মানুষের মন যেহেতু আছে এটা ভালো কিংবা খারাপ থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। একটা মানুষের মন সবসময় ভালো থাকবে না কিংবা একটা মানুষের মন সবসময় খারাপ থাকবে না। মন ভালো থাকলে কেউ মন খারাপ ইচ্ছা করে করতে চায় না তবে কোনো কারণবশত যদি আপনার মন খারাপ থাকে সেক্ষেত্রে মন ভালো করার উপায় জানতে হয়। কেউই মন খারাপের মধ্যে থাকতে চায় না, কেননা মন এর সাথে আমাদের শরীরের পঙ্কা-পঙ্কভাবে জড়িত থাকে। মন ভালো না কোন ধরনের কাজ করতে ভালো লাগেনা এতে আমাদের শরীরের প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়। তাই আপনিও যদি “ভাল্লাগেনা রোগী” কিংবা মন খারাপ হয়ে থাকে, তবে জেনে নিন মন ভালো রাখার উপায় সমূহ।
ফলের রস শরীরে পানির পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। পানিশূন্যতা মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে এবং মেজাজের ওঠানামা, ক্লান্তি, এবং মনোযোগের অভাব ঘটাতে পারে। তাছাড়া কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ফলের রস পান করলে মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
বিশেষ করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল সমূহ মস্তিষ্কের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ডোপামিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা আমাদের মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই মন খারাপের সময় মন ভালো করতে এক গ্লাস কমলার রস খেয়ে নিন।
জ্বী হ্যাঁ, চকলেট খেলেও মন ভালো হয়। তবে সব ধরণের চকলেট নয়, ডার্কে চকলেট। আর এটা মোটেও ধারণার উপর বলা হয়নি। এখানে রয়েছে বৈজ্ঞানিক মতবাদ, ডার্ক চকলেটে রয়েছে এন্ডোমরফিন যা আমাদের শরীরের হরমনে নিঃসরণ হয়। এটা মন ভালো করতে সক্ষম।
অনেকেই রয়েছে যা চা খেয়ে বেশ ভালোবাসে আর চা খাওয়ার সময় ভালো ফিল করে। তাদের বিষয় আলাদা, তা নিজেকের মন ভালো করতে যেকোনো সময়েই চা খাবেন। তবে আপনি সে মাত্রার চা খোর না হলেও হারবাল চা আপনার মন ভালো করতে সক্ষম। স্ট্রেস নেয়া বেশি হয়ে গেলে এক কাপ ক্যামোমাইল বা জিঞ্জার টি বানিয়ে খেয়ে ফেলুন, স্বাদে খুব ভালো না হলেও মন ভালো করতে সথেষ্ট কার্যকর হবে।
কুরআন আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে হেদায়েতের জন্য, আমাদের সমস্যার সমাধানের জন্য। আর কুরআনের আয়াত এতোটাই মধুর হয়ে থাকে যা আমাদের কান থেকে অন্তর অব্দি সব কিছুকে প্রশান্তি দেয়। মন ভালো না লাগলে যাই করছেন না কেনো কিছু সময়ের ব্রেক নিন, ইউটিউবে গিয়ে কুরআন তিলাওয়াত শুনতে থাকুন, বর্তমানে বিভিন্ন Recitation, Lofi সহ বিভিন্ন ধরণের তিলাওয়াত শুনতে পাওয়া যায় যা সরাসরি আমাদের অন্তরে গিয়ে লাগে। তাই মন ভালো করার উপায় হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত শোনা কার্যকর।
সারাটা দিক বিভিন্ন ধরনের কাজ, বিভিন্ন চিন্তা ও বিষণ্ণতায় শেষ হয়ে যাচ্ছেন? মন ও শরীর খুব ভারী লাগছে? ইন্সট্যান্ট যা করছেন তা বন্ধ করে দিন, একটু খোলামেলা পরিবেশের দিকে হাটুন। গবেষণার অনুযায়ী, বন্ধ স্থান থেকে বাইরে থাকা কালীন সময়ে মানুষের মধ্যে প্রাণশক্তি ও স্মৃতিশক্তি বেরে যায় ও উদ্বেগ কমতে থাকে। বিশেষ করে আপনার আশেপাশে যদি প্রকৃতি থাকে (বাগান, গাছপালা ঘেরা স্থান) তবে সেখানে কিছুক্ষন হেঁটে আসুন। ভালো লাগবে।
আপনার বন্ধুমহলে এমন কেউ নিশ্চই রয়েছে যার সাথে কথা বলতে আপনার ভালো লাগে, শান্তি অনুভব হয়, নিজের ভালো মন্দ সব কথা নির্দিধায় বলতে পারেন এবং খুব ভালো একজন শ্রোতা? জী হ্যাঁ, আমি সেই মানুষটার কথাই বলছি। মন খারাপের সময় তার সাথে বসুন, আড্ডা দিন, কথা বলুন। দেখবেন শেয়ার করার কারণে নিজেকে হাল্কা লাগছে।
মানুষ আধুনিক যতই হচ্ছে তত বেশি ছেয়ে যাচ্ছে বিষণ্ণতা, সোশ্যাল মিডিয়ার মিথ্যা জালে ফেসে অনেকেই নিজেকে অসুখি ভেবে ফেলছে, যেখান থেকে শুরু হয় মন খারাপ। মন খারাপের অন্যতম এক কারণ হলো সোশ্যাল মিডিয়া, আপনি বেশ ভালো আছেন এবং একই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু চোখে পড়লো যা আপনার ভালো মনকে খারাপে পরিণত করে ফেলবে। এবার সে কারণ কি হবে তা তো নির্ভর করবে একেকজন মানুষের ভালো মন্দের বিষয় গুলোর উপর। তাই খুব বেশি মন খারাপে কিংবা মন খারাপের কারণ যদি অনলাইন সংক্রান্ত কিছু হয় তবে একটা ব্রেক নিন আর বেড়িয়ে আসুন রিয়েলিটিতে।
যখন আপনি কাউকে কোনো কিছুতে সাহায্য করবেন তখন দেখবেন ভেতর থেকেই এক ধরণের ভালো লাগা কাজ করছে। একটি ভালো কাজ যেমন কোনো স্বেচ্ছসেবী সংস্থার সাথে কাজ করা কিংবা নিজ উদ্যোগে কোনো অসহায়কে উপকার করা অথবা যেকোনো কিছু যা দ্বারা আপনার আশেপাশের মানুষ উপকৃত হবে – এমন কাজ করুন। দেখেবন আপনার ভেতরে ভালো লাগা শুরু হয়ে গেছে।
মন খারাপ থাকলে মন ভালো করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কিছুক্ষন একা থাকা এবং নিজেকে নিয়ে ভাবা। কি করছেন নিজের সাথে এটা ভেবে দেখুন, নিজের অজান্তেই কত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বাদ দিয়ে মন খারাপ করে রেখেছেন হয়তো খুব ছোট খাটো কোনো কারণে।
হতে পারে আপনার প্রিয় মানুষের সাথে মনোমালিন্যতা দেখা দিয়েছে, কিংবা আপনার আপন কেউ আপনাকে খুব কষ্ট দিয়েছে সে বিষয় গুলো নিজেকে আরেকবার ভাবুন। শান্ত মাথায় বুঝার চেষ্টা করুন যে, এখানে সমস্যাটা কোথায় ছিলো, কেনো হচ্ছে এমন আর কিভাবে এটার সমাধান করা যায়। নিশ্চই সমাধান পেয়ে যাবেন। আর যখন সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় মন খারাপ আর থাকে না, মন ভালো হয়ে যায়।
সবশেষে যে কথা না বললেই নয় সেটা হলো “আল্লাহ্র শরণাপন্ন হোন” তিনিই আমাদের রব, আমার সৃষ্টিকর্তা। আমরা কেবল তার কাছে চেয়েই পাবো, পৃথিবীর কেউ আপনাকে না জানলেও, না বুজলেও কোনো ক্ষতি নেই। আপনার রব আপনাকে জানে বুজে। আপনি হয়তো কষ্টে রয়েছেন এটা ভেবে যে আপনার কোনো দোষ ছিলো না তারপরেও আপনার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে।
তবে মনে রাখুন, আল্লাহ যা করে তা তার বান্দার জন্য সর্বোত্তম। শিগ্রই এমন কিছু ঘটবে যার দ্বারা আপনার এই অনুভব হবে যে, যাক আল্লাহ আমার ভালোর জন্যই করেছিলো সব, তখন ওই ব্যাপারটি না ঘটলে আজ আমার এতো ভালো থাকা হতো না। মনে রাখবেন আল্লাহ কখনই তার বান্দা সহ্য করতে পারবে না এতো পরিমাণের বোঝা চাপিয়ে দেন না।
আপনার মন খারাপ, কোনো কারণে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন? তবে শুনুন – আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যখন চিন্তা ও বিষণতায় থাকতেন তখন এই দোয়াটি পড়তেন:
দোয়া | اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخلِ وَالجُبنِ، وَضَلَعِ الدَّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ |
আরবী উচ্চরণ | আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল। |
বাংলা অর্থ | হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন |
এছাড়াও আরো এক বিশেষ দোয়া তিনি আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন আর সেটি হলো:
দোয়া | اللهم مصرف القلوب صرف قلوبنا على طاعتك |
আরবী উচ্চরণ | আল্লাহুম্মা মুসররিফাল কুলুবি সররিফ ক্বুলুবানা আলা ত্ব-আতিক |
বাংলা অর্থ | অন্তরগুলো পরিচালনাকারী হে আল্লাহ, আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার আনুগত্যের ওপর স্থির রাখুন |
মানুষের শরীরের মধ্যে এমন একটি গোশতের টুকরা আছে যেটা ঠিক থাকলে পুরো শরীর ঠিক থাকে বা ভালো থাকে আর সেটি ঠিক না থাকলে গোটা শরীরটাই মন্দ হয়ে যায়। আর সে গোশতের টুকরাটি হলো মানুষের কলব। (বুখারি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৯-৪০)
কলব হলো মানুষের অন্তর, মন। এটা ঠিক থাকলেই যেনো সব কিছু ঠিক আর এটা ঠিক নেই মানে কোথাও কিছু ঠিক নেই। তবে আশার আলো এই যে, আল্লাহ তার বাণীতে (সুরা বনি ইসরাঈল: আয়াত ৮২) বলেন, “আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত” এবং সুরা তাওবা আয়াত ১৪ তে জানান, “তিনি মুমিনদের অন্তর সমূহ সুস্থ করে দেন” আলহামদুরিল্লাহ।
আপনার মন খারাপের কারণ খুজে বের করুন, আপনি যত তারাতারি এটা খুজে পাবেন যে কেনো আপনার মন খারাপ, তত দ্রুত মন ভালো করতে সক্ষম হবেন। ধরাবাধা মন ভালো রাখার উপায় আসলে নেই, এমন কোনো কাজ নেই যা করলে পৃথিবীর সকল মানুষের মন ভালো হয়ে যাবে। এটা নির্ভর করে ব্যক্তিভেদে। তাই নিজেকে জানার চেষ্টা করুন, ইনশাআল্লাহ মন খারাপের জাল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন। আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বাংলা আলো সবসময় রয়েছে আপনাকে সঠিক পরামর্শটি দিতে।
বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে সাথে, ভালো মানের মেডিকেল কলেজের তালিকা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।…
গল্পের বই পছন্দ করেন? পড়ার জন্য সেরা গল্পের খোজে আছেন? সে সুবাদে অনলাইনে সার্চ করে…
যারা সঠিক তথ্যটি জানেনা তাদের অনেকের ধারণা - ভিসা এবং পাসপোর্ট মূলত একই কাজ করে…
আপনার কি Loan বা ঋণ প্রয়োজন? আচ্ছা আপনি কি একজন প্রবাসী কিংবা আপনার পরিবারের কেউ…
একজন মুমিন ব্যক্তি হিসেবে আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত আপনি যে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাকে…
সব দিক থেকে উত্তম ও হালাল উপার্জনের উপায় হলো ব্যবসা। যে শ্রেনীর লোকই হোক না…