ব্লকচেইন প্রযুক্তি কে সবচেয়ে সহজ ভাবে একটি বিকেন্দ্রী কৃত, বিতরণ করা খাতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা একটি ডিজিটাল সম্পদ এর উদ্ভব রেকর্ড করে। অন্তর্নিহিত নকশা দ্বারা, একটি ব্লকচেইন প্রযুক্তি এর ডেটা পরিবর্তন করা যায় না, যা এটি কে অর্থপ্রদান, সাইবার নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সেবার মতো শিল্পের জন্য একটি বৈধ ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো ব্লকচেইন প্রযুক্তি কী, এটি কীভাবে কাজ করে এবং এর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি হল একটি শেয়ার্ড, অপরিবর্তনীয় লেজার যা একটি ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কে লেনদেন রেকর্ড করা এবং সম্পদ ট্র্যাক করার প্রক্রিয়া সহজতর করে। একটি সম্পদ বাস্তব (একটি বাড়ি, গাড়ি, নগদ, জমি) বা অস্পষ্ট (মেধা সম্পত্তি, পেটেন্ট, কপিরাইট, ব্র্যান্ডিং) হতে পারে। একটি ব্লকচেইন প্রযুক্তি তে কার্যত মূল্যের যেকোন কিছু ট্র্যাক এবং লেনদেন করা যেতে পারে, ঝুঁকি হ্রাস করে এবং জড়িত সকল এর জন্য খরচ কমিয়ে দেয়।
একটি ব্লকচেইন একটি বিতরণ করা ডাটাবেস যা একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের নোডগুলির মধ্যে ভাগ করা হয়। একটি ডাটাবেস হিসাবে, একটি ব্লকচেইন প্রযুক্তি এর ডিজিটাল ফরম্যাটে ইলেকট্রনিক ভাবে তথ্য সঞ্চয় করে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি ক্রিপ্টোকারেন্সি সিস্টেম এ তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত, যেমন Bitcoin, লেনদেন এর একটি নিরাপদ এবং বিকেন্দ্রীকৃত রেকর্ড বজায় রাখার জন্য। একটি ব্লকচেইনের উদ্ভাবন হল এটি ডেটার রেকর্ড এর বিশ্বস্ততা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় এবং বিশ্বস্ত তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন ছাড়াই বিশ্বাস তৈরি করে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি, কখনও কখনও ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার টেকনোলজি (DLT) নামে পরিচিত, বিকেন্দ্রী করণ এবং ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশিং ব্যবহারের মাধ্যমে যেকোনো ডিজিটাল সম্পদের ইতিহাসকে অপরিবর্তনীয় এবং স্বচ্ছ করে তোলে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি বোঝার জন্য একটি সহজ সাদৃশ্য হল একটি Google ডক। যখন আমরা একটি নথি তৈরি করি এবং এটিকে একদল লোক এর সাথে ভাগ করি, তখন নথিটি অনুলিপি বা স্থানান্তর এর পরিবর্তে বিতরণ করা হয়। এটি একটি বিকেন্দ্রীকৃত বিতরণ শৃঙ্খল তৈরি করে যা প্রত্যেককে একই সময়ে নথিতে অ্যাক্সেস দেয়।
অন্য পক্ষ থেকে পরিবর্তন এর অপেক্ষায় কেউ লক আউট হয় না, যখন নথিতে সমস্ত পরিবর্তন রিয়েল- টাইমে রেকর্ড করা হয়, পরিবর্তন গুলিকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ করে তোলে। অবশ্যই, ব্লকচেইন প্রযুক্তি একটি Google ডক থেকে আরও জটিল, কিন্তু সাদৃশ্যটি উপযুক্ত কারণ এটি প্রযুক্তির তিনটি সমালোচনামূলক ধারণাকে চিত্রিত করে: ব্লকচেইন একটি বিশেষভাবে প্রতিশ্রুতিশীল এবং বিপ্লবী প্রযুক্তি কারণ এটি ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, জালিয়াতি বন্ধ করে এবং অগণিত ব্যবহারের জন্য একটি মাপ যোগ্য উপায়ে স্বচ্ছতা আনে।
একটি সাধারণ ডাটাবেস এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি এর মধ্যে একটি মূল পার্থক্য হল ডেটা কীভাবে গঠন করা হয়। একটি ব্লকচেইন গ্রুপে একত্রে তথ্য সংগ্রহ করে, যা ব্লক নামে পরিচিত, যা তথ্যের সেট রাখে। ব্লক গুলির নির্দিষ্ট স্টোরেজ ক্ষমতা থাকে এবং, যখন ভরা হয়, বন্ধ হয়ে যায় এবং পূর্বে ভরা ব্লকের সাথে লিঙ্ক করা হয়, যা ব্লকচেইন নামে পরিচিত ডেটার একটি চেইন তৈরি করে। নতুন যোগ করা ব্লক অনুসরণ করে যে সমস্ত নতুন তথ্য একটি নতুন গঠিত ব্লকে কম্পাইল করা হয় যেটি একবার পূর্ণ হলে চেইনেও যোগ করা হবে।
একটি ডাটাবেস সাধারণত তার ডেটাকে টেবিলে গঠন করে, যেখানে একটি ব্লকচেইন প্রযুক্তি, যেমন তার নাম থেকে বোঝা যায়, তার ডেটাকে খণ্ডে (ব্লক) গঠন করে যেগুলি একত্রিত হয়। বিকেন্দ্রীভূত প্রকৃতিতে প্রয়োগ করা হলে এই ডেটা কাঠামোটি অন্তর্নিহিত ভাবে ডেটার একটি অপরিবর্তনীয় সময়রেখা তৈরি করে। যখন একটি ব্লক ভরা হয়, এটি পাথরে সেট করা হয় এবং এই টাইমলাইনের একটি অংশ হয়ে যায়। চেইনের প্রতিটি ব্লককে একটি সঠিক টাইম স্ট্যাম্প দেওয়া হয় যখন এটি চেইনে যোগ করা হয়।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্লক, নোড এবং মাইনার নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। প্রতিটি চেইন একাধিক ব্লক নিয়ে গঠিত এবং প্রতিটি ব্লকে তিনটি মৌলিক উপাদান রয়েছে:
একটি ৩২- বিট পূর্ণ সংখ্যা যাকে nonce বলে। একটি ব্লক তৈরি হলে ননস এলোমেলোভাবে তৈরি হয়, যা তারপর একটি ব্লক হেডার হ্যাশ তৈরি করে।
হ্যাশ হল একটি ২৫৬- বিট সংখ্যা যা ননসের সাথে যুক্ত। এটি অবশ্যই বিপুল সংখ্যক শূন্য দিয়ে শুরু করতে হবে (অর্থাৎ, অত্যন্ত ছোট হতে হবে)। যখন একটি চেইনের প্রথম ব্লক তৈরি করা হয়, তখন একটি নন্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ তৈরি করে। ব্লকের ডেটাকে সাইন করা বলে মনে করা হয় এবং চিরতরে ননস এবং হ্যাশের সাথে আবদ্ধ থাকে যদি না এটি মাইন করা হয়।
মাইনার রা মাইনিং নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চেইনে নতুন ব্লক তৈরি করে। একটি ব্লকচেইনে প্রতিটি ব্লকের নিজস্ব অনন্য নন্স এবং হ্যাশ থাকে, তবে চেইনের পূর্ববর্তী ব্লকের হ্যাশকেও উল্লেখ করে। মাইনার রা একটি স্বীকৃত হ্যাশ তৈরি করে এমন একটি ননস খুঁজে বের করার অবিশ্বাস্যভাবে জটিল গণিত সমস্যার সমাধান করতে বিশেষ সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে। কারণ ননস মাত্র ৩২ বিট এবং হ্যাশ হল ২৫৬ মোটামুটি চার বিলিয়ন সম্ভাব্য নন- হ্যাশ কম্বিনেশন আছে যেগুলো সঠিকটি খুঁজে পাওয়ার আগে অবশ্যই মাইনিং করতে হবে।
চেইনের আগে যেকোন ব্লকে পরিবর্তন করার জন্য শুধুমাত্র পরিবর্তনের সাথে ব্লক নয়, পরবর্তীতে আসা সমস্ত ব্লককে পুনরায় খনন করতে হবে। এই কারণেই ব্লকচেইন প্রযুক্তি কে ম্যানিপুলেট করা অত্যন্ত কঠিন হয়। এটাকে “গণিতের নিরাপত্তা” হিসেবে ভাবুন যেহেতু গোল্ডেন ননসেস খুঁজে পেতে প্রচুর সময় এবং কম্পিউটিং শক্তি প্রয়োজন। যখন একটি ব্লক সফলভাবে মাইনিং করা হয়, তখন নেটওয়ার্ক এর সমস্ত নোডের দ্বারা পরিবর্তন টি গৃহীত হয় এবং খনিকে আর্থিক ভাবে পুরস্কৃত করা হয়।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা গুলির মধ্যে একটি হল বিকেন্দ্রীকরণ। কোনো একটি কম্পিউটার বা প্রতিষ্ঠান চেইনের মালিক হতে পারে না। পরিবর্তে, এটি চেইনের সাথে সংযুক্ত নোড গুলির মাধ্যমে একটি বিতরণ করা খাতা। নোড গুলি যে কোনও ধরণের ইলেকট্রনিক ডিভাইস হতে পারে যা ব্লকচেইনের অনুলিপি বজায় রাখে এবং নেটওয়ার্ককে কার্যকর রাখে।
প্রতিটি নোডের ব্লকচেইন প্রযুক্তি এর নিজস্ব কপি থাকে এবং চেইন আপডেট, বিশ্বস্ত এবং যাচাই করার জন্য নেটওয়ার্ককে অবশ্যই অ্যালগরিদমিকভাবে নতুন খনন করা ব্লক অনুমোদন করতে হবে। যেহেতু ব্লকচেইনগুলি স্বচ্ছ, তাই লেজার এর প্রতিটি ক্রিয়া সহজেই চেক এবং দেখা যায়। প্রত্যেক অংশগ্রহণ কারীকে একটি অনন্য আলফানিউমেরিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দেওয়া হয় যা তাদের লেন দেন দেখা যায়।
চেক- এন্ড -ব্যালেন্স সিস্টেমএর সাথে পাবলিক তথ্যের সমন্বয় ব্লকচেইনকে সততা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে। মূলত, ব্লকচেইনকে প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বাসের মাপযোগ্যতা হিসেবে ভাবা যেতে পারে।
১৯৯১ সালে একটি গবেষণা প্রকল্প হিসাবে প্রথম প্রস্তাবিত, ব্লকচেইন ধারণাটি তার প্রথম ব্যাপক প্রয়োগের আগে ছিল: বিটকয়েন, ২০০৯ সালে। এর পর থেকে, বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিকেন্দ্রীভূত অর্থ (DeFi) অ্যাপ্লিকেশন তৈরির মাধ্যমে ব্লকচেইনের ব্যবহার বিস্ফোরিত হয়েছে, নন- ফাঞ্জিবল টোকেন (NFTs), এবং স্মার্ট চুক্তি।
কল্পনা করুন যে একটি কোম্পানীর একটি সার্ভার ফার্ম রয়েছে যার ১০, ০০০ টি কম্পিউটার রয়েছে যা একটি ডাটাবেস রক্ষণাবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয় যার ক্লায়েন্টের অ্যাকাউন্ট এর সমস্ত তথ্য রয়েছে। এই কোম্পানির একটি গুদাম বিল্ডিং এর মালিক যেখানে এই সমস্ত কম্পিউটার গুলি এক ছাদ এর নীচে রয়েছে এবং এই কম্পিউটার গুলির প্রতিটি এবং তাদের মধ্যে থাকা সমস্ত তথ্যের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে৷ এটি, তবে, ব্যর্থতার একক পয়েন্ট প্রদান করে। ঐ স্থানে বিদ্যুৎ চলে গেলে কি হবে? তার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে কী হবে? মাটিতে পুড়ে গেলে কি হবে? যদি কেউ একজন একটি একক কীস্ট্রোক দিয়ে সবকিছু মুছে ফেলে? যে কোনো ক্ষেত্রে, তথ্য হারিয়ে যেতেই পারে।
একটি ব্লকচেইন প্রযুক্তি যা করে তা হল সেই ডাটাবেসে থাকা ডেটাকে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক নোডের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া। এটি শুধুমাত্র অপ্রয়োজনীয়তা তৈরি করে না বরং এতে সংরক্ষিত ডেটার বিশ্বস্ততাও বজায় রাখে- যদি কেউ ডাটাবেস এর একটি দৃষ্টান্তে একটি রেকর্ড পরিবর্তন করার চেষ্টা করে, তবে অন্যান্য নোডগুলি পরিবর্তন করা হবে না এবং এইভাবে একজন খারাপ অভিনেতাকে এটি করা থেকে বাধা দেবে। যদি একজন ব্যবহারকারী বিটকয়েনের লেনদেনের রেকর্ডের সাথে টেম্পার করে, অন্য সব নোড একে অপরকে ক্রস-রেফারেন্স করবে এবং ভুল তথ্য দিয়ে নোডটিকে সহজেই চিহ্নিত করবে। এই সিস্টেম ইভেন্টগুলির একটি সঠিক এবং স্বচ্ছ ক্রম স্থাপন করতে সাহায্য করে। এইভাবে, নেটওয়ার্ক এর মধ্যে কোনো একক নোড এর মধ্যে থাকা তথ্য পরিবর্তন করতে পারে না।
এই কারণে, তথ্য এবং ইতিহাস (যেমন একটি ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন) অপরিবর্তনীয়। এই ধরন এর একটি রেকর্ড লেনদেনের একটি তালিকা হতে পারে (যেমন একটি ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে), কিন্তু এটি একটি ব্লকচেইন প্রযুক্তি এর পক্ষে আইনী চুক্তি, রাষ্ট্রীয় শনাক্তকরণ বা কোম্পানির পণ্য তালিকার মতো বিভিন্ন তথ্য রাখাও সম্ভব।
বিটকয়েন এর ব্লকচেইনের বিকেন্দ্রীকৃত প্রকৃতির কারণে, ব্যক্তিগত নোড থাকার মাধ্যমে বা ব্লকচেইন এক্সপ্লোরার ব্যবহার করে সমস্ত লেনদেন স্বচ্ছ ভাবে দেখা যেতে পারে যা যে কেউ সরাসরি লেনদেন গুলি দেখতে দেয়। প্রতিটি নোডের চেইনের নিজস্ব অনুলিপি থাকে যা নতুন ব্লক নিশ্চিত করা এবং যোগ করার সাথে সাথে আপডেট হয়। এর মানে হল যে আপনি যদি চান, আপনি বিটকয়েন যেখানেই যায় সেখানে ট্র্যাক করতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, এক্সচেঞ্জগুলি অতীতে হ্যাক হয়েছে, যেখানে যারা বিটকয়েন এক্সচেঞ্জে রেখেছিল তারা সবকিছু হারিয়েছে। যদিও হ্যাকার সম্পূর্ণ বেনামী হতে পারে, তারা যে বিটকয়েন গুলি বের করেছে তা সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। এসব হ্যাকের মধ্যে চুরি হওয়া বিটকয়েন গুলো কোথাও সরানো বা ব্যয় করা হলে তা জানা যাবে।
অবশ্যই, বিটকয়েন ব্লকচেইনে সংরক্ষিত রেকর্ড (পাশাপাশি বেশির ভাগ অন্যান্য) এনক্রিপ্ট করা হয়। এর মানে হল যে শুধুমাত্র একটি রেকর্ডের মালিক তাদের পরিচয় প্রকাশ করার জন্য এটিকে ডিক্রিপ্ট করতে পারে (একটি পাবলিক-প্রাইভেট কী জোড়া ব্যবহার করে)। ফলস্বরূপ, ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার কারীরা স্বচ্ছতা রক্ষা করে বেনামী থাকতে পারে।
আমরা এখন জানি, বিটকয়েনের ব্লকচেইন স্টোর ডেটার ব্লকগুলি আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে। আজ, ব্লকচেইনে ১০,০০০ টিরও বেশি অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি সিস্টেম চলছে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে ব্লকচেইন আসলে অন্যান্য ধরনের লেনদেন সম্পর্কে ডেটা সংরক্ষণ এর একটি নির্ভরযোগ্য উপায়।
কিছু কোম্পানি যারা ইতিমধ্যেই ব্লকচেইন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে ওয়ালমার্ট, ফাইজার, এআইজি, সিমেন্স, ইউনিলিভার এবং আরও অনেকগুলি হোস্ট। উদাহরণস্বরূপ, আইবিএম তার খাদ্য ট্রাস্ট ব্লকচেইন তৈরি করেছে যাতে খাদ্য পণ্যগুলি তাদের অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য যে যাত্রা নেয় তা খুঁজে বের করতে। এই সংস্থাগুলি এখন তাদের সংস্পর্শে আসা অন্য সবকিছুও দেখতে পারে, যাতে সমস্যাটি শনাক্তকরণ অনেক শীঘ্রই ঘটতে পারে এবং সম্ভাব্য জীবন বাঁচাতে পারে৷ এটি অনুশীলনে ব্লকচেইনের একটি উদাহরণ, তবে ব্লকচেইন প্রযুক্তি বাস্তবায়ন এর আরও অনেক রূপ রয়েছে।
সম্ভবত কোন শিল্পই তার ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপের সাথে ব্লকচেইন প্রযুক্তি একীভূত করে ব্যাংকিংয়ের চেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সময়ে কাজ করে, সাধারণত সপ্তাহে পাঁচ দিন। তার মানে আপনি যদি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টায় একটি চেক জমা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে সেই টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে হিট করার জন্য আপনাকে সম্ভবত সোমবার সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এমনকি আপনি ব্যবসায়িক সময়ের মধ্যে আপনার আমানত জমা করলেও, ব্যাঙ্কগুলিকে নিষ্পত্তি করতে হবে এমন লেনদেনের সম্পূর্ণ পরিমাণের কারণে লেনদেনটি যাচাই করতে এখনও এক থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে। অন্যদিকে ব্লকচেইন কখনো ঘুমায় না।
ব্লকচেইনকে ব্যাঙ্কগুলিতে একীভূত করার মাধ্যমে, গ্রাহকরা তাদের লেনদেনগুলি ১০ মিনিটের মধ্যে প্রক্রিয়া করা দেখতে পারেন – মূলত ছুটির দিন বা দিন বা সপ্তাহের সময় নির্বিশেষে ব্লকচেইনে একটি ব্লক যুক্ত করতে যে সময় লাগে৷ ব্লকচেইনের মাধ্যমে, ব্যাঙ্কগুলি আরও দ্রুত এবং নিরাপদে প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে তহবিল বিনিময় করার সুযোগ পায়। স্টক ট্রেডিং ব্যবসায়, উদাহরণস্বরূপ, নিষ্পত্তি এবং ক্লিয়ারিং প্রক্রিয়া তিন দিন পর্যন্ত সময় নিতে পারে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির ভিত্তি তৈরি করে। মার্কিন ডলার ফেডারেল রিজার্ভ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থার অধীনে, একজন ব্যবহারকারীর ডেটা এবং মুদ্রা প্রযুক্তিগতভাবে তাদের ব্যাঙ্ক বা সরকারের ইচ্ছানুযায়ী। যদি একজন ব্যবহারকারীর ব্যাঙ্ক হ্যাক করা হয়, তাহলে ক্লায়েন্টের ব্যক্তিগত তথ্য ঝুঁকিতে থাকে। যদি ক্লায়েন্টের ব্যাঙ্ক ভেঙে পড়ে বা ক্লায়েন্ট একটি অস্থিতিশীল সরকার সহ একটি দেশে বাস করে, তাহলে তাদের মুদ্রার মান ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ২০০৮ সালে, বেশ কয়েকটি ব্যর্থ ব্যাঙ্ককে জামিন দেওয়া হয়েছিল – আংশিক ভাবে করদাতার অর্থ ব্যবহার করে। এইসব উদ্বেগ যা থেকে বিটকয়েন প্রথম ধারণ করা হয়েছিল এবং বিকশিত হয়েছিল।
কম্পিউটারের একটি নেটওয়ার্কে এর কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, ব্লকচেইন বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলিকে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন ছাড়াই পরিচালনা করতে দেয়। এটি শুধুমাত্র ঝুঁকি কমায় না কিন্তু প্রক্রিয়াকরণ এবং লেনদেনের অনেক ফিও দূর করে। এটি অস্থিতিশীল মুদ্রা বা আর্থিক অবকাঠামো আছে এমন দেশগুলিতে আরও বেশি অ্যাপ্লিকেশন সহ আরও স্থিতিশীল মুদ্রা এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক দিতে পারে যাদের সাথে তারা ব্যবসা করতে পারে, উভয় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে।
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা তাদের রোগীদের মেডিকেল রেকর্ড নিরাপদে সংরক্ষণ করতে ব্লকচেইন ব্যবহার করতে পারে। যখন একটি মেডিকেল রেকর্ড তৈরি করা হয় এবং স্বাক্ষরিত হয়, তখন এটি ব্লকচেইনে লেখা যেতে পারে, যা রোগীদের প্রমাণ এবং আত্মবিশ্বাস প্রদান করে যে রেকর্ড পরিবর্তন করা যাবে না। এই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রেকর্ডগুলি একটি ব্যক্তিগত কী দিয়ে ব্লকচেইন প্রযুক্তি এর মাধ্যমে এনকোড করা এবং সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যাতে সেগুলি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের দ্বারা অ্যাক্সেসযোগ্য হয়, যার ফলে গোপনীয়তা নিশ্চিত হয়।
আপনি যদি কখনও আপনার স্থানীয় রেকর্ডারের অফিসে সময় কাটিয়ে থাকেন তবে আপনি জানবেন যে সম্পত্তির অধিকার রেকর্ড করার প্রক্রিয়াটি বোঝা এবং অদক্ষ উভয়ই। আজ, একটি শারীরিক দলিল স্থানীয় রেকর্ডিং অফিসে একজন সরকারি কর্মচারীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে, যেখানে এটি কাউন্টির কেন্দ্রীয় ডাটাবেস এবং পাবলিক ইনডেক্সে ম্যানুয়ালি প্রবেশ করানো হয়। সম্পত্তির বিরোধের ক্ষেত্রে, সম্পত্তির দাবিগুলি অবশ্যই পাবলিক ইনডেক্সের সাথে মিলিত হতে হবে।
এই প্রক্রিয়াটি শুধু ব্যয়সাপেক্ষ এবং সময়সাপেক্ষ নয়-এটি মানবিক ত্রুটির প্রবণতাও বটে, যেখানে প্রতিটি অশুদ্ধতা সম্পত্তির মালিকানা ট্র্যাকিংকে কম দক্ষ করে তোলে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি এর একটি স্থানীয় রেকর্ডিং অফিসে নথি স্ক্যান করার এবং শারীরিক ফাইলগুলি ট্র্যাক করার প্রয়োজনীয়তা দূর করার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি ব্লকচেইনে সম্পত্তির মালিকানা সংরক্ষণ করা হয় এবং যাচাই করা হয়, মালিকরা বিশ্বাস করতে পারেন যে তাদের দলিল সঠিক এবং স্থায়ীভাবে রেকর্ড করা হয়েছে।
একটি স্মার্ট চুক্তি হল একটি কম্পিউটার কোড যা একটি চুক্তি চুক্তি সহজতর করতে, যাচাই করতে বা আলোচনার জন্য ব্লকচেইন প্রযুক্তি তৈরি করা যেতে পারে। স্মার্ট চুক্তিগুলি এমন একটি শর্তের অধীনে কাজ করে যার সাথে ব্যবহারকারীরা সম্মত হন। যখন এই শর্তগুলি পূরণ হয়, চুক্তির শর্তাবলী স্বয়ংক্রিয় ভাবে সম্পন্ন হয়।
আইবিএম ফুড ট্রাস্টের উদাহরণের মতো, সরবরাহকারীরা ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের কেনা সামগ্রীর উত্স রেকর্ড করতে পারে। এটি কোম্পানিগুলিকে শুধুমাত্র তাদের পণ্যের সত্যতা যাচাই করতে দেয় না বরং সাধারণ লেবেল যেমন “অর্গানিক,” “স্থানীয়,” এবং “ফেয়ার ট্রেড” যাচাই করতে পারে। ফোর্বস দ্বারা রিপোর্ট করা হয়েছে, খাদ্য শিল্প খামার-থেকে-ব্যবহারকারী যাত্রার পথ এবং খাদ্যের নিরাপত্তা ট্র্যাক করতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার ক্রমবর্ধমানভাবে গ্রহণ করছে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি একটি আধুনিক ভোটিং সিস্টেমের সুবিধার্থে ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি এর মাধ্যমে ভোট দেওয়া নির্বাচনের জালিয়াতি দূর করার এবং ভোটারদের ভোটদানকে বাড়ানোর সম্ভাবনা বহন করে, যেমনটি পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় নভেম্বর ২০১৮ -এর মধ্যবর্তী নির্বাচনে পরীক্ষা করা হয়েছিল। ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ভোটে হেরফের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি প্রোটোকল নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখবে, নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মীদের হ্রাস করবে এবং প্রায় তাত্ক্ষণিক ফলাফল প্রদান করবে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি এর লক্ষ্য হল ডিজিটাল তথ্য রেকর্ড এবং বিতরণ করার অনুমতি দেওয়া, কিন্তু সম্পাদনা করা হয় না। এই ভাবে, একটি ব্লকচেইন প্রযুক্তি হল অপরিবর্তনীয় লেজারের ভিত্তি, বা লেনদেন এর রেকর্ড যা পরিবর্তন, মুছে বা ধ্বংস করা যায় না। এই কারণে ব্লকচেইন গুলিকে একটি ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার প্রযুক্তি (DLT) নামেও পরিচিত।
শরীর ভালো তো মন ভালো” ছোটবেলা থেকে আমরা এই কথায় অভ্যস্ত হলেও ঠিকঠাকভাবে মানতে নারাজ। মানসিক সুস্থতা ও শারীরিক স্বাস্থ্য…
লাললালালালালালালালালালালালালালালালালালালালা যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়তবে…
ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে পুরো দেশে সবুজায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে কাতার সরকার। বাংলাদেশি নার্সারি ব্যবসায়ীরাও অংশ নিচ্ছে সবুজায়ন প্রকল্পে। কাতারে ফুটবল…
এআইয়ের সাহায্যে সরু রাস্তার নির্দেশনাও দেখতে পারবেন চালকরা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কুয়াশা ও বন্যার পানি রয়েছে কি-না, তা গুগল ম্যাপসের…
রাগের কারণে আপনার কর্মজীবনেও প্রভাব পড়ে একটুতেই রেগে যান? রাগের মাথায় প্রিয়জনকে কটূ কথা বলে আফসোস করতে হয়? এবার একটু…
সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং দুদেশের জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে ১. ইসলামপন্থি কিংবা জঙ্গিরা নয় সম্প্রতি যে আন্দোলনের মুখে শেখ…
This website uses cookies.