে একশ’বার এই নাম পাঠ করলে মন থেকে যাবতীয় কাঠিন্য ও অলসতা দূর হয়ে যাবে।

৩.আর-রাহীমু
অর্থঃ সীমাহীন করুণাময়,অতিশয়-মেহেরবান

এই নামের নিয়মিত আমলে সমস্ত আপদ-বিপদ থেকে নিরাপদে থাকা যায় এবং সমস্ত মাখলুকাত তার প্রতি দয়ালু হয়ে যায়।

৪.আল-মালিক
অর্থঃ সত্ত্বাধিকারী,প্রকৃত বাদশাহ

যে ব্যক্তি প্রত্যহ ফজর বাদ ‘ইয়া মালিকু’ অধিক পরিমাণে পাঠ করবে, আল্লাহ পাক তাকে ধনী করে দেবেন।

৫. আল-কুদ্দুসু
অর্থঃ নিষ্কলুষ, মন্দ থেকে মুক্ত, অতি পবিত্র

যে ব্যক্তি প্রতিদিন দুপুরের সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে এ পবিত্র নাম বেশি করে পাঠ করবে, ইনশাআল্লাহ তার অন্তর সমস্ত রূহানী ব্যাধি থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।


৬.আস-সালাম
অর্থঃ শান্তি এবং নিরাপত্তার উৎস, ত্রাণকর্তা

যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে এ নাম পাঠ করবে, সে সব প্রকার বিপদ থেকে মুক্ত থাকবে। ১১৫ বার এ নাম পাঠ করে পীড়িত ব্যক্তির গায়ে ফুঁ দিলে আল্লাহ পাক তাকে শেফা দান করবেন।

৭. আল-মুমিনু (নিরাপত্তাদাতা)

যে ব্যক্তি কোন ভয়ের সময়ে নামটি ৬৩১ বার পাঠ করবে সে ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকবে।

৮. আল-মুহাইমিনু (রক্ষণা-বেক্ষণকারী)

যে গোসল করে দুই রাকাত নামায আদায় করে এবং এই নামটি আন্তরিকভাবে একাগ্রতার সাথে ১০০ বার পাঠ করে, আল্লাহ তার জাহের-বাতেন পবিত্র করে দেবেন, অবস্থাও পবিত্র করেন।

৯. আল-আজিজু (মহাপরাক্রমশালী)

১০. আল-জাব্বারু (মহাপ্রতাপশালী)

১১. আল-মুতাকাব্বিরু (মহাগৌরবের অধিকারী)

১২. আল-খালিকু (সৃষ্টিকর্তা)

১৩. আল বারিউ (পরিকল্পনাকারী)

১৪. আল-মুসাব্বিরু (আকৃতিদানকারী)

১৫. আল-গাফফারু (অসীম ক্ষমাশীল)

১৬. আল-কাহ্হারু (মহাপরাক্রমশালী)

১৭. আল-ওয়াহ্হাবু (মহান দাতা)

১৮. আর-রাজ্জাকু (রিজিকদাতা)

১৯.আল-ফাত্তাহু (মহা বিজয়দানকারী)

২০. আল-আলিমু (মহাজ্ঞানী)

২১. আল-ক্বাবিদু (হরণকারী)

২২. আল-বাসিতু (সম্প্রসারণকারী)

২৩. আল-খাফিদু (অবনতকারী)

২৪. আর-রাফিয়ু (উন্নতকারী)

২৫. আল-মুয়িজ্জু (মার্যাদাদানকারী)

২৬. আল-মুজিল্লু (অপমানকারী)

২৭. আস-সামীয়ু (সর্বশ্রোতা)

২৮. আল-বাসিরু (সর্বদ্রষ্টা)

২৯. আল-হাসিবু (মহাবিচারক)

৩০. আল-আদলু (ন্যায়পরায়ণ)

৩১. আল-লাতিফু (সুক্ষ্মদর্শী)

৩২. আল-খাবিরু (মহা সংবাদ রক্ষক)

৩৩. আল-হালিমু (মহা সহিঞ্চু)

৩৪. আল-আজিমু (মহান)

৩৫. আল-গাফুরু (ক্ষমাশীল)

৩৬. আশ-শাকুরু (গুণগ্রাহী)

৩৭. আল-আলিয়্যু (মহাউন্নত)

৩৮. আল-কাবিরু (সর্বাপেক্ষা বড়)

৩৯. আল-হাফিজু (মহারক্ষক)

৪০. আল-মুকিতু (মহান শক্তিদাতা)

৪১. আল-হাসিবু (হিসাব গ্রহণকারী)

৪২. আল-জালিলু (মহা মহিমাময়)

৪৩. আল-কারিমু (মহা অনুগ্রহশীল)

৪৪. আর-রাকিবু (মহাপর্যবেক্ষণকারী)

৪৫. আল-মুজিবু (মহান কবুলকারী)

৪৬. আল-ওয়াসিয়ু (মহাবিস্তারকারী)

৪৭. আল-হাকিমু (মহাপ্রজ্ঞাময়)

৪৮. আল-ওয়াদুদু (প্রেমময় বন্ধু)

৪৯. আল-মাজিদু (মহাগৌরবান্বিত)

৫০. আল-বায়িসু (পুনরুত্থানকারী)

৫১. আশ-শাহিদু (সর্বদর্শী)

৫২. আল-হাক্কু (মহাসত্য)

৫৩. আল-ওয়াকিলু (মহান দায়িত্বশীল)

৫৪. আল-ক্বাভিয়্যু (মহাশক্তিধর)

৫৫. আল-মাতিনু (চূড়ান্ত সুরক্ষিত ক্ষমতার অধিকারী)

৫৬. আল-ওয়ালিয়্যু (মহান অভিভাবক)

৫৭. আল-হামিদু (মহাপ্রশংসিত)

৫৮. আল-মুহসিয়্যু (পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব গ্রহণকারী)

৫৯. আল-মুবদিয়ু (সূচনাকারী)

৬০. আল-মুঈদু (পুন:সৃষ্টি কারী)

৬১. আল-হাইয়্যু (চিরঞ্জীব)

৬২. আল-কাইয়ূমু (চিরস্থায়ী)

৬৩. আল-মুহইয়্যু (জীবনদানকারী)

৬৪. আল-মুমিতু (মৃত্যুদানকারী)

৬৫. আল-ওয়াজিদু (ইচ্ছাপূরণকারী)

৬৬. আল-মাজিদু (মহাগৌরবান্বিত)

৬৭. আল-ওয়াহিদু (একক সত্ত্বা)

৬৮. আস-সামাদু (অমুখাপেক্ষী)

৬৯. আল-ক্বাদিরু (সর্বশক্তিমান)

৭০. আল-মুক্তাদিরু (মহান কুদরতের অধিকারী)

৭১. আল-মুকাদ্দিমু (অগ্রসরকারী)

৭২. আল-মুয়াখখিরু (বিলম্বকারী)

৭৩. আল-আউয়ালু (অনাদি)

৭৪. আল-আখিরু (অনন্ত)

৭৫. আজ-জাহিরু (প্রকাশ্য)

৭৬. আল-বাতিনু (লুক্কায়িত)

৭৭. আল-ওয়ালিয়্যু (মহান অধিপতি)

৭৮. আল-মুতাআলিয়ু (চিরউন্নত)

৭৯. আল-বাররু (কল্যাণদাতা)

৮০. আত-তাউওয়াবু (মহান তওবা কবুলকারী)

৮১. আল-মুনতাকিমু (প্রতিশোধ গ্রহণকারী)

৮২. আল-আফুউ (ক্ষমাকারী)

৮৩. আর-রাউফু (অতিশয় দয়ালু)

৮৪. মালিকুল মুলকি (সর্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী)

৮৫. জুল-জালালি ওয়াল ইকরামি (গৌরব ও মহত্ত্বের অধিকারী)

৮৬. আল-মুকসিতু (ন্যায়পরায়ণ)

৮৭. আল-জামিয়ু (একত্রকারী)

৮৮. আল-গানিয়্যু (ঐশ্বর্যের অধিকারী)

৮৯. আল-মুগনিয়ু (ঐশ্বর্যদানকারী)

৯০. আল-মানিয়ু (প্রতিরোধকারী)

৯১. আদ-দারু (অনিষ্টকারী)

৯২. আন-নাফিয়ু (উপকারকারী)

৯৩. আন-নূরু (জ্যোতি)

৯৪. আল-হাদিয়ু (পথ প্রদর্শনকারী)

৯৫. আল-বাদিয়ু (সূচনাকারী)

৯৬. আল-বাকিয়ু (চিরবিরাজমান)

৯৭. আল-ওয়ারিসু (স্বত্বাধিকারী)

৯৮. আর-রাশিদু (সৎপথে পরিচালনাকারী)

৯৯. আস-সাবূরু (মহাধৈর্যশীল)।
পরিশেষে কিছু কথা
উল্লেখ্য, আরবি নামের বিশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ সম্ভব নয়। তারপরও আমরা যতটা সম্ভব আল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলত ও উচ্চারণ শুদ্ধভাবে লেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আল্লাহর নাম উচ্চারণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনাদের কাছে আকুল আবেদন কোনো বিজ্ঞ আলেমের কাছ থেকে আসমাউল হুসনার বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেবেন।
কেননা মহান আল্লাহর হুঁশিয়ারি হলো—‘যারা তাঁর (আল্লাহর) নাম বিকৃত করে তাদের বর্জন করবে। তাদের কৃতকর্মের ফল তাদের দেওয়া হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলত জেনে আমল করার তাওফিক দান করুন।আমিন
Bangla Alo

Recent Posts

অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি, রোগবালাই দমন, ফলন ও ফুল সংগ্রহ

অর্কিড, খুব কঠিন একটা নামের সুন্দর একটা ফুল। আজকে আপনাদের সাথে চমৎকার একটি ফুল নিয়ে…

2 weeks ago

৫টি জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানের লিরিক্স

প্রতিটা দেশেরইই একক কিছু দেশাত্মবোধক গান থাকে তেমনি বাংলাদেশেও রয়েছে এমন অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান।  আমরা…

2 weeks ago

ইসলামিক পদ্ধতিতে ওজন কমানো এবং সুস্থ থাকার উপায় জানুন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমাদের আজকের জানার বিষয় হলো -…

2 weeks ago

বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন, নিজে চাষ শুরু করুন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে বেগুন চাষ…

2 weeks ago

ওমরা ভিসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য ২০২৪

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আশা করি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ও অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো…

2 weeks ago

কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া || শুরু থেকে শেষ অব্দি

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই ভালো আছেন। আমাদের দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ…

2 weeks ago