ব্যবসা বাণিজ্য

ট্যুরিজম ব্যবসা কিভাবে করবো? ট্যুরিজম ব্যবসা করার নিয়ম সুবিধা, অসুবিধা বিস্তারিত

ট্যুরিজম ব্যবসা

 

আজকের আর্টিকেলে আমরা ট্যুরিজম ব্যবসা কি, কিভাবে আপনারা এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।

 

আমরা বাঙালিরা অত্যন্ত ভ্রমণপ্রিয়। এমনিতেও ঘুরাঘুরি করতে ভালবাসেন না এমন মানুষ খুব কম রয়েছে। 

 

আপনি হয়তো জানলে অবাক হবেন পৃথিবীতে এমন লোকেরাও আছে যারা ৬ মাস একনাগারে কাজ করে টাকা জমিয়ে পরবর্তী ৬ মাস পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়।

 

কথাগুলো যদিও শুনতে কিছুটা অদ্ভুদ তবে স্বাভাবিক। যারা ভ্রমণপ্রিয় তারা অবশ্য বুঝেন ভ্রমণের স্বাদ কি। 

 

তাই যদি আপনি ঘুরা ঘুরি বা ভ্রমণ বিষয়ে দক্ষ হোন তবে এটিকে কেন্দ্র করে আপনি ব্যবসা আপনি শুরু করে দিতে পারেন।

 

এমনিতেও বর্তমান চাকরির বাজারে যে প্রতিযোগিতা এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হওয়া খুবই জরুরি। আর তাই এক্ষেত্রে ট্যুরিজম ব্যবসা তরুণ উদ্যোক্তা দের জন্য ভালো একটি সুযোগ।

 

চলুন নিচে ধাপে ধাপে এই ব্যবসার বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

ট্যুরিজম ব্যবসা কি?

 

আমি আপনাদের সহজে এই বিষয়টা বুঝিয়ে দিচ্ছি এইটা উদাহরণ এর দ্বারা। ধরুন আপনি ভ্রমন প্রিয় এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাতে আপনার ঘুরার ইচ্ছে আছে। 

 

আপনি চাচ্ছেন ভারত ভ্রমন করতে। কিন্তু ভারতে গিয়ে কোথায় ঘুরবেন, কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন কি করবেন এই বিষয়গুলো আপনার মাথায় আসছে না।

 

কিংবা বলতে পারেন আপনার অতটা সময় নেই যে আপনি আপনার ভ্রমণ a-z পরিকল্পনা করবেন। এক্ষেত্রে আপনি একটি ট্রাভেল এজেন্সি এর সহায়তা নিতে পারেন। 

 

তাদের কাজ হচ্ছে আপনি ভ্রমণে গিয়ে কোথায় থাকবেন, কোথায় ঘুরবেন, কোথায় খাবেন ইত্যাদি যাবতীয় জিনিসের ব্যাবস্থা করে দেওয়া। 

 

এর ফলে আপনার সময় নষ্ট হলোনা, পাশাপাশি আপনি রেডিমেট ভ্রমণের আনন্দ নিতে পারছেন। 

 

কম পুঁজি বিনিয়োগ করে যারা লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া খুঁজছেন তাদের জন্য ট্যুরিজম ব্যবসার আইডিয়াটা সবথেকে সেটা হতে পারে। আপনি দুটি পদ্ধতি তে এই ব্যবসাটি করতে পারেন। 

 

একটি হচ্ছে নিজের দেশের লোকেদের জন্য ভ্রমণ ব্যবস্থা করে অন্যটি হচ্ছে বিদেশের লোকেদের জন্য কাজ করে। এই ব্যবসায় সফল হওয়ার মূলমন্ত্র হচ্ছে সুনাম এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি।

 

বাংলাদেশে ট্যুরিজম ব্যবসা করে সফল হতে পেরেছেন এমন অনেক তরুণ উদ্যোক্তা রয়েছে। আপনারা রিসার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।

 

ট্যুরিজম ব্যবসা করার নিয়মঃ

 

ট্যুরিজম ব্যবসা কিভাবে শুরু করা যায় সে বিষয়টা ধাপে ধাপে আপনাদের বলছি নিচে। নিচে উল্লেখিত ধাপগুলো মেনে আপনারা এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।

 

১. পরিকল্পনা

 

ট্যুরিজম বিজনেস শুরুর পূর্বে যে বিষয়টি সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে পরিকল্পনা। পরিকল্পনা ছাড়া আপনি এই বিজনেসে সুফল হতে পারবেন না। পরিকল্পনা বলতে কতজনকে নিয়ে আপনি এই বিজনেস শুরু করতে চান, ভ্রমণ সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা কতটা, গ্রাহকদের সুবিধার্থে আপনি কি কি করতে পারেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আপনাকে প্রথমে চিন্তা করতে হবে। শুধুমাত্র এই বিজনেস বলে কথা নেই, প্রত্যেকটি বিজনেস আরম্ভ করার আগে একটি পারফেক্ট বিজনেস প্ল্যান তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

২. ট্যুরিজম বিজনেসের জন্য স্থান নির্ধারণ

 

আপনি আপনার বিজনেসের জন্য আলাদা একটি স্থান নির্ধারণ করতে পারেন। তবে কোনো দোকান দিতে হবে এমন না। আপনি ইচ্ছে করলে আপনার বাড়িতেই আপনার অফিস বানিয়ে নিতে পারেন। যেখানে আপনার কাজের সুবিধা হয় সেখানে আপনি স্থান নির্বাচন করতে পারেন।

 

৩. ভ্রমন পরিচালনা করে আগে যা যা করবেন

 

একটি ভ্রমণ পরিচালনা করার পূর্বে কিছু বিষয় সম্পর্কে আপনাকে বিশেষ ধ্যান দিতে হবে। যেমন; 

 

  • যেখানে ভ্রমণ করবেন সে জায়গার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহঃ যে জায়গাটিকে আপনি ভ্রমণের জন্য উপযোগী মনে করছেন সেটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করুন। যাতে নতুন জায়গায় ভ্রমণ পরিচালনা করতে আপনাকে কোনো অসুবিধাই পড়তে না হয়।

 

  • যাতায়াত ব্যবস্থাঃ ভ্রমণ যে জায়গায় করবেন সেখানের যাতায়াত ব্যাবস্থা কেমন, কিভাবে যাবেন, খরচ কেমন পড়বে সে বিষয়ে জেনে নিন।

 

  • থাকা খাওয়াঃ ভ্রমণে গিয়ে কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন এসব বিষয় আগে থেকে ঠিক করে রাখুন। প্রয়োজনে বুক করে রাখুন এটা সবথেকে ভালো হয়।

 

এছাড়াও ভ্রমণে যেখানে করবেন সে জায়গার তথ্য এবং ছবি কাস্টমারকে আগে থেকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

 

৪. বিজ্ঞাপন

 

বিজনেসের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞাপন ছাড়া আপনার বিজনেস এর সম্পর্কে কেউ জানতে পারবে না। শুরুতে এলাকাভিত্তিক প্রোগ্রাম করতে পারেন। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে পত্রিকা দ্বারা প্রচারণার কাজ চালাতে পারেন। এছাড়াও একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করে সেটির মাধ্যমেও মার্কেটিং করতে পারেন।

 

৫. নিরাপত্তা

 

যেহেতু আপনি একটি ভ্রমণ পরিচালনা করবেন সেহেতু অবশ্যই এর নিরাপত্তার বিষয়টা আপনাকে ভালোমতো দেখতে হবে। নিরাপত্তার দিক দেখার জন্য আলাদা একজনকে রাখতে পারেন।

 

ট্যুরিজম ব্যবসা করার সুবিধা ও অসুবিধাঃ

 

প্রত্যেক ব্যবসার কিছু ভালো দিক এবং খারাপ দিক অবশ্যই থাকে। যেহেতু আজকে আমরা ট্যুরিজম ব্যবসা নিয়ে কথা বলছি সেহেতু চলুন এই ব্যবসার সুবিধা বা অসুবিধাগুলো কি কি সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

 

সুবিধাঃ

 

১. বিনিয়োগ বিষয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন পড়েনা। প্রয়োজন শুধু দক্ষতা, পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায়ের। তাহলেই দ্রুত সফলতা পাওয়া যায়।

 

২. ঘুরাঘুরির পাশাপাশি ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ। ভ্রমণ প্রিয়দের শান্তি মেলে ভ্রমণ করে। ঘুরাঘুরি বিষয় নিয়ে তাদের যত আনন্দ। এক্ষেত্রে এই ব্যবসা করে নিজের আনন্দের পাশাপাশি অন্যকে আনন্দ দেওয়া যায়। পাশাপাশি ভালো মাপের টাকা আয় করা যায়।

 

৩. বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই। ভ্রমণের বিষয়ে আপনি গ্রাহকদের যে যে সাহায্য করবেন সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারলেই আপনি সফল হবেন।

 

৪. জনপ্রিয় ,লাভজনক এবং আনন্দদায়ক একটি পেশা এটি।

 

অসুবিধাঃ

 

এই ব্যবসার বড় কোনো অসুবিধা নেই। তবে আপনাকে কিছু সমস্যায় পড়তে হতে পারে যেমন;

 

গ্রাহকদের ভ্রমণের আনন্দ দিতে না পারলে তারা আপনাকে আর তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনার কাজ দেবে না, আপনি লাভও ততটা করতে পারবেন না। এছাড়াও একটি পুরো ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে আপনকে ছোট ছোট কিছু অসুবিধাই হয়তো পড়তে হবে। তবে যদি আপনি দক্ষ হয়ে যান তবে আপনার কোনো সমস্যায় আশা করি পড়তে হবে না। তবে মাথায় রাখবেন এই ব্যবসায় সফল হতে গেলে আপনাকে গ্রাহকদের আনন্দ দেওয়ার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

 

ট্যুরিজম ব্যবসার খরচ কেমন হতে পারে?

 

প্রথম অবস্থায় আপনাকে খুব বেশি বিনিয়োগ করতে হবে না। আপনার বিনিয়োগের পরিমান নির্ভর করবে আপনি কি কি কাজে খরচ করবেন সেটির উপরে।

 

যেমন ধরুন বিনোদন বাবদ, ঔষুধ বাবদ, বিজ্ঞাপন বাবদ বা ইত্যাদি কাজে আপনি কেবল ৫-৭ হাজার টাকার মতো বিনিয়োগ করলে হবে। বাকি টাকা আপনি আগেই আপনার গ্রাহক বা কাস্টমার থেকে নিয়ে নিবেন। তবে ইনকাম এর থেকে গ্রাহক সন্তোষ্টি বিষয়ে বেশি নজর দিন। অবশ্যই আপনার সেবার মান ভালো হতে হবে।

 

ট্যুরিজম ব্যবসার নীতিমালা ও আইনঃ

 

প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এই ব্যবসার কিছু আইন বা নীতিমালা আছে যেগুলো আপনাদের মেনে চলা দরকার। নিচের লিংক থেকে গিয়ে আপনারা পুরো বিষয়টা জেনে নিতে পারবেন।

 

  • বাংলাদেশ পর্যটন নীতিমালা

(https://parjatan.portal.gov.bd/sites/default/files/files/parjatan.portal.gov.bd/policies/11fa9517_0f1a_4ef8_bbec_9fc91b067bf2/2020-12-17-11-05-24b94a74578cd944730066bc3e850d0c.pdf)

 

এই ব্যবসার ক্ষেত্রে এক দেশ থেকে অন্য দেশের ভ্রমণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব ধরনের স্টেপ বৈধভাবে নিয়ম মেনে পালন করবেন।

 

শেষ কথা

 

বন্ধুরা আজকে আমরা ট্যুরিজম ব্যবসা কি, কিভাবে এই ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে, এই ব্যবসার সুবিধা/অসুবিধা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিলাম।

 

এই আর্টিকেলটা লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে তরুণ উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা জাগানো। তরুণদের ধারণা বা আইডিয়া দেয়ার জন্যেই এই আর্টিকেল। সুতরাং ধারণা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের থেকে পরামর্শ নিতে পারেন এই বিষয়ে। কিংবা যত ট্যুরিজম বা ট্রাভেল এজেন্সি এর সাথে জড়িত তাদের সাথে থেকে কাজ করে এই বিষয়ে জানতে পারেন।

 

Bangla Alo

Recent Posts

মন ভালো রাখার উপায় || মন সুস্থ রাখার ১০ টি টিপস

মানুষের মন যেহেতু আছে এটা ভালো কিংবা খারাপ থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।  একটা…

4 weeks ago

বাংলাদেশের সেরা ১০ টি মেডিকেল কলেজ

বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে সাথে, ভালো মানের মেডিকেল কলেজের তালিকা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।…

2 months ago

সেরা ১০ টি গল্পের বই || বাছাইকৃত লেখকের সেরা ১০ টি বই

গল্পের বই পছন্দ করেন? পড়ার জন্য সেরা গল্পের খোজে আছেন? সে সুবাদে অনলাইনে সার্চ করে…

2 months ago

ভিসা ও পাসপোর্ট কি? একটি ভিসা এবং পাসপোর্টের মধ্যে পার্থক্য সমূহ

যারা সঠিক তথ্যটি জানেনা তাদের অনেকের ধারণা - ভিসা এবং পাসপোর্ট মূলত একই কাজ করে…

2 months ago

ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন নেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত (২০২৪)

আপনার কি Loan বা ঋণ প্রয়োজন? আচ্ছা আপনি কি একজন প্রবাসী কিংবা আপনার পরিবারের কেউ…

2 months ago

ইসলামে নিষিদ্ধ ব্যবসা || যে সকল ব্যবসা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম

একজন মুমিন ব্যক্তি হিসেবে আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত আপনি যে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাকে…

2 months ago