Categories: ইসলাম

কসরের নামাজের নিয়ম

মুসাফিরের জন্য আল্লাহ তা’আলার বিশেষ নিয়ামত কসর নামাজ ও কসরের নামাজের নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে পুরো আর্টিকেলটি ভালো ভাবে অধ্যায়ন করুন। উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে কসর নামাজের সকল খুঁটিনাটি ভালো ভাবে ক্লিয়ার হয়ে যাবে।  

ইসলাম শান্তির ধর্ম। এটি এমন একটি ধর্ম যেখানে রয়েছে জীবনের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা। রয়েছে সেই সকল কল্যাণকর বস্তু এবং নিয়ম যা মানবের জীবনব্যাপী কাজে দেয়।মানব কল্যাণের জন্য ইসলামকে করা হয়েছে সহজ ও সুন্দর। 

ইসলাম ধর্মের প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত করা। অন্যদিকে ইবাদতের সর্বোত্তম মাধ্যম নামাজ। যার কারনে নামাজকে কেন্দ্র করে রয়েছে বহু নিয়ম ও বিধি। আল্লাহ এতটাই দয়াশীল এবং আন্তরিক যে তার ইবাদত করার নিয়ম কেউ করেছে শিথিল। 

আর তাইতো মুসাফিরের দিক থেকে বিবেচনা করে নামাজকে করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত। ইসলাম নামক সুন্দর একটি ধর্মে আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত নিয়ম কতটা শিথিল, কতটা শান্তিময় এবং কতটা আন্তরিক তা প্রকাশ করা হবে কসরের নামাজের নিয়ম সংক্রান্ত আর্টিকেলে। 

কাসরের নামাজ: মুসাফিরদের স্বস্তি দিতে আল্লাহর করা বিধানের অন্যতম নিদর্শন এবং ইবাদতের উত্তম উপায় হল এই নামাজ। তাহলে শুরু করা যাক বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ইসলাম সংক্রান্ত বিষয়ের বিশেষ এক প্রতিবেদন “ কসরের নামাজের নিয়ম ” সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য। 

কসরের নামাজ কি?

মানুষ তার পূর্ণাঙ্গ জীবনে ভ্রমণের জন্য ব্যাপক ভাবে জরিত। এটা খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিটা মানুষের জীবনে ঘটে থাকে। কর্মের জন্য হোক বা অন্য যে কোনো কারনে নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে দূরে কোথায় যাওয়ার উদ্দেশে গেলে সেসময়ে স্বাভাবিক ভাবে পূর্ণাঙ্গ সালাত আদায়ের মত পরিস্থিতি সব সময় হয়ে উঠে না। নিজ আবাসস্থলে থাকলে প্রতিটি মুসলিম সম্পূর্ণ নামাজ আদায় করে থাকে। অন্যদিকে ভ্রমণ কালীন সময়ে একই নামাজকে শিথিল করে কসরের নামাজ আদায় করতে হয়। 

কসর শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ হলো সংক্ষিপ্ত করা। মূলত পূর্নাঙ্গ নামাজকে মুসাফিরদের জন্য শিথিল করে সংক্ষিপ্ত করার নিয়মকেই কসর নামাজ বলা হয়। এটা মুসাফিরদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদান করা এক নিয়ামত। সেই সুবাদে মুসাফিরের নামাজকে বলা হয় কসর নামাজ। 

কসর নামাজে নামাজের পদ্ধতিতে শিথিল এই ভাবে করা হয়েছে যে, পূর্ণাঙ্গ নামাজ যদি ৪ রাকাতের হয় সেখানে মুসাফিরদের জন্য কসর নামাজে ২ রাকাত পড়ার বিধান করা হয়েছে। মূল নামাজের এই সংক্ষিপ্তকরণই হলো কসরের নামাজ। 

কসরের নামাজ কারা ও কেনো পড়া হয়?

ইসলামকে আমরা মানব জীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে চিনে থাকি। ইসলামকে আল্লাহ করেছে সুন্দর ও সহজ। যার কারনে প্রতিটি বিষয়ের ন্যায় মুসাফিরের দিক থেকে চিন্তা করে বা ভ্রমণকালীন সময়ে মানুষের কথার বিবেচনায় রেখে আল্লাহ তার ইবাদতের সর্বোত্তম মাধ্যম নামাজকে করেছে সংক্ষিপ্ত। তাদেরকে (মুসাফির) বলা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ নামাজ আদায় না করে কসরের নামাজ আদায় করতে। 

এবং এখানেই প্রশ্ন আসছে কসরের নামাজ পড়বে কারা? যা ইতিমদ্যে একাধিকবার আলোচনার শীর্ষে রেখছি যা হচ্ছে – কসরের নামাজ একমাত্র মুসাফিররাই পড়তে পারবে। এবার একজন মানুষ কখন মুসাফির হিসেবে বিবেচিত হবে? ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক যে ব্যক্তি নিজ আবাসস্থল থেকে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার দূরে কোথায় সফরের জন্য বের হয় তখন তার নিজ এলাকা অতিক্রম করলেই সে মুসাফির হিসেবে বিবেচিত হবে। 

হিসেবকে আরো সচ্ছ করতে গেলে আকাশপথে চলাচলের দুরুত্বকেও হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। যেহেতু বর্তমানে মানুষ বিমানে করে যাতায়াত করে থাকে সেই সুবাদে কেউ যদি স্থলের হিসেবের ন্যায় আকাশপথেও ৭৮ কিলোমিটার অতিক্রম করে থাকে তবে সে ব্যক্তি আকাশপথে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে এবং সে ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ নামাজের পরিবর্তে কসর নামাজ পড়তে হবে। 

কসরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত

এই পর্যায়ে জানাতে যাচ্ছি কসরের নামাজের পুরো নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত। আর্টিকেলটির ইতিমধ্যে উল্লেখিত হয়েছে কসরের নামাজ হলো নামাজের সংক্ষিত রুপ যেখানে ৪ রাকাত নামাজকে ২ রাকাতে পড়ার বিধান রয়েছে। সেই হিসেবে আমাদের ৫ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ৪ রাকাত ফরজ নামাজ হলো জোহর, আসর, ইশা – এর। উক্ত ওয়াক্তের নামাজের ক্ষেত্রে কসরের নামাজ অনুসারে ২ রাকাত করে পড়তে হবে। 

বরং এমনটা বলা হয়েছে যে, কোনো মুসাফির ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজ একা অথবা ইমামের পিছনে পড়লে নামাজ কসর করা প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মে নামাজ পড়াটা ঠিক হবে না। এই বিষয়টি হাদিসে এমন ভাবে উপস্থাপিত আছে যে, 

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের নবীর জবানে নামাজকে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত ফরজ করেছেন। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ৬৮৭)

১) কোনো মুসাফির যদি ইমামতি করে তবে তার করনীয় হবে যে, তিনি মুক্তাদিদেরকে বলে দিবে যে তিনি মুসাফির এবং ২ রাকাত নামাজের পর সালাম ফিরাবে। অন্যদিকে বাকি নামাজিরা পুনরায় দাড়িয়ে অবশিষ্ট ২ রাকাত নামাজ আদায় করে নিবে। 

২) মুসাফির ব্যক্তি যদি স্থানীয় মসজিদে স্থানীয় মুকিম ইমামের পিছনে নামাজ পরে তবে ইমামের অনুসারে তিনিও ৪ রাকাত নামাজ পড়বেন। 

৩) একজন ব্যক্তি মুসাফির অবস্থান আছেন এবং তার নামাজ কাজা হয়ে গেছে। সে ব্যক্তি যদি বাড়িতে গিয়ে নামাজ আদায় করেন তবে সে কসরের নিয়মেই নামাজ পড়বেন। অন্যদিকে একজন ব্যক্তি যদি বাড়িতে থাকা কালীন সময়ে নামাজ কাজা হয় এবং পরবর্তীতে সে মুসাফির হয় তবে মুসাফির অবস্থায় পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে। 

৪) ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজের নিয়তে কসর করতে হবে। 

৫) মুসাফির ব্যক্তি যদি সময় সল্পতায় ভুগেন তবে ফরজের সাথে যে সুন্নত নামাজ আছে ঐটা ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত নামাজ গুলো বাদ দিতে পারেন। তবে হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকলে পড়া উত্তম। 

৬) ১৫ দিন এর বেশি থাকার নিয়ত না করলেও কিংবা ১৫ দিন পর যাবো যাবো বলেও যাওয়া হচ্ছে না এমতাবস্থায়ও কসরের নামাজ পড়তে হবে। ২ রাকাত, ৩ রাকাত নামাজের পাশাপাশি ওয়াজিব নামাজও আদায় করতে হবে।

মুসাফির কে, মুসাফিরের নামাজ পড়ার নিয়ম

মূলত ৪৮ মাইল কিংবা ৭৮ কিলোমিটার দূরে কোথাও সফরে যাওয়ার উদ্দেশে নিজ আবাসস্থল থেকে বের হলে সে ব্যক্তিকে মুসাফির হিসেবে গণ্য করা হয়। কোনো ব্যক্তি মুসাফির হলে সেই ব্যক্তির উপর পূর্ণাঙ্গ নামাজের পরিবর্তে কসরের নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মুসাফিরের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে নিম্মে হাদিস উপস্থাপন করা হলো। 

মুসাফিরের নামাজ পড়ার নিয়ম সংক্রান্ত হাদিসে এমন ভাবে বর্ণিত রয়েছে যে, মুসাফির ব্যক্তি সফর চলাকালীন অবস্থায় নিজে কিংবা অন্য কোন মুসাফির ইমামের পিছনে  নামাজ আদায় করলে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজের পূর্ণাঙ্গ অবস্থা ( চার রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে চার রাকাতই পড়া) নামাজ আদায় করলে গুনাহ হবে। 

এক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব যার মানে হয়েছে ভুলবশত চার রাকাত পড়ে ফেলে তাহলে যদি সে প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে সেজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে। আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে ফরজ আদায় হবে না, আবারও পড়তে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১)

আল্লাহর নির্ধারিত বিধান কতটা শিথিল তা তখনই বুজতে পারবেন যখন জানবেন মুসাফিরের জন্য ২ টি নামাজ একত্রে পড়ার নিয়ম রয়েছে। কেউ যদি যোহরের সময় সালাত আদায় না করে আসরের সময় যোহর-আসর একত্রে পড়ে তবে ঠিক হবে। অনরুপ আসরের সময়ের পূর্বেও, যোহরের সময়ে আসরের সালাত আদায় করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রথমে যোহরের নিয়ত করে সালাত সম্পূর্ণ করে তারপর আসরের নামাজ আদায় করতে হবে। 

একই ভাবে মাগরিব ও ঈশার নামাজও আদায় করা যাবে। তবে কোনো ভাবে ফজর ও যোহর একত্রে কিংবা আসর ও মাগরিব একত্রে পড়া যাবে না।  

কসরের নামাজের ফজিলত সমূহ

কসর নামাজ ইসলামে  দৃষ্টিতে অনেক ফজিলত রয়েছে। এ পর্যায়ে কসর নামাজের ফজিলত সম্পর্কে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু হাদিস উপস্থাপন করা হলো। 

১) কসর নামাজের দ্বারা মুসলিম উম্মাহকে দেয়া একটি বড় শিক্ষা এই যে, যেকোনো পরিস্থিতি হোক ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। 

২) আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন য, তোমরা সফরের সময় কসর নামাজ আদায় করো, কেননা এতে অর‍্যেছে উত্তম প্রতিদান। (বায়হাকি 

৩) ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ:) বলেন, ‘সফরে ৪ রাকাত নামাজকে ২ রাকাতই পড়তে হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা এ ২ রাকাতের বিনিময়ে ৪ রাকাতের প্রতিদান তো দেবেনই, সেই সাথে মুসাফির অবস্থায় নামাজ পড়ার সওয়াব অনেক বেশি। তাই সফরে কসর না পড়ে পূর্ণ নামাজ পড়া যাবে না।’

গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

আমরা যখনই ভ্রমণে থাকবো, সফরের উদ্দেশ্যে নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে মুসাফির হবো তখন কোনো ভাবেই যেনো ফরজ নামাজ মিস না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবো। আল্লাহ মুসাফিরের সুবিধার্থে নামাজকে শিথিল করেছে তাই আমরা আল্লাহ এর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি তার ইবাদত করবো। এবং কসরের নামাজের নিয়ম সংক্রান্ত আর্টিকেলটিতে আমরা এই শিক্ষাটিই গ্রহন করলাম। 

Bangla Alo

Recent Posts

মন ভালো রাখার উপায় || মন সুস্থ রাখার ১০ টি টিপস

মানুষের মন যেহেতু আছে এটা ভালো কিংবা খারাপ থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।  একটা…

4 weeks ago

বাংলাদেশের সেরা ১০ টি মেডিকেল কলেজ

বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে সাথে, ভালো মানের মেডিকেল কলেজের তালিকা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।…

2 months ago

সেরা ১০ টি গল্পের বই || বাছাইকৃত লেখকের সেরা ১০ টি বই

গল্পের বই পছন্দ করেন? পড়ার জন্য সেরা গল্পের খোজে আছেন? সে সুবাদে অনলাইনে সার্চ করে…

2 months ago

ভিসা ও পাসপোর্ট কি? একটি ভিসা এবং পাসপোর্টের মধ্যে পার্থক্য সমূহ

যারা সঠিক তথ্যটি জানেনা তাদের অনেকের ধারণা - ভিসা এবং পাসপোর্ট মূলত একই কাজ করে…

2 months ago

ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন নেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত (২০২৪)

আপনার কি Loan বা ঋণ প্রয়োজন? আচ্ছা আপনি কি একজন প্রবাসী কিংবা আপনার পরিবারের কেউ…

2 months ago

ইসলামে নিষিদ্ধ ব্যবসা || যে সকল ব্যবসা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম

একজন মুমিন ব্যক্তি হিসেবে আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত আপনি যে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাকে…

2 months ago